ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৩:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৯
  • / ২২০ বার পড়া হয়েছে

নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে
আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে উত্তাল দেশের শিক্ষাঙ্গন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের তৃতীয় দিনে প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়েছে নতুন ১০ দফা দাবি। অন্যতম দাবি হচ্ছে, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তাঁদের দাবির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আবরার হত্যাকা-ের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, ছাত্ররা কয়েক দশক আগেও রাজনীতি করত আদর্শের জন্য। এখন তারা রাজনীতি করে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। রাজনৈতিক দলগুলোই পরিচালনা করে ছাত্রসংগঠনগুলোকে। রাজনৈতিক দলের ইন্ধনেই চর দখলের মতো তারা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুষ্ঠু রাজনৈতিকচর্চা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। এ জন্যই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছাত্রসংগঠনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদেরও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করেই ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে বিশিষ্টজনদের অভিমত। তাঁদের মতে, এখন যে ছাত্ররাজনীতি হচ্ছে, তা মানুষকে কাঁদাচ্ছে, মেরে ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে, তা শিক্ষার্থীদের কোনো উপকারে আসছে না। যে ছাত্ররাজনীতি মানুষ হত্যা করে, সেই রাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে এখনই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বুয়েটের তিন হলে সাত টর্চার সেলের খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র বা শিক্ষক; কোনো আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বা শ্রমিক এবং অন্য যেকোনো পেশার সদস্যদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন করা নিষিদ্ধ। এ বিধান না মানলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধনও বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার আছে নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু বাস্তবে এ বিধান কার্যকর হচ্ছে না। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের এবং ছাত্রদল বিএনপির সহযোগী সংগঠন হিসেবেই এখনো পরিচিত। শিক্ষকদের মধ্যে নীল-সাদার বিভাজন শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নয়নের বিপরীতেই কাজ করছে বলে অনেকের বিশ্বাস। আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলো এখন পেটোয়া বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শিক্ষকদের রাজনীতি-সংশ্লিষ্টতাও নষ্ট করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ। কাজেই এসব বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই সময়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি

আপলোড টাইম : ০৯:২৩:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৯

নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে
আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে উত্তাল দেশের শিক্ষাঙ্গন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের তৃতীয় দিনে প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়েছে নতুন ১০ দফা দাবি। অন্যতম দাবি হচ্ছে, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তাঁদের দাবির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আবরার হত্যাকা-ের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, ছাত্ররা কয়েক দশক আগেও রাজনীতি করত আদর্শের জন্য। এখন তারা রাজনীতি করে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। রাজনৈতিক দলগুলোই পরিচালনা করে ছাত্রসংগঠনগুলোকে। রাজনৈতিক দলের ইন্ধনেই চর দখলের মতো তারা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুষ্ঠু রাজনৈতিকচর্চা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। এ জন্যই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছাত্রসংগঠনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদেরও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করেই ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে বিশিষ্টজনদের অভিমত। তাঁদের মতে, এখন যে ছাত্ররাজনীতি হচ্ছে, তা মানুষকে কাঁদাচ্ছে, মেরে ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে, তা শিক্ষার্থীদের কোনো উপকারে আসছে না। যে ছাত্ররাজনীতি মানুষ হত্যা করে, সেই রাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে এখনই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বুয়েটের তিন হলে সাত টর্চার সেলের খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র বা শিক্ষক; কোনো আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বা শ্রমিক এবং অন্য যেকোনো পেশার সদস্যদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন করা নিষিদ্ধ। এ বিধান না মানলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধনও বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার আছে নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু বাস্তবে এ বিধান কার্যকর হচ্ছে না। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের এবং ছাত্রদল বিএনপির সহযোগী সংগঠন হিসেবেই এখনো পরিচিত। শিক্ষকদের মধ্যে নীল-সাদার বিভাজন শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নয়নের বিপরীতেই কাজ করছে বলে অনেকের বিশ্বাস। আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলো এখন পেটোয়া বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শিক্ষকদের রাজনীতি-সংশ্লিষ্টতাও নষ্ট করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ। কাজেই এসব বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই সময়।