ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ছাত্রছাত্রীদের বইমুখী করাই এখন চ্যালেঞ্জ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৮১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় ১১ মাস বন্ধ থাকার পর ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের নির্দেশনা পেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চলছে জোর প্রস্তুতি। এরই মধ্যে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা জুনে এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা জুলাই বা আগস্টে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করে এ সিলেবাসে পাঠদান শেষে পরীক্ষার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কিন্তু পরীক্ষা নেওয়ার এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অটো পাসের দাবি জানিয়েছে এসএসসি ও সমমানের অনেক পরীক্ষার্থী। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অটো পাস দাবিতে বেশ কয়েক দিন ধরে মানববন্ধন করে আসছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, দীর্ঘ সময়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বইয়ের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এ বিপুল শিক্ষার্থীদের বইমুখী করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আরও আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া উচিত ছিল। পরীক্ষাগুলোও নেওয়া দরকার ছিল। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পাঠে বিচ্যুতি ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে গেছে। পড়াশোনা না করার একটা অভ্যাস তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার অভ্যাসে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবাইকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একবার অটো পাস দেওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অটো পাস চাওয়ার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে তা ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। সরকারের ঘোষণা দেওয়া উচিত, যে কোনো পরিস্থিতি এলেও আর অটো পাস দেওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা অটো পাসের অপেক্ষায় থাকবে অন্যদিকে পরীক্ষায় খারাপ করবে।’ অটো পাস দাবি করা এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময় প্রায় এক বছর তারা ক্লাস করতে পারেনি। সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও অনলাইনে তাদের জন্য ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ ক্লাসে যোগ দিতে পারেনি। যারা যোগ দিয়েছিল তারাও ক্লাসের পাঠে মনোনিবেশ করতে পারেনি। অধিকাংশই বলছে, এ ক্লাস কার্যকর হয়নি। তাদের দাবি, চলতি ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা ছাড়াই জেএসসি ও সমমান এবং নবম-দশম শ্রেণির মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে ফল প্রকাশ করা হোক। তারা বলছে, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। কারণ ২০২০ সালের প্রায় পুরোটাই গেছে করোনার মধ্যে। এ সময়ের কোনো ক্লাস, প্র্যাকটিকালে অংশ নেওয়া হয়নি। গতকাল টাঙ্গাইলে এক মানববন্ধন করে চলমান মহামারীর মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। করোনার মধ্যে কলেজে না যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে তারা। এদিকে আগামী জুনে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার লক্ষ্যে সোমবার একটি সংশোধিত সিলেবাস প্রকাশ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবি। এ সিলেবাস বাতিল করে তা আরও সংক্ষিপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ৭ বা ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ পরীক্ষার্থীদের আরও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। স্কুল খোলার পর যতটুকু ক্লাস করানো যাবে তার ওপর ভিত্তি করেই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া হবে।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাস আসছে ফেব্রুয়ারিতে :
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত এসএসসির পুনর্বিন্যস্ত সিলেবাস প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৭ বা ৮ তারিখের মধ্যে এই পরীক্ষার্থীদের আরও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হবে। স্কুল খোলার পর যতটুকু ক্লাস করানো যাবে তার ওপরেই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া হবে। গতকাল এনসিটিবি ভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত সোমবার এসএসসির যে সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছিল তা আগামী ৩ বা ৪ মাসে শেষ করা যাবে না। এ সিলেবাস নিয়ে আপত্তি এসেছে বিভিন্ন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী এসএসসির সিলেবাস নিয়ে বৈঠকে বসেন এনসিটিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ডা. দীপু মনি বলেন, স্কুল খোলার পর এসএসসির ক্ষেত্রে ৬০ দিন আর এইচএসসির ক্ষেত্রে ৮৪ দিনে যতটুকু পড়ানো হবে ততটুকুর মধ্যেই পরীক্ষা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ছাত্রছাত্রীদের বইমুখী করাই এখন চ্যালেঞ্জ

আপলোড টাইম : ১০:২৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১

সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় ১১ মাস বন্ধ থাকার পর ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের নির্দেশনা পেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চলছে জোর প্রস্তুতি। এরই মধ্যে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা জুনে এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা জুলাই বা আগস্টে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করে এ সিলেবাসে পাঠদান শেষে পরীক্ষার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কিন্তু পরীক্ষা নেওয়ার এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অটো পাসের দাবি জানিয়েছে এসএসসি ও সমমানের অনেক পরীক্ষার্থী। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অটো পাস দাবিতে বেশ কয়েক দিন ধরে মানববন্ধন করে আসছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, দীর্ঘ সময়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বইয়ের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এ বিপুল শিক্ষার্থীদের বইমুখী করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আরও আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া উচিত ছিল। পরীক্ষাগুলোও নেওয়া দরকার ছিল। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পাঠে বিচ্যুতি ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে গেছে। পড়াশোনা না করার একটা অভ্যাস তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার অভ্যাসে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবাইকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একবার অটো পাস দেওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অটো পাস চাওয়ার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে তা ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। সরকারের ঘোষণা দেওয়া উচিত, যে কোনো পরিস্থিতি এলেও আর অটো পাস দেওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা অটো পাসের অপেক্ষায় থাকবে অন্যদিকে পরীক্ষায় খারাপ করবে।’ অটো পাস দাবি করা এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময় প্রায় এক বছর তারা ক্লাস করতে পারেনি। সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও অনলাইনে তাদের জন্য ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ ক্লাসে যোগ দিতে পারেনি। যারা যোগ দিয়েছিল তারাও ক্লাসের পাঠে মনোনিবেশ করতে পারেনি। অধিকাংশই বলছে, এ ক্লাস কার্যকর হয়নি। তাদের দাবি, চলতি ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা ছাড়াই জেএসসি ও সমমান এবং নবম-দশম শ্রেণির মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে ফল প্রকাশ করা হোক। তারা বলছে, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। কারণ ২০২০ সালের প্রায় পুরোটাই গেছে করোনার মধ্যে। এ সময়ের কোনো ক্লাস, প্র্যাকটিকালে অংশ নেওয়া হয়নি। গতকাল টাঙ্গাইলে এক মানববন্ধন করে চলমান মহামারীর মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। করোনার মধ্যে কলেজে না যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে তারা। এদিকে আগামী জুনে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার লক্ষ্যে সোমবার একটি সংশোধিত সিলেবাস প্রকাশ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবি। এ সিলেবাস বাতিল করে তা আরও সংক্ষিপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ৭ বা ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ পরীক্ষার্থীদের আরও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। স্কুল খোলার পর যতটুকু ক্লাস করানো যাবে তার ওপর ভিত্তি করেই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া হবে।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাস আসছে ফেব্রুয়ারিতে :
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত এসএসসির পুনর্বিন্যস্ত সিলেবাস প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৭ বা ৮ তারিখের মধ্যে এই পরীক্ষার্থীদের আরও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হবে। স্কুল খোলার পর যতটুকু ক্লাস করানো যাবে তার ওপরেই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া হবে। গতকাল এনসিটিবি ভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত সোমবার এসএসসির যে সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছিল তা আগামী ৩ বা ৪ মাসে শেষ করা যাবে না। এ সিলেবাস নিয়ে আপত্তি এসেছে বিভিন্ন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী এসএসসির সিলেবাস নিয়ে বৈঠকে বসেন এনসিটিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ডা. দীপু মনি বলেন, স্কুল খোলার পর এসএসসির ক্ষেত্রে ৬০ দিন আর এইচএসসির ক্ষেত্রে ৮৪ দিনে যতটুকু পড়ানো হবে ততটুকুর মধ্যেই পরীক্ষা হবে।