ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চোখের সামনে বড় বোনের মৃত্যু দেখে ছোট বোনেরও মৃত্যৃ একই পরিবারের দু বউয়ের মৃত্যুতে এলাকায় শোক : একজনকে গোরস্তানে অন্যজনকে মাজারে শায়িত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৪০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৪৯৭ বার পড়া হয়েছে

DSC00196

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে উজ্জ্বল মাসুদ: চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাটে চোখের সামনে বড় বোনের মৃত্যু দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ছোট বোন। গতকাল বেলা ১২টার দিকে বাড়িতে কাপড় ধোয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন বুলবুলি। চোখের সামনে বোনের কাতরানো দেখে দ্রুত ছুটে গিয়ে তার পাশে যান ছোট বোন মর্জিনা বেগম মিনি। ১৫ মিনিটের মাথায় বড় বোন বুলবুলির মৃত্যু হলে তিনিও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে নেয়ার পথে ছোট বোন মর্জিনা বেগম মিনির মৃত্যু হয়। চুয়াডাঙ্গা বেলগাছীর দুই বোন বুলবুলি ও মর্জিনা বেগমের সাথে গাইদঘাটের দু ভাই আব্দুল মজিদ ও আব্দুল হালিমের বিয়ে হয়। ফলে দুই বোন একই বাড়ির বউ। এদিকে একই পরিবারের দুই বউ অর্থাৎ আপন দু বোনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে গাইদঘাট গ্রামে। গতকাল বিকেলে বড় বোন বুলবুলিকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। অপরদিকে, ছোট বোন মর্জিনা বেগম মিনি তরিকাপন্থী হওয়ায় গ্রামেই একটি মাজারে আগে থেকে নির্ধারণ করা কবরে শায়িত করা হয়। এঘটনায় দুই বোনের বেয়ান প্রতিবেশী রবিউল ইসলামের স্ত্রী অসুস্থ্য হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাইদঘাট রাজধানীপাড়ার হাজী আব্দুল মজিদের স্ত্রী বুলবুলি খাতুন (৬০) নিজ বাড়িতে কাপড় ধোয়ার কাজ করছিলেন। বেলা ১২টার দিকে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এসময় ছোট বোন মর্জিনা বেগম দ্রুত ছুটে এসে তার পাশে যান। কিছুক্ষণের মাথায় মৃত্যু হয় বুলবুলির। নিজের চোখের সামনে বড় বোনের মৃত্যু সইতে না পেরে তিনিও হৃদরোগে আক্রান্ত হন। দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া হয়। পৌছানোর আগেই মর্জিনা বেগমের মৃত্যু হলে তার লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। একই বাড়িতে দুজনের লাশ নেয়ার পর শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামজুড়ে।
চুয়াডাঙ্গা বেলগাছীর মৃত আব্দুল করিম ম-লের বড় মেয়ে বুলবুলি খাতুনের সাথে গাইদঘাটের মৃত আজহার আলী বিশ্বাসের ছেলে হাজী আব্দুল মজিদের বিয়ে হয়। এরপর ছোট মেয়ে মর্জিনা বেগম মিনির সাথে আজহার আলীর ছোট ছেলে আব্দুল হালিম দুদুর বিয়ে হয়। ফলে তারা দু বোন গাইদঘাটের দু ভাইয়ের স্ত্রী। একই বাড়িতে বসবাস করতেন।
এদিকে, বুলবুলির লাশ গতকাল বিকেলে গাইদঘাট গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে ছোট বোন মর্জিনা বেগম মিনি ছিলেন তরিকাপন্থী। প্রথমে তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আটরশির ভক্ত ছিলেন। সেসময় মর্জিনার স্বামী আব্দুল হালিম যুক্তিবাদী আটরশির মাওলানা ছিলেন। পরে তারা শাহানশাহে তরিকা নকসবন্দি মোজাদ্দেদীয়ার ভক্ত হন। তারা বছরদুয়েক আগে গাইদঘাট গ্রামে মাঠের মধ্যে নিজস্ব জমিতে একটি মাজার তৈরি করে। শাহানশাহে তরিকা নকসবন্দি মোজাদ্দেদীয়া আল চিশতি নিজামিয়া আশেকে আউলিয়া দরবার শরীফ নামে একটি দরবার করা হয়। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর জন্য দুইটি ইট পাথরের কবর তৈরি করে রাখা হয়। প্রতি বছরের ১৫ ডিসে¤॥^র সেখানে ওরশ শরীফের আয়োজন করা হয়। ওই দরবারে গতকাল সন্ধ্যার দিকে মরহুমার নামাজের জানাজা শেষে নির্ধারিত ওই কবরে মর্জিনা বেগমকে শায়িত করা হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর পর দিশেহারা পড়েছেন স্বামী আব্দুল হালিম। পাগলপ্রায় অবস্থায় মাজারের পাশেই ঘুরছিলেন তিনি।
হাজী আব্দুল মজিদের স্ত্রী বুলবুলি খাতুন ছিলেন ১ ছেলে ও ২ মেয়ের জননী। আব্দুল হালিম দুদুর স্ত্রী মর্জিনা বেগম মিনি দাম্পত্য জীবনে দুই সন্তান হলেও তারা মারা যায়। তাদের ১ মেয়ে রয়েছে।
বড় বোনের মৃত্যুতে ছোট বোনের মৃত্যুর ঘটনা এবং দুই বোন একই বাড়ির দুই ভাইয়ের বউ হওয়ায় তাদের মৃত্যুতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গ্রামের মানুষের ঢল নামে তাদের বাড়িতে। অন্যদিকে মর্জিনা বেগমকে শেষ দেখা দেখতে তার ভক্ত আশেকানরাও ভীড় জমায় ওই মাজারে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চোখের সামনে বড় বোনের মৃত্যু দেখে ছোট বোনেরও মৃত্যৃ একই পরিবারের দু বউয়ের মৃত্যুতে এলাকায় শোক : একজনকে গোরস্তানে অন্যজনকে মাজারে শায়িত

আপলোড টাইম : ১১:৪০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৭

DSC00196

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে উজ্জ্বল মাসুদ: চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাটে চোখের সামনে বড় বোনের মৃত্যু দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ছোট বোন। গতকাল বেলা ১২টার দিকে বাড়িতে কাপড় ধোয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন বুলবুলি। চোখের সামনে বোনের কাতরানো দেখে দ্রুত ছুটে গিয়ে তার পাশে যান ছোট বোন মর্জিনা বেগম মিনি। ১৫ মিনিটের মাথায় বড় বোন বুলবুলির মৃত্যু হলে তিনিও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে নেয়ার পথে ছোট বোন মর্জিনা বেগম মিনির মৃত্যু হয়। চুয়াডাঙ্গা বেলগাছীর দুই বোন বুলবুলি ও মর্জিনা বেগমের সাথে গাইদঘাটের দু ভাই আব্দুল মজিদ ও আব্দুল হালিমের বিয়ে হয়। ফলে দুই বোন একই বাড়ির বউ। এদিকে একই পরিবারের দুই বউ অর্থাৎ আপন দু বোনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে গাইদঘাট গ্রামে। গতকাল বিকেলে বড় বোন বুলবুলিকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। অপরদিকে, ছোট বোন মর্জিনা বেগম মিনি তরিকাপন্থী হওয়ায় গ্রামেই একটি মাজারে আগে থেকে নির্ধারণ করা কবরে শায়িত করা হয়। এঘটনায় দুই বোনের বেয়ান প্রতিবেশী রবিউল ইসলামের স্ত্রী অসুস্থ্য হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাইদঘাট রাজধানীপাড়ার হাজী আব্দুল মজিদের স্ত্রী বুলবুলি খাতুন (৬০) নিজ বাড়িতে কাপড় ধোয়ার কাজ করছিলেন। বেলা ১২টার দিকে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এসময় ছোট বোন মর্জিনা বেগম দ্রুত ছুটে এসে তার পাশে যান। কিছুক্ষণের মাথায় মৃত্যু হয় বুলবুলির। নিজের চোখের সামনে বড় বোনের মৃত্যু সইতে না পেরে তিনিও হৃদরোগে আক্রান্ত হন। দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া হয়। পৌছানোর আগেই মর্জিনা বেগমের মৃত্যু হলে তার লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। একই বাড়িতে দুজনের লাশ নেয়ার পর শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামজুড়ে।
চুয়াডাঙ্গা বেলগাছীর মৃত আব্দুল করিম ম-লের বড় মেয়ে বুলবুলি খাতুনের সাথে গাইদঘাটের মৃত আজহার আলী বিশ্বাসের ছেলে হাজী আব্দুল মজিদের বিয়ে হয়। এরপর ছোট মেয়ে মর্জিনা বেগম মিনির সাথে আজহার আলীর ছোট ছেলে আব্দুল হালিম দুদুর বিয়ে হয়। ফলে তারা দু বোন গাইদঘাটের দু ভাইয়ের স্ত্রী। একই বাড়িতে বসবাস করতেন।
এদিকে, বুলবুলির লাশ গতকাল বিকেলে গাইদঘাট গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে ছোট বোন মর্জিনা বেগম মিনি ছিলেন তরিকাপন্থী। প্রথমে তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আটরশির ভক্ত ছিলেন। সেসময় মর্জিনার স্বামী আব্দুল হালিম যুক্তিবাদী আটরশির মাওলানা ছিলেন। পরে তারা শাহানশাহে তরিকা নকসবন্দি মোজাদ্দেদীয়ার ভক্ত হন। তারা বছরদুয়েক আগে গাইদঘাট গ্রামে মাঠের মধ্যে নিজস্ব জমিতে একটি মাজার তৈরি করে। শাহানশাহে তরিকা নকসবন্দি মোজাদ্দেদীয়া আল চিশতি নিজামিয়া আশেকে আউলিয়া দরবার শরীফ নামে একটি দরবার করা হয়। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর জন্য দুইটি ইট পাথরের কবর তৈরি করে রাখা হয়। প্রতি বছরের ১৫ ডিসে¤॥^র সেখানে ওরশ শরীফের আয়োজন করা হয়। ওই দরবারে গতকাল সন্ধ্যার দিকে মরহুমার নামাজের জানাজা শেষে নির্ধারিত ওই কবরে মর্জিনা বেগমকে শায়িত করা হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর পর দিশেহারা পড়েছেন স্বামী আব্দুল হালিম। পাগলপ্রায় অবস্থায় মাজারের পাশেই ঘুরছিলেন তিনি।
হাজী আব্দুল মজিদের স্ত্রী বুলবুলি খাতুন ছিলেন ১ ছেলে ও ২ মেয়ের জননী। আব্দুল হালিম দুদুর স্ত্রী মর্জিনা বেগম মিনি দাম্পত্য জীবনে দুই সন্তান হলেও তারা মারা যায়। তাদের ১ মেয়ে রয়েছে।
বড় বোনের মৃত্যুতে ছোট বোনের মৃত্যুর ঘটনা এবং দুই বোন একই বাড়ির দুই ভাইয়ের বউ হওয়ায় তাদের মৃত্যুতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গ্রামের মানুষের ঢল নামে তাদের বাড়িতে। অন্যদিকে মর্জিনা বেগমকে শেষ দেখা দেখতে তার ভক্ত আশেকানরাও ভীড় জমায় ওই মাজারে।