ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০১৯
  • / ২৪০ বার পড়া হয়েছে

রাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে বিদ্যুৎ বিভ্রাট : ভুতুড়ে পরিবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র ভ্যাপসা গরম। জনজীবন অতিষ্ঠ। এরই মাঝে চুয়াডাঙ্গা শহরজুড়ে বিদ্যুতের অব্যাহত কম ভোল্টেজ ও লোডশেডিং। চুয়াডাঙ্গা পৌরশহর ও জেলার বেশকিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কারী প্রতিষ্ঠান পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) জানাতে পারছে না কবে এ সমস্যার সমাধান হবে। এদিকে, বুধবার রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সময় ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। ফলে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ভ্যাপসা গরমের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার শহরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রায় তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আবাসিকের পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্যিক ও স্বাস্থ্যসেবা খাতও বিঘিœত হচ্ছে এ কারণে। ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন দুর্ভোগের কথা স্বীকার করলেও কবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তা জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিদ্যুৎ বিতরণ নির্ভরশীল। খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের স্বল্পতার কারনে এ অঞ্চলে তুলনামূলক কম ভোল্টেজ পাওয়া যাচ্ছে। লো ভোল্টেজের সাথে বিদ্যুৎ বিচ্যুতির/লোডশেডের কোন সম্পর্ক নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত করার দিন (৪ মে) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন ৫ মে তা বেড়ে ৯ ডিগ্রি বেড়ে ৩৫ ডিগ্রিতে পৌঁছে যায়। ৮ মে রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৫ থেকে ১৪ মে জেলার গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ওজোপাডিকো সূত্রে জানা গেছে, ওজোপাডিকোর আবাসিক গ্রাহকই ২৭ হাজার ৯৩১। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ৪ হাজার ৪১৭, সেচ ১৫৫, শিল্পকলকারখানা ৩২, ক্ষুদ্রশিল্প ৪৩২, মসজিদ-মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৫৬ এবং অন্যান্য ৭২।
এদিকে, বিভিন্ন পাওয়ার হাউস বা উৎপাদনকেন্দ্র ফল্টের কারণে বন্ধ আছে। জানাগেছে, গ্রিড থেকে ১৩২ কেভি ভোল্ট পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ৯৯ থেকে ১০০, কখনো কখনো ১০৫ থেকে ১১০ পাওয়া যাচ্ছে। ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন জানান, চুয়াডাঙ্গার জাফরপুরে অবস্থিত পিজিসিবির গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে তা গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করে থাকেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ পাওয়ায় কম ভোল্টেজের সমস্যা হচ্ছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভোল্ট নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পরামর্শক ওয়ালিউর রহমান নয়ন বলেন, ১৫ দিন ধরে কম ভোল্টেজের কারণে অপারেশন থিয়েটারের এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) চালু করা যাচ্ছে না। তীব্র ও ভ্যাপসা গরমের ভেতরে অপারেশন করতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসক ও নার্সদের পাশাপাশি রোগীর অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়ছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কম ভোল্টেজ চরম আকার ধারণ করেছে। নিউ জনতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক নাহিদ হাসান বলেন, এক্স-রে মেশিন কোনোভাবেই চালু করা যাচ্ছে না।
সবমিলিয়ে চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষ বলছে, এ সমস্যার অতিদ্রুত সমাধান প্রয়োজন। কিভাবে এ সমস্যা থেকে উত্তোরন পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চুয়াডাঙ্গায় এ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসংখ্যা ৩৩ হাজার। তাদের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গায় ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ

আপলোড টাইম : ১০:১৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০১৯

রাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে বিদ্যুৎ বিভ্রাট : ভুতুড়ে পরিবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র ভ্যাপসা গরম। জনজীবন অতিষ্ঠ। এরই মাঝে চুয়াডাঙ্গা শহরজুড়ে বিদ্যুতের অব্যাহত কম ভোল্টেজ ও লোডশেডিং। চুয়াডাঙ্গা পৌরশহর ও জেলার বেশকিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কারী প্রতিষ্ঠান পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) জানাতে পারছে না কবে এ সমস্যার সমাধান হবে। এদিকে, বুধবার রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সময় ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। ফলে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ভ্যাপসা গরমের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার শহরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রায় তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আবাসিকের পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্যিক ও স্বাস্থ্যসেবা খাতও বিঘিœত হচ্ছে এ কারণে। ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন দুর্ভোগের কথা স্বীকার করলেও কবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তা জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিদ্যুৎ বিতরণ নির্ভরশীল। খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের স্বল্পতার কারনে এ অঞ্চলে তুলনামূলক কম ভোল্টেজ পাওয়া যাচ্ছে। লো ভোল্টেজের সাথে বিদ্যুৎ বিচ্যুতির/লোডশেডের কোন সম্পর্ক নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত করার দিন (৪ মে) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন ৫ মে তা বেড়ে ৯ ডিগ্রি বেড়ে ৩৫ ডিগ্রিতে পৌঁছে যায়। ৮ মে রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৫ থেকে ১৪ মে জেলার গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ওজোপাডিকো সূত্রে জানা গেছে, ওজোপাডিকোর আবাসিক গ্রাহকই ২৭ হাজার ৯৩১। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ৪ হাজার ৪১৭, সেচ ১৫৫, শিল্পকলকারখানা ৩২, ক্ষুদ্রশিল্প ৪৩২, মসজিদ-মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৫৬ এবং অন্যান্য ৭২।
এদিকে, বিভিন্ন পাওয়ার হাউস বা উৎপাদনকেন্দ্র ফল্টের কারণে বন্ধ আছে। জানাগেছে, গ্রিড থেকে ১৩২ কেভি ভোল্ট পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ৯৯ থেকে ১০০, কখনো কখনো ১০৫ থেকে ১১০ পাওয়া যাচ্ছে। ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন জানান, চুয়াডাঙ্গার জাফরপুরে অবস্থিত পিজিসিবির গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে তা গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করে থাকেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ পাওয়ায় কম ভোল্টেজের সমস্যা হচ্ছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভোল্ট নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পরামর্শক ওয়ালিউর রহমান নয়ন বলেন, ১৫ দিন ধরে কম ভোল্টেজের কারণে অপারেশন থিয়েটারের এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) চালু করা যাচ্ছে না। তীব্র ও ভ্যাপসা গরমের ভেতরে অপারেশন করতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসক ও নার্সদের পাশাপাশি রোগীর অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়ছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কম ভোল্টেজ চরম আকার ধারণ করেছে। নিউ জনতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক নাহিদ হাসান বলেন, এক্স-রে মেশিন কোনোভাবেই চালু করা যাচ্ছে না।
সবমিলিয়ে চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষ বলছে, এ সমস্যার অতিদ্রুত সমাধান প্রয়োজন। কিভাবে এ সমস্যা থেকে উত্তোরন পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চুয়াডাঙ্গায় এ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসংখ্যা ৩৩ হাজার। তাদের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই।