ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় থামছেনা গুজব-আতঙ্ক : মিলছেনা প্রমাণ : সত্যতা খুঁজতে পুলিশও হয়রান! : হাজরাহাটি থেকে জামালপুরের দুই যুবককে ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা : দলিয়ারপুরে শিশুকন্যা অপহরণ চেষ্টা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:২১:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০১৭
  • / ৪১৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গায় শিশু ও নারী অপহরণ গুজব কোনোভাবেই যেনো থামছে না। গতকালও চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড় ও দামুড়হুদার দলিয়ারপুরে শিশু অপহরণের গুজব রটে। তবে একটি ঘটনারও সত্যতা মেলানো সম্ভব হয়নি। সত্যতা মেলাতে গিয়ে পুলিশও গলদঘর্ম। জেলার বিভিন্ন এলাকায় অপরিচিত কোন মানুষের চলাফেরা করতে দেখলেই আঁতকে উঠছেন অনেকে। দিনদুপুরে বাড়ি-ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন। গুজব রটলেও মিলছেনা কোন সত্যতা! তবুও কেনো আতঙ্ক? অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের মহিলাদের কাছে শ্যাকড়া পরিচয় দিয়ে সন্দেহজনক আচরণ করে দুই যুবক। পরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়। এসময় তাদের কাছে থেকে রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাদের চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নেয়া হয়।
গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলতদিয়াড় কোরিয়াপাড়ায় অটোচালক সজীবের শিশুকণ্যা সুমাইয়াকে (২) নিয়ে ঘরের বারান্দায় শুয়ে ছিলেন সজীবের বৃদ্ধা নানি আলতা বেগম। এসময় কেউ সুমাইয়ার পা ধরে টেনে নেয়ার চেষ্টা করছে বুঝতে পারেন শিশুকণ্যার বড় মা ওই বৃদ্ধা। এসময় ‘মেয়েকে নিয়ে গেলো- বাচাও বাচাও’ বলে আকস্মিক চিৎকার করেন আলতা বেগম। ফলে অপহরকরা পালিয়ে যায় বলেও জানান তিনি। আলতা বেগম জানান, কালো বোরকা পড়া দুইজন তার নাতিছেলে সজীবের শিশুকণ্যাকে অপহরণের চেষ্টা করে।
এদিকে, গতকাল বুধবার রাতে দামুড়হুদা দলিয়ারপুরের সুমনের শিশুকণ্যা সুবর্ণাকে (৪) নিয়ে ঘরের বারান্দায় শুয়ে ছিলেন তার দাদী। রাত সাড়ে ৯টার দিকে দু’জন লোক তার কোলে ঘুমিয়ে থাকা সুবর্ণাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে ঘুম ভেঙে যায় দাদির। এসময় সুবর্ণার পা চেপে ধরেন তিনি। অপহরকরা জোর করে শিশুকণ্যাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে চিৎকার দেন তার দাদী। একইসাথে চিৎকার করেন সুবর্ণার মা। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে আসার আগেই শিশুকণ্যাকে রেখে বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানের মধ্যে দিয়ে মাঠের দিকে পালিয়ে যায় অপহরনকারীরা। খবর পেয়ে দলিয়ারপুর ক্যাম্প ইনর্চাজ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার বিবরণ শোনেন। সুর্বণার দাদি জানান, দু’জন অপহরনকারির মধ্যে একজন বোরকা পড়া অন্যজন লুঙ্গি ও শার্ট পড়ে এসেছিলো। গ্রামবাসি জানায়, তাদের চিৎকার ও স্থানীয়দের হৈচৈ শুনে পার্শ্ববর্তি মজলিশপুর ও রামনগরের সজাগ ব্যক্তিরা ছুটে আসে দলিয়ারপুর মাঠের দিকে। তবে অপহরকদের কাউকে ধরতে পারেনি তারা।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের কাছে নিজেদের শ্যাকড়া বলে পরিচয় দেয় দুই যুবক। তারা স্বর্ণের গহনা পরিষ্কারের জন্য এলাকার মহিলাদের কাছে যায়। এসময় স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ হলে ওই দুই যুবকের ঠিকানা জানতে চাইলে তাদের বাড়ি জামালপুর জেলায় বলে জানায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ আরও ঘনিভূত হয়। পরে তাদের কাছে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ব্যাগে থাকা তরলজাতীয় দ্রব্য চেতনানাশক পদার্থ বলে ধারণা করেন স্থানীয়রা। পরে গ্রামবাসী তাদের ধরে  পুলিশে খবর দিলে সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জসিম উদ্দিন ও এসআই শরিফ উদ্দিন তাদের আটক করে থানায় নেন। আটককৃতরা হলো, জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার গাবেরগ্রাম এলাকার দুলালের ছেলে শামিম ও একই এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে জাকির হোসেন। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাইদঘাট গ্রামে সন্দেহমূলক আচরণ করায় সেলিম নামের এক যুবককে ধরে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। তার বাড়িও জামালপুর জেলায়।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়াড়ের কোরিয়াপাড়ায় শিশুকণ্যা সুমাইয়া অপহরণ হয়নি। সে বাড়িতেই আছে। এ ধরণের ঘটনার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। সুমাইয়ার পাশে থাকা তার বড় মা আলতা বেগমের বয়স ৮০ বছরেরও বেশি। তিনি অসুস্থ্য পক্ষাঘাতগ্রস্থ্য, তিনি ঘুমের ঘোরে এই কথা বলেছেন। তবে, এ ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গায় থামছেনা গুজব-আতঙ্ক : মিলছেনা প্রমাণ : সত্যতা খুঁজতে পুলিশও হয়রান! : হাজরাহাটি থেকে জামালপুরের দুই যুবককে ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা : দলিয়ারপুরে শিশুকন্যা অপহরণ চেষ্টা

আপলোড টাইম : ০৪:২১:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গায় শিশু ও নারী অপহরণ গুজব কোনোভাবেই যেনো থামছে না। গতকালও চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড় ও দামুড়হুদার দলিয়ারপুরে শিশু অপহরণের গুজব রটে। তবে একটি ঘটনারও সত্যতা মেলানো সম্ভব হয়নি। সত্যতা মেলাতে গিয়ে পুলিশও গলদঘর্ম। জেলার বিভিন্ন এলাকায় অপরিচিত কোন মানুষের চলাফেরা করতে দেখলেই আঁতকে উঠছেন অনেকে। দিনদুপুরে বাড়ি-ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন। গুজব রটলেও মিলছেনা কোন সত্যতা! তবুও কেনো আতঙ্ক? অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের মহিলাদের কাছে শ্যাকড়া পরিচয় দিয়ে সন্দেহজনক আচরণ করে দুই যুবক। পরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়। এসময় তাদের কাছে থেকে রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাদের চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নেয়া হয়।
গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলতদিয়াড় কোরিয়াপাড়ায় অটোচালক সজীবের শিশুকণ্যা সুমাইয়াকে (২) নিয়ে ঘরের বারান্দায় শুয়ে ছিলেন সজীবের বৃদ্ধা নানি আলতা বেগম। এসময় কেউ সুমাইয়ার পা ধরে টেনে নেয়ার চেষ্টা করছে বুঝতে পারেন শিশুকণ্যার বড় মা ওই বৃদ্ধা। এসময় ‘মেয়েকে নিয়ে গেলো- বাচাও বাচাও’ বলে আকস্মিক চিৎকার করেন আলতা বেগম। ফলে অপহরকরা পালিয়ে যায় বলেও জানান তিনি। আলতা বেগম জানান, কালো বোরকা পড়া দুইজন তার নাতিছেলে সজীবের শিশুকণ্যাকে অপহরণের চেষ্টা করে।
এদিকে, গতকাল বুধবার রাতে দামুড়হুদা দলিয়ারপুরের সুমনের শিশুকণ্যা সুবর্ণাকে (৪) নিয়ে ঘরের বারান্দায় শুয়ে ছিলেন তার দাদী। রাত সাড়ে ৯টার দিকে দু’জন লোক তার কোলে ঘুমিয়ে থাকা সুবর্ণাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে ঘুম ভেঙে যায় দাদির। এসময় সুবর্ণার পা চেপে ধরেন তিনি। অপহরকরা জোর করে শিশুকণ্যাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে চিৎকার দেন তার দাদী। একইসাথে চিৎকার করেন সুবর্ণার মা। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে আসার আগেই শিশুকণ্যাকে রেখে বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানের মধ্যে দিয়ে মাঠের দিকে পালিয়ে যায় অপহরনকারীরা। খবর পেয়ে দলিয়ারপুর ক্যাম্প ইনর্চাজ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার বিবরণ শোনেন। সুর্বণার দাদি জানান, দু’জন অপহরনকারির মধ্যে একজন বোরকা পড়া অন্যজন লুঙ্গি ও শার্ট পড়ে এসেছিলো। গ্রামবাসি জানায়, তাদের চিৎকার ও স্থানীয়দের হৈচৈ শুনে পার্শ্ববর্তি মজলিশপুর ও রামনগরের সজাগ ব্যক্তিরা ছুটে আসে দলিয়ারপুর মাঠের দিকে। তবে অপহরকদের কাউকে ধরতে পারেনি তারা।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের কাছে নিজেদের শ্যাকড়া বলে পরিচয় দেয় দুই যুবক। তারা স্বর্ণের গহনা পরিষ্কারের জন্য এলাকার মহিলাদের কাছে যায়। এসময় স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ হলে ওই দুই যুবকের ঠিকানা জানতে চাইলে তাদের বাড়ি জামালপুর জেলায় বলে জানায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ আরও ঘনিভূত হয়। পরে তাদের কাছে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ব্যাগে থাকা তরলজাতীয় দ্রব্য চেতনানাশক পদার্থ বলে ধারণা করেন স্থানীয়রা। পরে গ্রামবাসী তাদের ধরে  পুলিশে খবর দিলে সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জসিম উদ্দিন ও এসআই শরিফ উদ্দিন তাদের আটক করে থানায় নেন। আটককৃতরা হলো, জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার গাবেরগ্রাম এলাকার দুলালের ছেলে শামিম ও একই এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে জাকির হোসেন। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাইদঘাট গ্রামে সন্দেহমূলক আচরণ করায় সেলিম নামের এক যুবককে ধরে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। তার বাড়িও জামালপুর জেলায়।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়াড়ের কোরিয়াপাড়ায় শিশুকণ্যা সুমাইয়া অপহরণ হয়নি। সে বাড়িতেই আছে। এ ধরণের ঘটনার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। সুমাইয়ার পাশে থাকা তার বড় মা আলতা বেগমের বয়স ৮০ বছরেরও বেশি। তিনি অসুস্থ্য পক্ষাঘাতগ্রস্থ্য, তিনি ঘুমের ঘোরে এই কথা বলেছেন। তবে, এ ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।