ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় গভীর রাতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণডাকাতি : স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে জখম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৪:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অগাস্ট ২০১৮
  • / ৪৭৭ বার পড়া হয়েছে

মোবাইলফোন নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট : আতঙ্কে গ্রামবাসী
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আফজালুল হক: চুয়াডাঙ্গা সদরের সরিষাডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদহ, বলিয়ারপুরসহ তিন গ্রামে গভীর রাতে ৫ বাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় আখিতারা (১২) নামের স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে জখম করেছে ডাকাতদল। এর আগে নাগদহ-পুটিমারি সড়কে এক আলমসাধু চালক ও সাথে থাকা এক যুবকের নিকট থেকে নগদ টাকা ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয় এই ডাকাতদল। খবর পেয়ে ঘটনার পরই ঘোলদাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইসলাম আলী ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন।
জানা যায়, নাগদহ গ্রামের কদমতলা ব্রিজপাড়ার মৃত মনি মালিতার ছেলে আসাবুলের বাড়িতে পানি খাওযার কথা বলে ঢোকে এক ডাকাত দল। পরে আসামুলের মেয়ে স্কুলছাত্রী আখিতারা চিৎকার করলে তাকে ডাল দিয়ে পিটিয়ে জখম করে এবং আসাবুলকে দড়ি দিয়ে বেধে রাখে এ ডাকাতদল। এসময় তারা নগদ ৫শ’ টাকা ও বেশ কিছু নতুন জামা কাপড় নিয়ে যায়। এ বিষয়ে আসাবুল বলেন, তারা ১০/১২ জন ছিল সবাই ধারালো অস্ত্র হাতে। পানি খাওয়ার কথা বলে দরজা খুললে প্রথমে আমাকে বেধে ফেলে এবং আমার মেয়ে চিৎকার দিলে তাকে পিটিয়ে জখম করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে আমার ঘরে থাকা পান্তা ভাত, মাছ ভাজি ও ডিম রান্না খেয়ে বাইরে থেকে দরজা দিয়ে চলে যায় তারা। পরে একই এলাকার সাত্তার আলীর ছেলে আমির আলীর বাড়ীতে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২টি মোবাইল ফোন, ১টি বিদেশি টর্চ লাইট ও ১টি হাসুয়া নিয়ে যায়।


এরপর চুয়াডাঙ্গা সদর সীমান্তবর্তী আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদহ ইউনিয়নের বলিয়ারপুর মৃত রোকমান বিশ্বাসের ছেলে জামাত আলীর বাড়ি ১০/১২ জন ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে বলে তোদের বাড়িতে বোমা ও অবৈধ অস্ত্র আছে। পরে দরজা খুললেই তারা পরিবারের লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গামছা দিয়ে সবাইকে বেধে ফেলে। এ সময় তাদের বাড়তে থাকা নগত ৬৬ হাজার ৫শ’ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, ৪ জোড়া সোনার কানের দুল, ১ জোড়া স্বর্ণের হাতের বালা, ২ জোড়া স্বর্ণের তোড়া, রুপার হার ১ জোড়া, স্বর্ণের বালা ১ জোড়া ও ১টি লুঙ্গি নিয়ে যায় ডাকাতদল।
ঘটনার বর্নণা দিতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের সরিষাডাঙ্গার গ্রামের ব্রিজপাড়ার আব্দুল আজিজের ছেলে রমজান আলী বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে আমার বাড়ির দরজা খুলতে বলে। পরে ১০/১২ জন ডাকাতদল ধারালো অস্ত্র আমার ও আমার স্ত্রীর গলাই ধরে। পরে বাড়িতে থাকা নগদ দু’হাজার টাকা, ১টি দা, ১টি শাবল, ২টি হেসো ও কিছু নতুন কাপড় নিয়ে যায়। পরে একই এলাকার ক্যানালপাড়ার মৃত মুতালেব মন্ডলের ছেলে ফজলুর বাড়িতে গিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ১০ হাজার টাকা, ২টি মোবাইল ফোন, ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও জামা কাপড় নিয়ে যায়।
এরপর যশোর জেলা থেকে আসা কাথুলি সোনাতনপুর মাঠে থাকা বয়রাওয়ালাদের নিকট থেকে ১১টি মোবাইল ফোন, নগদ ৩ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এর আগে সর্বপ্রথম নাগদহ-পুটিমারি সড়কে একটি আলমসাধুকে গতিরোধ করে এ ডাকাতদল। পরে ভোলারদাড়ী গ্রামের আরমান আলির ছেলে সিদ্দীক আলমসাধু চালক ও সাথে থাকা একই এলাকার আকুব্বরের ছেলে ইলিয়াসে নিকটে থাকা নগদ সাড়ে ৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ভুক্তভোগিরা বলেন, ডাকাতদলের মধ্যে শুধু একজনের মুখ বাধা ছিল কাপড় দিয়ে। বাকিগুলো সবার মুখ খোলা। তবে তাদের বয়স ৩০ এর কোটায়। এ নিয়ে গ্রামবাসির মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সরিষাডাঙ্গা গ্রামবাসি অভিযোগ করে বলেন, বিগত ৩ বছরের মধ্যে আমাদের এলাকায় কোন পুলিশ প্রসাশন আসেনি কোন কারণ ছাড়া। গত ১ মাসে এ নিয়ে চার বার ডাকাতির ঘটনা ঘটলো। তবে এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাওকে আটক করতে পারে নাই। আমাদের একটায় দাবি পুলিশ রাতে একবার হলেও যেন এই গ্রাম থেকে টহল দিয়ে যেন যায়। তাইলে ডাকাতির ঘটনা কমতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এদিকে, গতকাল বিকাল পর্যন্ত সদরের সরিষাডাঙ্গা গ্রামে দুই বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা জানেন না সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসেন। পরে সন্ধ্যার আগে ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। এ নিয়ে এলাকায় থমথমে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতে এই প্রতিবেদককে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কাছে শুনে ঘটনাস্থলে বিকালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় এই কর্মকর্তা।
এবিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। তবে শিঘ্রই অভিযুক্তদের ধরতে পারবো।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কলিমুল্লাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গায় গভীর রাতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণডাকাতি : স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে জখম

আপলোড টাইম : ১০:৪৪:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অগাস্ট ২০১৮

মোবাইলফোন নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট : আতঙ্কে গ্রামবাসী
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আফজালুল হক: চুয়াডাঙ্গা সদরের সরিষাডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদহ, বলিয়ারপুরসহ তিন গ্রামে গভীর রাতে ৫ বাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় আখিতারা (১২) নামের স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে জখম করেছে ডাকাতদল। এর আগে নাগদহ-পুটিমারি সড়কে এক আলমসাধু চালক ও সাথে থাকা এক যুবকের নিকট থেকে নগদ টাকা ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয় এই ডাকাতদল। খবর পেয়ে ঘটনার পরই ঘোলদাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইসলাম আলী ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন।
জানা যায়, নাগদহ গ্রামের কদমতলা ব্রিজপাড়ার মৃত মনি মালিতার ছেলে আসাবুলের বাড়িতে পানি খাওযার কথা বলে ঢোকে এক ডাকাত দল। পরে আসামুলের মেয়ে স্কুলছাত্রী আখিতারা চিৎকার করলে তাকে ডাল দিয়ে পিটিয়ে জখম করে এবং আসাবুলকে দড়ি দিয়ে বেধে রাখে এ ডাকাতদল। এসময় তারা নগদ ৫শ’ টাকা ও বেশ কিছু নতুন জামা কাপড় নিয়ে যায়। এ বিষয়ে আসাবুল বলেন, তারা ১০/১২ জন ছিল সবাই ধারালো অস্ত্র হাতে। পানি খাওয়ার কথা বলে দরজা খুললে প্রথমে আমাকে বেধে ফেলে এবং আমার মেয়ে চিৎকার দিলে তাকে পিটিয়ে জখম করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে আমার ঘরে থাকা পান্তা ভাত, মাছ ভাজি ও ডিম রান্না খেয়ে বাইরে থেকে দরজা দিয়ে চলে যায় তারা। পরে একই এলাকার সাত্তার আলীর ছেলে আমির আলীর বাড়ীতে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২টি মোবাইল ফোন, ১টি বিদেশি টর্চ লাইট ও ১টি হাসুয়া নিয়ে যায়।


এরপর চুয়াডাঙ্গা সদর সীমান্তবর্তী আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদহ ইউনিয়নের বলিয়ারপুর মৃত রোকমান বিশ্বাসের ছেলে জামাত আলীর বাড়ি ১০/১২ জন ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে বলে তোদের বাড়িতে বোমা ও অবৈধ অস্ত্র আছে। পরে দরজা খুললেই তারা পরিবারের লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গামছা দিয়ে সবাইকে বেধে ফেলে। এ সময় তাদের বাড়তে থাকা নগত ৬৬ হাজার ৫শ’ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, ৪ জোড়া সোনার কানের দুল, ১ জোড়া স্বর্ণের হাতের বালা, ২ জোড়া স্বর্ণের তোড়া, রুপার হার ১ জোড়া, স্বর্ণের বালা ১ জোড়া ও ১টি লুঙ্গি নিয়ে যায় ডাকাতদল।
ঘটনার বর্নণা দিতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের সরিষাডাঙ্গার গ্রামের ব্রিজপাড়ার আব্দুল আজিজের ছেলে রমজান আলী বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে আমার বাড়ির দরজা খুলতে বলে। পরে ১০/১২ জন ডাকাতদল ধারালো অস্ত্র আমার ও আমার স্ত্রীর গলাই ধরে। পরে বাড়িতে থাকা নগদ দু’হাজার টাকা, ১টি দা, ১টি শাবল, ২টি হেসো ও কিছু নতুন কাপড় নিয়ে যায়। পরে একই এলাকার ক্যানালপাড়ার মৃত মুতালেব মন্ডলের ছেলে ফজলুর বাড়িতে গিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ১০ হাজার টাকা, ২টি মোবাইল ফোন, ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও জামা কাপড় নিয়ে যায়।
এরপর যশোর জেলা থেকে আসা কাথুলি সোনাতনপুর মাঠে থাকা বয়রাওয়ালাদের নিকট থেকে ১১টি মোবাইল ফোন, নগদ ৩ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এর আগে সর্বপ্রথম নাগদহ-পুটিমারি সড়কে একটি আলমসাধুকে গতিরোধ করে এ ডাকাতদল। পরে ভোলারদাড়ী গ্রামের আরমান আলির ছেলে সিদ্দীক আলমসাধু চালক ও সাথে থাকা একই এলাকার আকুব্বরের ছেলে ইলিয়াসে নিকটে থাকা নগদ সাড়ে ৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ভুক্তভোগিরা বলেন, ডাকাতদলের মধ্যে শুধু একজনের মুখ বাধা ছিল কাপড় দিয়ে। বাকিগুলো সবার মুখ খোলা। তবে তাদের বয়স ৩০ এর কোটায়। এ নিয়ে গ্রামবাসির মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সরিষাডাঙ্গা গ্রামবাসি অভিযোগ করে বলেন, বিগত ৩ বছরের মধ্যে আমাদের এলাকায় কোন পুলিশ প্রসাশন আসেনি কোন কারণ ছাড়া। গত ১ মাসে এ নিয়ে চার বার ডাকাতির ঘটনা ঘটলো। তবে এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাওকে আটক করতে পারে নাই। আমাদের একটায় দাবি পুলিশ রাতে একবার হলেও যেন এই গ্রাম থেকে টহল দিয়ে যেন যায়। তাইলে ডাকাতির ঘটনা কমতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এদিকে, গতকাল বিকাল পর্যন্ত সদরের সরিষাডাঙ্গা গ্রামে দুই বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা জানেন না সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসেন। পরে সন্ধ্যার আগে ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। এ নিয়ে এলাকায় থমথমে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতে এই প্রতিবেদককে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কাছে শুনে ঘটনাস্থলে বিকালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় এই কর্মকর্তা।
এবিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। তবে শিঘ্রই অভিযুক্তদের ধরতে পারবো।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কলিমুল্লাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে।