ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় ১০ হাজার কৃষক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:২৫:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৭
  • / ৪০৯ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স জোনের কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বোরো মৌসুমে জেলার কৃষকরা প্রায় এক মাস আগে বোরো বীজতলা তৈরী ও বর্তমানে রোপন উপযোগী হলেও চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স জোনের কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি এবং স্কীম ম্যানেজারদের মধ্যে স্কীম ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতায় স্কীমভুক্ত জেলার ১০ হাজার কৃষক এখোনো ধান বীজ না পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে। সময়মত ধান বীজ না দেওয়ায় কৃষকরা বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা করছে। একই সাথে চলতি বছরের বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। বীজ বিতরণ নিশ্চিত করতে চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড়ের বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স জোনের উপ-পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম ও অপর এক উপ-পরিচালকসহ স্কীম হোল্ডারদের উপস্থিতিতে বীজ সরবরাহ সংক্রান্ত ভাগ-বাটোয়ারা সভার আয়োজন হলেও সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা প- হয়ে যায়। এদিকে, বিএডিসি কর্মকর্তাদের সাথে বেশ কিছু সাংবাদিকের সখ্যতা থাকায় দূর্ণীতি-অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হয়না বলে জানিয়েছে বেশ কিছু চুক্তিবদ্ধ চাষী।


গতকাল দুপুরে দৌলতদিয়াড়ের বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স অফিস চত্বরে স্কীম ম্যানেজারদের নিয়ে আয়োজিত সভায় উপ-পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের তুলনায় বীজের বরাদ্ধ কম থাকায় সরবরাহও কম। কিন্তু স্কীম ম্যানেজাররা কম নিতে রাজি হচ্ছে না। তিনি আরো জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চুয়াডাঙ্গা জোনের চাহিদা ৮ হাজার ২শ’ ২০ একরের পরিবর্তে প্রায় আড়াই হাজার একর স্কীম কর্তন করে মাত্র ৫ হাজার ৮শ’ একরের বীজ সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু স্কীম ম্যানেজারদের মধ্যে চাপা উত্তেজনায় প্রকাশ হয়েছে স্কীম বাড়ানোর জন্য স্থানীয় কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে প্রতি বছর অর্ধকোটি টাকার চাঁদা নেয়। তবে চাঁদার বিষয়ে উপ-পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। এ সময় স্কীম ম্যানেজারদের সাথে স্কীম ভাগাভাগী নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কীম ম্যানেজাররা বলছেন, ধানচাষী সেজে স্কীম নেওয়ার ভাগিদারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও বীজ ধান দেওয়া নেওয়ার বিষয়টা এতদিন একপক্ষের যোগসাজসে চললেও তাতে এবার ভাগ বাসাচ্ছে অপর এক পক্ষ। ফলে বোরো বীজ ধানের চাষের মৌসুম শেষ হতে চললেও প্রকৃত চাষীরা বীজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে গত সোমবার কথিত বিএডিসির চাষীদের সাথে কর্তৃপক্ষের মিটিং প- হলেও গতকাল আবার মিটিংয়ে বসে বিএডিসি কর্তৃপক্ষসহ কথিত চাষীরা। পরে সে মিটিংও সিদ্ধান্ত ছাড়ায় প- হয়ে যায়। সে কারনে আদৌ কবে নাগাদ বীজ ধান বিতরণ করা হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্সের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোর্শেদুল ইসলাম।
আরো জানা যায়, বিএডিসি তাদের নির্দিষ্ট চাষীদের মাধ্যমে প্রতি বছর বীজ ধান বিতরণ করে উৎপাদিত বীজ ধান ঐ সকল চাষীদের কাছ থেকে চড়া মূল্যে কিনে নেয়। যাকে যে পরিমান বীজ দেওয়া হয় তার কাছ থেকে সে অনুযায়ী বীজ ধান কেনা হয়। এবার চুয়াডাঙ্গাতে চাহিদার তুলনায় ২ হাজার ৪২০ একর বীজ ধান কম আসায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কম বীজ চাষীরা নিতে চাচেছ না। এসময় কম বীজ আসার কারণ জানতে চাইলে কৃষিবিদ মোর্শেদুল ইসলাম সময়ের সমীকরণকে জানান, কর্তৃপক্ষ জানেন কেনো চুয়াডাঙ্গায় কম দিয়েছে। বীজ বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, চাষীরা একমত হয়ে যদি বলে রেশিও অনুযায়ী কম বীজ নেয় তাহলে আজ বিকাল থেকে বীজ বিতরণ করা হবে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চাষী জানান, অনেক স্কীম মালিকের যে পরিমান স্কীম করা আছে তাদের সে পরিমান জমি নেই। বিএডিসির কর্মকর্তাদের যোগসাজসে তারা এসকল স্কীম করে দেদারছে প্রকৃত চাষীদের সাথে ছলনা করছে। সেই সাথে বাইরে থেকে ধান কিনে বীজ ধান হিসেবে বিএডিসিতে সরবরাহ করছে। এতে করে বীজের মান খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ ধরনের অনৈতিক কাজ করে কেউ কেউ কোটিপতি বনে গেছে। এসময় স্কীম ম্যানেজার ও কৃষকরা আরো বলেন, এতোদিন একটি পক্ষ সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলেও এখন অপর একটি পক্ষ ভাগ বসানোর কারনে বাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। বোরো আবাদের মেীসুম শেষ হলেও বীজ ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টা সমাধান করে ধান বীজ দ্রুত সরবরাহ করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবী জানিয়েছে চুক্তিবদ্ধ চাষীরা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় ১০ হাজার কৃষক

আপলোড টাইম : ১২:২৫:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স জোনের কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বোরো মৌসুমে জেলার কৃষকরা প্রায় এক মাস আগে বোরো বীজতলা তৈরী ও বর্তমানে রোপন উপযোগী হলেও চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স জোনের কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি এবং স্কীম ম্যানেজারদের মধ্যে স্কীম ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতায় স্কীমভুক্ত জেলার ১০ হাজার কৃষক এখোনো ধান বীজ না পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে। সময়মত ধান বীজ না দেওয়ায় কৃষকরা বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা করছে। একই সাথে চলতি বছরের বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। বীজ বিতরণ নিশ্চিত করতে চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড়ের বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স জোনের উপ-পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম ও অপর এক উপ-পরিচালকসহ স্কীম হোল্ডারদের উপস্থিতিতে বীজ সরবরাহ সংক্রান্ত ভাগ-বাটোয়ারা সভার আয়োজন হলেও সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা প- হয়ে যায়। এদিকে, বিএডিসি কর্মকর্তাদের সাথে বেশ কিছু সাংবাদিকের সখ্যতা থাকায় দূর্ণীতি-অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হয়না বলে জানিয়েছে বেশ কিছু চুক্তিবদ্ধ চাষী।


গতকাল দুপুরে দৌলতদিয়াড়ের বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স অফিস চত্বরে স্কীম ম্যানেজারদের নিয়ে আয়োজিত সভায় উপ-পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের তুলনায় বীজের বরাদ্ধ কম থাকায় সরবরাহও কম। কিন্তু স্কীম ম্যানেজাররা কম নিতে রাজি হচ্ছে না। তিনি আরো জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চুয়াডাঙ্গা জোনের চাহিদা ৮ হাজার ২শ’ ২০ একরের পরিবর্তে প্রায় আড়াই হাজার একর স্কীম কর্তন করে মাত্র ৫ হাজার ৮শ’ একরের বীজ সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু স্কীম ম্যানেজারদের মধ্যে চাপা উত্তেজনায় প্রকাশ হয়েছে স্কীম বাড়ানোর জন্য স্থানীয় কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে প্রতি বছর অর্ধকোটি টাকার চাঁদা নেয়। তবে চাঁদার বিষয়ে উপ-পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। এ সময় স্কীম ম্যানেজারদের সাথে স্কীম ভাগাভাগী নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কীম ম্যানেজাররা বলছেন, ধানচাষী সেজে স্কীম নেওয়ার ভাগিদারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও বীজ ধান দেওয়া নেওয়ার বিষয়টা এতদিন একপক্ষের যোগসাজসে চললেও তাতে এবার ভাগ বাসাচ্ছে অপর এক পক্ষ। ফলে বোরো বীজ ধানের চাষের মৌসুম শেষ হতে চললেও প্রকৃত চাষীরা বীজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে গত সোমবার কথিত বিএডিসির চাষীদের সাথে কর্তৃপক্ষের মিটিং প- হলেও গতকাল আবার মিটিংয়ে বসে বিএডিসি কর্তৃপক্ষসহ কথিত চাষীরা। পরে সে মিটিংও সিদ্ধান্ত ছাড়ায় প- হয়ে যায়। সে কারনে আদৌ কবে নাগাদ বীজ ধান বিতরণ করা হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্সের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোর্শেদুল ইসলাম।
আরো জানা যায়, বিএডিসি তাদের নির্দিষ্ট চাষীদের মাধ্যমে প্রতি বছর বীজ ধান বিতরণ করে উৎপাদিত বীজ ধান ঐ সকল চাষীদের কাছ থেকে চড়া মূল্যে কিনে নেয়। যাকে যে পরিমান বীজ দেওয়া হয় তার কাছ থেকে সে অনুযায়ী বীজ ধান কেনা হয়। এবার চুয়াডাঙ্গাতে চাহিদার তুলনায় ২ হাজার ৪২০ একর বীজ ধান কম আসায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কম বীজ চাষীরা নিতে চাচেছ না। এসময় কম বীজ আসার কারণ জানতে চাইলে কৃষিবিদ মোর্শেদুল ইসলাম সময়ের সমীকরণকে জানান, কর্তৃপক্ষ জানেন কেনো চুয়াডাঙ্গায় কম দিয়েছে। বীজ বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, চাষীরা একমত হয়ে যদি বলে রেশিও অনুযায়ী কম বীজ নেয় তাহলে আজ বিকাল থেকে বীজ বিতরণ করা হবে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চাষী জানান, অনেক স্কীম মালিকের যে পরিমান স্কীম করা আছে তাদের সে পরিমান জমি নেই। বিএডিসির কর্মকর্তাদের যোগসাজসে তারা এসকল স্কীম করে দেদারছে প্রকৃত চাষীদের সাথে ছলনা করছে। সেই সাথে বাইরে থেকে ধান কিনে বীজ ধান হিসেবে বিএডিসিতে সরবরাহ করছে। এতে করে বীজের মান খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ ধরনের অনৈতিক কাজ করে কেউ কেউ কোটিপতি বনে গেছে। এসময় স্কীম ম্যানেজার ও কৃষকরা আরো বলেন, এতোদিন একটি পক্ষ সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলেও এখন অপর একটি পক্ষ ভাগ বসানোর কারনে বাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। বোরো আবাদের মেীসুম শেষ হলেও বীজ ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টা সমাধান করে ধান বীজ দ্রুত সরবরাহ করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবী জানিয়েছে চুক্তিবদ্ধ চাষীরা।