ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম সীতাকুন্ডে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’ : আত্মঘাতী নারীসহ নিহত ৫:চুয়াডাঙ্গার ছেলে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সোয়াট সদস্য মির্জা সায়েম মাহমুদ বিপুলসহ চারজন আহত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০১৭
  • / ৩২৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সীতাকুন্ডের কলেজ রোডের চৌধুরীপাড়ায় ‘ছায়ানীড়’ নামক বাড়ির জঙ্গি আস্তানায় ১৯ ঘণ্টার অভিযান শেষে আট পরিবারের ৩০ সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে নব্য ধারার জেএমবির ৩ জঙ্গি নিহত হয়। অপর দুই জঙ্গি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে মারা যায়। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে এক নারীসহ দুই জঙ্গির হাত-পা ও মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ পাশের বাড়ির ছাদে ও মাঠে গিয়ে পড়েছে। নিহত ৫ জনের মধ্যে এক নারী ও একটি শিশুও রয়েছে। বুধবার বিকাল ৩টায় অভিযান শুরু হয়। শেষ হয় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায়। অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মঘাতী বিস্ফোরণে জঙ্গিরা যে বোমা ব্যবহার করেছে তা ছিল খুবই শক্তিশালী। বুধবার দুপুরে সীতাকুন্ড লামারবাজার আমিরাবাদ এলাকায় ‘সাধন কুটির’ নামের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ এক জঙ্গি দম্পতিকে আটক করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে পুলিশ কলেজ রোডের দ্বিতল ভবন ছায়ানীড়ে অভিযান শুরু করে। এ জঙ্গি আস্তানায় পুরো অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’। অভিযানের ব্যাপ্তি ছিল চার ঘণ্টা। অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের চারজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন সোয়াটের চট্টগ্রাম নগরের প্রধান ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার চুয়াডাঙ্গা সিনেমা হলপাড়ার ছেলে মির্জা সায়েম মাহমুদ বিপুল, ঢাকা সোয়াটের সদস্য কনস্টেবল শরীয়ত হাসান ও মোহাম্মদ আসিব এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মঈন উদ্দিন। আহত শরীয়ত ও আসিবকে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। বাকি দুজন সীতাকুন্ড ও চট্টগ্রামে চিকিৎসা নেন। বুধবার বিকেলে বাড়িটির কাছে যাওয়ার পরই পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে মারে জঙ্গিরা। তখন স্পিøন্টারের আঘাতে আহত হন সীতাকুন্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক। ছায়ানীড় বাড়িটি দোতলা। এর অবস্থান সীতাকুন্ড পৌরসভার প্রেমতলা চৌধুরীপাড়া এলাকায়। বাড়িটির ১০০ গজের মধ্যে আরও দুটি বাড়ি রয়েছে। বুধবার ওই বাড়ির এক কিলোমিটার পশ্চিমে পৌরসভার আমিরাবাদ এলাকার ‘সাধন কুটির’ নামে আরেকটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দুই জঙ্গির (স্বামী-স্ত্রী) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছায়ানীড়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এরপর থেকে দফায় দফায় পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ও গুলি ছোড়া হয়।
উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের একজন মোহাম্মদ শাহাদাৎ সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিরা তাঁদের জিম্মি করেনি। উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁরা তীব্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে রাস্তার পাশে অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, দোতলা বাড়ির ভেতরে আটকে পড়া ব্যক্তিদের নিরাপদে বের করে আনার জন্য সকাল ছয়টায় অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া গুলিতে এক জঙ্গি নিহত হয়। বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিরা আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে তিন জঙ্গি নিহত হয়।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, নিহত চার জঙ্গির মধ্যে দুজনের হাত, পা ও মুখমন্ডল বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তাদের চেহারা বোঝার উপায় নেই। বাকি দুজনের চেহারা কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। গত বুধবার থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পুলিশের তিন ও ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য আহত হয়েছেন। বিকেল পৌনে চারটায় ঘটনাস্থলের পাশে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (ঢাকার) অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অভিযানের সময় তাঁরা দেখতে পান, বাড়ির প্রবেশমুখে বোমা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। প্রধান ফটকের ঢোকার পথে বোমা ছিল। জঙ্গিদের ফ্ল্যাটে বিভিন্ন ধরনের পাইপের টুকরা, সুইচ, অ্যাসিড থেকে শুরু করে বিভিন্ন তরল রাসায়নিক পাওয়া গেছে। উদ্ধার করা বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে ৪০ থেকে ৫০টি বোমা বানানো যেত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চট্টগ্রাম সীতাকুন্ডে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’ : আত্মঘাতী নারীসহ নিহত ৫:চুয়াডাঙ্গার ছেলে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সোয়াট সদস্য মির্জা সায়েম মাহমুদ বিপুলসহ চারজন আহত

আপলোড টাইম : ০৪:৩৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সীতাকুন্ডের কলেজ রোডের চৌধুরীপাড়ায় ‘ছায়ানীড়’ নামক বাড়ির জঙ্গি আস্তানায় ১৯ ঘণ্টার অভিযান শেষে আট পরিবারের ৩০ সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে নব্য ধারার জেএমবির ৩ জঙ্গি নিহত হয়। অপর দুই জঙ্গি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে মারা যায়। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে এক নারীসহ দুই জঙ্গির হাত-পা ও মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ পাশের বাড়ির ছাদে ও মাঠে গিয়ে পড়েছে। নিহত ৫ জনের মধ্যে এক নারী ও একটি শিশুও রয়েছে। বুধবার বিকাল ৩টায় অভিযান শুরু হয়। শেষ হয় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায়। অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মঘাতী বিস্ফোরণে জঙ্গিরা যে বোমা ব্যবহার করেছে তা ছিল খুবই শক্তিশালী। বুধবার দুপুরে সীতাকুন্ড লামারবাজার আমিরাবাদ এলাকায় ‘সাধন কুটির’ নামের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ এক জঙ্গি দম্পতিকে আটক করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে পুলিশ কলেজ রোডের দ্বিতল ভবন ছায়ানীড়ে অভিযান শুরু করে। এ জঙ্গি আস্তানায় পুরো অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’। অভিযানের ব্যাপ্তি ছিল চার ঘণ্টা। অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের চারজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন সোয়াটের চট্টগ্রাম নগরের প্রধান ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার চুয়াডাঙ্গা সিনেমা হলপাড়ার ছেলে মির্জা সায়েম মাহমুদ বিপুল, ঢাকা সোয়াটের সদস্য কনস্টেবল শরীয়ত হাসান ও মোহাম্মদ আসিব এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মঈন উদ্দিন। আহত শরীয়ত ও আসিবকে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। বাকি দুজন সীতাকুন্ড ও চট্টগ্রামে চিকিৎসা নেন। বুধবার বিকেলে বাড়িটির কাছে যাওয়ার পরই পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে মারে জঙ্গিরা। তখন স্পিøন্টারের আঘাতে আহত হন সীতাকুন্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক। ছায়ানীড় বাড়িটি দোতলা। এর অবস্থান সীতাকুন্ড পৌরসভার প্রেমতলা চৌধুরীপাড়া এলাকায়। বাড়িটির ১০০ গজের মধ্যে আরও দুটি বাড়ি রয়েছে। বুধবার ওই বাড়ির এক কিলোমিটার পশ্চিমে পৌরসভার আমিরাবাদ এলাকার ‘সাধন কুটির’ নামে আরেকটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দুই জঙ্গির (স্বামী-স্ত্রী) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছায়ানীড়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এরপর থেকে দফায় দফায় পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ও গুলি ছোড়া হয়।
উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের একজন মোহাম্মদ শাহাদাৎ সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিরা তাঁদের জিম্মি করেনি। উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁরা তীব্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে রাস্তার পাশে অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, দোতলা বাড়ির ভেতরে আটকে পড়া ব্যক্তিদের নিরাপদে বের করে আনার জন্য সকাল ছয়টায় অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া গুলিতে এক জঙ্গি নিহত হয়। বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিরা আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে তিন জঙ্গি নিহত হয়।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, নিহত চার জঙ্গির মধ্যে দুজনের হাত, পা ও মুখমন্ডল বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তাদের চেহারা বোঝার উপায় নেই। বাকি দুজনের চেহারা কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। গত বুধবার থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পুলিশের তিন ও ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য আহত হয়েছেন। বিকেল পৌনে চারটায় ঘটনাস্থলের পাশে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (ঢাকার) অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অভিযানের সময় তাঁরা দেখতে পান, বাড়ির প্রবেশমুখে বোমা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। প্রধান ফটকের ঢোকার পথে বোমা ছিল। জঙ্গিদের ফ্ল্যাটে বিভিন্ন ধরনের পাইপের টুকরা, সুইচ, অ্যাসিড থেকে শুরু করে বিভিন্ন তরল রাসায়নিক পাওয়া গেছে। উদ্ধার করা বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে ৪০ থেকে ৫০টি বোমা বানানো যেত।