ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গুম খুনের সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৭:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ২০৯ বার পড়া হয়েছে

দেশে গুম খুনের ধারাবাহিকতা এখনো শেষ হয়নি। বহু মানুষ আজো নিখোঁজ আছেন। তাদের ফেরার আশায় বছরের পর বছর ধরে স্বজনেরা প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন। কিন্তু সেই অপেক্ষার শেষ হচ্ছে না। এবার অন্তত একটি ঘটনায় স্বজনদের অপেক্ষার পালা ফুরিয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি ফিরেছেন র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান। গত শুক্রবার রাতে তিনি সম্পূর্ণ একা ঢাকার মিরপুরের বাসায় ফিরে আসেন। কিন্তু তিনি কোথায় ছিলেন, কিভাবে ছিলেন কিংবা কারা, কেন তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তার কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তার পরিবার থেকে বলা হয়েছে, ‘তিনি অসুস্থ ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’ এ জন্য পুলিশও তার সাথে কথা বলতে পারেনি।
হাসিনুর রহমান র‌্যাবের ৭ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি র‌্যাব-৫ এরও সাবেক অধিনায়ক। দায়িত্ব পালন করেছেন বিজিবিতেও। সেনাবাহিনীতে চাকরির সময় ‘জঙ্গি’ হিসেবে আটক এক ব্যক্তির জবানবন্দির ভিত্তিতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় দণ্ডিত হন হাসিনুর। পাঁচ বছর জেল খেটে মুক্তি পান ২০১৪ সালে। এরপর ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট রাত ১০টার দিকে মিরপুরের পল্লবীর ডিওএইচএসের বাসার সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে দু’টি মাইক্রোবাসে ১৪-১৫ জন লোক তুলে নিয়ে যায় তাকে। সে সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, হাসিনুর রহমানের নিখোঁজের বিষয়টি ‘নলেজে আছে।’ এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। কিন্তু গত দেড় বছরে র‌্যাব বা পুলিশ হাসিনুরের অবস্থান বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি বা তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। এখন আকস্মিকভাবে তিনি ফিরে এলেন। এর আগেও এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। বিভিন্ন মহল থেকে গুম বা খুনের পেছনে এসব বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও উঠেছে। কোনো অভিযোগ খণ্ডন করা হয়নি বাহিনীগুলোর তরফে বা সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু একটি সরকার থাকা অবস্থায় দেশে গুম-খুনের ঘটনা ঘটতে থাকবে, এটা হতে পারে না। এর দায় মূলত সরকারের ওপরই বর্তায়। বিরোধী রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন প্রভৃতির পক্ষ থেকেও উপর্যুপরি দাবি জানানো হয়েছে গুম খুনের ব্যাপারে প্রয়োজনে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে প্রত্যেকটি ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং হারানো বা নিখোঁজ ব্যক্তিকে তার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার। কেউ কেউ এমন মন্তব্যও করেন যে, সরকার যদি গুমের সাথে জড়িত না থাকে তাহলে স্বাধীন কমিশন গঠন করে গুমের ঘটনাগুলোর তদন্ত করছে না কেন?
বর্তমান সরকারের গত এক যুগের শাসনামলে বহু মানুষ গুম হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য বা ভিন্ন মতের অনুসারী। এদের ব্যাপারে সরকারের কোনো দায়দায়িত্ব নেইÑ ক্ষমতায় থেকে এমন কথা বলার কোনো যুক্তি আদৌ নেই। আমরা আশা করব, সরকার দায়িত্ব নিয়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে প্রতিটি গুম ও খুনের ঘটনার তদন্ত করবে এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের তাদের স্বজনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সভ্য সমাজের এটিই নিয়ম। গুম খুনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিশ্বে এ দেশের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ সভ্য মানুষের দেশ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

গুম খুনের সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে

আপলোড টাইম : ০৯:৩৭:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০

দেশে গুম খুনের ধারাবাহিকতা এখনো শেষ হয়নি। বহু মানুষ আজো নিখোঁজ আছেন। তাদের ফেরার আশায় বছরের পর বছর ধরে স্বজনেরা প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন। কিন্তু সেই অপেক্ষার শেষ হচ্ছে না। এবার অন্তত একটি ঘটনায় স্বজনদের অপেক্ষার পালা ফুরিয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি ফিরেছেন র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান। গত শুক্রবার রাতে তিনি সম্পূর্ণ একা ঢাকার মিরপুরের বাসায় ফিরে আসেন। কিন্তু তিনি কোথায় ছিলেন, কিভাবে ছিলেন কিংবা কারা, কেন তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তার কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তার পরিবার থেকে বলা হয়েছে, ‘তিনি অসুস্থ ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’ এ জন্য পুলিশও তার সাথে কথা বলতে পারেনি।
হাসিনুর রহমান র‌্যাবের ৭ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি র‌্যাব-৫ এরও সাবেক অধিনায়ক। দায়িত্ব পালন করেছেন বিজিবিতেও। সেনাবাহিনীতে চাকরির সময় ‘জঙ্গি’ হিসেবে আটক এক ব্যক্তির জবানবন্দির ভিত্তিতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় দণ্ডিত হন হাসিনুর। পাঁচ বছর জেল খেটে মুক্তি পান ২০১৪ সালে। এরপর ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট রাত ১০টার দিকে মিরপুরের পল্লবীর ডিওএইচএসের বাসার সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে দু’টি মাইক্রোবাসে ১৪-১৫ জন লোক তুলে নিয়ে যায় তাকে। সে সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, হাসিনুর রহমানের নিখোঁজের বিষয়টি ‘নলেজে আছে।’ এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। কিন্তু গত দেড় বছরে র‌্যাব বা পুলিশ হাসিনুরের অবস্থান বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি বা তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। এখন আকস্মিকভাবে তিনি ফিরে এলেন। এর আগেও এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। বিভিন্ন মহল থেকে গুম বা খুনের পেছনে এসব বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও উঠেছে। কোনো অভিযোগ খণ্ডন করা হয়নি বাহিনীগুলোর তরফে বা সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু একটি সরকার থাকা অবস্থায় দেশে গুম-খুনের ঘটনা ঘটতে থাকবে, এটা হতে পারে না। এর দায় মূলত সরকারের ওপরই বর্তায়। বিরোধী রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন প্রভৃতির পক্ষ থেকেও উপর্যুপরি দাবি জানানো হয়েছে গুম খুনের ব্যাপারে প্রয়োজনে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে প্রত্যেকটি ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং হারানো বা নিখোঁজ ব্যক্তিকে তার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার। কেউ কেউ এমন মন্তব্যও করেন যে, সরকার যদি গুমের সাথে জড়িত না থাকে তাহলে স্বাধীন কমিশন গঠন করে গুমের ঘটনাগুলোর তদন্ত করছে না কেন?
বর্তমান সরকারের গত এক যুগের শাসনামলে বহু মানুষ গুম হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য বা ভিন্ন মতের অনুসারী। এদের ব্যাপারে সরকারের কোনো দায়দায়িত্ব নেইÑ ক্ষমতায় থেকে এমন কথা বলার কোনো যুক্তি আদৌ নেই। আমরা আশা করব, সরকার দায়িত্ব নিয়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে প্রতিটি গুম ও খুনের ঘটনার তদন্ত করবে এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের তাদের স্বজনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সভ্য সমাজের এটিই নিয়ম। গুম খুনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিশ্বে এ দেশের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ সভ্য মানুষের দেশ।