ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৩:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০১৯
  • / ৩৫৩ বার পড়া হয়েছে

আজ ২৫ মার্চ। একাত্তরের এই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিত পন্থায় এ ভূখ-ের মুক্তিকামী মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। বাঙালি জাতিকে চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দিতে ওই রাতে তারা নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল, এ দেশের কতিপয় কুলাঙ্গারের সহায়তায়। পাকিস্তানিদের এই বর্বরতা, নৃশংসতা, পৈশাচিকতা ইতিহাসের একটি নিকৃষ্টতম অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। সেই রক্ত¯্রােত ও ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে বাঙালি মাথা তুলে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা অর্থাৎ মুক্তির সংগ্রামে। জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই দিনে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বলিদান দেয়া সব শহীদকে আমরা স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়। রাষ্ট্রভাষার অধিকার লাভে বাঙালিকে প্রাণ দিতে হয় ১৯৫২ সালে। এরপর পাকিস্তানিদের ক্রমাগত শোষণ-বঞ্চনা, বৈষম্য, অধিকার হরণ বাঙালির ক্ষোভকে ক্রমেই জমাট করে। ১৯৬৬-এর ছয় দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান- এসবের ধারাবাহিকতায় আসে ১৯৭০ সালের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তারা গণতন্ত্রের রায় মেনে না নিতে শুরু করে নানান টালবাহানা, চালাতে থাকে নানান ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা পরিণত হয় এক দফায়। শুরু হয় অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে উত্তাল জনসমুদ্রে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে শত্রুর মোকাবেলা করার নির্দেশ দিলেন তিনি। ৭ মার্চের পর থেকেই বদলে যেতে থাকে প্রতিদিনের চিত্র। একদিকে দানা বাঁধতে থাকে বাঙালির বিক্ষোভ, অন্যদিকে আঁকা হয় পাকিস্তানিদের নীলনকশা। ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া ও ভুট্টো ঢাকা ছাড়েন। তবে ইয়াহিয়া তার সেনাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে যান। ২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। এ রাতেই সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনী হায়েনার মতো নেমে পড়ে গণহত্যায়। একেবারে প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বাসভবন এবং ছাত্রদের হল, রাজারবাগ পুলিশের হেডকোয়ার্টার, ইপিআর সদর দপ্তর, বিভিন্ন স্টেশন ও টার্মিনালে আক্রমণ চালানো হয়। ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি হত্যার উৎসব শুরু হয় ওই রাতে। কিন্তু তার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করে যান। ২৫ মার্চে কালরাতে পাকিস্তানিদের ধ্বংস ও নিধনযজ্ঞ বাঙালিকে তো দমাতে পারেইনি, বরং তাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির মরণপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ করে। হানাদার বাহিনী যে অত্যাচার, অবিচার ও নৃশংসতা করেছে তা নজিরবিহীন। দেরিতে হলেও ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, আমরা এই দিনটি পালন করব। পাকিস্তানিদের বর্বরতা গোটা বিশ্ব জানে। তারপরও তাদের ঔদ্ধত্য আমাদের হতবাক করে। এখনো পাকিস্তানি শাসকরা সচেষ্ট একাত্তরের গণহত্যা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদদে বই লিখে প্রচার করা হচ্ছে যে, একাত্তরে কোনো গণহত্যা হয়নি। এসব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র রুখতে আমাদেরও কাজ করতে হবে। ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের সঙ্গে সঙ্গে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এখন তৎপর হতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করুন

আপলোড টাইম : ১০:২৩:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০১৯

আজ ২৫ মার্চ। একাত্তরের এই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিত পন্থায় এ ভূখ-ের মুক্তিকামী মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। বাঙালি জাতিকে চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দিতে ওই রাতে তারা নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল, এ দেশের কতিপয় কুলাঙ্গারের সহায়তায়। পাকিস্তানিদের এই বর্বরতা, নৃশংসতা, পৈশাচিকতা ইতিহাসের একটি নিকৃষ্টতম অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। সেই রক্ত¯্রােত ও ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে বাঙালি মাথা তুলে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা অর্থাৎ মুক্তির সংগ্রামে। জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই দিনে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বলিদান দেয়া সব শহীদকে আমরা স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়। রাষ্ট্রভাষার অধিকার লাভে বাঙালিকে প্রাণ দিতে হয় ১৯৫২ সালে। এরপর পাকিস্তানিদের ক্রমাগত শোষণ-বঞ্চনা, বৈষম্য, অধিকার হরণ বাঙালির ক্ষোভকে ক্রমেই জমাট করে। ১৯৬৬-এর ছয় দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান- এসবের ধারাবাহিকতায় আসে ১৯৭০ সালের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তারা গণতন্ত্রের রায় মেনে না নিতে শুরু করে নানান টালবাহানা, চালাতে থাকে নানান ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা পরিণত হয় এক দফায়। শুরু হয় অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে উত্তাল জনসমুদ্রে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে শত্রুর মোকাবেলা করার নির্দেশ দিলেন তিনি। ৭ মার্চের পর থেকেই বদলে যেতে থাকে প্রতিদিনের চিত্র। একদিকে দানা বাঁধতে থাকে বাঙালির বিক্ষোভ, অন্যদিকে আঁকা হয় পাকিস্তানিদের নীলনকশা। ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া ও ভুট্টো ঢাকা ছাড়েন। তবে ইয়াহিয়া তার সেনাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে যান। ২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। এ রাতেই সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনী হায়েনার মতো নেমে পড়ে গণহত্যায়। একেবারে প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বাসভবন এবং ছাত্রদের হল, রাজারবাগ পুলিশের হেডকোয়ার্টার, ইপিআর সদর দপ্তর, বিভিন্ন স্টেশন ও টার্মিনালে আক্রমণ চালানো হয়। ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি হত্যার উৎসব শুরু হয় ওই রাতে। কিন্তু তার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করে যান। ২৫ মার্চে কালরাতে পাকিস্তানিদের ধ্বংস ও নিধনযজ্ঞ বাঙালিকে তো দমাতে পারেইনি, বরং তাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির মরণপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ করে। হানাদার বাহিনী যে অত্যাচার, অবিচার ও নৃশংসতা করেছে তা নজিরবিহীন। দেরিতে হলেও ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, আমরা এই দিনটি পালন করব। পাকিস্তানিদের বর্বরতা গোটা বিশ্ব জানে। তারপরও তাদের ঔদ্ধত্য আমাদের হতবাক করে। এখনো পাকিস্তানি শাসকরা সচেষ্ট একাত্তরের গণহত্যা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদদে বই লিখে প্রচার করা হচ্ছে যে, একাত্তরে কোনো গণহত্যা হয়নি। এসব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র রুখতে আমাদেরও কাজ করতে হবে। ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের সঙ্গে সঙ্গে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এখন তৎপর হতে হবে।