ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গণপূর্তের কমিশন সিন্ডিকেটে আতঙ্ক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৩:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ২২৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
টেন্ডার মুঘল জিকে শামীম গ্রেপ্তারের পর দৌড়ের উপর আছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের কমিশন সিন্ডিকেট। নিজেদের বাঁচাতে মরিয়া তারা। শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর চুপসে গেছেন তারা। যে কোনো উপায়ে নিজেদের রক্ষা করতে চান। এ জন্য আশ্রয় খোঁজার চেষ্টায় বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা মেট্টো ও ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদটি। গত জুন পর্যন্ত ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক আলোচিত কর্মকর্তা আব্দুল হাই। সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে তিনিই জিকে শামীমের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করতেন। আব্দুল হাইয়ের চাকুরি জীবন শেষ হলে নবগঠিত ঢাকা মেট্টো ও ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে উৎপল কুমার দে’কে দায়িত্ব দেয়া হয়। গত কয়েক মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
এ অল্প সময়ের মধ্যে জিকে শামীমের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তার সঙ্গে সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে আছেন সাভার গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শঙ্কর কুমার মালো শেরেবাংলা নগর-১ গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে তদন্ত কোষের দায়িত্বে থাকা ফজলুল হক মৃধা এবং সিটি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহ। এ সিন্ডিকেট সদস্যরা মিলেই ঠিকাদারি কাজের পাশাপাশি বদলি বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেয়া, অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুপচি টেন্ডার অনুমোদনসহ সব ধরনের কাজ করে আসছিলেন। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা নির্ধারিত কমিশন কালেকশন করতেন। এরপর নিয়ম অনুযায়ী সব ভাগ করে দিতেন বলে তারা জানাতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে প্রেষণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার পদে নিয়োগ পান। অথরাইজড অফিসার পদে দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ রয়েছে। টাকা ছাড়া তার সময়ে নকশা অনুমোদন হতো না। দীর্ঘ সময় রাজউকের অথরাইজড অফিসার পদে দায়িত্ব পালনের পর আজিমপুরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান। এরপর ঢাকা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন এ কর্মকর্তা। ঘুপচি টেন্ডারের প্রবর্তনকারি গণপূর্ত ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আধুনিক জেলখানা নির্মাণকাজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, নিজস্ব ঠিকাদারদের অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দিয়ে অতিরিক্ত কমিশন আদায়সহ নানা অনিয়মে তার জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
মেট্টো জোনের দায়িত্বে থাকায় জাতীয় সংসদ, গণভবন, বঙ্গভবন থেকে শুরু করে সচিবালয়, মন্ত্রীপাড়াসহ সব ভিভিআইপি এলাকার পূর্ত কাজ তার অধীনেই হয়। এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে ভিআইপি বরাদ্দ নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন তিনি। তার সময়ে নির্মাণ করা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির রিপোর্ট এখনও আলোর মুখ দেখেনি। তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখার আগেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নেন। তবে ঠিকাদার জিকে শামীমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসায় গত মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে উৎপল কুমার দেকে ঢাকা মেট্টো ও ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে সরিয়ে রিভার্জ পদে নিয়োগ করা হয়। উৎপল সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শঙ্কর কুমার মালো। প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব পালনের সময় তিনি নানাভাবে টাকা আত্মসাৎ করে নেন। এতকিছুর পরও তিনি ভাগিয়ে নিয়েছেন ভালো পোস্টিং। সাভার গণপূর্ত সার্কেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সার্কেলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। সিন্ডিকেটের অপর দুই সদস্য হলেন নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু ও শওকত উল্লাহ।
এদের মধ্যে ফজলুল হক মধুর সঙ্গে জি কে শামীমের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। পঙ্গু হাসপাতালের আধুনিক ভবন নির্মাণ, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ভবন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, নিউরো সাইন্স, বিজ্ঞান জাদুঘরসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্প জি কে শামীমের জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (জি কে বিল্ডার্স) করেছে। এসব প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন ফজলুল হক মধু। যে কারণে নিজেরটাসহ সবার কমিশন তিনিই গ্রহণ করতেন। সিটি ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা শওকত উল্লাহ মন্ত্রীপাড়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দায়িত্বে থেকেও প্রধান প্রকৌশলীর ডান হাত হিসেবে কাজ করেন। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সিন্ডেকেটের অন্যতম সদস্য ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত। সব ধরনের কমিশনসহ বদলি, পদোন্নতি, পোস্টিং বাণিজ্যের মূল হোতা তিনি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের প্রথম দিকে গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিদায়ের পর দায়িত্ব নেন শাহাদাত হোসেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর উৎপল কুমার দে’র নেতৃত্বে নতুন কালেকশন সিন্ডিকেট গঠিত হয়। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের সমন্বয়েই এ সিন্ডিকেট গঠিত হয়। এ সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে আগে থেকেই জি কে শামীমসহ প্রভাবশালী ঠিকাদারদের সখ্যতা ছিল। তাই কাজের বিপরীতে পূর্ব নির্ধারিত হারে (১০ শতাংশ) কমিশনের টাকা সিন্ডিকেট তুলত। কমিশনের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে কারো অ্যাকাউন্টে দিত না তারা। সিন্ডিকেটের দায়িত্বশীল দুুইজন কর্মকর্তা প্রতিটি কাজের জন্য নির্ধারিত কমিশন নগদে নিয়ে নেয়। যাতে অনৈতিক এই কাজের কোনো প্রমাণ না থাকে। কমিশনের বিনিময়ে প্রভাবশালী ঠিকাদাররা হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ সহজেই পেয়ে যেতেন। পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে ইজিপি এড়িয়ে ওটিএম’র মাধ্যমে প্রকল্পের টেন্ডার শুরু করে এ সিন্ডিকেট। ফলে ঢাকার বাইরের ঠিকাদাররা বঞ্চিত হতে শুরু করে। জি কে শামীমসহ প্রভাবশালী ঠিকাদাররাই বড় বড় সব কাজ পেয়ে যান সহজেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

গণপূর্তের কমিশন সিন্ডিকেটে আতঙ্ক

আপলোড টাইম : ১০:২৩:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
টেন্ডার মুঘল জিকে শামীম গ্রেপ্তারের পর দৌড়ের উপর আছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের কমিশন সিন্ডিকেট। নিজেদের বাঁচাতে মরিয়া তারা। শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর চুপসে গেছেন তারা। যে কোনো উপায়ে নিজেদের রক্ষা করতে চান। এ জন্য আশ্রয় খোঁজার চেষ্টায় বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা মেট্টো ও ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদটি। গত জুন পর্যন্ত ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক আলোচিত কর্মকর্তা আব্দুল হাই। সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে তিনিই জিকে শামীমের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করতেন। আব্দুল হাইয়ের চাকুরি জীবন শেষ হলে নবগঠিত ঢাকা মেট্টো ও ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে উৎপল কুমার দে’কে দায়িত্ব দেয়া হয়। গত কয়েক মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
এ অল্প সময়ের মধ্যে জিকে শামীমের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তার সঙ্গে সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে আছেন সাভার গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শঙ্কর কুমার মালো শেরেবাংলা নগর-১ গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে তদন্ত কোষের দায়িত্বে থাকা ফজলুল হক মৃধা এবং সিটি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহ। এ সিন্ডিকেট সদস্যরা মিলেই ঠিকাদারি কাজের পাশাপাশি বদলি বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেয়া, অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুপচি টেন্ডার অনুমোদনসহ সব ধরনের কাজ করে আসছিলেন। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা নির্ধারিত কমিশন কালেকশন করতেন। এরপর নিয়ম অনুযায়ী সব ভাগ করে দিতেন বলে তারা জানাতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে প্রেষণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার পদে নিয়োগ পান। অথরাইজড অফিসার পদে দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ রয়েছে। টাকা ছাড়া তার সময়ে নকশা অনুমোদন হতো না। দীর্ঘ সময় রাজউকের অথরাইজড অফিসার পদে দায়িত্ব পালনের পর আজিমপুরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান। এরপর ঢাকা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন এ কর্মকর্তা। ঘুপচি টেন্ডারের প্রবর্তনকারি গণপূর্ত ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আধুনিক জেলখানা নির্মাণকাজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, নিজস্ব ঠিকাদারদের অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দিয়ে অতিরিক্ত কমিশন আদায়সহ নানা অনিয়মে তার জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
মেট্টো জোনের দায়িত্বে থাকায় জাতীয় সংসদ, গণভবন, বঙ্গভবন থেকে শুরু করে সচিবালয়, মন্ত্রীপাড়াসহ সব ভিভিআইপি এলাকার পূর্ত কাজ তার অধীনেই হয়। এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে ভিআইপি বরাদ্দ নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন তিনি। তার সময়ে নির্মাণ করা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির রিপোর্ট এখনও আলোর মুখ দেখেনি। তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখার আগেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নেন। তবে ঠিকাদার জিকে শামীমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসায় গত মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে উৎপল কুমার দেকে ঢাকা মেট্টো ও ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে সরিয়ে রিভার্জ পদে নিয়োগ করা হয়। উৎপল সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শঙ্কর কুমার মালো। প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব পালনের সময় তিনি নানাভাবে টাকা আত্মসাৎ করে নেন। এতকিছুর পরও তিনি ভাগিয়ে নিয়েছেন ভালো পোস্টিং। সাভার গণপূর্ত সার্কেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সার্কেলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। সিন্ডিকেটের অপর দুই সদস্য হলেন নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু ও শওকত উল্লাহ।
এদের মধ্যে ফজলুল হক মধুর সঙ্গে জি কে শামীমের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। পঙ্গু হাসপাতালের আধুনিক ভবন নির্মাণ, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ভবন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, নিউরো সাইন্স, বিজ্ঞান জাদুঘরসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্প জি কে শামীমের জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (জি কে বিল্ডার্স) করেছে। এসব প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন ফজলুল হক মধু। যে কারণে নিজেরটাসহ সবার কমিশন তিনিই গ্রহণ করতেন। সিটি ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা শওকত উল্লাহ মন্ত্রীপাড়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দায়িত্বে থেকেও প্রধান প্রকৌশলীর ডান হাত হিসেবে কাজ করেন। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সিন্ডেকেটের অন্যতম সদস্য ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত। সব ধরনের কমিশনসহ বদলি, পদোন্নতি, পোস্টিং বাণিজ্যের মূল হোতা তিনি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের প্রথম দিকে গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিদায়ের পর দায়িত্ব নেন শাহাদাত হোসেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর উৎপল কুমার দে’র নেতৃত্বে নতুন কালেকশন সিন্ডিকেট গঠিত হয়। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের সমন্বয়েই এ সিন্ডিকেট গঠিত হয়। এ সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে আগে থেকেই জি কে শামীমসহ প্রভাবশালী ঠিকাদারদের সখ্যতা ছিল। তাই কাজের বিপরীতে পূর্ব নির্ধারিত হারে (১০ শতাংশ) কমিশনের টাকা সিন্ডিকেট তুলত। কমিশনের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে কারো অ্যাকাউন্টে দিত না তারা। সিন্ডিকেটের দায়িত্বশীল দুুইজন কর্মকর্তা প্রতিটি কাজের জন্য নির্ধারিত কমিশন নগদে নিয়ে নেয়। যাতে অনৈতিক এই কাজের কোনো প্রমাণ না থাকে। কমিশনের বিনিময়ে প্রভাবশালী ঠিকাদাররা হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ সহজেই পেয়ে যেতেন। পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে ইজিপি এড়িয়ে ওটিএম’র মাধ্যমে প্রকল্পের টেন্ডার শুরু করে এ সিন্ডিকেট। ফলে ঢাকার বাইরের ঠিকাদাররা বঞ্চিত হতে শুরু করে। জি কে শামীমসহ প্রভাবশালী ঠিকাদাররাই বড় বড় সব কাজ পেয়ে যান সহজেই।