ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খেজুরের রস পানে নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৯:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ২৪২ বার পড়া হয়েছে

দেশজুড়ে শীত পড়তে শুরু করেছে। গ্রামাঞ্চলে শীতের অন্যতম আকর্ষণ খেজুরের রস ও গুড়ের তৈরি পিঠা। শীতের শুরুতেই খেজুর গাছ থেকে রস আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাছিরা। রাজধানীসহ নগরের বিভিন্ন প্রান্তেও এই রসের চাহিদা রয়েছে বেশ। জনপ্রিয় এই রসকে কেন্দ্র করে এক উটকো ও প্রাণঘাতি বিপত্তির নাম ‘নিপাহ ভাইরাস’। নিপাহ ভাইরাস এমন একটি ভাইরাস যা বিশ্বব্যাপি পশু-পাখি থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাস মূলত ছড়ায় বাদুড়ের মাধ্যমে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। খেজুর গাছে যখন রাস সংগ্রহের জন্য হাড়ি ঝুলানো হয়, তখন সেই পাত্রে থাকা রসে বাদুড়ের লালা নয়তো মল-মূত্রের ফলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। এমনকি বাদুড়ের খাওয়া কোনও আংশিক ফল খেয়ে শিশুসহ অনেকে সংক্রমিত হন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)’র তথ্যমতে, ২০০১ সালে প্রথম মেহেরপুরে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা চিহ্নিত হয়। এখন পর্যন্ত নিপাহ’র সংক্রমণ নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের ৩১টি জেলায় দেখা গেছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। একপর্যায়ে খিচুনিও দেখা দিতে পারে। মস্তিস্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। এ বছরের মার্চ মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর জন্য নিপাহ ভাইরাসকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। তাদের দেয়া পরিসংখ্যান অনুসারে নিপাহ ভাইরাসে ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৩ জন, আর মৃত্যুবরণ করেছেন ২১৭ জন। তারমানে আক্রান্তের প্রায় ৭০ শতাংশ মারা গেছে এই ভাইরাসের কারণে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের বলে আমরা মনে করি। ১৯৯৯ সালে প্রথম মালয়েশিয়ায় শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাস শনাক্তের পরে দীর্ঘ ২০ বছর চলে গেলেও এখনও এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয়নি। এই ভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি সমালানোর মতো পর্যাপ্ত উপকরণ এখনও বিশ্বে নেই। যেহেতু এই ডিসেম্বর খেজুরের রসের মৌসুম আর নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকির সময়, সেজন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত বলে আমরা মনে করি। শীতের ছুটিতে গ্রামে ছুটে যাওয়া অনেকে গ্রামে গিয়ে ও নগরবাসীরা নগরের আশেপাশ থেকে আসা খেজুরের রসসহ নানা মৌসুমি ফল খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত জরুরি। সম্ভব হলে খেজুরের রস খাওয়া আপাতত বন্ধ রাখা যেতে পারে। সেইসঙ্গে রস সংগ্রহে প্রচলিত মাটির হাড়ির পরিবর্তে নিরাপদ কোনো প্রযুক্তি বা পন্থা উদ্ভাবন করা যায় কিনা, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা নজর দিতে পারেন। যতোদিন না এই নিপাহ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বের হচ্ছে, ততোদিন এই বিশেষ সতকর্তা ও সচেতনতা প্রয়োজন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

খেজুরের রস পানে নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি

আপলোড টাইম : ০৯:১৯:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

দেশজুড়ে শীত পড়তে শুরু করেছে। গ্রামাঞ্চলে শীতের অন্যতম আকর্ষণ খেজুরের রস ও গুড়ের তৈরি পিঠা। শীতের শুরুতেই খেজুর গাছ থেকে রস আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাছিরা। রাজধানীসহ নগরের বিভিন্ন প্রান্তেও এই রসের চাহিদা রয়েছে বেশ। জনপ্রিয় এই রসকে কেন্দ্র করে এক উটকো ও প্রাণঘাতি বিপত্তির নাম ‘নিপাহ ভাইরাস’। নিপাহ ভাইরাস এমন একটি ভাইরাস যা বিশ্বব্যাপি পশু-পাখি থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাস মূলত ছড়ায় বাদুড়ের মাধ্যমে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। খেজুর গাছে যখন রাস সংগ্রহের জন্য হাড়ি ঝুলানো হয়, তখন সেই পাত্রে থাকা রসে বাদুড়ের লালা নয়তো মল-মূত্রের ফলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। এমনকি বাদুড়ের খাওয়া কোনও আংশিক ফল খেয়ে শিশুসহ অনেকে সংক্রমিত হন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)’র তথ্যমতে, ২০০১ সালে প্রথম মেহেরপুরে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা চিহ্নিত হয়। এখন পর্যন্ত নিপাহ’র সংক্রমণ নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের ৩১টি জেলায় দেখা গেছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। একপর্যায়ে খিচুনিও দেখা দিতে পারে। মস্তিস্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। এ বছরের মার্চ মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর জন্য নিপাহ ভাইরাসকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। তাদের দেয়া পরিসংখ্যান অনুসারে নিপাহ ভাইরাসে ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৩ জন, আর মৃত্যুবরণ করেছেন ২১৭ জন। তারমানে আক্রান্তের প্রায় ৭০ শতাংশ মারা গেছে এই ভাইরাসের কারণে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের বলে আমরা মনে করি। ১৯৯৯ সালে প্রথম মালয়েশিয়ায় শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাস শনাক্তের পরে দীর্ঘ ২০ বছর চলে গেলেও এখনও এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয়নি। এই ভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি সমালানোর মতো পর্যাপ্ত উপকরণ এখনও বিশ্বে নেই। যেহেতু এই ডিসেম্বর খেজুরের রসের মৌসুম আর নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকির সময়, সেজন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত বলে আমরা মনে করি। শীতের ছুটিতে গ্রামে ছুটে যাওয়া অনেকে গ্রামে গিয়ে ও নগরবাসীরা নগরের আশেপাশ থেকে আসা খেজুরের রসসহ নানা মৌসুমি ফল খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত জরুরি। সম্ভব হলে খেজুরের রস খাওয়া আপাতত বন্ধ রাখা যেতে পারে। সেইসঙ্গে রস সংগ্রহে প্রচলিত মাটির হাড়ির পরিবর্তে নিরাপদ কোনো প্রযুক্তি বা পন্থা উদ্ভাবন করা যায় কিনা, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা নজর দিতে পারেন। যতোদিন না এই নিপাহ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বের হচ্ছে, ততোদিন এই বিশেষ সতকর্তা ও সচেতনতা প্রয়োজন।