ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খেঁজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৪:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৪৬২ বার পড়া হয়েছে

আকিমুল ইসলাম: আবহমান বাংলায় হেমন্তকালে আকাশপানে তাকালে যেন মনে হয় আকাশেও বুঝি কোনো ঋতু আছে। কেননা তখন প্রকৃতি সাজে এক অপরুপ সাজে। এ সময় চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্র ও তারকারা সবাই নির্দ্বিধায় ও নিঃসংকোচে যেন সব আলো উজাড় করে দেয়। হেমন্তের বিকেলে হিমেল ঝিরঝিরি বাতাসে খেঁজুর গাছের তলায় গাছিরা যখন দাঁড়ায় আপন মনে তখন তাদের মন ভরে যায় অনাবিল আনন্দে। এ সময় শীতের সাথে খেঁজুর রসের থাকে এক নিবিড় সম্পর্ক। খেঁজুর গাছ পরখ করে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নেয় তারা। বিশেষ কায়দায় কোমরে রশি বেঁধে খেঁজুর গাছের উপরে উঠে ধারাল কাঁচি দিয়ে বাদামী রংঙের কপালি বের করে। আর কিছুদিন পরই সেখান থেকে খেঁজুরের রস সংগ্রহ করে। গ্রামবাংলার প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে এই রস দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন রকমের পিঠা কিংবা পায়েস। বলা হচ্ছে শীতের আগমনের সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গার তিতুদহের ব্যস্ত গাছিদের গল্প। শীত আসতে না আসতেই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহের গাছিরা খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করে। শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে খেঁজুর গাছ কাটার প্রতিযোগীতা পড়ে যায় গাছিদের মধ্যে। তাই খেঁজুরের রস সংগ্রহের জন্য এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে এসব এলাকার গাছিরা। খেঁজুর গাছ থেকে রস বের করার জন্য গাছিরা ইতোমধ্যে শুরু করছে প্রাথমিক পরিচর্যা। আঞ্চলিক ভাষায় এটাকে গাছ-তোলা বলা হয়ে থাকে। তোলা/ছোলা গাছে এক সপ্তাহ পরেই আবার চাচ দিয়ে নল লাগানো হবে। খেজুর গাছে তিন স্তরে কাজ করার পর রস সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক পরিচর্যারত গাছ থেকে আর কিছুদিন পরেই খেজুর রস পাওয়া যাবে। ওই সময় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী গাছিদের প্রাণ ভরে উঠবে আনন্দে। যদিও আগের মত খেঁজুর গাছ না থাকায় এখন আর নেই সেই রমরমা অবস্থা। কিন্তু খেঁজুরের গুড় থেকে এক সময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হতো। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই শুরু হবে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক খেঁজুর গাছকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ। গ্রাম্য জনপদের সাধারণ মানুষ শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁপতে কাঁপতে ঠান্ডা খেঁজুর রস না খেলে যেন দিনটাই মাটি হয়ে যায়। এছাড়াও খেঁজুরের রস দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন প্রকার রসালো সুস্বাদু পিঠা, পায়েস ও ক্ষির। যার চাহিদা থাকে গ্রাম থেকে শহর প্রতিটা মানুষের কাছে। কিন্তু ইট ভাটার আগ্রাসনের কারণে আগের তুলনায় খেঁজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ইটভাটায় খেঁজুর গাছ পোড়ানো আইনত নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও ইটভাটার মালিকেরা ধ্বংস করে চলেছে খেঁজুর গাছ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

খেঁজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

আপলোড টাইম : ১০:২৪:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

আকিমুল ইসলাম: আবহমান বাংলায় হেমন্তকালে আকাশপানে তাকালে যেন মনে হয় আকাশেও বুঝি কোনো ঋতু আছে। কেননা তখন প্রকৃতি সাজে এক অপরুপ সাজে। এ সময় চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্র ও তারকারা সবাই নির্দ্বিধায় ও নিঃসংকোচে যেন সব আলো উজাড় করে দেয়। হেমন্তের বিকেলে হিমেল ঝিরঝিরি বাতাসে খেঁজুর গাছের তলায় গাছিরা যখন দাঁড়ায় আপন মনে তখন তাদের মন ভরে যায় অনাবিল আনন্দে। এ সময় শীতের সাথে খেঁজুর রসের থাকে এক নিবিড় সম্পর্ক। খেঁজুর গাছ পরখ করে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নেয় তারা। বিশেষ কায়দায় কোমরে রশি বেঁধে খেঁজুর গাছের উপরে উঠে ধারাল কাঁচি দিয়ে বাদামী রংঙের কপালি বের করে। আর কিছুদিন পরই সেখান থেকে খেঁজুরের রস সংগ্রহ করে। গ্রামবাংলার প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে এই রস দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন রকমের পিঠা কিংবা পায়েস। বলা হচ্ছে শীতের আগমনের সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গার তিতুদহের ব্যস্ত গাছিদের গল্প। শীত আসতে না আসতেই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহের গাছিরা খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করে। শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে খেঁজুর গাছ কাটার প্রতিযোগীতা পড়ে যায় গাছিদের মধ্যে। তাই খেঁজুরের রস সংগ্রহের জন্য এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে এসব এলাকার গাছিরা। খেঁজুর গাছ থেকে রস বের করার জন্য গাছিরা ইতোমধ্যে শুরু করছে প্রাথমিক পরিচর্যা। আঞ্চলিক ভাষায় এটাকে গাছ-তোলা বলা হয়ে থাকে। তোলা/ছোলা গাছে এক সপ্তাহ পরেই আবার চাচ দিয়ে নল লাগানো হবে। খেজুর গাছে তিন স্তরে কাজ করার পর রস সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক পরিচর্যারত গাছ থেকে আর কিছুদিন পরেই খেজুর রস পাওয়া যাবে। ওই সময় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী গাছিদের প্রাণ ভরে উঠবে আনন্দে। যদিও আগের মত খেঁজুর গাছ না থাকায় এখন আর নেই সেই রমরমা অবস্থা। কিন্তু খেঁজুরের গুড় থেকে এক সময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হতো। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই শুরু হবে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক খেঁজুর গাছকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ। গ্রাম্য জনপদের সাধারণ মানুষ শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁপতে কাঁপতে ঠান্ডা খেঁজুর রস না খেলে যেন দিনটাই মাটি হয়ে যায়। এছাড়াও খেঁজুরের রস দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন প্রকার রসালো সুস্বাদু পিঠা, পায়েস ও ক্ষির। যার চাহিদা থাকে গ্রাম থেকে শহর প্রতিটা মানুষের কাছে। কিন্তু ইট ভাটার আগ্রাসনের কারণে আগের তুলনায় খেঁজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ইটভাটায় খেঁজুর গাছ পোড়ানো আইনত নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও ইটভাটার মালিকেরা ধ্বংস করে চলেছে খেঁজুর গাছ।