ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খাদিজা হত্যা চেষ্টা মামলা বদরুলের বিচার শুরু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:২৫:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৬
  • / ৬৩৩ বার পড়া হয়েছে

GFGFGFসমীকরণ ডেস্ক: সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলার বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল সিলেটের আদালতে চার্জ গঠনের মাধ্যমে আলোচিত এ মামলার বিচার করা হয়। এ সময় বদরুলের পক্ষে একজন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হয়ে বদরুলকে নির্দোষ দাবি তার জামিন চান। কিন্তু জনাকীর্ণ আদালতে খাদিজার পরিবার ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর যৌক্তিক আপত্তির কারণে তার জামিন না মঞ্জুর করে আগামী ৫ই ডিসেম্বর বিচার শুরুর তারিখ নির্ধারণ করেছেন। আদালত থেকে বেরিয়ে এসে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা আদালতে দ্রুততম সময়ে বিচার কাজ শেষ করার আর্জি জানান। তাদের এই আর্জির প্রেক্ষিতে আদালত এক সপ্তাহের মধ্যে সাক্ষী তলব করেছেন। তারা বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে ক্যাম্পাসে খাদিজাকে কোপানো হয়েছে। আর কোপানোর দৃশ্যর ভিডিও ফুটেজ নিয়ে গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় হয়েছে। সুতরাং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি পরিবারসহ সব মহলের। ঘটনা গত ৩রা অক্টোবরের। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে এমসি কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে যায়। ওই দিন সিলেট শহরতলীর আউশা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মাসুক মিয়ার মেয়ে খাদিজাকে চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কুপায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। বদরুল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনার পরপরই ক্যাম্পাসে থাকা লোকজন হামলাকারী বদরুলকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। আর খাদিজাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে, আলোচিত এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। দেখা দেয় ক্ষোভও। ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবি ওঠে খাদিজার সহপাঠীসহ দেশের মানুষের কাছ থেকে। এই অবস্থায় ৫ই অক্টোবর সিলেটের আদালতে বদরুল দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করে। আর ওই জবানবন্দিতে বদরুল জানায়, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সে কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজাকে কুপিয়েছে। এর আগে নগরীর আম্বরখানা থেকে বদরুল আড়াইশ টাকা দিয়ে চাপাতি কিনে। আর ওই চাপাতি কোমরে করে নিয়ে ক্যাম্পাসে যায়। এদিকে খাদিজার ওপর হামলার ঘটনায় তার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে সিলেটের শাহপরান থানায় বদরুলকে আসামি করে মামলা করেন। আর মামলা দায়ের করার পরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ প্রায় ৩৫ দিন তদন্ত শেষ করে গত ৮ই নভেম্বর সিলেটের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। আর ওই চার্জশিটে বদরুলকেই একমাত্র আসামি করা হয়। এবং চার্জশিটে ৩৬ জনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৫ই নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করে গতকাল মঙ্গলবার চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। ধার্য তারিখ হিসেবে সকাল ১০টায় সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে বদরুলকে হাজির করা হয়। দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে চার্জগঠনের শুনানি হয়। এ সময় আদালতে খাদিজা ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা চার্জগঠনের মাধ্যমে দ্রুত বিচার কাজ শুরু করার আবেদন জানান। তবে, আদালতে বদরুলের পক্ষে একজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তিনি আদালতের কাছে বদরুলের জামিন প্রার্থনা করে আবেদন করেন। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত বদরুলের জামিন না-মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আগামী ৫ই ডিসেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন। আদালত থেকে বেরিয়ে এসে খাদিজার পরিবারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম শিবলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রেকর্ড পর্যালোচনা করে বিজ্ঞ আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছেন। একই সঙ্গে আগামী ৫ই ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন বলে জানান তিনি। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সিলেট জেলাবারের এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান জানান, আলোচিত এ ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তি যাতে হয় সে ব্যাপারে আমরা আদালতের দৃষ্টি আর্কষণ করেছি। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রততম সময়ে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে। আমরা আশা করি, এই তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এদিকে, গতকাল আদালতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবীর সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম সামিউল আলমের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন আইনজীবী। তারা এ সময় খাদিজার পক্ষের আইনজীবীদের সহায়তা করেন। তারা বদরুলের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করতে আদালতে শুনানিতে অংশ নেন। আদালত থেকে বেরিয়ে এসে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম সামিউল আলম জানিয়েছেন, সিলেট জেলা আইনজীঈ সমিতি আলোচিত ঘটনায় সরকারপক্ষকে সব সময় সহায়তা করে। এর আগে সিলেটের সব আইনজীবী রাজন হত্যা মামলায় ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিয়েছেন। খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলায়ও সিলেটের আইনজীবীরা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করবেন। আদালতে উপস্থিত থাকা খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী ও খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস জানান, তারা ন্যায়বিচার চান। দ্রুততম সময়ে মামলার বিচারের মাধ্যমে বদরুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আর কোনো মেয়ের ওপর এরকম ঘটনা ঘটাতে কেউ সাহস পাবে না বলে দাবি করেন তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

খাদিজা হত্যা চেষ্টা মামলা বদরুলের বিচার শুরু

আপলোড টাইম : ০৬:২৫:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

GFGFGFসমীকরণ ডেস্ক: সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলার বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল সিলেটের আদালতে চার্জ গঠনের মাধ্যমে আলোচিত এ মামলার বিচার করা হয়। এ সময় বদরুলের পক্ষে একজন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হয়ে বদরুলকে নির্দোষ দাবি তার জামিন চান। কিন্তু জনাকীর্ণ আদালতে খাদিজার পরিবার ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর যৌক্তিক আপত্তির কারণে তার জামিন না মঞ্জুর করে আগামী ৫ই ডিসেম্বর বিচার শুরুর তারিখ নির্ধারণ করেছেন। আদালত থেকে বেরিয়ে এসে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা আদালতে দ্রুততম সময়ে বিচার কাজ শেষ করার আর্জি জানান। তাদের এই আর্জির প্রেক্ষিতে আদালত এক সপ্তাহের মধ্যে সাক্ষী তলব করেছেন। তারা বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে ক্যাম্পাসে খাদিজাকে কোপানো হয়েছে। আর কোপানোর দৃশ্যর ভিডিও ফুটেজ নিয়ে গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় হয়েছে। সুতরাং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি পরিবারসহ সব মহলের। ঘটনা গত ৩রা অক্টোবরের। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে এমসি কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে যায়। ওই দিন সিলেট শহরতলীর আউশা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মাসুক মিয়ার মেয়ে খাদিজাকে চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কুপায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। বদরুল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনার পরপরই ক্যাম্পাসে থাকা লোকজন হামলাকারী বদরুলকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। আর খাদিজাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে, আলোচিত এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। দেখা দেয় ক্ষোভও। ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবি ওঠে খাদিজার সহপাঠীসহ দেশের মানুষের কাছ থেকে। এই অবস্থায় ৫ই অক্টোবর সিলেটের আদালতে বদরুল দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করে। আর ওই জবানবন্দিতে বদরুল জানায়, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সে কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজাকে কুপিয়েছে। এর আগে নগরীর আম্বরখানা থেকে বদরুল আড়াইশ টাকা দিয়ে চাপাতি কিনে। আর ওই চাপাতি কোমরে করে নিয়ে ক্যাম্পাসে যায়। এদিকে খাদিজার ওপর হামলার ঘটনায় তার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে সিলেটের শাহপরান থানায় বদরুলকে আসামি করে মামলা করেন। আর মামলা দায়ের করার পরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ প্রায় ৩৫ দিন তদন্ত শেষ করে গত ৮ই নভেম্বর সিলেটের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। আর ওই চার্জশিটে বদরুলকেই একমাত্র আসামি করা হয়। এবং চার্জশিটে ৩৬ জনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৫ই নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করে গতকাল মঙ্গলবার চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। ধার্য তারিখ হিসেবে সকাল ১০টায় সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে বদরুলকে হাজির করা হয়। দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে চার্জগঠনের শুনানি হয়। এ সময় আদালতে খাদিজা ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা চার্জগঠনের মাধ্যমে দ্রুত বিচার কাজ শুরু করার আবেদন জানান। তবে, আদালতে বদরুলের পক্ষে একজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তিনি আদালতের কাছে বদরুলের জামিন প্রার্থনা করে আবেদন করেন। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত বদরুলের জামিন না-মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আগামী ৫ই ডিসেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন। আদালত থেকে বেরিয়ে এসে খাদিজার পরিবারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম শিবলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রেকর্ড পর্যালোচনা করে বিজ্ঞ আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছেন। একই সঙ্গে আগামী ৫ই ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন বলে জানান তিনি। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সিলেট জেলাবারের এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান জানান, আলোচিত এ ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তি যাতে হয় সে ব্যাপারে আমরা আদালতের দৃষ্টি আর্কষণ করেছি। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রততম সময়ে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে। আমরা আশা করি, এই তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এদিকে, গতকাল আদালতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবীর সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম সামিউল আলমের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন আইনজীবী। তারা এ সময় খাদিজার পক্ষের আইনজীবীদের সহায়তা করেন। তারা বদরুলের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করতে আদালতে শুনানিতে অংশ নেন। আদালত থেকে বেরিয়ে এসে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম সামিউল আলম জানিয়েছেন, সিলেট জেলা আইনজীঈ সমিতি আলোচিত ঘটনায় সরকারপক্ষকে সব সময় সহায়তা করে। এর আগে সিলেটের সব আইনজীবী রাজন হত্যা মামলায় ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিয়েছেন। খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলায়ও সিলেটের আইনজীবীরা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করবেন। আদালতে উপস্থিত থাকা খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী ও খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস জানান, তারা ন্যায়বিচার চান। দ্রুততম সময়ে মামলার বিচারের মাধ্যমে বদরুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আর কোনো মেয়ের ওপর এরকম ঘটনা ঘটাতে কেউ সাহস পাবে না বলে দাবি করেন তিনি।