ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খচ্চর যে গ্রামের শেষ ভরসা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৭:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ৪৯২ বার পড়া হয়েছে

বিস্ময় প্রতিবেদন:
আপনি যদি কখনো যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরতে যান তাহলে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গিরিখাত একবারের জন্য হলেও ঘুরে আসবেন। এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নেই আছে দেশটির সবচেয়ে দুর্গম গ্রাম সুপাই। প্রাকৃতিক এক ভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যম-িত গ্রামটি পর্যটকদের কাছে বেশ প্রসিদ্ধ। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের শাখা হাভাসু ক্যানিয়ন। সুপাই গ্রামটি হাভাসু ন্যাশনাল রিজার্ভেশনের অন্তর্গত। এই গ্রামে যে রেড ইন্ডিয়ানদের বাস, তাদেরই নাম আসলে হাভাসুপাই। সে অনুযায়ী গ্রামের নাম রাখা হয়েছে। এই মরুভূমি এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে মাত্র সাতশ ত্রিশজন মানুষের একটি সম্প্রদায় বাস করে। মানুষগুলো ‘পিপল অব ব্লু গ্রিন ওয়াটার’ বা ‘নীল-সবুজ পানির মানুষ’ নামেও পরিচিত। নীল-সবুজ পানি রয়েছে হাভাসু খাঁড়িতে। এই পানি হাভাসু ক্যানিয়ন দিয়ে বয়ে গিয়ে পড়েছে কলোরাডো নদীতে। এ অঞ্চলে বসবাসরত রেড-ইন্ডিয়ান উপজাতি প্রকৃতির এক অপার বিস্ময় হয়ে টিকে আছে দুর্গম এই এলাকায়। অঞ্চলটি লোকালয় থেকে অনেক দূরে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এখানে যাওয়ার জন্য প্রচলিত কোনো রাস্তা নেই। আপনি যদি এই অঞ্চলে যেতে চান তাহলে পায়ে হেঁটে অথবা খচ্চরের পিঠে চেপে যেতে হবে। নতুন যারা তাদের পক্ষে পায়ে হেঁটে যাওয়া খুব কঠিন। কারণ এর চড়াই-উতরাই! ফলে বাধ্য হয়েই আপনাকে খচ্চরের পিঠে চড়তে হবে। ধারণা করা হয়, বিগত প্রায় হাজার বছর ধরেই এই জাতি এখানে বসবাস করছে। শুরু থেকেই তারা প্রচ- বৈরী আবহাওয়ায় কীভাবে টিকে থাকতে হয় সেটা আয়ত্ব করেছে। গরমে এখানকার মানুষ সাধারণত কৃষিকাজ করে। শীতের দিকে তারা শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষি মৌসুমে এখানে চাষ হয় ভুট্টা, বাঙ্গি আর মটরশুঁটি। উনিশশ শতকের একদম গোড়ার দিকের কথা, তখন খনির খোঁজে এই অঞ্চলে যাতায়াত শুরু হয়েছিল তথাকথিত সভ্য মানুষদের। তারা এখানে এসে রেড ইন্ডিয়ানদের জায়গা দখল করা শুরু করে। ফলে উপজাতিরা কোণঠাসা হতে হতে ক্যানিয়নের এক কোণায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালের দিকে যখন ন্যাশনাল পার্কের কাজ শুরু হয়, তখন তাদের জন্য বিষয়টি মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেয়। কেননা এর আগে ব্যক্তিগত জবর দখল চললেও এবার একদম রাষ্ট্রীয়ভাবে শুরু হয় জমি দখল। তবে আশার কথা হলো ১৯৭৫ সালের দিকে তাদের দুঃখের সময় অবশেষে শেষ হয়। সরকার জমি ফিরিয়ে দেয়। বর্তমানে তারা নিজেদের পুরোনো অভ্যাসে ফিরে গেলেও আধুনিকতার কিছুটা ছোঁয়া তাদের জীবনে বিদ্যমান। আর সেটা হলো গ্রামে এখন স্কুল হয়েছে এবং বাচ্চারা সেখানে পড়ালেখা করে। বর্তমানে সুপাই অঞ্চলবাসীদের অন্যতম আয়ের উৎস হলো পর্যটন ব্যবস্থা। কেননা প্রতি বছর প্রায় বিশ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের এলাকায় আসে বেড়াতে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এখানে একটি পোস্ট অফিসও আছে। তবে আমেরিকায় এটিই হয়তো একমাত্র পোস্ট অফিস যেখানে চিঠি বহনের জন্য খচ্চর ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি সেই অঞ্চলে যেতে চান তাহলে সমতল থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার খচ্চরের পিঠে চড়ে যেতে হবে। এই অঞ্চলের সবচেয়ে কাছাকাছি লোকালয় প্রায় একশ চার কিলোমিটার দূরে। যেকোনো ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিস এখানে খচ্চর দিয়ে আনা-নেয়া করা হয়। কেননা এই প্রাণিটি ছাড়া প্রতিকূল রাস্তা অন্য কোনো প্রাণি পাড়ি দিতে পারবে না। ভাবা যায়, মানুষ যেখানে রকেটে করে মহাকাশ পাড়ি দিচ্ছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও ভরসা করতে হয় খচ্চরের জন্য।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

খচ্চর যে গ্রামের শেষ ভরসা

আপলোড টাইম : ১০:৪৭:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

বিস্ময় প্রতিবেদন:
আপনি যদি কখনো যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরতে যান তাহলে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গিরিখাত একবারের জন্য হলেও ঘুরে আসবেন। এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নেই আছে দেশটির সবচেয়ে দুর্গম গ্রাম সুপাই। প্রাকৃতিক এক ভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যম-িত গ্রামটি পর্যটকদের কাছে বেশ প্রসিদ্ধ। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের শাখা হাভাসু ক্যানিয়ন। সুপাই গ্রামটি হাভাসু ন্যাশনাল রিজার্ভেশনের অন্তর্গত। এই গ্রামে যে রেড ইন্ডিয়ানদের বাস, তাদেরই নাম আসলে হাভাসুপাই। সে অনুযায়ী গ্রামের নাম রাখা হয়েছে। এই মরুভূমি এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে মাত্র সাতশ ত্রিশজন মানুষের একটি সম্প্রদায় বাস করে। মানুষগুলো ‘পিপল অব ব্লু গ্রিন ওয়াটার’ বা ‘নীল-সবুজ পানির মানুষ’ নামেও পরিচিত। নীল-সবুজ পানি রয়েছে হাভাসু খাঁড়িতে। এই পানি হাভাসু ক্যানিয়ন দিয়ে বয়ে গিয়ে পড়েছে কলোরাডো নদীতে। এ অঞ্চলে বসবাসরত রেড-ইন্ডিয়ান উপজাতি প্রকৃতির এক অপার বিস্ময় হয়ে টিকে আছে দুর্গম এই এলাকায়। অঞ্চলটি লোকালয় থেকে অনেক দূরে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এখানে যাওয়ার জন্য প্রচলিত কোনো রাস্তা নেই। আপনি যদি এই অঞ্চলে যেতে চান তাহলে পায়ে হেঁটে অথবা খচ্চরের পিঠে চেপে যেতে হবে। নতুন যারা তাদের পক্ষে পায়ে হেঁটে যাওয়া খুব কঠিন। কারণ এর চড়াই-উতরাই! ফলে বাধ্য হয়েই আপনাকে খচ্চরের পিঠে চড়তে হবে। ধারণা করা হয়, বিগত প্রায় হাজার বছর ধরেই এই জাতি এখানে বসবাস করছে। শুরু থেকেই তারা প্রচ- বৈরী আবহাওয়ায় কীভাবে টিকে থাকতে হয় সেটা আয়ত্ব করেছে। গরমে এখানকার মানুষ সাধারণত কৃষিকাজ করে। শীতের দিকে তারা শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষি মৌসুমে এখানে চাষ হয় ভুট্টা, বাঙ্গি আর মটরশুঁটি। উনিশশ শতকের একদম গোড়ার দিকের কথা, তখন খনির খোঁজে এই অঞ্চলে যাতায়াত শুরু হয়েছিল তথাকথিত সভ্য মানুষদের। তারা এখানে এসে রেড ইন্ডিয়ানদের জায়গা দখল করা শুরু করে। ফলে উপজাতিরা কোণঠাসা হতে হতে ক্যানিয়নের এক কোণায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালের দিকে যখন ন্যাশনাল পার্কের কাজ শুরু হয়, তখন তাদের জন্য বিষয়টি মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেয়। কেননা এর আগে ব্যক্তিগত জবর দখল চললেও এবার একদম রাষ্ট্রীয়ভাবে শুরু হয় জমি দখল। তবে আশার কথা হলো ১৯৭৫ সালের দিকে তাদের দুঃখের সময় অবশেষে শেষ হয়। সরকার জমি ফিরিয়ে দেয়। বর্তমানে তারা নিজেদের পুরোনো অভ্যাসে ফিরে গেলেও আধুনিকতার কিছুটা ছোঁয়া তাদের জীবনে বিদ্যমান। আর সেটা হলো গ্রামে এখন স্কুল হয়েছে এবং বাচ্চারা সেখানে পড়ালেখা করে। বর্তমানে সুপাই অঞ্চলবাসীদের অন্যতম আয়ের উৎস হলো পর্যটন ব্যবস্থা। কেননা প্রতি বছর প্রায় বিশ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের এলাকায় আসে বেড়াতে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এখানে একটি পোস্ট অফিসও আছে। তবে আমেরিকায় এটিই হয়তো একমাত্র পোস্ট অফিস যেখানে চিঠি বহনের জন্য খচ্চর ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি সেই অঞ্চলে যেতে চান তাহলে সমতল থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার খচ্চরের পিঠে চড়ে যেতে হবে। এই অঞ্চলের সবচেয়ে কাছাকাছি লোকালয় প্রায় একশ চার কিলোমিটার দূরে। যেকোনো ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিস এখানে খচ্চর দিয়ে আনা-নেয়া করা হয়। কেননা এই প্রাণিটি ছাড়া প্রতিকূল রাস্তা অন্য কোনো প্রাণি পাড়ি দিতে পারবে না। ভাবা যায়, মানুষ যেখানে রকেটে করে মহাকাশ পাড়ি দিচ্ছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও ভরসা করতে হয় খচ্চরের জন্য।