ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কৃতজ্ঞতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ অগাস্ট ২০২০
  • / ২৪৮ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন:
কারো উপকার করে তাকে খোঁটা দেওয়া উচিত নয়। একে পুঁজি করে তাকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। এতে উপকার করে যে সওয়াবটুকু অর্জন হয়েছিল তা নষ্ট হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের দান-সদকাকে পণ্ড কোরো না খোঁটা ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৪)। তাই মহান আল্লাহ কাউকে অন্যের উপকার করার সুযোগ দিলে তা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। পাশাপাশি মানুষের উপকার করা নিজের দায়িত্ব মনে করে করা উচিত। উপকারভোগীর থেকে এর বিনিময় আশা করা বা কোথাও তাকে ছোট করা উচিত নয়। তেমনি কেউ উপকার করলেও তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। এটি রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’ অথবা ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮১১) এ কারণে কেউ কোনো উপহার দিলে সামর্থ্য থাকলে তাকেও কিছু উপহার দেওয়া উচিত। কোনো কিছু না থাকলে কমপক্ষে তার প্রশংসা করা উচিত। তার সঙ্গে সদাচরণ করা উচিত। কিন্তু আমরা অনেক সময় কারো দ্বারা উপকৃত হলে সে যাতে এটাকে বড় করে না দেখে বা আমরা যেন তার কাছে ছোট না হয়ে যাই, এ জন্য তার সঙ্গে অদ্ভুত আচরণ শুরু করি। তার মন ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করি। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি, আমার উপকার করতে পারা তোমার ভাগ্য। আমার উপকার করার জন্য লাখ লাখ মানুষ আছে, কিন্তু তোমাকে উপকার করার সুযোগ দিয়ে আমি তোমার ওপর দয়া করেছি। (নাউজুবিল্লাহ!) এটা ইসলামের শিক্ষা নয়। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কাউকে যখন উপহারস্বরূপ কিছু দেওয়া হয়, তখন সে যদি এর পরিবর্তে দেওয়ার মতো কিছু পায়, তাহলে যেন তা দিয়ে দেয়। আর যে এমন কিছু না পাবে, সে যেন তার প্রশংসা করে। কেননা যে প্রশংসা করল, সে কৃতজ্ঞতা আদায় করল। আর যে লুকিয়ে রাখল, সে অস্বীকার করল। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৪) তাই আমরা কারো দ্বারা উপকৃত হলে কমপক্ষে তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে পারি। মহান আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া করতে পারি। সেই দোয়ার ভাষা কী হবে, তা-ও শিখিয়েছেন রাসুল (সা.)। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, ‘জাযাকাল্লাহু খইরান’ অর্থ : মহান আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন, তাহলে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৫) আমাদের সমাজে অবশ্য আমরা কারো দ্বারা উপকৃত হলে তাকে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে থাকি। কিন্তু উপকারকারীর জন্য রাসুল (সা.)-এর ভাষায় দোয়া করাই বেশি ফজিলতপূর্ণ হবে। কারো উপকারের উপযুক্ত প্রতিদান দেওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। আমরা কারো জন্য কিছু করতে চাইলেও কী-ই বা করতে পারব? কিন্তু মহান আল্লাহ যদি নিজ হাতে তাকে পুরস্কৃত করেন, তাহলে সেই পুরস্কার অবশ্যই তার শান অনুযায়ী হবে। তাই আমরা কারো দ্বারা উপকৃত হলে, বিপদ ও সংকটের সময় কাউকে কাছে পেলে তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার জন্য রাসুল (সা.)-এর ভাষায় ‘জাযাকাল্লাহ’ বলে দোয়া করতে পারি। এতে একদিকে যেমন তার কৃতজ্ঞতা আদায় হবে, অন্যদিকে নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা বাড়বে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর হুকুম মেনে চলার তাওফিক দান করুন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কৃতজ্ঞতা

আপলোড টাইম : ০৯:০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ অগাস্ট ২০২০

ধর্ম প্রতিবেদন:
কারো উপকার করে তাকে খোঁটা দেওয়া উচিত নয়। একে পুঁজি করে তাকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। এতে উপকার করে যে সওয়াবটুকু অর্জন হয়েছিল তা নষ্ট হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের দান-সদকাকে পণ্ড কোরো না খোঁটা ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৪)। তাই মহান আল্লাহ কাউকে অন্যের উপকার করার সুযোগ দিলে তা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। পাশাপাশি মানুষের উপকার করা নিজের দায়িত্ব মনে করে করা উচিত। উপকারভোগীর থেকে এর বিনিময় আশা করা বা কোথাও তাকে ছোট করা উচিত নয়। তেমনি কেউ উপকার করলেও তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। এটি রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’ অথবা ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮১১) এ কারণে কেউ কোনো উপহার দিলে সামর্থ্য থাকলে তাকেও কিছু উপহার দেওয়া উচিত। কোনো কিছু না থাকলে কমপক্ষে তার প্রশংসা করা উচিত। তার সঙ্গে সদাচরণ করা উচিত। কিন্তু আমরা অনেক সময় কারো দ্বারা উপকৃত হলে সে যাতে এটাকে বড় করে না দেখে বা আমরা যেন তার কাছে ছোট না হয়ে যাই, এ জন্য তার সঙ্গে অদ্ভুত আচরণ শুরু করি। তার মন ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করি। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি, আমার উপকার করতে পারা তোমার ভাগ্য। আমার উপকার করার জন্য লাখ লাখ মানুষ আছে, কিন্তু তোমাকে উপকার করার সুযোগ দিয়ে আমি তোমার ওপর দয়া করেছি। (নাউজুবিল্লাহ!) এটা ইসলামের শিক্ষা নয়। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কাউকে যখন উপহারস্বরূপ কিছু দেওয়া হয়, তখন সে যদি এর পরিবর্তে দেওয়ার মতো কিছু পায়, তাহলে যেন তা দিয়ে দেয়। আর যে এমন কিছু না পাবে, সে যেন তার প্রশংসা করে। কেননা যে প্রশংসা করল, সে কৃতজ্ঞতা আদায় করল। আর যে লুকিয়ে রাখল, সে অস্বীকার করল। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৪) তাই আমরা কারো দ্বারা উপকৃত হলে কমপক্ষে তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে পারি। মহান আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া করতে পারি। সেই দোয়ার ভাষা কী হবে, তা-ও শিখিয়েছেন রাসুল (সা.)। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, ‘জাযাকাল্লাহু খইরান’ অর্থ : মহান আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন, তাহলে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৫) আমাদের সমাজে অবশ্য আমরা কারো দ্বারা উপকৃত হলে তাকে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে থাকি। কিন্তু উপকারকারীর জন্য রাসুল (সা.)-এর ভাষায় দোয়া করাই বেশি ফজিলতপূর্ণ হবে। কারো উপকারের উপযুক্ত প্রতিদান দেওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। আমরা কারো জন্য কিছু করতে চাইলেও কী-ই বা করতে পারব? কিন্তু মহান আল্লাহ যদি নিজ হাতে তাকে পুরস্কৃত করেন, তাহলে সেই পুরস্কার অবশ্যই তার শান অনুযায়ী হবে। তাই আমরা কারো দ্বারা উপকৃত হলে, বিপদ ও সংকটের সময় কাউকে কাছে পেলে তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার জন্য রাসুল (সা.)-এর ভাষায় ‘জাযাকাল্লাহ’ বলে দোয়া করতে পারি। এতে একদিকে যেমন তার কৃতজ্ঞতা আদায় হবে, অন্যদিকে নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা বাড়বে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর হুকুম মেনে চলার তাওফিক দান করুন।