ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা : প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মার্চ ২০১৮
  • / ৬৯৯ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব
এসএম শাফায়েত/মেহেদী হাসান: কুকুরের উপদ্রবে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী। তবে এ ভোগান্তিতে সবচেয়ে বেশি পড়তে হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাসিন্দাদের। হাট বাজার, পাড়া মহল্লা এমনকি অলিগলিতে কুকুরের অবাধ বিচরনে আতঙ্কিত সকলে। দিনে-রাতে দল বেধে পাগলা কুকুরের বিচরণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। এসব পাগলা কুকুরের কামড়ে বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং গরু-ছাগল মারা গেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ২৬ জনকে ভর্তি করা হয়। যথাযথ ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসা সেবা পেতে একটি বিঘœ হয় রোগীদেরকে। একপর্যায়ে হাসপাতাল এলাকার বিভিন্ন ঔষধের দোকান থেকে ভ্যাকসিন কিনে নিয়ে এসে রোগীদের সেবা দেয়া হয়।
আহত রোগীর স্বজন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন যাবত কুকুর নিধন বা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় জনসাধারণকে এখন কুকুরের হামলার শিকার হতে হচ্ছে। স্কুল-কলেজ এর ছাত্র-ছাত্রী তথা অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার এখন শেষ নেই । কয়েক বছর আগেও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর ও স্থানীয় পৌরসভার সহযোগিতায় সরকারি ভাবে কুকুর নিধন করা হতো। কিন্তু একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের রিটের কারণে উচ্চ আদালত থেকে কুকুর নিধনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় । ফলে পৌর এলাকাসহ লোর সর্বত্র বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা ও উপদ্রব দিনদিন বেড়েই চলেছে। কুকুরের অত্যাচারে জেলার মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।
শহর ঘুরে দেখা যায়, হাট, বাজার, রাস্তা ও বিদ্যালয়ের মাঠে অসংখ্য কুকুর দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক কুকুরের ডাক চিৎকারে আরো অনেক বেওয়ারিশ কুকুর একত্রিত হয়। সুযোগ পেলেই পথচারী এমনকি গরু ছাগলকে কামড়ে আহত করে কুকুর দল। বেওয়ারিশ কুকুরের কারনে শিশুদের নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছে অভিভাবকরা।
বেলা নামের একটি সংগঠনের করা রিটের কারণে কুকুর নিধন, অপসারণ ও স্থানান্তরের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই আপাতত কুকুর নিধন ও নিয়ন্ত্রণে কিছু করার উপায় নেই জানান জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুল আলম বলেন, প্রজনন মৌসুমে কুকুর দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। এসময় কুকুরেরা রুক্ষ প্রকৃতির হয়ে থাকে। কুকুর কামড় দিলে অবশ্যই প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নিতে হবে। কোন কুকুরের ভাইরাস আছে কি-না এটা বলা মুশকিল। কুকুরের কামড় ও আঁছড় থেকে একবার জলাতঙ্ক রোগ হলে চোখের সামনে মৃত্যু দেখা ছাড়া কোন উপায় নাই।
এদিকে কুকুরের কামড়ের ভয়ে অনেক শিশু স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া কুকুরের হামলায় আহতরা যথাযথ ভাবে হাসপাতাল ও পৌরসভা থেকে ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। গত দু’বছর ধরে পৌরসভায় কুকুরে কামড়ানোর কোনো প্রতিষেধক না থাকায় আর হাসপাতালে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাধ্য হয়ে কুকুরের কামড়ে আহতদের চড়া মূল্য দিয়ে দোকান থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করতে হচ্ছে। যেখানে একটি কুকুরে কামড়ানো প্রতিষেধক বিনামূল্যে দেয়ার কথা তার বিপরীতে ১ হাজার টাকা মূল্যে এক একটি ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে দোকান থেকে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির বলেন, ‘প্রতিদিনই কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে নিয়ে আসামাত্র তাদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ২/৩ ভাগ ভ্যাকসিন সাপ্লাই থাকায় ও জনবল সংকটের কারণে একটু চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।
ফেরীঘাট রোডের সুমন পারভেজ খান জানান, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ কুকুরের বেপরোয়া আচরণে সাধারন মানুষ দুর্ভোগের শিকার হলেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করছে।’ এ ছাড়া অবিলম্বে এ বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে কুকুর নিয়ন্ত্রণ ও রাস্তায় চলাচলের পথে কুকুরের কামড়ে আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। একই সাথে যারা নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে কুকুর লালন পালন করে থাকেন তাদের কুকুরের গলায় ডগবেল্ট ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়রের অবর্তমানে প্যানেল মেয়র একরামুল হক মুক্তা জানান, পৌর এলাকায় কুকুরের উপদ্রব ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে; যা আমরা জানতে পেরেছি। তবে হাইকোর্টে রিট থাকায় পৌরসভা কর্তৃক নিধন বা নিয়ন্ত্রণের কোন সুযোগ নেই। জনগণ নিজস্ব উদ্যোগে যদি বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করে তবেই এর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। আইন কানুনের মধ্যে থেকেই শিঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কুকুরে কামড়ে আহত হওয়া ২৬ জন নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধা, পথচারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে দেড় শতাধিক কুকুরের কামড়ে আহত রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা : প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

আপলোড টাইম : ০৮:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মার্চ ২০১৮

চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব
এসএম শাফায়েত/মেহেদী হাসান: কুকুরের উপদ্রবে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী। তবে এ ভোগান্তিতে সবচেয়ে বেশি পড়তে হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাসিন্দাদের। হাট বাজার, পাড়া মহল্লা এমনকি অলিগলিতে কুকুরের অবাধ বিচরনে আতঙ্কিত সকলে। দিনে-রাতে দল বেধে পাগলা কুকুরের বিচরণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। এসব পাগলা কুকুরের কামড়ে বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং গরু-ছাগল মারা গেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ২৬ জনকে ভর্তি করা হয়। যথাযথ ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসা সেবা পেতে একটি বিঘœ হয় রোগীদেরকে। একপর্যায়ে হাসপাতাল এলাকার বিভিন্ন ঔষধের দোকান থেকে ভ্যাকসিন কিনে নিয়ে এসে রোগীদের সেবা দেয়া হয়।
আহত রোগীর স্বজন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন যাবত কুকুর নিধন বা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় জনসাধারণকে এখন কুকুরের হামলার শিকার হতে হচ্ছে। স্কুল-কলেজ এর ছাত্র-ছাত্রী তথা অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার এখন শেষ নেই । কয়েক বছর আগেও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর ও স্থানীয় পৌরসভার সহযোগিতায় সরকারি ভাবে কুকুর নিধন করা হতো। কিন্তু একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের রিটের কারণে উচ্চ আদালত থেকে কুকুর নিধনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় । ফলে পৌর এলাকাসহ লোর সর্বত্র বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা ও উপদ্রব দিনদিন বেড়েই চলেছে। কুকুরের অত্যাচারে জেলার মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।
শহর ঘুরে দেখা যায়, হাট, বাজার, রাস্তা ও বিদ্যালয়ের মাঠে অসংখ্য কুকুর দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক কুকুরের ডাক চিৎকারে আরো অনেক বেওয়ারিশ কুকুর একত্রিত হয়। সুযোগ পেলেই পথচারী এমনকি গরু ছাগলকে কামড়ে আহত করে কুকুর দল। বেওয়ারিশ কুকুরের কারনে শিশুদের নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছে অভিভাবকরা।
বেলা নামের একটি সংগঠনের করা রিটের কারণে কুকুর নিধন, অপসারণ ও স্থানান্তরের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই আপাতত কুকুর নিধন ও নিয়ন্ত্রণে কিছু করার উপায় নেই জানান জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুল আলম বলেন, প্রজনন মৌসুমে কুকুর দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। এসময় কুকুরেরা রুক্ষ প্রকৃতির হয়ে থাকে। কুকুর কামড় দিলে অবশ্যই প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নিতে হবে। কোন কুকুরের ভাইরাস আছে কি-না এটা বলা মুশকিল। কুকুরের কামড় ও আঁছড় থেকে একবার জলাতঙ্ক রোগ হলে চোখের সামনে মৃত্যু দেখা ছাড়া কোন উপায় নাই।
এদিকে কুকুরের কামড়ের ভয়ে অনেক শিশু স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া কুকুরের হামলায় আহতরা যথাযথ ভাবে হাসপাতাল ও পৌরসভা থেকে ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। গত দু’বছর ধরে পৌরসভায় কুকুরে কামড়ানোর কোনো প্রতিষেধক না থাকায় আর হাসপাতালে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাধ্য হয়ে কুকুরের কামড়ে আহতদের চড়া মূল্য দিয়ে দোকান থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করতে হচ্ছে। যেখানে একটি কুকুরে কামড়ানো প্রতিষেধক বিনামূল্যে দেয়ার কথা তার বিপরীতে ১ হাজার টাকা মূল্যে এক একটি ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে দোকান থেকে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির বলেন, ‘প্রতিদিনই কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে নিয়ে আসামাত্র তাদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ২/৩ ভাগ ভ্যাকসিন সাপ্লাই থাকায় ও জনবল সংকটের কারণে একটু চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।
ফেরীঘাট রোডের সুমন পারভেজ খান জানান, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ কুকুরের বেপরোয়া আচরণে সাধারন মানুষ দুর্ভোগের শিকার হলেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করছে।’ এ ছাড়া অবিলম্বে এ বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে কুকুর নিয়ন্ত্রণ ও রাস্তায় চলাচলের পথে কুকুরের কামড়ে আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। একই সাথে যারা নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে কুকুর লালন পালন করে থাকেন তাদের কুকুরের গলায় ডগবেল্ট ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়রের অবর্তমানে প্যানেল মেয়র একরামুল হক মুক্তা জানান, পৌর এলাকায় কুকুরের উপদ্রব ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে; যা আমরা জানতে পেরেছি। তবে হাইকোর্টে রিট থাকায় পৌরসভা কর্তৃক নিধন বা নিয়ন্ত্রণের কোন সুযোগ নেই। জনগণ নিজস্ব উদ্যোগে যদি বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করে তবেই এর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। আইন কানুনের মধ্যে থেকেই শিঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কুকুরে কামড়ে আহত হওয়া ২৬ জন নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধা, পথচারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে দেড় শতাধিক কুকুরের কামড়ে আহত রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।