ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কিন্ডারগার্টেনগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ২৩০ বার পড়া হয়েছে

প্রাথমিক শিক্ষা আজ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। নিবন্ধন ছাড়াই সারাদেশে আনুমানিক ৭০ হাজার কিন্ডারগার্টেন চলছে বলে একটি জাতীয় দৈনিকে খবর ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে প্রায় ২২ হাজার প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি আশ্চর্যজনক বটে। সংশ্লিষ্ট বিধি অনুসারে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেও এর তোয়াক্কা না করেই চলছে তারা। কোনো রকম সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির বাইরে যথেচ্ছভাবে চলা এসব স্কুলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা থেকে, একই সঙ্গে সরকারের প্রাথমিক শিক্ষার যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য তা পূরণও ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের হিসাবে সারাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংখ্যা ন্যূনতম ৭০ হাজার। প্রায় ২৬ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল তাদের সংগঠনেরই সদস্য। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা-২০১১’ প্রণয়ন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে নিবন্ধন ফি ও ভূমির পরিমাণ কমানোসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধারা শিথিল করে দেয় সরকার। এরপর মাত্র দেড় হাজারের মতো নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন স্কুল সরকারি নীতিমালা মেনে নিবন্ধন করেছে বলে জানা গেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নিবন্ধনের আওতায় আসছে না। বলা যায়, কিন্ডারগার্টেন স্কুল নিবন্ধনের বিষয়টি কেবল কেতাবেই আছে, এর কোনো প্রয়োগ নেই। অধিকাংশ স্কুলে নেই পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ, নেই কোনো খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা। নেই শিশুদের উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসব স্কুলের শিক্ষকের নেই কোনো প্রশিক্ষণ এবং এদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। স্কুলের টিউশন ফি নেয়ার ক্ষেত্রেও কোনো নীতিমালা মানা হচ্ছে না। যে যার মতো টাকা নিচ্ছে। চটকদারি নাম ও কথায় তারা আকৃষ্ট করছে অভিভাবকদের। এক শ্রেণির অভিভাবক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিশুদের পড়ানোকে স্ট্যাটাস-সিম্বল মনে করে যাচাই-বাছাই না করেই বহু টাকা খরচ করে এসব মানহীন স্কুলে সন্তানদের পড়াচ্ছেন। অন্যদিকে এসব স্কুলে কী পড়ানো হচ্ছে তা তদারকির মধ্যে না থাকায়, আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কহীন বিপরীত ভাবধারা শিশুদের মধ্যে প্রবিষ্ট করার সুযোগ নিচ্ছে অনেকে। গুরুতর অভিযোগ হলো, একটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক গোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে দেশের আনাচে-কানাচে কিন্ডারগার্টেন, ক্যাডেট মাদ্রাসা ইত্যাদি স্থাপন করে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক চিন্তা-ভাবনায় শিশুদের বড় করছে। যত দ্রুত সম্ভব দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারের নিবিড় নজরদারি ও তদারকির মধ্যে আনার ব্যবস্থা নেয়া হোক। নীতিমালা মেনে চলা ও নিবন্ধনের বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা হোক। শিশুশিক্ষাকে পুঁজি করে দায়িত্বহীন ব্যবসা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের পথ বন্ধ করতেই হবে। বর্তমান সরকার প্রণীত বহুল প্রশংসিত শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে চলমান নৈরাজ্য ও যথেচ্ছাচার রুখতে হবে। ভালো ফলাফল ও উন্নত পরিবেশের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিতে হবে। শিশুদের মানসম্মত শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে, তাদের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কিন্ডারগার্টেনগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে

আপলোড টাইম : ০৮:৫৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রাথমিক শিক্ষা আজ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। নিবন্ধন ছাড়াই সারাদেশে আনুমানিক ৭০ হাজার কিন্ডারগার্টেন চলছে বলে একটি জাতীয় দৈনিকে খবর ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে প্রায় ২২ হাজার প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি আশ্চর্যজনক বটে। সংশ্লিষ্ট বিধি অনুসারে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেও এর তোয়াক্কা না করেই চলছে তারা। কোনো রকম সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির বাইরে যথেচ্ছভাবে চলা এসব স্কুলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা থেকে, একই সঙ্গে সরকারের প্রাথমিক শিক্ষার যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য তা পূরণও ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের হিসাবে সারাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংখ্যা ন্যূনতম ৭০ হাজার। প্রায় ২৬ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল তাদের সংগঠনেরই সদস্য। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা-২০১১’ প্রণয়ন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে নিবন্ধন ফি ও ভূমির পরিমাণ কমানোসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধারা শিথিল করে দেয় সরকার। এরপর মাত্র দেড় হাজারের মতো নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন স্কুল সরকারি নীতিমালা মেনে নিবন্ধন করেছে বলে জানা গেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নিবন্ধনের আওতায় আসছে না। বলা যায়, কিন্ডারগার্টেন স্কুল নিবন্ধনের বিষয়টি কেবল কেতাবেই আছে, এর কোনো প্রয়োগ নেই। অধিকাংশ স্কুলে নেই পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ, নেই কোনো খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা। নেই শিশুদের উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসব স্কুলের শিক্ষকের নেই কোনো প্রশিক্ষণ এবং এদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। স্কুলের টিউশন ফি নেয়ার ক্ষেত্রেও কোনো নীতিমালা মানা হচ্ছে না। যে যার মতো টাকা নিচ্ছে। চটকদারি নাম ও কথায় তারা আকৃষ্ট করছে অভিভাবকদের। এক শ্রেণির অভিভাবক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিশুদের পড়ানোকে স্ট্যাটাস-সিম্বল মনে করে যাচাই-বাছাই না করেই বহু টাকা খরচ করে এসব মানহীন স্কুলে সন্তানদের পড়াচ্ছেন। অন্যদিকে এসব স্কুলে কী পড়ানো হচ্ছে তা তদারকির মধ্যে না থাকায়, আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কহীন বিপরীত ভাবধারা শিশুদের মধ্যে প্রবিষ্ট করার সুযোগ নিচ্ছে অনেকে। গুরুতর অভিযোগ হলো, একটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক গোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে দেশের আনাচে-কানাচে কিন্ডারগার্টেন, ক্যাডেট মাদ্রাসা ইত্যাদি স্থাপন করে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক চিন্তা-ভাবনায় শিশুদের বড় করছে। যত দ্রুত সম্ভব দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারের নিবিড় নজরদারি ও তদারকির মধ্যে আনার ব্যবস্থা নেয়া হোক। নীতিমালা মেনে চলা ও নিবন্ধনের বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা হোক। শিশুশিক্ষাকে পুঁজি করে দায়িত্বহীন ব্যবসা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের পথ বন্ধ করতেই হবে। বর্তমান সরকার প্রণীত বহুল প্রশংসিত শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে চলমান নৈরাজ্য ও যথেচ্ছাচার রুখতে হবে। ভালো ফলাফল ও উন্নত পরিবেশের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিতে হবে। শিশুদের মানসম্মত শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে, তাদের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটাতে হবে।