ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কালো তালিকাভুক্ত হচ্ছেন চাল সরবরাহ না করা মিলাররা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ২২২ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে সময় বাড়িয়েও অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রা
মেহেরাব্বিন সানভী:
চুয়াডাঙ্গায় এবারের বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ১৫ দিন বৃদ্ধি করেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং চাল ৭৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। খাদ্য বিভাগ এ ব্যর্থতার জন্য চুক্তিভুক্ত মিলারদের দায়ী করে যারা একেবারেই চাল সরবরাহ করেননি, তাঁদেরকে ইতোমধ্যেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। এসব মিলারদের করা হতে পারে কালো তালিকাভুক্ত। আর মিলাররা বলছেন, বাজার দর বেশি হওয়ায় এরকম হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ও সরকারিভাবে ঘোষিত ধান এবং চালের মূল্য খোলা বাজারের থেকে বেশি থাকায় সংগ্রহে বড় আকারের ধাক্কা লেগেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোরো সংগ্রহ অভিযানে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা দরে ৫ হাজার ৩১০ মেট্টিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ৬ ভাগ মাত্র। অপর দিকে, মিলারদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে জেলায় ৭ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল সগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে অর্জন হয়েছে ৫ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টন। যা শতকরা ৭৮ ভাগের কাছাকাছি। এ সরবরাহের সময় ছিল প্রথমে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় শেষে ধান ও চাল সংগ্রহ সন্তোষজনক না হওয়ায় ১৫ দিন অতিরিক্ত সময় বাড়ায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অতিরিক্ত সময় বাড়িয়েও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় বোরো মৌসুমে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ মিলার মালিক ছিলেন ১৯৭ জন। এদের মধ্যে ১২১ জন মিলার চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেছেন। আংশিক পরিমাণ চাল সরবরাহ করেছেন ৫২ জন মিলার। একেবারেই চাল সরবরাহ করেননি ৩৪ জন মিল মালিক। চাল সরবরাহ না করায় ইতোমধ্যেই ৩৪ জন মিল মালিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। আগামী ৩১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সঠিক কারণ দেখাতে না পারলে তাঁদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।
ধান সরবরাহ কেন করছেন না, এ বিষয়ে কৃষকেরা জানান, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রয় করতে নানা রকমের বিড়ম্বনা রয়েছে। গুদামে ধান নিয়ে আসার আগেই নমুনা জমা দিতে হয়। তারপর কর্মকর্তারা নমুনা দেখে ধান নেবেন কি নেবেন না, সেটি নিশ্চিত করেন। চলতি মৌসুমে করোনা পরিস্থিতির কারণে সড়কে যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া থাকায় অনেক কৃষক কয়েক দফায় খাদ্য বিভাগে যোগাযোগকে বিরক্তিকর মনে করেছেন। এ জন্য তারা গ্রামের ফড়িয়া অথবা মিল মালিকদের কাছে ধান দিয়েছেন। ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে তেমন বিড়ম্বনা থাকে না। তাঁরা কৃষকের বাড়ি অথবা নিকটবর্তী স্থান থেকেই নগদ টাকায় ধান কিনে নেন। অপর দিকে, এবারে সরকারি মূল্যের থেকে বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় আরও বেশি সুবিধা পেয়েছেন কৃষকেরা।
চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের নেপথ্যে জানা গেছে, বোরো মৌসুমের শুরুতেই বাজারে ধানের দাম চড়া ছিল। পরে বাজারে ধানের দাম আরও বাড়তে থাকে। এর প্রভাব চালের বাজারে পড়ে। বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ধানের ক্রয় মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু খোলা বাজারেও একই হারে বা তার থেকে বেশি মূল্যে ধান কেনাবেচা চলছে। তা ছাড়া খোলা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৪ টাকা কেজি দরে। কিন্তু সরকারিভাবে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টাকা। খাদ্যগুদামে চাল দিতে হলে মিলারদের অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে। সে জন্য অনেক মিলার চাল সরবরাহ করেনি।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ বলেন, এবার বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের বাজার ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় আশানুরূপ ধান কিনতে পারেননি চালকল মালিকেরা। আবার বাজারে সরকারি মূল্যের থেকে চালের দাম বেশি। একই রকম অবস্থা ধানেরও। সে ক্ষেত্রে ধান কিনে, ধান থেকে চাল করে মিল মালিকদের যদি সরকারি খাদ্যগুদামে চাল দিতে হয়, তাহলে লোকসান হবে বড় ধরনের। তিনি নিজেও লোকসান করে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করেছেন জানিয়ে বলেন, ‘লাইসেন্স যাতে বাতিল না হয়, সে জন্য চাল দিয়েছি। কম মূল্যের কারণেই, অনেক চালকল মালিক চুক্তি করেও গুদামে চাল সরবরাহ করতে পারেননি। তবে শুরু থেকেই আমরা বলেছিলাম সরকারি মূল্য বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করতে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল ইসলাম বলেন, এ বছর করোনার কারণে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি ছিল। ফলে কৃষকেরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে উৎসাহ দেখাননি। তাই এ বছর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অনেকটাই কাছাকাছি গেছে। যেসব মালিকদের চাল সরবরাহে তাগাদা দিয়েও একেবারেই চাল সরবরাহ করেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই শোকজ করা হয়েছে। তাঁদেরকে কালো তালিকাভুক্তও করা হতে পারে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কালো তালিকাভুক্ত হচ্ছেন চাল সরবরাহ না করা মিলাররা

আপলোড টাইম : ০৮:৪৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

চুয়াডাঙ্গায় বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে সময় বাড়িয়েও অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রা
মেহেরাব্বিন সানভী:
চুয়াডাঙ্গায় এবারের বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ১৫ দিন বৃদ্ধি করেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং চাল ৭৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। খাদ্য বিভাগ এ ব্যর্থতার জন্য চুক্তিভুক্ত মিলারদের দায়ী করে যারা একেবারেই চাল সরবরাহ করেননি, তাঁদেরকে ইতোমধ্যেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। এসব মিলারদের করা হতে পারে কালো তালিকাভুক্ত। আর মিলাররা বলছেন, বাজার দর বেশি হওয়ায় এরকম হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ও সরকারিভাবে ঘোষিত ধান এবং চালের মূল্য খোলা বাজারের থেকে বেশি থাকায় সংগ্রহে বড় আকারের ধাক্কা লেগেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোরো সংগ্রহ অভিযানে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা দরে ৫ হাজার ৩১০ মেট্টিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ৬ ভাগ মাত্র। অপর দিকে, মিলারদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে জেলায় ৭ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল সগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে অর্জন হয়েছে ৫ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টন। যা শতকরা ৭৮ ভাগের কাছাকাছি। এ সরবরাহের সময় ছিল প্রথমে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় শেষে ধান ও চাল সংগ্রহ সন্তোষজনক না হওয়ায় ১৫ দিন অতিরিক্ত সময় বাড়ায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অতিরিক্ত সময় বাড়িয়েও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় বোরো মৌসুমে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ মিলার মালিক ছিলেন ১৯৭ জন। এদের মধ্যে ১২১ জন মিলার চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেছেন। আংশিক পরিমাণ চাল সরবরাহ করেছেন ৫২ জন মিলার। একেবারেই চাল সরবরাহ করেননি ৩৪ জন মিল মালিক। চাল সরবরাহ না করায় ইতোমধ্যেই ৩৪ জন মিল মালিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। আগামী ৩১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সঠিক কারণ দেখাতে না পারলে তাঁদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।
ধান সরবরাহ কেন করছেন না, এ বিষয়ে কৃষকেরা জানান, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রয় করতে নানা রকমের বিড়ম্বনা রয়েছে। গুদামে ধান নিয়ে আসার আগেই নমুনা জমা দিতে হয়। তারপর কর্মকর্তারা নমুনা দেখে ধান নেবেন কি নেবেন না, সেটি নিশ্চিত করেন। চলতি মৌসুমে করোনা পরিস্থিতির কারণে সড়কে যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া থাকায় অনেক কৃষক কয়েক দফায় খাদ্য বিভাগে যোগাযোগকে বিরক্তিকর মনে করেছেন। এ জন্য তারা গ্রামের ফড়িয়া অথবা মিল মালিকদের কাছে ধান দিয়েছেন। ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে তেমন বিড়ম্বনা থাকে না। তাঁরা কৃষকের বাড়ি অথবা নিকটবর্তী স্থান থেকেই নগদ টাকায় ধান কিনে নেন। অপর দিকে, এবারে সরকারি মূল্যের থেকে বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় আরও বেশি সুবিধা পেয়েছেন কৃষকেরা।
চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের নেপথ্যে জানা গেছে, বোরো মৌসুমের শুরুতেই বাজারে ধানের দাম চড়া ছিল। পরে বাজারে ধানের দাম আরও বাড়তে থাকে। এর প্রভাব চালের বাজারে পড়ে। বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ধানের ক্রয় মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু খোলা বাজারেও একই হারে বা তার থেকে বেশি মূল্যে ধান কেনাবেচা চলছে। তা ছাড়া খোলা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৪ টাকা কেজি দরে। কিন্তু সরকারিভাবে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টাকা। খাদ্যগুদামে চাল দিতে হলে মিলারদের অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে। সে জন্য অনেক মিলার চাল সরবরাহ করেনি।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ বলেন, এবার বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের বাজার ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় আশানুরূপ ধান কিনতে পারেননি চালকল মালিকেরা। আবার বাজারে সরকারি মূল্যের থেকে চালের দাম বেশি। একই রকম অবস্থা ধানেরও। সে ক্ষেত্রে ধান কিনে, ধান থেকে চাল করে মিল মালিকদের যদি সরকারি খাদ্যগুদামে চাল দিতে হয়, তাহলে লোকসান হবে বড় ধরনের। তিনি নিজেও লোকসান করে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করেছেন জানিয়ে বলেন, ‘লাইসেন্স যাতে বাতিল না হয়, সে জন্য চাল দিয়েছি। কম মূল্যের কারণেই, অনেক চালকল মালিক চুক্তি করেও গুদামে চাল সরবরাহ করতে পারেননি। তবে শুরু থেকেই আমরা বলেছিলাম সরকারি মূল্য বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করতে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল ইসলাম বলেন, এ বছর করোনার কারণে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি ছিল। ফলে কৃষকেরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে উৎসাহ দেখাননি। তাই এ বছর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অনেকটাই কাছাকাছি গেছে। যেসব মালিকদের চাল সরবরাহে তাগাদা দিয়েও একেবারেই চাল সরবরাহ করেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই শোকজ করা হয়েছে। তাঁদেরকে কালো তালিকাভুক্তও করা হতে পারে।