ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কারাবন্দিদের জন্য নতুন উদ্যোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৪:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ২২০ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
পাইলট প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের কারাগারের হাজতি ও কয়েদিদের জন্য নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। নেয়া হয়েছে এক ডজন উদ্যোগ। ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগ পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কারা অভ্যন্তরে একাধিক কারখানা স্থাপন যাতে কারা বন্দিদের আত্মকর্মসংস্থান আরও বেশি বৃদ্ধি পায়, স্বজন নামে পরীক্ষামূলক টেলিফোন বুথ চালু, কারাগারে সাক্ষাৎপ্রার্থী স্বজনদের সহজে কথা বলার জন্য সরাসরি সাক্ষাৎ, খাবারের মান ও বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ঢাকাসহ ৮ টি কারাগার পুর্ণনির্মাণ ও সমপ্রসারণ। শিগগিরই ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত কারা-মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন জানান, কারা উন্নয়নে সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে টাঙ্গাইল জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে স্বজন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। কারগারের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৮শে মার্চ থেকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আটক বন্দিরা তাদের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কথা বলার জন্য ‘স্বজন’ নামে বিশেষ টেলিফোন বুথ স্থাপন করা হয়েছে। তারা কারাগার থেকে স্বজনদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে কথা বলতে পারবেন। এজন্য তাদের বিলের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাদের কথোপকথন রেকর্ড থাকবে। কারাবন্দিদের আত্মকর্মসংস্থানের অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে একটি তৈরি পোশাক কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ওই কারখানাসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দিদের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়লব্ধ অর্থের লাভের অর্ধেক টাকা কয়েদিদের দেয়া হচ্ছে। আস্তে আস্তে দেশের সব কারাগারে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন রকমের পণ্যের কারখানা স্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, সব কারাগারে কারাবন্দিদের মুক্তির পর তাদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে সেবা বা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-২-এ বন্দিদের পুনর্বাসন স্কুল চালু করা হয়েছে। কারাবন্দিদের ধর্মীয় শিক্ষা দিতে ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের প্রতি ভিজিট ৫০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও কারা অভ্যন্তরে পরিষ্কার-পরিছন্ন কাজে নিয়োজিত পরিছন্নতা কর্মীদের বেতন মাসে ২০ থেকে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কারা সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে সকালের নাশতায় রুটি-গুড়ের পরিবর্তে সপ্তাহে দুদিন খিচুড়ি, এক দিন হালুয়া-রুটি ও চার দিন সবজি-রুটি দেয়া হচ্ছে। রমজান মাসে ইফতার ১৫ টাকার স্থলে ৩০ টাকা করা হয়েছে। বন্দিদের এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে নেয়ার সময় খোরাকাদি ভাতা প্রতিবেলা ৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করে দুই বেলায় ১৬ টাকার স্থলে ১০০ টাকা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণে তৃতীয় সংশোধিত প্রকল্প, খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণের প্রথম সংশোধিত প্রকল্প, রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ, ময়মনসিংহ কারাগার সমপ্রসারণ ও আধুনিকীকরণ, মহিলা কারাবন্দিদের জন্য আবাসন নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কুমিল্লা কারাগার পুননির্মাণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও বেশকিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি ও বেতন স্কেল উন্নত করা, কারারক্ষীদের ঝুঁকিভাতা দেয়া, কারা কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের স্কুলবাস দেয়া ও স্থাপিত কারা প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করা।
সূত্র জানায়, কারাগারে বন্দির সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সে তুলনায় অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না। বর্তমানে দেশের ৬৮টি কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার ৬৬৪ জন। তার বিপরীতে বন্দি আছে প্রায় ৯০ হাজার। কারাগারে সবসময় ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি থাকে। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কারাগারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের ৬৮ কারাগারে বর্তমানে ১৪১টি নারী সেলসহ মোট সেল আছে ২ হাজার ৫৭৪টি। প্রায় প্রতিটি সেলেই মারাত্মক ধরনের স্যানিটেশন সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করার জন্য কারাবন্দিদের শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বন্দি এখন কারাগারের মধ্যে রয়েছে অথচ তাদের আদালত থেকে সাজা হয়নি তারা যাতে ভেতরে থেকে একাডেমিক পড়াশুনা করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি উদ্যোগ নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের জন্য একাধিক শিক্ষক নিয়োগ হবে। যাতে বিষয় ভিত্তিকভাবে তারা ওই শিক্ষকের কাছে একাডেমিক জ্ঞান নিতে পারেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কারাবন্দিদের জন্য নতুন উদ্যোগ

আপলোড টাইম : ১০:৩৪:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
পাইলট প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের কারাগারের হাজতি ও কয়েদিদের জন্য নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। নেয়া হয়েছে এক ডজন উদ্যোগ। ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগ পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কারা অভ্যন্তরে একাধিক কারখানা স্থাপন যাতে কারা বন্দিদের আত্মকর্মসংস্থান আরও বেশি বৃদ্ধি পায়, স্বজন নামে পরীক্ষামূলক টেলিফোন বুথ চালু, কারাগারে সাক্ষাৎপ্রার্থী স্বজনদের সহজে কথা বলার জন্য সরাসরি সাক্ষাৎ, খাবারের মান ও বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ঢাকাসহ ৮ টি কারাগার পুর্ণনির্মাণ ও সমপ্রসারণ। শিগগিরই ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত কারা-মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন জানান, কারা উন্নয়নে সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে টাঙ্গাইল জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে স্বজন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। কারগারের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৮শে মার্চ থেকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আটক বন্দিরা তাদের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কথা বলার জন্য ‘স্বজন’ নামে বিশেষ টেলিফোন বুথ স্থাপন করা হয়েছে। তারা কারাগার থেকে স্বজনদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে কথা বলতে পারবেন। এজন্য তাদের বিলের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাদের কথোপকথন রেকর্ড থাকবে। কারাবন্দিদের আত্মকর্মসংস্থানের অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে একটি তৈরি পোশাক কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ওই কারখানাসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দিদের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়লব্ধ অর্থের লাভের অর্ধেক টাকা কয়েদিদের দেয়া হচ্ছে। আস্তে আস্তে দেশের সব কারাগারে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন রকমের পণ্যের কারখানা স্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, সব কারাগারে কারাবন্দিদের মুক্তির পর তাদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে সেবা বা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-২-এ বন্দিদের পুনর্বাসন স্কুল চালু করা হয়েছে। কারাবন্দিদের ধর্মীয় শিক্ষা দিতে ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের প্রতি ভিজিট ৫০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও কারা অভ্যন্তরে পরিষ্কার-পরিছন্ন কাজে নিয়োজিত পরিছন্নতা কর্মীদের বেতন মাসে ২০ থেকে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কারা সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে সকালের নাশতায় রুটি-গুড়ের পরিবর্তে সপ্তাহে দুদিন খিচুড়ি, এক দিন হালুয়া-রুটি ও চার দিন সবজি-রুটি দেয়া হচ্ছে। রমজান মাসে ইফতার ১৫ টাকার স্থলে ৩০ টাকা করা হয়েছে। বন্দিদের এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে নেয়ার সময় খোরাকাদি ভাতা প্রতিবেলা ৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করে দুই বেলায় ১৬ টাকার স্থলে ১০০ টাকা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণে তৃতীয় সংশোধিত প্রকল্প, খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণের প্রথম সংশোধিত প্রকল্প, রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ, ময়মনসিংহ কারাগার সমপ্রসারণ ও আধুনিকীকরণ, মহিলা কারাবন্দিদের জন্য আবাসন নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কুমিল্লা কারাগার পুননির্মাণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও বেশকিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি ও বেতন স্কেল উন্নত করা, কারারক্ষীদের ঝুঁকিভাতা দেয়া, কারা কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের স্কুলবাস দেয়া ও স্থাপিত কারা প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করা।
সূত্র জানায়, কারাগারে বন্দির সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সে তুলনায় অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না। বর্তমানে দেশের ৬৮টি কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার ৬৬৪ জন। তার বিপরীতে বন্দি আছে প্রায় ৯০ হাজার। কারাগারে সবসময় ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি থাকে। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কারাগারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের ৬৮ কারাগারে বর্তমানে ১৪১টি নারী সেলসহ মোট সেল আছে ২ হাজার ৫৭৪টি। প্রায় প্রতিটি সেলেই মারাত্মক ধরনের স্যানিটেশন সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করার জন্য কারাবন্দিদের শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বন্দি এখন কারাগারের মধ্যে রয়েছে অথচ তাদের আদালত থেকে সাজা হয়নি তারা যাতে ভেতরে থেকে একাডেমিক পড়াশুনা করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি উদ্যোগ নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের জন্য একাধিক শিক্ষক নিয়োগ হবে। যাতে বিষয় ভিত্তিকভাবে তারা ওই শিক্ষকের কাছে একাডেমিক জ্ঞান নিতে পারেন।