ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনা সংক্রমণের ৬ মাস

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ১৩৫ বার পড়া হয়েছে

মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ নিন
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সারা বিশ্ব ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি। মহামারি করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রত্যেকটি খাত। এ ছাড়া মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতাও বিঘ্নিত হয়েছে। যেমন- বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন করা হয়েছে, তেমনি দীর্ঘদিন অচলাবস্থা চলার পর স্বাভাবিকও হতে শুরু করেছে বিশ্ব। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ও আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বন্ধ হয়নি। দেশেও সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার ছয় মাসের মাথায় সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৩৭ জনের মৃত্যু হয়। তাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪ হাজার ৫১৬ জনে দাঁড়ায়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ, তার ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। প্রায় এক মাস পর ২০ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছিল। তা থেকে ৫০০ ছাড়ায় গত ২৫ মে। এরপর ১০ জুন মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। দেড় হাজার ছাড়ায় ২২ জুন। করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ৮৫ দিন পর ৫ জুলাই মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। এরপর তা আড়াই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় ১৭ জুলাই। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে; ১২ আগস্ট পৌঁছায় সাড়ে তিন হাজারে। তারপর ১৩ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই তালিকায় আরও ৫০০ নাম যোগ হতে সেই ১৩ দিনই লাগল। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, এর মধ্যে ৩০ জুন একদিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে, যা একদিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু। আমরা বলতে চাই, যখন ৬ মাসের মাথায় মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেল, তখন বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, এর আগে করোনাসংক্রান্ত নানা ধরনের বিষয় আলোচনায় এসেছে। অনেকেই অকারণে ঘোরাঘুরি করছে, মাস্ক পরছেন না, স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনাগ্রহ এসব বিষয়ও উঠে এসেছে। এ ছাড়া এর আগে, ফি কমানোর পরও করোনার টেস্টের সংখ্যা কমে আসার বিষয়টি আলোচনায় আসে। দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা নিয়ে নানামুখী বিতর্ক এক সময়ে জালিয়াতি ও ভুয়া টেস্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমরা মনে করি, করোনা প্রতিরোধে যেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে, তেমনিভাবে সচেতনতার বিষয়টিও অগ্রগণ্য। কেননা এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, সচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন, যা কাম্য হতে পারে না। আমরা বলতে চাই, করোনার সংক্রমণে দেশে মৃত্যু সাড়ে চার হাজার ছাড়াল- এই বিষয়টিকে সামনে রেখে সর্বাত্মক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া একদিকে দেশের জনসংখ্যা বেশি, অন্যদিকে প্রস্তুতি কতটা এবং মানুষের সচেতনতার চিত্র আমলে নিয়ে করোনা রোধে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বলা দরকার, সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন স্থানে লকডাউন করা হয়েছে, তেমনি তা শিথিল করা হচ্ছে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে। করোনা রোধের উপায় খুঁজতে যেমন নানা ধরনের প্রচেষ্টা চলছে, তেমনি এর প্রভাবসংক্রান্ত নানা বিষয়ে গবেষণাও হচ্ছে। আমরা মনে করি এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে বলেও জানা যাচ্ছে। আমেরিকার দুই মহাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ এখনো দ্রম্নত বাড়ছে। অন্যদিকে ইউরোপকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে করোনা কিছুটা স্তিমিত হলেও সেখানে আবারও নতুন করে রোগটির প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার হার দ্রম্নত বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই দেশের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে করোনা রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

করোনা সংক্রমণের ৬ মাস

আপলোড টাইম : ০৮:৪৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ নিন
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সারা বিশ্ব ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি। মহামারি করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রত্যেকটি খাত। এ ছাড়া মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতাও বিঘ্নিত হয়েছে। যেমন- বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন করা হয়েছে, তেমনি দীর্ঘদিন অচলাবস্থা চলার পর স্বাভাবিকও হতে শুরু করেছে বিশ্ব। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ও আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বন্ধ হয়নি। দেশেও সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার ছয় মাসের মাথায় সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৩৭ জনের মৃত্যু হয়। তাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪ হাজার ৫১৬ জনে দাঁড়ায়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ, তার ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। প্রায় এক মাস পর ২০ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছিল। তা থেকে ৫০০ ছাড়ায় গত ২৫ মে। এরপর ১০ জুন মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। দেড় হাজার ছাড়ায় ২২ জুন। করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ৮৫ দিন পর ৫ জুলাই মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। এরপর তা আড়াই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় ১৭ জুলাই। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে; ১২ আগস্ট পৌঁছায় সাড়ে তিন হাজারে। তারপর ১৩ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই তালিকায় আরও ৫০০ নাম যোগ হতে সেই ১৩ দিনই লাগল। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, এর মধ্যে ৩০ জুন একদিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে, যা একদিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু। আমরা বলতে চাই, যখন ৬ মাসের মাথায় মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেল, তখন বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, এর আগে করোনাসংক্রান্ত নানা ধরনের বিষয় আলোচনায় এসেছে। অনেকেই অকারণে ঘোরাঘুরি করছে, মাস্ক পরছেন না, স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনাগ্রহ এসব বিষয়ও উঠে এসেছে। এ ছাড়া এর আগে, ফি কমানোর পরও করোনার টেস্টের সংখ্যা কমে আসার বিষয়টি আলোচনায় আসে। দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা নিয়ে নানামুখী বিতর্ক এক সময়ে জালিয়াতি ও ভুয়া টেস্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমরা মনে করি, করোনা প্রতিরোধে যেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে, তেমনিভাবে সচেতনতার বিষয়টিও অগ্রগণ্য। কেননা এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, সচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন, যা কাম্য হতে পারে না। আমরা বলতে চাই, করোনার সংক্রমণে দেশে মৃত্যু সাড়ে চার হাজার ছাড়াল- এই বিষয়টিকে সামনে রেখে সর্বাত্মক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া একদিকে দেশের জনসংখ্যা বেশি, অন্যদিকে প্রস্তুতি কতটা এবং মানুষের সচেতনতার চিত্র আমলে নিয়ে করোনা রোধে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বলা দরকার, সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন স্থানে লকডাউন করা হয়েছে, তেমনি তা শিথিল করা হচ্ছে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে। করোনা রোধের উপায় খুঁজতে যেমন নানা ধরনের প্রচেষ্টা চলছে, তেমনি এর প্রভাবসংক্রান্ত নানা বিষয়ে গবেষণাও হচ্ছে। আমরা মনে করি এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে বলেও জানা যাচ্ছে। আমেরিকার দুই মহাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ এখনো দ্রম্নত বাড়ছে। অন্যদিকে ইউরোপকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে করোনা কিছুটা স্তিমিত হলেও সেখানে আবারও নতুন করে রোগটির প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার হার দ্রম্নত বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই দেশের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে করোনা রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।