ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনায় সর্বোচ্চ বাল্যবিবাহের শঙ্কা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৬:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০
  • / ১৩২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনায় বিশ্বজুড়ে বাল্যবিবাহ ব্যাপক বেড়ে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানাচ্ছে, বাল্যবিবাহ চিরতরে বন্ধ করার জন্য যে চেষ্টা চলছে তার উল্টোটা ঘটে মহামারিতে গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হতে পারে। বিবিসির এক অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী কোভিড-১৯ মাহামারির কারণে ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ২৫ লাখ শিশুকন্যার বিয়ে হতে পারে বলে শঙ্কা করছে সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি বলছে, মহামারি দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়িয়েছে। ফলে অধিকাংশ কন্যাশিশু স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে হয় কাজ নয়তো বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার মতো অঞ্চলের কন্যাশিশুরা। বাল্যবিবাহ ঠেকানো এবং লিঙ্গ বৈষ্যমে দূরীকরণে আরও বেশি তহবিল বরাদ্দ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছ দাতব্য সংস্থাটি। সেভ দ্য চিলড্রেনের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা কারেন ফ্লানগান বলেন, ‘এই বিয়ে কন্যাশিশুদের অধিকারের লঙ্ঘন এবং এর ফলে তাদের অবসাদ, জীবনভর সহিংসতা, অক্ষমতা এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি আরও বাড়বে।’ গত ২৫ বছরে আনুমানিক ৭ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার বাল্যবিবাহ ঠেকানো গেলেও করোনার কারণে এই চর্চা বন্ধ করার ক্ষেত্রে যে উন্নতি এতদিনে হয়েছে তা স্থবির হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাল্যবিবাহে বন্ধে প্রচারণা চালানো ‘গার্লস নট ব্রাইডস’ নামের একটি গোষ্ঠী গত মাসে জানায়, মহামারি কালে অর্থনীতির সংকোচন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে বাল্যবিবাহ বন্ধে স্থবিরতা দেখতে পাচ্ছে তারা।
প্রধান নির্বাহী ডা. ফেইথ মাওয়াঙ্গি পাওয়েল বলেন, ‘শিক্ষা কন্যশিশুদের জন্য একটি সুরক্ষা। কন্যাশিশুদের স্কুলমুখী করতে আরও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, পরিস্থিতি নজরদারি এবং জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।’ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বের এক কোটি ২০ লাখ কন্যাশিশুর বাল্যবিবাহ হয় বলে জানিয়েছে দাতব্য সংস্থাটি। কিন্তু করোনায় অর্থনীতিতে যে স্থবিরতা ও মন্দা দেখা দিয়েছে, এতে করে আগামী বছরগুলোতে এই সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যাবে বলে নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি বলছে, শুধু ২০২০ সালেও বার্ষিক হিসাবের চেয়ে নতুন করে আরও ৫ লাখ কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং একই সময়ে আরও দশ লাখ অন্তঃসত্ত্বা হবে। যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ কোটি ১০ লাখ বাল্যবিবাহ হবে বলে শঙ্কার এক পূর্বাভাস দিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন।
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল চেম্বার্স বলেন, ‘মহামারিতে কাজ হারিয়ে অনেক পরিবার চরম দরিদ্র হয়েছে। ফলে কন্যাশিশুরা পরিবার বাঁচাতে বাধ্য হচ্ছে কাজ করতে। অনেকে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ছে। আবার ছেলেশিশুর চেয়ে কন্যাশিশুদের ক্ষেত্রে ফের স্কুলে ফেরার সম্ভাবনাও অনেক কম।’ দাতব্য সংস্থাটির এই প্রধান আরও বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান খাদ্য এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে সহিংসতা ও যৌন শোষণের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির কারণে অনেক পিতামাতার মনে করছেন যে, তাদের কন্যাশিশুদের বয়স্ক পুরুষদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে বাধ্য করা ছাড়া তাদের হাতে কোনো বিকল্প নেই।’ এর আগে এপ্রিলে জাতিসংঘ জানায়, মহামারির কারণে আগামী দশকে অতিরিক্ত আরও এক কোটি ৩০ লাখ কমবয়সী কন্যাশিশুর বিয়ে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

করোনায় সর্বোচ্চ বাল্যবিবাহের শঙ্কা!

আপলোড টাইম : ১১:৩৬:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০

সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনায় বিশ্বজুড়ে বাল্যবিবাহ ব্যাপক বেড়ে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানাচ্ছে, বাল্যবিবাহ চিরতরে বন্ধ করার জন্য যে চেষ্টা চলছে তার উল্টোটা ঘটে মহামারিতে গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হতে পারে। বিবিসির এক অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী কোভিড-১৯ মাহামারির কারণে ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ২৫ লাখ শিশুকন্যার বিয়ে হতে পারে বলে শঙ্কা করছে সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি বলছে, মহামারি দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়িয়েছে। ফলে অধিকাংশ কন্যাশিশু স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে হয় কাজ নয়তো বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার মতো অঞ্চলের কন্যাশিশুরা। বাল্যবিবাহ ঠেকানো এবং লিঙ্গ বৈষ্যমে দূরীকরণে আরও বেশি তহবিল বরাদ্দ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছ দাতব্য সংস্থাটি। সেভ দ্য চিলড্রেনের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা কারেন ফ্লানগান বলেন, ‘এই বিয়ে কন্যাশিশুদের অধিকারের লঙ্ঘন এবং এর ফলে তাদের অবসাদ, জীবনভর সহিংসতা, অক্ষমতা এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি আরও বাড়বে।’ গত ২৫ বছরে আনুমানিক ৭ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার বাল্যবিবাহ ঠেকানো গেলেও করোনার কারণে এই চর্চা বন্ধ করার ক্ষেত্রে যে উন্নতি এতদিনে হয়েছে তা স্থবির হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাল্যবিবাহে বন্ধে প্রচারণা চালানো ‘গার্লস নট ব্রাইডস’ নামের একটি গোষ্ঠী গত মাসে জানায়, মহামারি কালে অর্থনীতির সংকোচন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে বাল্যবিবাহ বন্ধে স্থবিরতা দেখতে পাচ্ছে তারা।
প্রধান নির্বাহী ডা. ফেইথ মাওয়াঙ্গি পাওয়েল বলেন, ‘শিক্ষা কন্যশিশুদের জন্য একটি সুরক্ষা। কন্যাশিশুদের স্কুলমুখী করতে আরও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, পরিস্থিতি নজরদারি এবং জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।’ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বের এক কোটি ২০ লাখ কন্যাশিশুর বাল্যবিবাহ হয় বলে জানিয়েছে দাতব্য সংস্থাটি। কিন্তু করোনায় অর্থনীতিতে যে স্থবিরতা ও মন্দা দেখা দিয়েছে, এতে করে আগামী বছরগুলোতে এই সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যাবে বলে নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি বলছে, শুধু ২০২০ সালেও বার্ষিক হিসাবের চেয়ে নতুন করে আরও ৫ লাখ কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং একই সময়ে আরও দশ লাখ অন্তঃসত্ত্বা হবে। যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ কোটি ১০ লাখ বাল্যবিবাহ হবে বলে শঙ্কার এক পূর্বাভাস দিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন।
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল চেম্বার্স বলেন, ‘মহামারিতে কাজ হারিয়ে অনেক পরিবার চরম দরিদ্র হয়েছে। ফলে কন্যাশিশুরা পরিবার বাঁচাতে বাধ্য হচ্ছে কাজ করতে। অনেকে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ছে। আবার ছেলেশিশুর চেয়ে কন্যাশিশুদের ক্ষেত্রে ফের স্কুলে ফেরার সম্ভাবনাও অনেক কম।’ দাতব্য সংস্থাটির এই প্রধান আরও বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান খাদ্য এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে সহিংসতা ও যৌন শোষণের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির কারণে অনেক পিতামাতার মনে করছেন যে, তাদের কন্যাশিশুদের বয়স্ক পুরুষদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে বাধ্য করা ছাড়া তাদের হাতে কোনো বিকল্প নেই।’ এর আগে এপ্রিলে জাতিসংঘ জানায়, মহামারির কারণে আগামী দশকে অতিরিক্ত আরও এক কোটি ৩০ লাখ কমবয়সী কন্যাশিশুর বিয়ে হবে।