ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কম দামি পোশাকে ভর করে চলছে গার্মেন্টস খাত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৬:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ৯১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের তৈরি পোশাকখাত। সেই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে শক্তি যোগিয়ে যাচ্ছে তুলনামুলক কম দামি পোশাক। ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে বাড়ছে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এর তথ্যমতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ যে আয় করেছে। এর ৪৫ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক থেকে। করোনাকালে অতি প্রয়োজনীয় কম দামের পোশাক বিশেষ করে নিট পোশাক রপ্তানি বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছেন রপ্তানিকারকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন চলমান সংকটে রপ্তানি আয় যতটুকু হোক তা আশা জাগায়। ইপিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৫৯২ কোটি ৩৫ লাখ ৯০ হাজার ডলারের। আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধির হার দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য। অন্যদিকে একক মাস হিসেবে নভেম্বরে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩০৮ কোটি ডলারের। গত বছরের নভেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৩০৬ কোটি ডলার। সে হিসেবে গত মাসে রপ্তানি বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৭৬ শতাংশ।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ওই তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় দেশে আসে। কিন্তু অক্টোবরে আবার হোঁচট লাগে রপ্তানি আয়ে। নভেম্বরে এসে আবার প্রবৃদ্ধির মুখ দেখল। সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে ৩০৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এ অঙ্ক গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ডিজাইনার সোর্স লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখন আমরা পেটেভাতে আছি। আগে যে অর্ডারগুলো এসেছিলো করোনায় দ্বিতীয় ধাক্কার কারণে অনেকে দেশের লকডাউন চলায় তা বাতিল করেছে। ফলে যেসব পণ্য আমরা তৈরি করে ফেলেছি তা এখন গোডাউনের রয়েছে। এ জন্য আমরা বলতে পারি না যে এখাতের সমস্যা পুরোপুরি কেটেছে। তবে করোনার শুরুতে যে অবস্থাটা ছিলো সেটা কিছুটা কেটেছে। জাহাঙ্গীর আলম জানান, বেসিক আইটেমগুলোর চাহিদা এখন সব থেকে বেশি। এখন আর কেউ সুট কোড কেউ অর্ডার দেয় না। এর মধ্যে রয়েছে টি-সার্ট ও পলো ডেনিম এসবের চাহিদা সব থেকে বেশি। তবে এখন সব থেকে বেশি যে সমস্যার রয়েছি তা হলো কাজ আছে প্রফিট নেই। বলা যেতে পারে পেটেভাতে চলছে।
সিনিয়র সহসভাপতি হয়েছেন ফয়সাল সামাদ বলেন, এখন আমাদের বেচা থাকার লড়াই। আমরা যে দেশগুলোতে পোশাক পাঠাই সেব দেশে এখন নতুন করে করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউন চলছে। ফলে তাদের যে অর্ডার ছিলো তা এখন বন্ধ রয়েছে। অন্যদের মতও আমরা তাকিয়ে আছি করোনা ভ্যাকসিনের দিকে। ভ্যাকসিন বাজারের আসলে সমস্যা কেটে যাবে বলে আমরা আশা করি। সবমিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এক হাজার ৫৯২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এক হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের কিন্তু একটা বিষয় সব সময় মনে রাখতে হবে। আর সেটা হলো-গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ১৭ শতাংশ। তখন কিন্তু কোভিড-১৯ ছিল না। বর্তমানে মহামারীর এ কঠিন সময়ে প্রবৃদ্ধি হওয়াটাকেই আমি অনেক বড় অর্জন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কম দামি পোশাকে ভর করে চলছে গার্মেন্টস খাত

আপলোড টাইম : ১০:১৬:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের তৈরি পোশাকখাত। সেই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে শক্তি যোগিয়ে যাচ্ছে তুলনামুলক কম দামি পোশাক। ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে বাড়ছে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এর তথ্যমতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ যে আয় করেছে। এর ৪৫ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক থেকে। করোনাকালে অতি প্রয়োজনীয় কম দামের পোশাক বিশেষ করে নিট পোশাক রপ্তানি বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছেন রপ্তানিকারকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন চলমান সংকটে রপ্তানি আয় যতটুকু হোক তা আশা জাগায়। ইপিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৫৯২ কোটি ৩৫ লাখ ৯০ হাজার ডলারের। আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধির হার দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য। অন্যদিকে একক মাস হিসেবে নভেম্বরে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩০৮ কোটি ডলারের। গত বছরের নভেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৩০৬ কোটি ডলার। সে হিসেবে গত মাসে রপ্তানি বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৭৬ শতাংশ।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ওই তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় দেশে আসে। কিন্তু অক্টোবরে আবার হোঁচট লাগে রপ্তানি আয়ে। নভেম্বরে এসে আবার প্রবৃদ্ধির মুখ দেখল। সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে ৩০৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এ অঙ্ক গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ডিজাইনার সোর্স লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখন আমরা পেটেভাতে আছি। আগে যে অর্ডারগুলো এসেছিলো করোনায় দ্বিতীয় ধাক্কার কারণে অনেকে দেশের লকডাউন চলায় তা বাতিল করেছে। ফলে যেসব পণ্য আমরা তৈরি করে ফেলেছি তা এখন গোডাউনের রয়েছে। এ জন্য আমরা বলতে পারি না যে এখাতের সমস্যা পুরোপুরি কেটেছে। তবে করোনার শুরুতে যে অবস্থাটা ছিলো সেটা কিছুটা কেটেছে। জাহাঙ্গীর আলম জানান, বেসিক আইটেমগুলোর চাহিদা এখন সব থেকে বেশি। এখন আর কেউ সুট কোড কেউ অর্ডার দেয় না। এর মধ্যে রয়েছে টি-সার্ট ও পলো ডেনিম এসবের চাহিদা সব থেকে বেশি। তবে এখন সব থেকে বেশি যে সমস্যার রয়েছি তা হলো কাজ আছে প্রফিট নেই। বলা যেতে পারে পেটেভাতে চলছে।
সিনিয়র সহসভাপতি হয়েছেন ফয়সাল সামাদ বলেন, এখন আমাদের বেচা থাকার লড়াই। আমরা যে দেশগুলোতে পোশাক পাঠাই সেব দেশে এখন নতুন করে করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউন চলছে। ফলে তাদের যে অর্ডার ছিলো তা এখন বন্ধ রয়েছে। অন্যদের মতও আমরা তাকিয়ে আছি করোনা ভ্যাকসিনের দিকে। ভ্যাকসিন বাজারের আসলে সমস্যা কেটে যাবে বলে আমরা আশা করি। সবমিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এক হাজার ৫৯২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এক হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের কিন্তু একটা বিষয় সব সময় মনে রাখতে হবে। আর সেটা হলো-গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ১৭ শতাংশ। তখন কিন্তু কোভিড-১৯ ছিল না। বর্তমানে মহামারীর এ কঠিন সময়ে প্রবৃদ্ধি হওয়াটাকেই আমি অনেক বড় অর্জন।