ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঐতিহ্যবাহী আলমডাঙ্গা এখন পুরোদমে বিনোদনের নগরী বিনোদনপ্রিয় মানুষের জন্যই এ সুখের বার্তা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৪২:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৮১৩ বার পড়া হয়েছে

IMG01974 IMG01973আলমডাঙ্গা থেকে মাহফুজ আহম্মেদ: চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী উপজেলা আলমডাঙ্গা এখন পুরোদমে বিনোদনের নগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরের যে প্রান্তেই চোখ যাই সেখানেই একটু চিত্ত রাঙ্কানোর আয়োজন। সংসার ও কর্মজীবনের একঘেয়েমি ও বিষন্নতা কাটাতে বিনোদনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সবারই উচিৎ কর্মজীবনের ফাকে পরিবার পরিজন নিয়ে মাঝে মধ্যে বিনোদনের জন্য একটু কেথাও ঘুরে আসা। তাহলে কর্মক্লান্ত ও বিরক্তিকর জীবনে ফিরে আসবে নতুন প্রাণ। মন বসবে কাজে-কর্মে। প্রকৃতিপ্রেমি ও বিনোদনপ্রিয় মানুষের জন্যই এ সুখের বার্তা। চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোর মানুষের জন্য এটি একটি আনন্দের খবর। বিনোদনের জন্য এখন আর দূরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। হাতের কাছেই আমাদের প্রিয় শহর আলমডাঙ্গা এখন বিনোদনের নগরিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ বিশেষ দিনগুলো ছাড়াও ছুটির দিনগুলোতে সকল পয়েন্টেই থাকে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার। তাই একটু ফুসরত পেলেই বিনোদন প্রেমিরা ছুটে যান আটকপাট, সোয়াদ শিশুপার্ক, স্বপ্নের জগৎ শিশুপার্ক, বদ্ধভুমী নইতো ভেটেরিনারী কলেজ পার্কে। মূল শহর থেকে বেলগাছি গ্রামের দিকে যেতে মাত্র ১.৫ কিলোমিটার রাস্তা পেরুলেই চোখে পড়বে আটকপাট। জিকে সেচ প্রকল্পের নির্মিত সারি সারি ৮টি কপাট ও ক্যানেলের ধারে বেড়ে ওঠা ইপিল ইপিল গাছের নয়নাভিরাম দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়। পড়ন্ত বিকেলে ক্যানেলের বুক চিরে ভেসে আসে শীতল বাতাস। দিগন্ত বিস্মৃত ক্যানেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে কোন টাকা খরচ হয় না। জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি ইতোমধ্যে আটকপাটকে ইকোপার্ক হিসাবে ঘোষণা করেছেন। আটকপাট থেকে সোজা ক্যানেল ধরে আলমডাঙ্গার দিকে ১ কি.মি গেলেই চোখে পড়বে ক্যানেলের ধারঘেসে গড়ে ওঠা সোয়াদ শিশুপার্ক। ছোট্ট সোনামনিদের বিনোদনের যথেষ্ট রসোদ রয়েছে এখানে। বড়দের জন্য আছে স্প্রিটবোট। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে পার্কটি নির্মাণ করেছেন বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন। অরুনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি নিজ খরচে বিনোদনের জন্য এই পার্কটি নির্মাণ করেছি। তবে যদি সরকার আমাদের একটু সহায়তা করেন তাহলে পার্কটিকে আরও সৌন্দর্য করা সম্ভব হবে। এখানে প্রবেশ মূল্য মাত্র ১০  টাকা। আর ভেতরের সম্পূর্ণ রাইড ফ্রি! সোয়াদ শিশুপার্ক থেকে একই রাস্তাধরে ২কি.মি গেলেই দেখতে পাওয়া যায় ঐতিহ্যবাহী কুমার নদের ধার ঘেসে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক বধ্যভূমী। এখানেও প্রতিদিন প্রচুর দর্শকের সমাগম হয়। বধভূমীতে প্রবেশের জন্যও কোন টিকেট লাগে না। বধ্যভূমী থেকে রেলব্রিজ হয়ে ১.৫ কি.মিটারের রাস্তা মোনাকষা গ্রামে স্বপ্নের জগৎ শিশুপার্ক। এই পার্কটিও আলমঙ্গীর হোসন নামে একজন মহান হৃদয়ের মানুষ ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে তুলেছেন। বিশাল এক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখাকৃতিতে নির্মিত প্রধান ফটক। ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট ক্রয় করে বাঘের মুখের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করতে হয় পার্কে। ভেতরে প্রবেশের সাথে সাথেই চোখে পড়বে ছোট-বড় অনেক কারুকার্য। বিশাল আকৃতির শাপলা ফুল ও পানির ফুয়ারা, সাপের ফনাধরা মাথা, রেলগাড়ি, চরকা ছাড়াও এখানে রয়েছে নাগরদোলার ব্যবস্থা। পার্কের মালিক আলমঙ্গীর হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অনেকদিন ধরেই তার স্বপ্ন ছিল একটি পার্ক নির্মাণের। একটু কষ্ট হলেও অবশেষে তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন। তবে তিনিও জানান সরকারি সহায়তার কথা। এছাড়া আলমডাঙ্গা থেকে প্রায় ৩ কি.মি রাস্তা হারদী গ্রামের দিকে যেতে কুমারী বাজারের ডান হাতে চোখে পড়বে ভেটেরিনারী ট্রেনিং ইন্সটিটিউট পার্কটি। এই ইন্সটিটিউটে কিছু ঐতিহাসীক স্থাপনা চোখ ধাধিয়ে দেয় দর্শনার্থীদের। এটি পুরান আমলের নির্মিত একটি জমিদার বাড়ি। ইন্সটিটিউট ক্যাম্পাসে সারিদিয়ে লাগান ফুলগাছ প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। রাজা সৈলেন শাহ্ নির্মিত সান বাঁধান ঐতিহ্যবাহী পুকুর ঘাট দর্শকের মন কাড়তে বাধ্য। পুকুরের চারিধারে লাগানো নারিকেল গাছ কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনকে হারিয়ে নিয়ে যায় অন্য এক ভুবণে। জীবনের সমস্ত কোলাহল ভুলে আপন মনে গাইতে ইচ্ছে করে, আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি/ তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!!

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ঐতিহ্যবাহী আলমডাঙ্গা এখন পুরোদমে বিনোদনের নগরী বিনোদনপ্রিয় মানুষের জন্যই এ সুখের বার্তা

আপলোড টাইম : ১২:৪২:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০১৬

IMG01974 IMG01973আলমডাঙ্গা থেকে মাহফুজ আহম্মেদ: চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী উপজেলা আলমডাঙ্গা এখন পুরোদমে বিনোদনের নগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরের যে প্রান্তেই চোখ যাই সেখানেই একটু চিত্ত রাঙ্কানোর আয়োজন। সংসার ও কর্মজীবনের একঘেয়েমি ও বিষন্নতা কাটাতে বিনোদনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সবারই উচিৎ কর্মজীবনের ফাকে পরিবার পরিজন নিয়ে মাঝে মধ্যে বিনোদনের জন্য একটু কেথাও ঘুরে আসা। তাহলে কর্মক্লান্ত ও বিরক্তিকর জীবনে ফিরে আসবে নতুন প্রাণ। মন বসবে কাজে-কর্মে। প্রকৃতিপ্রেমি ও বিনোদনপ্রিয় মানুষের জন্যই এ সুখের বার্তা। চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোর মানুষের জন্য এটি একটি আনন্দের খবর। বিনোদনের জন্য এখন আর দূরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। হাতের কাছেই আমাদের প্রিয় শহর আলমডাঙ্গা এখন বিনোদনের নগরিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ বিশেষ দিনগুলো ছাড়াও ছুটির দিনগুলোতে সকল পয়েন্টেই থাকে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার। তাই একটু ফুসরত পেলেই বিনোদন প্রেমিরা ছুটে যান আটকপাট, সোয়াদ শিশুপার্ক, স্বপ্নের জগৎ শিশুপার্ক, বদ্ধভুমী নইতো ভেটেরিনারী কলেজ পার্কে। মূল শহর থেকে বেলগাছি গ্রামের দিকে যেতে মাত্র ১.৫ কিলোমিটার রাস্তা পেরুলেই চোখে পড়বে আটকপাট। জিকে সেচ প্রকল্পের নির্মিত সারি সারি ৮টি কপাট ও ক্যানেলের ধারে বেড়ে ওঠা ইপিল ইপিল গাছের নয়নাভিরাম দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়। পড়ন্ত বিকেলে ক্যানেলের বুক চিরে ভেসে আসে শীতল বাতাস। দিগন্ত বিস্মৃত ক্যানেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে কোন টাকা খরচ হয় না। জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি ইতোমধ্যে আটকপাটকে ইকোপার্ক হিসাবে ঘোষণা করেছেন। আটকপাট থেকে সোজা ক্যানেল ধরে আলমডাঙ্গার দিকে ১ কি.মি গেলেই চোখে পড়বে ক্যানেলের ধারঘেসে গড়ে ওঠা সোয়াদ শিশুপার্ক। ছোট্ট সোনামনিদের বিনোদনের যথেষ্ট রসোদ রয়েছে এখানে। বড়দের জন্য আছে স্প্রিটবোট। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে পার্কটি নির্মাণ করেছেন বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন। অরুনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি নিজ খরচে বিনোদনের জন্য এই পার্কটি নির্মাণ করেছি। তবে যদি সরকার আমাদের একটু সহায়তা করেন তাহলে পার্কটিকে আরও সৌন্দর্য করা সম্ভব হবে। এখানে প্রবেশ মূল্য মাত্র ১০  টাকা। আর ভেতরের সম্পূর্ণ রাইড ফ্রি! সোয়াদ শিশুপার্ক থেকে একই রাস্তাধরে ২কি.মি গেলেই দেখতে পাওয়া যায় ঐতিহ্যবাহী কুমার নদের ধার ঘেসে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক বধ্যভূমী। এখানেও প্রতিদিন প্রচুর দর্শকের সমাগম হয়। বধভূমীতে প্রবেশের জন্যও কোন টিকেট লাগে না। বধ্যভূমী থেকে রেলব্রিজ হয়ে ১.৫ কি.মিটারের রাস্তা মোনাকষা গ্রামে স্বপ্নের জগৎ শিশুপার্ক। এই পার্কটিও আলমঙ্গীর হোসন নামে একজন মহান হৃদয়ের মানুষ ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে তুলেছেন। বিশাল এক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখাকৃতিতে নির্মিত প্রধান ফটক। ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট ক্রয় করে বাঘের মুখের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করতে হয় পার্কে। ভেতরে প্রবেশের সাথে সাথেই চোখে পড়বে ছোট-বড় অনেক কারুকার্য। বিশাল আকৃতির শাপলা ফুল ও পানির ফুয়ারা, সাপের ফনাধরা মাথা, রেলগাড়ি, চরকা ছাড়াও এখানে রয়েছে নাগরদোলার ব্যবস্থা। পার্কের মালিক আলমঙ্গীর হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অনেকদিন ধরেই তার স্বপ্ন ছিল একটি পার্ক নির্মাণের। একটু কষ্ট হলেও অবশেষে তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন। তবে তিনিও জানান সরকারি সহায়তার কথা। এছাড়া আলমডাঙ্গা থেকে প্রায় ৩ কি.মি রাস্তা হারদী গ্রামের দিকে যেতে কুমারী বাজারের ডান হাতে চোখে পড়বে ভেটেরিনারী ট্রেনিং ইন্সটিটিউট পার্কটি। এই ইন্সটিটিউটে কিছু ঐতিহাসীক স্থাপনা চোখ ধাধিয়ে দেয় দর্শনার্থীদের। এটি পুরান আমলের নির্মিত একটি জমিদার বাড়ি। ইন্সটিটিউট ক্যাম্পাসে সারিদিয়ে লাগান ফুলগাছ প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। রাজা সৈলেন শাহ্ নির্মিত সান বাঁধান ঐতিহ্যবাহী পুকুর ঘাট দর্শকের মন কাড়তে বাধ্য। পুকুরের চারিধারে লাগানো নারিকেল গাছ কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনকে হারিয়ে নিয়ে যায় অন্য এক ভুবণে। জীবনের সমস্ত কোলাহল ভুলে আপন মনে গাইতে ইচ্ছে করে, আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি/ তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!!