ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এ বছর তুলা ও তামাক চাষে আগ্রহী কৃষক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫২:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মার্চ ২০১৮
  • / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরে খাদ্য শস্য উৎপাদনে অব্যাহত লোকসান : কৃষকদের পরামর্শ
মেহের আমজাদ: ধান, গমসহ অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনের পরিবর্তে তুলা ও তামাক চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে মেহেরপুরের কৃষকরা। ধান ও গম চাষে অব্যাহত লোকসান হওয়ায় ও লোকসান গুণতে যেয়ে আর্থিকভাবে সফল হতে না পারায় তুলা ও তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলে জানান কৃষক ও কৃষি কাজের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের কৃষক নজিবুল ইসলাম জানান, প্রতি বিঘা ধান চাষে সেচ, সার, লেবারসহ বিঘা প্রতি খরচ হয় অন্তত ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। ধান ভাল হলে কাটা মাড়াই করে ১৬ থেকে ২০ মণ পর্যন্ত ধান পাওয়া যায়। মৌসুমে ধানের মূল্য কমে যায় তখন পরবর্তী চাষাবাদ করার জন্য কৃষক সেই ধান প্রতিমণ সর্বোচ্চ ৯শ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে। উৎপাদন ভাল হলে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাভ হয়। আর ফলন যদি খুব ভাল না হয় তাহলে লাভের বদলে লোকসানও গুণতে হয়। সে ক্ষেত্রে তুলা ও তামাক চাষে তুলনা মূলক লাভ ভাল হয়। গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম বলেন, ভাল মানের গম উৎপাদনে বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। ফসল ভাল হলে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ মণ ফলন হয়। মৌসুমে ৮শ থেকে ৯শ টাকা মণ দরে গম বিক্রি হয়। এতে বিঘা প্রতি দুই. এক হাজার টাকা লাভ হয়। ফলে মেহেপুরের চাষিরা এখন অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে তুলা ও তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের ট্রাক্টর চালক ও কৃষক আশাদুল হক জানান, গেল তিন বছর তুলা চাষ করে বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘরে তুলেছেন। এ বছরও অধিক মুনাফার আশায় ৫ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করে লক্ষাধিক টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে এ বছর আগাম বর্ষা হওয়ায় সে স্বপ্নের আর ডালপালা মেলেনি। গেল বছর বিঘা প্রতি ১৩ থেকে ১৪ মণ তুলা উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর বর্ষার কারনে তুলার গুটি ছোট হয়েছে ৮ থেকে সাড়ে আট মণ তুলা ঘরে আসছে। এক বিঘা তুলা চাষে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর প্রতি মণ তুলা ২ হাজার ৪শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যে ফলন হয়েছে তাতে আসল টাকাটা ঘরে আসবে। তবে ধান গমের মত আসল টাকা ঘরে আসবে না এমনটা নয়।
সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের তামাক চাষি ফিরোজ বলেন, গেল চার পাঁচ বছর যাবৎ প্রতি বিঘা তামাক চাষে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। প্রতি বিঘা তামাকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নগদ মুনাফা করা সম্ভব হয়েছে। এ বছর তামাকের দাম কিছুটা কম। তার পরেও ভাল লাভ হবে বলে আশা করছি। ধান গমের মত ক্ষতি হবার সম্ভবনা নেই।
মেহেরপুর জেলাকে ৫টি ইউনিটে বিভক্ত করে তুলা চাষ করা হয়। মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর এলাকার চিফ কটন ডেভলপমেন্ট অফিসার ড. মো. আব্দুস সালাম ও গাংনী এলাকা ইউনিটের চিফ কটন ডেভলপমেন্ট অফিসার দেবাশীষ সেনের সম্মিলিত হিসেব অনুযায়ী জেলায় এবার অন্তত তিন হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। যা থেকে ১৭ হাজার বেল (এক বেল-১৮০ কেজি হিসাবে) তুলা উৎপাদন হবে বলে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মেহেরপুরে হাইব্রীড জাতের রুপালী-১, ডিএস-৩ ও সিবি ১৪ জাতের তুলা উৎপন্ন হচ্ছে। দাম ভাল ও ভাল ফলন হওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, মেহেরপুরের কৃষকরা যে চাষে লাভ ভাল হয় সেই চাষে ব্যাপক হারে করে থাকে বিধায় ওই চাষে শুধু লাভ-ই হয়না ক্ষতির সম্ভবনাও দেখা দেয়। দেশের কথা চিন্তা করে কৃষি বিভাগের সাথে পরামর্শ করে চাষাবাদ করার আহবান জানান তিনি। তুলা চাষের বিষয়ে কৃষি বিভাগে কোন তথ্য নেয়। তুলা চাষ টি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে হওয়ায় তারাই তথ্য সংরক্ষণ করে বলে জানান তিনি। জেলায় এ বছর ২ হাজার ১শ ৬৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কৃষকদের খাদ্য উৎপাদনে আগ্রহী করতে মাঠ দিবস সহ সভা সেমিনার করা হচ্ছে। বেশি বেশি খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

এ বছর তুলা ও তামাক চাষে আগ্রহী কৃষক

আপলোড টাইম : ০৯:৫২:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মার্চ ২০১৮

মেহেরপুরে খাদ্য শস্য উৎপাদনে অব্যাহত লোকসান : কৃষকদের পরামর্শ
মেহের আমজাদ: ধান, গমসহ অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনের পরিবর্তে তুলা ও তামাক চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে মেহেরপুরের কৃষকরা। ধান ও গম চাষে অব্যাহত লোকসান হওয়ায় ও লোকসান গুণতে যেয়ে আর্থিকভাবে সফল হতে না পারায় তুলা ও তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলে জানান কৃষক ও কৃষি কাজের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের কৃষক নজিবুল ইসলাম জানান, প্রতি বিঘা ধান চাষে সেচ, সার, লেবারসহ বিঘা প্রতি খরচ হয় অন্তত ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। ধান ভাল হলে কাটা মাড়াই করে ১৬ থেকে ২০ মণ পর্যন্ত ধান পাওয়া যায়। মৌসুমে ধানের মূল্য কমে যায় তখন পরবর্তী চাষাবাদ করার জন্য কৃষক সেই ধান প্রতিমণ সর্বোচ্চ ৯শ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে। উৎপাদন ভাল হলে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাভ হয়। আর ফলন যদি খুব ভাল না হয় তাহলে লাভের বদলে লোকসানও গুণতে হয়। সে ক্ষেত্রে তুলা ও তামাক চাষে তুলনা মূলক লাভ ভাল হয়। গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম বলেন, ভাল মানের গম উৎপাদনে বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। ফসল ভাল হলে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ মণ ফলন হয়। মৌসুমে ৮শ থেকে ৯শ টাকা মণ দরে গম বিক্রি হয়। এতে বিঘা প্রতি দুই. এক হাজার টাকা লাভ হয়। ফলে মেহেপুরের চাষিরা এখন অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে তুলা ও তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের ট্রাক্টর চালক ও কৃষক আশাদুল হক জানান, গেল তিন বছর তুলা চাষ করে বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘরে তুলেছেন। এ বছরও অধিক মুনাফার আশায় ৫ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করে লক্ষাধিক টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে এ বছর আগাম বর্ষা হওয়ায় সে স্বপ্নের আর ডালপালা মেলেনি। গেল বছর বিঘা প্রতি ১৩ থেকে ১৪ মণ তুলা উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর বর্ষার কারনে তুলার গুটি ছোট হয়েছে ৮ থেকে সাড়ে আট মণ তুলা ঘরে আসছে। এক বিঘা তুলা চাষে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর প্রতি মণ তুলা ২ হাজার ৪শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যে ফলন হয়েছে তাতে আসল টাকাটা ঘরে আসবে। তবে ধান গমের মত আসল টাকা ঘরে আসবে না এমনটা নয়।
সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের তামাক চাষি ফিরোজ বলেন, গেল চার পাঁচ বছর যাবৎ প্রতি বিঘা তামাক চাষে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। প্রতি বিঘা তামাকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নগদ মুনাফা করা সম্ভব হয়েছে। এ বছর তামাকের দাম কিছুটা কম। তার পরেও ভাল লাভ হবে বলে আশা করছি। ধান গমের মত ক্ষতি হবার সম্ভবনা নেই।
মেহেরপুর জেলাকে ৫টি ইউনিটে বিভক্ত করে তুলা চাষ করা হয়। মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর এলাকার চিফ কটন ডেভলপমেন্ট অফিসার ড. মো. আব্দুস সালাম ও গাংনী এলাকা ইউনিটের চিফ কটন ডেভলপমেন্ট অফিসার দেবাশীষ সেনের সম্মিলিত হিসেব অনুযায়ী জেলায় এবার অন্তত তিন হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। যা থেকে ১৭ হাজার বেল (এক বেল-১৮০ কেজি হিসাবে) তুলা উৎপাদন হবে বলে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মেহেরপুরে হাইব্রীড জাতের রুপালী-১, ডিএস-৩ ও সিবি ১৪ জাতের তুলা উৎপন্ন হচ্ছে। দাম ভাল ও ভাল ফলন হওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, মেহেরপুরের কৃষকরা যে চাষে লাভ ভাল হয় সেই চাষে ব্যাপক হারে করে থাকে বিধায় ওই চাষে শুধু লাভ-ই হয়না ক্ষতির সম্ভবনাও দেখা দেয়। দেশের কথা চিন্তা করে কৃষি বিভাগের সাথে পরামর্শ করে চাষাবাদ করার আহবান জানান তিনি। তুলা চাষের বিষয়ে কৃষি বিভাগে কোন তথ্য নেয়। তুলা চাষ টি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে হওয়ায় তারাই তথ্য সংরক্ষণ করে বলে জানান তিনি। জেলায় এ বছর ২ হাজার ১শ ৬৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কৃষকদের খাদ্য উৎপাদনে আগ্রহী করতে মাঠ দিবস সহ সভা সেমিনার করা হচ্ছে। বেশি বেশি খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।