ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এ কেমন নৃশংসতা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৫:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২০
  • / ২৯৩ বার পড়া হয়েছে

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই
একের পর এক শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সমাজকে নাড়িয়ে দেওয়া শিশু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তদের আইনের হাতে সোপর্দ করেছে। কয়েকটি ঘটনায় শাস্তিও হয়েছে। তার পরও থেমে নেই শিশু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মরাশ গ্রামের ‘মরাশবাগে জান্নাত আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায়’ যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা যেকোনো নৃশংসতার ঘটনাকেই হার মানায়। মোবাইল ফোনসেট চুরি করায় মাদরাসার অধ্যক্ষ আগের রাতে একজন শিক্ষককে থাপ্পড় দিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। হুমকি দেওয়ার ১২ ঘণ্টা না পেরোতেই এলাকাবাসী ওই শিক্ষকের ঘরের ওয়ার্ডরোব থেকে অধ্যক্ষের একমাত্র শিশুপুত্রের লাশ উদ্ধার করেছে। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে তিনি ও অন্যরা আশপাশে খোঁজাখুঁজি করছিলেন, তখন ওই শিক্ষক মসজিদের মাইকে আদিলের সন্ধান চেয়ে মাইকিংও করেন। এটা এখন মানতে হচ্ছে, সামাজিক সুরক্ষা বলে কিছু আর নেই। সমাজ দিন দিন অধঃপতনের খাদে নেমে যাচ্ছে বলেই নিরাপত্তাহীনতা প্রকট হচ্ছে। এমনকি শিশুর জন্য নিরাপদ নয় এ সমাজ। মানুষের মানবিক বন্ধনগুলোও যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। সমাজমানসে তার প্রভাব পড়ছে। দেশের প্রচলিত আইনও যেন উপেক্ষিত হচ্ছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। আগের দিনের মতো সামাজিক শাসন না থাকায় কিছু মানুষও যেন মানবিক বোধ হারিয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রভাব গিয়ে পড়ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সমাজ ও রাষ্ট্রকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় এ জাতীয় অনাচার আরো বাড়বে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা, আইন প্রয়োগ, অপরাধীদের কঠোর শাস্তির পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা যাবে না। ব্যক্তিমানুষের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ-প্রশাসন থেকে ধরে রাজনীতিবিদ ও সমাজ প্রতিনিধি সবাইকে সচেতন হতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ এ ধরনের অপরাধপ্রবণতাকে হ্রাস করতে পারে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমাজ, প্রশাসন বা রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে জঞ্জালমুক্ত করে নারী, শিশুসহ সবার জন্য নিশ্চিন্তে বসবাসযোগ্য একটি দেশ গড়ার অঙ্গীকার আজ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। এ দাবি পূরণ করতে হবে। শিশু আদিল হত্যার ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের পাঠানো হয়েছে কারাগারে। আমরা চাই এই ঘটনার দ্রুত বিচার হোক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক দোষীদের। সেই সঙ্গে সমাজে মানবিক বোধ নতুন করে জাগিয়ে তুলতে নেওয়া হোক কার্যকর ব্যবস্থা। সব শিশুর জন্য নিরাপদ হোক বাংলাদেশ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

এ কেমন নৃশংসতা!

আপলোড টাইম : ১০:৩৫:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২০

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই
একের পর এক শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সমাজকে নাড়িয়ে দেওয়া শিশু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তদের আইনের হাতে সোপর্দ করেছে। কয়েকটি ঘটনায় শাস্তিও হয়েছে। তার পরও থেমে নেই শিশু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মরাশ গ্রামের ‘মরাশবাগে জান্নাত আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায়’ যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা যেকোনো নৃশংসতার ঘটনাকেই হার মানায়। মোবাইল ফোনসেট চুরি করায় মাদরাসার অধ্যক্ষ আগের রাতে একজন শিক্ষককে থাপ্পড় দিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। হুমকি দেওয়ার ১২ ঘণ্টা না পেরোতেই এলাকাবাসী ওই শিক্ষকের ঘরের ওয়ার্ডরোব থেকে অধ্যক্ষের একমাত্র শিশুপুত্রের লাশ উদ্ধার করেছে। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে তিনি ও অন্যরা আশপাশে খোঁজাখুঁজি করছিলেন, তখন ওই শিক্ষক মসজিদের মাইকে আদিলের সন্ধান চেয়ে মাইকিংও করেন। এটা এখন মানতে হচ্ছে, সামাজিক সুরক্ষা বলে কিছু আর নেই। সমাজ দিন দিন অধঃপতনের খাদে নেমে যাচ্ছে বলেই নিরাপত্তাহীনতা প্রকট হচ্ছে। এমনকি শিশুর জন্য নিরাপদ নয় এ সমাজ। মানুষের মানবিক বন্ধনগুলোও যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। সমাজমানসে তার প্রভাব পড়ছে। দেশের প্রচলিত আইনও যেন উপেক্ষিত হচ্ছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। আগের দিনের মতো সামাজিক শাসন না থাকায় কিছু মানুষও যেন মানবিক বোধ হারিয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রভাব গিয়ে পড়ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সমাজ ও রাষ্ট্রকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় এ জাতীয় অনাচার আরো বাড়বে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা, আইন প্রয়োগ, অপরাধীদের কঠোর শাস্তির পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা যাবে না। ব্যক্তিমানুষের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ-প্রশাসন থেকে ধরে রাজনীতিবিদ ও সমাজ প্রতিনিধি সবাইকে সচেতন হতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ এ ধরনের অপরাধপ্রবণতাকে হ্রাস করতে পারে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমাজ, প্রশাসন বা রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে জঞ্জালমুক্ত করে নারী, শিশুসহ সবার জন্য নিশ্চিন্তে বসবাসযোগ্য একটি দেশ গড়ার অঙ্গীকার আজ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। এ দাবি পূরণ করতে হবে। শিশু আদিল হত্যার ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের পাঠানো হয়েছে কারাগারে। আমরা চাই এই ঘটনার দ্রুত বিচার হোক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক দোষীদের। সেই সঙ্গে সমাজে মানবিক বোধ নতুন করে জাগিয়ে তুলতে নেওয়া হোক কার্যকর ব্যবস্থা। সব শিশুর জন্য নিরাপদ হোক বাংলাদেশ।