ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এসএসসি পরীক্ষা শেষ হতেই আবারও বেপরোয়া কোচিং বাণিজ্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৫০:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০১৯
  • / ৩৮৮ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত সাঁটানো হচ্ছে কোচিং সেন্টারের প্রচারণার পোস্টার, বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফের বেপরোয়া কোচিং সেন্টারগুলো। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ায় কোচিং সেন্টারবিরোধী সরকারের অভিযানও কার্যত স্থগিত রয়েছে। এ সুযোগে বেপরোয়া কোচিং কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছেন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক ও কোচিং সেন্টারের মালিকরা। চুয়াডাঙ্গা শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের অলিগলির দেয়ালে নিয়মিত সাঁটানো হচ্ছে কোচিং সেন্টারের প্রচারণার পোস্টার, বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান না থাকায় স্কুল শিক্ষকরাও জোরেশোরে কোচিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় দিশেহারা অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা।
সম্প্রতি শহরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোচিং শেষে বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে বের হচ্ছেন। একসঙ্গে কোন বাড়ি থেকে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রছাত্রী বেড় হচ্ছে; আবার কোন বাড়ির সামনে সন্তানদের নেয়ার জন্য অভিভাবকরা দল বেধে অপেক্ষা করছেন। কেবল শহরের বিভিন্ন বাড়িতেই নামে- বেনামে শতাধিক কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এবার এসএসসি পরীক্ষা গত ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয় গত ১০ মার্চ। এই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নিরাপত্তাজনিত কারণে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক মাস দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় সরকার। এই নির্দেশনা এবং ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ উপেক্ষা করে কোচিং ব্যবসায়ীরা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
এ নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, সরকারি প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে নানা রকম সমালোচনা হয়। এর আলোকেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী অবৈধ কোচিং কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে শতাধিক কোচিং সেন্টারের মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। বর্তমানে কোচিং সেন্টারবিরোধী অভিযান নেই বললেই চলে। এই সুযোগে ফের বেপরোয়া কার্যক্রমে লিপ্ত কোচিং সেন্টারগুলো।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গত ১০ মার্চ রোববার দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাপাতাল রোডের একটি বাসা থেকে ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী একসাথে বের হচ্ছেন। এর আধা ঘণ্টা আগে একই এলাকার আরেকটি বাসা থেকে সন্তানদের নিয়ে বের হন ১৫ থেকে ২০ জন অভিভাবক। ওইদিন সকাল ১১টার দিকে সিনেমা হল পাড়ার সামনে দেখা যায় অভিভাবকদের জটলা। সন্তানকে নেয়ার জন্য কোচিং সেন্টারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন রফিকুল হাসান। সন্তানকে কোচিং সেন্টারে পাঠাচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্ন করলে কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে এই অভিভাবক সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘আমি তো শখ করে বাচ্চাকে এখানে ভর্তি করিনি। স্কুলে পড়ালেখা নেই; শিক্ষকরাও ক্লাসে বাচ্চার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না। এজন্য বাধ্য হয়েই কোচিং সেন্টারে পড়াই।’ তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার ছেলের রোল ২০ জনের মধ্যে। নিশ্চয়ই সে খারাপ ছাত্র নয়। কিন্তু বিভিন্ন সিটি (ক্লাস টেস্ট) পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় সে মাত্র ২০/২২ নম্বর পায়। পরবর্তীতে বাধ্য হয়েই শ্রেণী শিক্ষকদের বাসায় প্রাইভেট কোচিংয়ে ভর্তি করি। এখন দেখা যাচ্ছে, কোচিংয়ে ঠিকভাবে পড়ানো হচ্ছে না, বাসাই পড়াতে হচ্ছে, কিন্তু সিটি পরীক্ষায় এখন ৫০ নম্বরের মধ্যে ৪৮/৪৯ নম্বর পাচ্ছে। এই শিক্ষকের কাছে পড়াতে মাসে এখন গুণতে হচ্ছে সাত হাজার টাকা।’
সম্প্রতি উচ্চ আদালতের স্বীকৃতি পাওয়া ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’য় বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়ে একদিনে অন্য প্রতিষ্ঠানের সীমিত সংখ্যক (১০ জনের বেশি নয়) শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ছাত্রছাত্রীর তালিকা, রোল, নাম ও শ্রেণী উল্লেখ করে জানাতে হবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মহানগরী এলাকার প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে ৩০০ টাকা, জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা নেয়া যাবে। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান ইচ্ছা করলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এই অতিরিক্ত কোচিংয়ের টাকা কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছে, একটি বিষয়ে মাসে কমপক্ষে ১২টি ক্লাস নিতে হবে, প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে সরকারি- বেসরকারি স্কুল (নি¤œ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক), কলেজ (উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর), মাদ্রাসা (দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল) ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার এমপিও স্থগিত থেকে শুরু করে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত পর্যন্ত করা যাবে। এমপিওর বাইরের কোন শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বেতন-ভাতা স্থগিতের পাশাপাশি তাকেও বরখাস্ত করা যাবে। কোচিং-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সরকার পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়াসহ প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি বা অধিভুক্তি বাতিল করতে পারবে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫-এর অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে কোচিংয়ে নিয়ে আসাকে বাণিজ্য উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি গতকাল বলেছেন, ‘কোচিং বাণিজ্য চিহ্নিত করে সেটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’ কোচিং বন্ধ হবে কিনা- এমন এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘কোচিং সেন্টার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কথা হচ্ছে। সেটি কিন্তু বন্ধ হয়নি এবং এর সঙ্গে অনেক রকমের কিছু জড়িত আছে। আমাদের চেষ্টা হলো মানসম্মত শিক্ষা এবং সেই শিক্ষাটি দিতে হলে এর মধ্যে অনেক অনেক বিষয় জড়িত। আমি এই মুহূর্তে যদি বলি যে আর কোন কোচিং সেন্টার চলবে না। কোচিং সেন্টার তো শুধু এক রকম নয়, অনেক রকমের কোচিং সেন্টার আছে।’ পরীক্ষার সময় কোচিং বন্ধ রাখা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য পেয়েছি প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টার সঙ্গে অনেক সময় অনেক কোচিং সেন্টারকে জড়িত থাকতে দেখা গেছে। সে কারণে পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি এখন যদি বলি আজকে পরীক্ষা শেষ কালকে থেকে আর কোন কোচিং সেন্টার চলবে না। আমি তাহলে আমার বিদ্যমান যে ব্যবস্থাটা আছে সেটাতে যে পরিবর্তন আনা দরকার সেটি না এনেই তো আমি পদক্ষেপটি নিতে পারছি না।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

এসএসসি পরীক্ষা শেষ হতেই আবারও বেপরোয়া কোচিং বাণিজ্য

আপলোড টাইম : ১২:৫০:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০১৯

চুয়াডাঙ্গা শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত সাঁটানো হচ্ছে কোচিং সেন্টারের প্রচারণার পোস্টার, বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফের বেপরোয়া কোচিং সেন্টারগুলো। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ায় কোচিং সেন্টারবিরোধী সরকারের অভিযানও কার্যত স্থগিত রয়েছে। এ সুযোগে বেপরোয়া কোচিং কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছেন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক ও কোচিং সেন্টারের মালিকরা। চুয়াডাঙ্গা শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের অলিগলির দেয়ালে নিয়মিত সাঁটানো হচ্ছে কোচিং সেন্টারের প্রচারণার পোস্টার, বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান না থাকায় স্কুল শিক্ষকরাও জোরেশোরে কোচিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় দিশেহারা অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা।
সম্প্রতি শহরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোচিং শেষে বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে বের হচ্ছেন। একসঙ্গে কোন বাড়ি থেকে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রছাত্রী বেড় হচ্ছে; আবার কোন বাড়ির সামনে সন্তানদের নেয়ার জন্য অভিভাবকরা দল বেধে অপেক্ষা করছেন। কেবল শহরের বিভিন্ন বাড়িতেই নামে- বেনামে শতাধিক কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এবার এসএসসি পরীক্ষা গত ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয় গত ১০ মার্চ। এই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নিরাপত্তাজনিত কারণে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক মাস দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় সরকার। এই নির্দেশনা এবং ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ উপেক্ষা করে কোচিং ব্যবসায়ীরা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
এ নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, সরকারি প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে নানা রকম সমালোচনা হয়। এর আলোকেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী অবৈধ কোচিং কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে শতাধিক কোচিং সেন্টারের মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। বর্তমানে কোচিং সেন্টারবিরোধী অভিযান নেই বললেই চলে। এই সুযোগে ফের বেপরোয়া কার্যক্রমে লিপ্ত কোচিং সেন্টারগুলো।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গত ১০ মার্চ রোববার দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাপাতাল রোডের একটি বাসা থেকে ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী একসাথে বের হচ্ছেন। এর আধা ঘণ্টা আগে একই এলাকার আরেকটি বাসা থেকে সন্তানদের নিয়ে বের হন ১৫ থেকে ২০ জন অভিভাবক। ওইদিন সকাল ১১টার দিকে সিনেমা হল পাড়ার সামনে দেখা যায় অভিভাবকদের জটলা। সন্তানকে নেয়ার জন্য কোচিং সেন্টারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন রফিকুল হাসান। সন্তানকে কোচিং সেন্টারে পাঠাচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্ন করলে কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে এই অভিভাবক সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘আমি তো শখ করে বাচ্চাকে এখানে ভর্তি করিনি। স্কুলে পড়ালেখা নেই; শিক্ষকরাও ক্লাসে বাচ্চার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না। এজন্য বাধ্য হয়েই কোচিং সেন্টারে পড়াই।’ তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার ছেলের রোল ২০ জনের মধ্যে। নিশ্চয়ই সে খারাপ ছাত্র নয়। কিন্তু বিভিন্ন সিটি (ক্লাস টেস্ট) পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় সে মাত্র ২০/২২ নম্বর পায়। পরবর্তীতে বাধ্য হয়েই শ্রেণী শিক্ষকদের বাসায় প্রাইভেট কোচিংয়ে ভর্তি করি। এখন দেখা যাচ্ছে, কোচিংয়ে ঠিকভাবে পড়ানো হচ্ছে না, বাসাই পড়াতে হচ্ছে, কিন্তু সিটি পরীক্ষায় এখন ৫০ নম্বরের মধ্যে ৪৮/৪৯ নম্বর পাচ্ছে। এই শিক্ষকের কাছে পড়াতে মাসে এখন গুণতে হচ্ছে সাত হাজার টাকা।’
সম্প্রতি উচ্চ আদালতের স্বীকৃতি পাওয়া ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’য় বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়ে একদিনে অন্য প্রতিষ্ঠানের সীমিত সংখ্যক (১০ জনের বেশি নয়) শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ছাত্রছাত্রীর তালিকা, রোল, নাম ও শ্রেণী উল্লেখ করে জানাতে হবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মহানগরী এলাকার প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে ৩০০ টাকা, জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা নেয়া যাবে। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান ইচ্ছা করলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এই অতিরিক্ত কোচিংয়ের টাকা কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছে, একটি বিষয়ে মাসে কমপক্ষে ১২টি ক্লাস নিতে হবে, প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে সরকারি- বেসরকারি স্কুল (নি¤œ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক), কলেজ (উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর), মাদ্রাসা (দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল) ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার এমপিও স্থগিত থেকে শুরু করে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত পর্যন্ত করা যাবে। এমপিওর বাইরের কোন শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বেতন-ভাতা স্থগিতের পাশাপাশি তাকেও বরখাস্ত করা যাবে। কোচিং-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সরকার পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়াসহ প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি বা অধিভুক্তি বাতিল করতে পারবে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫-এর অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে কোচিংয়ে নিয়ে আসাকে বাণিজ্য উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি গতকাল বলেছেন, ‘কোচিং বাণিজ্য চিহ্নিত করে সেটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’ কোচিং বন্ধ হবে কিনা- এমন এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘কোচিং সেন্টার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কথা হচ্ছে। সেটি কিন্তু বন্ধ হয়নি এবং এর সঙ্গে অনেক রকমের কিছু জড়িত আছে। আমাদের চেষ্টা হলো মানসম্মত শিক্ষা এবং সেই শিক্ষাটি দিতে হলে এর মধ্যে অনেক অনেক বিষয় জড়িত। আমি এই মুহূর্তে যদি বলি যে আর কোন কোচিং সেন্টার চলবে না। কোচিং সেন্টার তো শুধু এক রকম নয়, অনেক রকমের কোচিং সেন্টার আছে।’ পরীক্ষার সময় কোচিং বন্ধ রাখা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য পেয়েছি প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টার সঙ্গে অনেক সময় অনেক কোচিং সেন্টারকে জড়িত থাকতে দেখা গেছে। সে কারণে পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি এখন যদি বলি আজকে পরীক্ষা শেষ কালকে থেকে আর কোন কোচিং সেন্টার চলবে না। আমি তাহলে আমার বিদ্যমান যে ব্যবস্থাটা আছে সেটাতে যে পরিবর্তন আনা দরকার সেটি না এনেই তো আমি পদক্ষেপটি নিতে পারছি না।’