ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এক নিবেদিত সহকর্মীর বিদায়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অগাস্ট ২০২০
  • / ১২২ বার পড়া হয়েছে

– আজিজুল হক
গত ১৬ আগস্ট চিরতরে চলে গেল বাংলাদেশ কৃষকলীগ চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান বিল্লাল। মরণব্যাধী ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে হেরে গেলে সে। ১৯৮৯ সালে জননেতা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের উপস্থিতিতে সদর থানা সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে কৃষক লীগের সভাপতি হওয়ার পর প্রতিবারই সে পুনঃনির্বাচিত হয়েছে এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই মহান দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছে। দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করা ছিল তাঁর নেশা। ডিঙ্গেদাহ বাজারে ছোট্ট একটি ডেকরেটরের দোকান চালাত সে। শংকরচন্দ্র, পদ্মবিলা ও বেগমপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের কর্মীদের ঠিকানা ছিল সেটা। ১৯৮৬ থেকে অনুষ্ঠিত সবগুলো জাতীয় নির্বাচনে দলের পক্ষে ওই অঞ্চলে তার ছিল অগ্রণী ভূমিকা। তার ওই ছোট্ট দোকানটি তখন হয়ে উঠত আমাদের দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন পরিচালনার সার্বক্ষণিক অফিস। জেলাতে যখনই কোনো দলীয় কর্মসূচিতে ডাক পড়ত, তখনই ডিঙ্গেদাহ থেকে আসা মিছিলের অগ্রভাগে থাকত সে।
১৯৯১-এর জাতীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ডিঙ্গেদাহতে আমার বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। ভেঙে দেওয়া হয় রুহুল, কাসেমের দোকান, সেই সঙ্গে আমাদের কর্মীদের ঠিকানা বিল্লালের ডেকরেটরের দোকানটিও। থানায় গেলে মামলা নিল না। ছেলুন ভাইয়ের বাড়ি তখন পুরো জেলার আহত আর বিতাড়িত কর্মীদের হাসপাতাল আর আশ্রয়স্থল। ডিঙ্গেদাহ থেকে তখন বিল্লাল, বাচ্চু, রহমান, ছালামত চাচা, ছামছদ্দিন চাচা, আবুল চাচা, দেলোয়ার, হাবিবুর, বজলু, বিশারত, সাদু খালু, আরও কয়েকজন কর্মী নেতার (ছেলুন ভাইয়ের) কাছে করণীয় জানতে চাইলাম। তিনি গণপ্রতিবাদ করার আদেশ দেন। ডিঙ্গেদাহতে ওই দুঃসময়েও আমরা বিশাল জমায়েত করি। ছেলুন ভাই ওই জমায়েতে কড়া বক্তব্য দেন। কর্মীরা সাহস ফিরে পায়। ওই জমায়েতে সব থেকে বেশি লোক নিয়ে বিল্লালের গ্রাম হানুরবাড়াদি থেকে বিল্লালের নেতৃত্বে একটি মিছিল আসে, যাতে সবাই সাহসি হয়ে ওঠে। আমরা বুঝতে পারি দুঃসময়ের জন্য তার নিজের গ্রামের জনপ্রিয়তা কতটা গভীর। ডিঙ্গেদাহ হাইস্কুলের (সরোয়ার্দ্দি স্মরণী বিদ্যপিঠ) সভাপতি ও সদস্য হিসেবে সে দায়িত্ব পালন করেছে দীর্ঘদিন।
তার এ মৃত্যু আমাদের ডিঙ্গেদাহ অঞ্চলের আওয়ামী লীগের জন্য এবং এ অঞ্চলের সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এ ধরনের মানুষের অভাব তাদের জীবিতাবস্থায় ঠিক বোঝা যায় না। কিন্তু যখন তারা থাকে না, তখন বোঝা যায়, কত বড় জায়গা শূন্য হয়ে গেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি দলে তার অবস্থান ও অবদানের কথা স্মরণ করে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আমরা বাংলাদেশ কৃষক লীগের কর্মীরাও আমাদের এই বীর যোদ্ধার প্রতি জানাচ্ছি অশেষ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আর তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা।
লেখক,
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সভাপতি
বাংলাদেশ কৃষক লীগ
চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

এক নিবেদিত সহকর্মীর বিদায়

আপলোড টাইম : ০৯:৩৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অগাস্ট ২০২০

– আজিজুল হক
গত ১৬ আগস্ট চিরতরে চলে গেল বাংলাদেশ কৃষকলীগ চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান বিল্লাল। মরণব্যাধী ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে হেরে গেলে সে। ১৯৮৯ সালে জননেতা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের উপস্থিতিতে সদর থানা সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে কৃষক লীগের সভাপতি হওয়ার পর প্রতিবারই সে পুনঃনির্বাচিত হয়েছে এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই মহান দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছে। দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করা ছিল তাঁর নেশা। ডিঙ্গেদাহ বাজারে ছোট্ট একটি ডেকরেটরের দোকান চালাত সে। শংকরচন্দ্র, পদ্মবিলা ও বেগমপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের কর্মীদের ঠিকানা ছিল সেটা। ১৯৮৬ থেকে অনুষ্ঠিত সবগুলো জাতীয় নির্বাচনে দলের পক্ষে ওই অঞ্চলে তার ছিল অগ্রণী ভূমিকা। তার ওই ছোট্ট দোকানটি তখন হয়ে উঠত আমাদের দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন পরিচালনার সার্বক্ষণিক অফিস। জেলাতে যখনই কোনো দলীয় কর্মসূচিতে ডাক পড়ত, তখনই ডিঙ্গেদাহ থেকে আসা মিছিলের অগ্রভাগে থাকত সে।
১৯৯১-এর জাতীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ডিঙ্গেদাহতে আমার বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। ভেঙে দেওয়া হয় রুহুল, কাসেমের দোকান, সেই সঙ্গে আমাদের কর্মীদের ঠিকানা বিল্লালের ডেকরেটরের দোকানটিও। থানায় গেলে মামলা নিল না। ছেলুন ভাইয়ের বাড়ি তখন পুরো জেলার আহত আর বিতাড়িত কর্মীদের হাসপাতাল আর আশ্রয়স্থল। ডিঙ্গেদাহ থেকে তখন বিল্লাল, বাচ্চু, রহমান, ছালামত চাচা, ছামছদ্দিন চাচা, আবুল চাচা, দেলোয়ার, হাবিবুর, বজলু, বিশারত, সাদু খালু, আরও কয়েকজন কর্মী নেতার (ছেলুন ভাইয়ের) কাছে করণীয় জানতে চাইলাম। তিনি গণপ্রতিবাদ করার আদেশ দেন। ডিঙ্গেদাহতে ওই দুঃসময়েও আমরা বিশাল জমায়েত করি। ছেলুন ভাই ওই জমায়েতে কড়া বক্তব্য দেন। কর্মীরা সাহস ফিরে পায়। ওই জমায়েতে সব থেকে বেশি লোক নিয়ে বিল্লালের গ্রাম হানুরবাড়াদি থেকে বিল্লালের নেতৃত্বে একটি মিছিল আসে, যাতে সবাই সাহসি হয়ে ওঠে। আমরা বুঝতে পারি দুঃসময়ের জন্য তার নিজের গ্রামের জনপ্রিয়তা কতটা গভীর। ডিঙ্গেদাহ হাইস্কুলের (সরোয়ার্দ্দি স্মরণী বিদ্যপিঠ) সভাপতি ও সদস্য হিসেবে সে দায়িত্ব পালন করেছে দীর্ঘদিন।
তার এ মৃত্যু আমাদের ডিঙ্গেদাহ অঞ্চলের আওয়ামী লীগের জন্য এবং এ অঞ্চলের সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এ ধরনের মানুষের অভাব তাদের জীবিতাবস্থায় ঠিক বোঝা যায় না। কিন্তু যখন তারা থাকে না, তখন বোঝা যায়, কত বড় জায়গা শূন্য হয়ে গেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি দলে তার অবস্থান ও অবদানের কথা স্মরণ করে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আমরা বাংলাদেশ কৃষক লীগের কর্মীরাও আমাদের এই বীর যোদ্ধার প্রতি জানাচ্ছি অশেষ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আর তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা।
লেখক,
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সভাপতি
বাংলাদেশ কৃষক লীগ
চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা।