ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

একের পর এক ধর্ষণ : দ্রুত বিচার করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৭:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ৩৭৬ বার পড়া হয়েছে

মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল, দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে। কিন্তু নির্বাচনের পরের কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংস অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ‘ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে’ ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের দ্বারা এক নারীর গণধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও প্রবল প্রতিবাদ হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার পর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কিছুটা হলেও কমবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি, বরং একের পর এক ধর্ষণের খবর আসছে। গত বৃহস্পতিবারের সংবাদমাধ্যমে ফেনী শহরের চার তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর এক গ্রামে ১০ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে খবর এসেছে। সীতাকু-ের একটি গ্রামে এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী যৌন হয়রানির ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। রোমহর্ষক অপরাধের অভিযোগ এসেছে রাজধানীর ডেমরা থেকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হয়েছে মাত্র চার ও পাঁচ বছর বয়সী দুই শিশুকে! ফেনীর ঘটনাটির সঙ্গে মাদকসংক্রান্ত অপরাধেরও সম্পর্ক আছে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। কিন্তু অন্য ঘটনাগুলো ¯্রফে নারীর প্রতি সহিংসতার দৃষ্টান্ত। এসব অপরাধ সাধারণ শান্তিশৃঙ্খলার বিষয় নয়, বরং একটি স্থায়ী সামাজিক ব্যাধির মতো বারবার ঘটে চলেছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- এমন কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল মন্তব্য করেছেন, অপরাধপ্রবণতা কোন পর্যায়ে গেছে, তা গত কয়েক দিনের বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাচ্ছে। ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করার জন্য কঠোর আইন যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায়, এসব অপরাধের দায়ে অপরাধীদের শাস্তির দৃষ্টান্ত তার চেয়ে অনেক কম। অপরাধ করে পার পাওয়া যায় এধরনের বিশ্বাস থেকে অপরাধীরা অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়। এটা শুধু পেশাদার অপরাধীদের ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। তাই ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস অপরাধের রাশ টেনে ধরার জন্য প্রথম কর্তব্য এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে গতি সঞ্চার করা। অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। একটার পর একটা ধর্ষণের খবরের সমান্তরালে যদি একটার পর একটা শাস্তির খবরও নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ধর্ষণপ্রবণতা হ্রাস পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সে জন্য উল্লিখিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের উদ্যোগ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না পেলে অপরাধীদের অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ থেকে যায়। ফলে সব ধরনের অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সুশাসন তথা আইনের শাসন মজবুত করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তবে ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে নারীর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শুধু আইনের শাসনই যথেষ্ট নয়, সামাজিক শক্তিরও প্রবল সমর্থন প্রয়োজন। নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, ধর্ম-সম্প্রদায়নির্বিশেষে নারীর মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা শুধু রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সম্ভব নয়। এ জন্য সামাজিক শক্তিগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ধর্ষণের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে শুধু সরকারকে নয়, গোটা সমাজকে। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে ব্যক্তি, পরিবার, পাড়া-মহল্লাসহ গোটা সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

একের পর এক ধর্ষণ : দ্রুত বিচার করুন

আপলোড টাইম : ০৯:৫৭:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৯

মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল, দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে। কিন্তু নির্বাচনের পরের কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংস অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ‘ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে’ ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের দ্বারা এক নারীর গণধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও প্রবল প্রতিবাদ হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার পর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কিছুটা হলেও কমবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি, বরং একের পর এক ধর্ষণের খবর আসছে। গত বৃহস্পতিবারের সংবাদমাধ্যমে ফেনী শহরের চার তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর এক গ্রামে ১০ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে খবর এসেছে। সীতাকু-ের একটি গ্রামে এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী যৌন হয়রানির ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। রোমহর্ষক অপরাধের অভিযোগ এসেছে রাজধানীর ডেমরা থেকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হয়েছে মাত্র চার ও পাঁচ বছর বয়সী দুই শিশুকে! ফেনীর ঘটনাটির সঙ্গে মাদকসংক্রান্ত অপরাধেরও সম্পর্ক আছে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। কিন্তু অন্য ঘটনাগুলো ¯্রফে নারীর প্রতি সহিংসতার দৃষ্টান্ত। এসব অপরাধ সাধারণ শান্তিশৃঙ্খলার বিষয় নয়, বরং একটি স্থায়ী সামাজিক ব্যাধির মতো বারবার ঘটে চলেছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- এমন কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল মন্তব্য করেছেন, অপরাধপ্রবণতা কোন পর্যায়ে গেছে, তা গত কয়েক দিনের বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাচ্ছে। ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করার জন্য কঠোর আইন যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায়, এসব অপরাধের দায়ে অপরাধীদের শাস্তির দৃষ্টান্ত তার চেয়ে অনেক কম। অপরাধ করে পার পাওয়া যায় এধরনের বিশ্বাস থেকে অপরাধীরা অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়। এটা শুধু পেশাদার অপরাধীদের ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। তাই ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস অপরাধের রাশ টেনে ধরার জন্য প্রথম কর্তব্য এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে গতি সঞ্চার করা। অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। একটার পর একটা ধর্ষণের খবরের সমান্তরালে যদি একটার পর একটা শাস্তির খবরও নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ধর্ষণপ্রবণতা হ্রাস পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সে জন্য উল্লিখিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের উদ্যোগ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না পেলে অপরাধীদের অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ থেকে যায়। ফলে সব ধরনের অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সুশাসন তথা আইনের শাসন মজবুত করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তবে ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে নারীর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শুধু আইনের শাসনই যথেষ্ট নয়, সামাজিক শক্তিরও প্রবল সমর্থন প্রয়োজন। নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, ধর্ম-সম্প্রদায়নির্বিশেষে নারীর মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা শুধু রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সম্ভব নয়। এ জন্য সামাজিক শক্তিগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ধর্ষণের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে শুধু সরকারকে নয়, গোটা সমাজকে। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে ব্যক্তি, পরিবার, পাড়া-মহল্লাসহ গোটা সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।