ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ইসির পরামর্শক এবার ইউএনও-ডিসি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৪৫:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অঘোষিত পরামর্শক হিসেবে কাজ করবেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং ইসির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে কমিশন। নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটির মতে, ভোটের আয়োজন ইসি করলেও মাঠের পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। তাই তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বাচনী ডামাডোল বাজানোর পথে এগোনোটাই সঠিক কাজ হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করা হবে সেবিষয়েও তাদের কাছ থেকে ধারণা নেয়াটা জরুরি বলে মনে করছে কমিশন। কারণ স্থানীয় পর্যায়ে চাকরিরত কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারাই ভালো চেনেন, জানেন। তাই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগের আগেই তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। অবশ্য বৈঠকের বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে কমিশনের পক্ষ থেকে। কমিশন সংশ্লিষ্টরা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরামর্শক হিসেবে মানতে নারাজ। তারা বলছেন, নির্বাচনী বিধি-বিধান সম্পর্কে ওই সব কর্মকর্তাদের সম্যক ধারণা দিতেই তাদের সঙ্গে পরামর্শ সভা কিংবা প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে চাইছে ইসি। চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দু’দিনের এ প্রশিক্ষণ আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার আগে এটিই হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃশ্যমান বৃহৎ প্রস্তুতির শো-ডাউন। অবশ্য এর আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সম্পর্কে ধারণা দিতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল ইসি। তবে সেটি ছিল সীমিত পরিসরের। এ প্রশিক্ষণে শুধুমাত্র ইসির জেলা, উপজেলা ও মাঠ কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছিলেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনায় কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের থেকে রিটানিং অফিসার নিয়োগ করা হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে, জাতীয় নির্বাচনের পরিধি অনেক বড়। কারণ এ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকারের পরিবর্তন হয়ে থাকে। কিন্তু নির্বাচনের এসব প্রয়োজনীয় করণিক সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ইসির ইমেজ সংকট দেখা দেয়। তাই নির্বাচনের বিধি-বিধান কিংবা গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২, আচরণ বিধিমালা এবং প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা, গ্রহণ ও বাতিল সম্পর্কে অবগত রাখতে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সম্পর্কেও তাদের ধারণা দেবে ইসি।
ইসির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে কারা রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। নির্বাচন পরিচালনায় কাদের নিয়োগ দেয়া যায় সেটি মাথায় রেখেই ডিসি, ইউএনও, নির্বাহী-বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং কমিশনের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। এ প্রশিক্ষণে সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে বিধি-বিধান এবং করণীয় বিষয়ে তাদের প্রাকটিক্যাল ধারণা দেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর যাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে তাদের পুনরায় ওই বিষয় সম্পর্কে আরেক দফা প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। দু’দফায় প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয় বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের বিধি-বিধান নিয়ে চর্চা না থাকায় অনেক সময় নির্বাচন পরিচালনায় থাকা কর্মকর্তারা ভুল করে বসেন। এমনকি সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে কালক্ষেপণ করেন। আসন্ন এই নির্বাচনে এসব জটিলতা এবং ছোটখাট ত্রুটিগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন যাতে না হতে হয় সেজন্যই এ আয়োজন।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৮০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন নির্বাচন কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত করতে বাধার সম্মুখীন না হতে হয় সেজন্য নির্বাচনের অন্য অনুষঙ্গগুলো গুছিয়ে রাখতে চাইছে সাংবিধানিক সংস্থা ইসি। এরই মধ্যে নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা এড়াতে এ বছর তালিকা হালনাগাদ করা থেকে বিরত থেকেছে কমিশন। বিদ্যমান ভোটার তালিকায় নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪০ লাখের মতো। একই ভাবে, ভোটকেন্দ্রের তালিকাও চূড়ান্ত করে এনেছে ইসি। গত জাতীয় সংসদের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের মতো কেন্দ্র বাড়ছে। আগে কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজারের বেশি। একইভাবে, এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কি হবে না এ সিদ্ধান্তে না পৌঁছালেও ইতিমধ্যে ইভিএমের প্রশিক্ষণ শেষ করেছে ইসি। এখন আরপিও, সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা ও সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সম্পর্কে মাঠ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। উল্লেখ্য, আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ইসির পরামর্শক এবার ইউএনও-ডিসি!

আপলোড টাইম : ০২:৪৫:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অঘোষিত পরামর্শক হিসেবে কাজ করবেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং ইসির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে কমিশন। নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটির মতে, ভোটের আয়োজন ইসি করলেও মাঠের পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। তাই তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বাচনী ডামাডোল বাজানোর পথে এগোনোটাই সঠিক কাজ হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করা হবে সেবিষয়েও তাদের কাছ থেকে ধারণা নেয়াটা জরুরি বলে মনে করছে কমিশন। কারণ স্থানীয় পর্যায়ে চাকরিরত কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারাই ভালো চেনেন, জানেন। তাই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগের আগেই তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। অবশ্য বৈঠকের বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে কমিশনের পক্ষ থেকে। কমিশন সংশ্লিষ্টরা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরামর্শক হিসেবে মানতে নারাজ। তারা বলছেন, নির্বাচনী বিধি-বিধান সম্পর্কে ওই সব কর্মকর্তাদের সম্যক ধারণা দিতেই তাদের সঙ্গে পরামর্শ সভা কিংবা প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে চাইছে ইসি। চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দু’দিনের এ প্রশিক্ষণ আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার আগে এটিই হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃশ্যমান বৃহৎ প্রস্তুতির শো-ডাউন। অবশ্য এর আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সম্পর্কে ধারণা দিতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল ইসি। তবে সেটি ছিল সীমিত পরিসরের। এ প্রশিক্ষণে শুধুমাত্র ইসির জেলা, উপজেলা ও মাঠ কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছিলেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনায় কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের থেকে রিটানিং অফিসার নিয়োগ করা হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে, জাতীয় নির্বাচনের পরিধি অনেক বড়। কারণ এ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকারের পরিবর্তন হয়ে থাকে। কিন্তু নির্বাচনের এসব প্রয়োজনীয় করণিক সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ইসির ইমেজ সংকট দেখা দেয়। তাই নির্বাচনের বিধি-বিধান কিংবা গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২, আচরণ বিধিমালা এবং প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা, গ্রহণ ও বাতিল সম্পর্কে অবগত রাখতে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সম্পর্কেও তাদের ধারণা দেবে ইসি।
ইসির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে কারা রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। নির্বাচন পরিচালনায় কাদের নিয়োগ দেয়া যায় সেটি মাথায় রেখেই ডিসি, ইউএনও, নির্বাহী-বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং কমিশনের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। এ প্রশিক্ষণে সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে বিধি-বিধান এবং করণীয় বিষয়ে তাদের প্রাকটিক্যাল ধারণা দেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর যাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে তাদের পুনরায় ওই বিষয় সম্পর্কে আরেক দফা প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। দু’দফায় প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয় বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের বিধি-বিধান নিয়ে চর্চা না থাকায় অনেক সময় নির্বাচন পরিচালনায় থাকা কর্মকর্তারা ভুল করে বসেন। এমনকি সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে কালক্ষেপণ করেন। আসন্ন এই নির্বাচনে এসব জটিলতা এবং ছোটখাট ত্রুটিগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন যাতে না হতে হয় সেজন্যই এ আয়োজন।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৮০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন নির্বাচন কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত করতে বাধার সম্মুখীন না হতে হয় সেজন্য নির্বাচনের অন্য অনুষঙ্গগুলো গুছিয়ে রাখতে চাইছে সাংবিধানিক সংস্থা ইসি। এরই মধ্যে নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা এড়াতে এ বছর তালিকা হালনাগাদ করা থেকে বিরত থেকেছে কমিশন। বিদ্যমান ভোটার তালিকায় নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪০ লাখের মতো। একই ভাবে, ভোটকেন্দ্রের তালিকাও চূড়ান্ত করে এনেছে ইসি। গত জাতীয় সংসদের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের মতো কেন্দ্র বাড়ছে। আগে কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজারের বেশি। একইভাবে, এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কি হবে না এ সিদ্ধান্তে না পৌঁছালেও ইতিমধ্যে ইভিএমের প্রশিক্ষণ শেষ করেছে ইসি। এখন আরপিও, সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা ও সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সম্পর্কে মাঠ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। উল্লেখ্য, আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।