ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ইম্প্যাক্ট হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসা বন্ধের নির্দেশ : চিকিৎসকের সনদ তলব

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩২:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মার্চ ২০১৮
  • / ৫৭৭ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় ২০ রোগীর চোখ হারানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি : সোমবারের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চোখের ছানি অপারেশনের পর ২০ জন রোগীর চোখ হারানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়। জানা যায়, সম্প্রতি ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতালে চোখের ছানি অপারেশন করে ২০ জন রোগী। কিন্তু অপচিকিৎসার শিকার হয়ে তারা তারা এখন চোখ হারানোর পথে রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অপারেশনের সময় একটি একটি ভারতীয় কোম্পানির ঔষুধের কারণেই তারা চোখ হারাতে বসেছে। ভুক্তভোগীদের সবাই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। একযোগে ২০ জন মানুষের চোখ হারানোর ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়। অনেকে এ ঘটনায় অস্ত্রপচারকারী চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাহীনের চিকিৎসা সনদ বাতিলের দাবি তুলেছেন। কেউ আবার তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। যদিও ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাহীন। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকালে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতালের চক্ষু বিষয়ক সকল চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে অস্ত্রপচারকারী চিকিৎসকের চিকিৎসার সকল সনদ তলব করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা. শফিউল কবির জিপু। বৃহস্পতিবার বিকালে সিভিল সার্জন স্বাক্ষরিত সিএস/চুয়া/শা-৩/২-১৮/৭০৫ নম্বরের স্বারকের পত্রটি তাদের কাছে পৌঁছানোর পর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে হাসপাতালটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সব ধরণের রোগীর চাপ একেবারেই কম। চক্ষু সেবার ইনডোর আউটডোর, ডাক্তার বসার চেম্বারসহ অপারেশন থিয়েটার তালাবদ্ধ রয়েছে।
ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা. শফিউল কবির জিপু দাবি করেন, অপারেশন করা ২৪ জনের মধ্যে যে ২০ জনের চোখে ইনফেকশন ধরা পড়েছে এতে তাদের হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কোনো ত্রুটি নেই। অপারেশনের সময় ওরাবুলু নামের ব্যবহৃত কিডসে গার্ম নেগেটিভ সেসিলি ব্যাক্টরিয়ার অস্থিত্ব রয়েছে, ফলে রোগীদের চোখে ইনফেকশন হয়েছে।
অপারেশনে ব্যবহার করা কিডসে গার্ম ওষুধ কোম্পানীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালটির এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ওষুধ কোম্পানিটি ভারতীয়। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় বৈঠক করছে।
প্রসঙ্গত. গত ৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা শহরের সুনামধন্য ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোমিরয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে ছানি পড়া ২৪ জন রোগীর একটি করে চোখে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের একদিন পরই ছাড়পত্র দিয়ে রোগীদের বাড়িতে পাঠানো হয়। বাড়িতে ফেরার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ২০ জন রোগীর চোখে তীব্র যন্ত্রনা শুরু হয়। পরে ওই ২০ জন রোগী একে একে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রাথমিক পরীক্ষায় ২০ জন রোগীরই চোখে ধরা পড়ে ইনফেকশন। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোপনে ওই ২০ জনকে ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও ভিশন আই হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ২০ জনের প্রত্যেকের পুনরায় অপারেশন করে ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়া চোখটি তুলে ফেলা হয়। একসঙ্গে ২০ জনের চোখে অপারেশনের পর ইনফেকশনে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঘটনাটি বুধবার জানাজানি হলে চুয়াডাঙ্গা জেলা জুড়ে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি অনুধাবন করে বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন খায়রুল আলমের নির্দেশে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিন সদস্যর একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। ওই তদন্ত টিমের প্রধান করা হয় সদর হাসপাতালের চক্ষু কনসালটেন্ট ডা. শফিউজ্জামান সুমনকে।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম জানান, ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কান্ডজ্ঞানহীন এমন ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার স্বাস্থ্য বিভাগ বিব্রত। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছে। পাশাপাশি অপারেশনে ব্যবহার করা ওষুধপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত হাসপাতালটির চক্ষু সংক্লান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চক্ষু কনসালটেন্ট ডা. শফিউজ্জামান সুমন জানান, ইতিমধ্যে ২৪ জন রোগীর অস্ত্রপচারকারী চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাহীনের চিকিৎসার সকল প্রকার সনদ সিভিল সার্জনের কাছে পেশ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শনিবার তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতালে চোখের অপারেশন করিয়ে চোখ হারিয়ে অনিশ্চয়তার প্রহার গুণছেন চুয়াডাঙ্গা গাইদঘাটের গোলজার হোসেন, আলুকদিয়ার ওলি মোহাম্মদ, আলমডাঙ্গার বাড়াদী এনায়েতপুরের খন্দকার ইয়াকুব আলী, খাসকররার লাল মোহাম্মদ, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার সোনাপট্টির আবনী দত্ত, আলমডাঙ্গা মোড়ভাঙ্গার আহমেদ আলী, হারদীর হাওয়াতন, দামুড়হুদা লক্ষ্মীপুরের তৈয়ব আলী, মদনার মধু হালদার, আলমডাঙ্গা নতিডাঙ্গার ফাতেমা খাতুন, খাস-বাগুন্দার খবিরন নেছা, জীবননগর সিংনগরের আজিজুল হক, দামুড়হুদা চিৎলার নবীছদ্দিন, মজলিশপুরের সাফিকুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা রংপুরের ইকলাস, দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গার গোলজান, সদাবরীর হানিফা, আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়ার কুতলি খাতুন, কুটি পাইকপাড়ার উষা রাণী ও দামুড়হুদার বড় বলদিয়ার আয়েশা খাতুন। চোখ হারানো চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার সোনাপট্টির আবনী দত্ত আক্ষেপ করে বলেন, বয়সের ভারে এমনিতেই ঠিকমত চলা ফেরা করতে পারিনা। প্যাকেট বানিয়ে কোন রকমে সংসার চালাতাম। একটি চোখ উঠানোর পর অন্য চোখটিতেও ঠিকমত দেখতে পাচ্ছি না। এখন কি করে সংসার চালাবো এটা নিয়েই রাতে ঘুমাতে পারছি না। প্রায় অভিন্ন কথা বললেন আলমডাঙ্গার বাড়াদী এনায়েতপুরের খন্দকার ইয়াকুব আলী। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, হাসপাতালে মানুষ যায় সুস্থ্য হতে। আর আমরা হাসপাাতলে গিয়ে অন্ধ হলাম। এখন বৃদ্ধ বয়সে কি করবো, কে আমাদের দায় নেবে? চুয়াডাঙ্গা গাইদঘাটের গোলজার হোসেন ছিলেন এমনিতেই প্রতিবন্ধী। দর্জির কাজ করে সংসার চালাতেন। চোখ হারিয়ে এখন ঘোর অন্ধকার দেখছেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতালে চোখের অপারেশন করিয়ে চোখ হারানো কেউ কেউ আইনগত প্রদক্ষেপ নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা বলছেন গোটা ঘটনাটি তারা পর্যবেক্ষন করছেন। আর্থিক ক্ষতিপূরণ না পেলে তারা দুই একদিনের মধ্যে আদালতের শরণাপন্ন হবেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ইম্প্যাক্ট হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসা বন্ধের নির্দেশ : চিকিৎসকের সনদ তলব

আপলোড টাইম : ১০:৩২:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মার্চ ২০১৮

চুয়াডাঙ্গায় ২০ রোগীর চোখ হারানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি : সোমবারের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চোখের ছানি অপারেশনের পর ২০ জন রোগীর চোখ হারানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়। জানা যায়, সম্প্রতি ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতালে চোখের ছানি অপারেশন করে ২০ জন রোগী। কিন্তু অপচিকিৎসার শিকার হয়ে তারা তারা এখন চোখ হারানোর পথে রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অপারেশনের সময় একটি একটি ভারতীয় কোম্পানির ঔষুধের কারণেই তারা চোখ হারাতে বসেছে। ভুক্তভোগীদের সবাই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। একযোগে ২০ জন মানুষের চোখ হারানোর ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়। অনেকে এ ঘটনায় অস্ত্রপচারকারী চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাহীনের চিকিৎসা সনদ বাতিলের দাবি তুলেছেন। কেউ আবার তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। যদিও ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাহীন। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকালে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতালের চক্ষু বিষয়ক সকল চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে অস্ত্রপচারকারী চিকিৎসকের চিকিৎসার সকল সনদ তলব করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা. শফিউল কবির জিপু। বৃহস্পতিবার বিকালে সিভিল সার্জন স্বাক্ষরিত সিএস/চুয়া/শা-৩/২-১৮/৭০৫ নম্বরের স্বারকের পত্রটি তাদের কাছে পৌঁছানোর পর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে হাসপাতালটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সব ধরণের রোগীর চাপ একেবারেই কম। চক্ষু সেবার ইনডোর আউটডোর, ডাক্তার বসার চেম্বারসহ অপারেশন থিয়েটার তালাবদ্ধ রয়েছে।
ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা. শফিউল কবির জিপু দাবি করেন, অপারেশন করা ২৪ জনের মধ্যে যে ২০ জনের চোখে ইনফেকশন ধরা পড়েছে এতে তাদের হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কোনো ত্রুটি নেই। অপারেশনের সময় ওরাবুলু নামের ব্যবহৃত কিডসে গার্ম নেগেটিভ সেসিলি ব্যাক্টরিয়ার অস্থিত্ব রয়েছে, ফলে রোগীদের চোখে ইনফেকশন হয়েছে।
অপারেশনে ব্যবহার করা কিডসে গার্ম ওষুধ কোম্পানীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালটির এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ওষুধ কোম্পানিটি ভারতীয়। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় বৈঠক করছে।
প্রসঙ্গত. গত ৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা শহরের সুনামধন্য ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোমিরয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে ছানি পড়া ২৪ জন রোগীর একটি করে চোখে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের একদিন পরই ছাড়পত্র দিয়ে রোগীদের বাড়িতে পাঠানো হয়। বাড়িতে ফেরার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ২০ জন রোগীর চোখে তীব্র যন্ত্রনা শুরু হয়। পরে ওই ২০ জন রোগী একে একে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রাথমিক পরীক্ষায় ২০ জন রোগীরই চোখে ধরা পড়ে ইনফেকশন। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোপনে ওই ২০ জনকে ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও ভিশন আই হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ২০ জনের প্রত্যেকের পুনরায় অপারেশন করে ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়া চোখটি তুলে ফেলা হয়। একসঙ্গে ২০ জনের চোখে অপারেশনের পর ইনফেকশনে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঘটনাটি বুধবার জানাজানি হলে চুয়াডাঙ্গা জেলা জুড়ে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি অনুধাবন করে বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন খায়রুল আলমের নির্দেশে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিন সদস্যর একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। ওই তদন্ত টিমের প্রধান করা হয় সদর হাসপাতালের চক্ষু কনসালটেন্ট ডা. শফিউজ্জামান সুমনকে।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম জানান, ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কান্ডজ্ঞানহীন এমন ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার স্বাস্থ্য বিভাগ বিব্রত। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছে। পাশাপাশি অপারেশনে ব্যবহার করা ওষুধপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত হাসপাতালটির চক্ষু সংক্লান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চক্ষু কনসালটেন্ট ডা. শফিউজ্জামান সুমন জানান, ইতিমধ্যে ২৪ জন রোগীর অস্ত্রপচারকারী চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাহীনের চিকিৎসার সকল প্রকার সনদ সিভিল সার্জনের কাছে পেশ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শনিবার তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতালে চোখের অপারেশন করিয়ে চোখ হারিয়ে অনিশ্চয়তার প্রহার গুণছেন চুয়াডাঙ্গা গাইদঘাটের গোলজার হোসেন, আলুকদিয়ার ওলি মোহাম্মদ, আলমডাঙ্গার বাড়াদী এনায়েতপুরের খন্দকার ইয়াকুব আলী, খাসকররার লাল মোহাম্মদ, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার সোনাপট্টির আবনী দত্ত, আলমডাঙ্গা মোড়ভাঙ্গার আহমেদ আলী, হারদীর হাওয়াতন, দামুড়হুদা লক্ষ্মীপুরের তৈয়ব আলী, মদনার মধু হালদার, আলমডাঙ্গা নতিডাঙ্গার ফাতেমা খাতুন, খাস-বাগুন্দার খবিরন নেছা, জীবননগর সিংনগরের আজিজুল হক, দামুড়হুদা চিৎলার নবীছদ্দিন, মজলিশপুরের সাফিকুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা রংপুরের ইকলাস, দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গার গোলজান, সদাবরীর হানিফা, আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়ার কুতলি খাতুন, কুটি পাইকপাড়ার উষা রাণী ও দামুড়হুদার বড় বলদিয়ার আয়েশা খাতুন। চোখ হারানো চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার সোনাপট্টির আবনী দত্ত আক্ষেপ করে বলেন, বয়সের ভারে এমনিতেই ঠিকমত চলা ফেরা করতে পারিনা। প্যাকেট বানিয়ে কোন রকমে সংসার চালাতাম। একটি চোখ উঠানোর পর অন্য চোখটিতেও ঠিকমত দেখতে পাচ্ছি না। এখন কি করে সংসার চালাবো এটা নিয়েই রাতে ঘুমাতে পারছি না। প্রায় অভিন্ন কথা বললেন আলমডাঙ্গার বাড়াদী এনায়েতপুরের খন্দকার ইয়াকুব আলী। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, হাসপাতালে মানুষ যায় সুস্থ্য হতে। আর আমরা হাসপাাতলে গিয়ে অন্ধ হলাম। এখন বৃদ্ধ বয়সে কি করবো, কে আমাদের দায় নেবে? চুয়াডাঙ্গা গাইদঘাটের গোলজার হোসেন ছিলেন এমনিতেই প্রতিবন্ধী। দর্জির কাজ করে সংসার চালাতেন। চোখ হারিয়ে এখন ঘোর অন্ধকার দেখছেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতালে চোখের অপারেশন করিয়ে চোখ হারানো কেউ কেউ আইনগত প্রদক্ষেপ নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা বলছেন গোটা ঘটনাটি তারা পর্যবেক্ষন করছেন। আর্থিক ক্ষতিপূরণ না পেলে তারা দুই একদিনের মধ্যে আদালতের শরণাপন্ন হবেন।