ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গায় সাকসেসসহ কোচিং ব্যবসা রমরমা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৫৭:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭
  • / ৫৯৪ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদক: “শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ড এবং শিক্ষক সমাজ মানূষ গড়ার কারিগর’- একথা অনেক পুরানো। কিন্তু বর্তমান শিক্ষক সমাজের অনেকে মানুষ গড়ার কারিগর এর পরিবর্তে হয়েছেনে অর্থ উপার্জনের কারিগর। তা সেটা বৈধ বা অবৈধ যেকোন উপায়ে হোক না কেন? ফলে বির্তকিত হচ্ছে সকল শিক্ষক সমাজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক কর্তৃক অভিভাবক হয়রানি ও শিক্ষকদের অনৈতিক কাজের হাত থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। সেক্ষেত্রে সফলতাও পাচ্ছে সরকার। গত মে মাসে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক খসড়া আকারে প্রকাশিত শিক্ষা আইনের ১০টি ধারার ৬ নং ধারায় বলা হয়েছে “প্রাইভেট বা কোচিং বাণিজ্যের সাথে কোন শিক্ষক জড়িত থাকলে তাকে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের জেল বা উভয় দন্ড হতে পারে”।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্থানে শিক্ষক পরিচালিত কোচিংসমূহ বন্ধ হলেও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে আলমডাঙ্গা কলেজের কতিপয় শিক্ষক চালিয়ে যাচ্ছে কোচিং ব্যবসা, হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আলমডাঙ্গা শহরের প্রানকেন্দ্র চাতাল মোড়ে গেলেই চোখে পড়বে এক বিরাট সাইনবোর্ড। লেখা আছে ‘সাকসেস কোচিং’ এবং এর নিচে লেখা আছে “যোগাযোগ: তাপস রশিদ ও মো. রাশিদুল কবীর।” পাশে মোবাইল নম্বর। “ সাকসেসে পড়লেই উপবৃত্তি ও টেষ্ট পরীক্ষার আগেই পরীক্ষার প্রশ্ন নিশ্চিত”- এ শ্লোগানকে পুঁজি করে তারা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রমরমা কোচিং বানিজ্যের অভিযোগও নতুন নয়।
এ দুই শিক্ষকের কোচিং বানিজ্যের কৌশলও অভিনব। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতিটি ভর্তি কমিটিতে যুক্ত থাকেন এ দুজন শিক্ষক তাপহ রশিদ ও মোঃ রাশিদুল কবীর। নিজেদের সাবজেক্টে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি করান। এরপর ক্লাসে তারা প্রচার করেন উপবৃত্তি পেতে হলে কোচিং এ পড়তে হবে। উপবৃত্তির জন্য গঠিত তিনজন বিশিষ্ট কমিটির সদস্যরা হলেন তাপস রশিদ, মো. রাশিদুল কবীর ও মো. আব্দুস সেলিম। আল একরা ক্যাডেট একাডেমির নিয়মিত শিক্ষক হিসাবে পরিচিত এই সেলিম স্যার। মেধাবি, গরীব ও উপস্থিতি উপবৃত্তি বাছাইয়ের মূল ক্রাইটেরিয়া হলেও এখানে টাকা দাও এবং কোচিংএ পড় এ ক্রাইটেরিয়ার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়ে থাকে। উপবৃত্তি কমিটি পরিবর্তনের জন্য শিক্ষকদের তরফ থেকে বার বার বলা হলেও কর্তৃপক্ষ কানে তোলে সে বলে অভিযোগ আছে। তৃতীয় ধাপে এরা টেষ্ট পরীক্ষার প্রশ্ন আউটের প্রলোভনও দেখায় বলে অভিযোগ আছে। টেষ্ট পরীক্ষার আগে সমস্ত প্রশ্ন বিশেষ প্রক্রিয়ায় ফাঁস করে থাকেন এ দুজন শিক্ষক বলে অভিযোগে উঠে এসেছে তবে, এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আলমডাঙ্গা কলেজে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে তেমন কোন ছাত্রছাত্রী নেই, এমনকি কোন ক্লাসও ঠিকমত হচ্ছে না। অথচ দুপুর দুইটার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে গেলে দেখা যায় চাতাল মোড়ের সাকসেস কোচিং এর নামে ভাড়া করা দোতলা বাসায় ছাত্রছাত্রী ঠাসাঠাসি করে বসছে। শরীফ নামের একজনকে জিজ্ঞাসা করলে উনি রশিকতার ছলে বললেন, এটা কলেজের একটি শাখা ক্যাম্পাস যার দায়িত্বে আছেন তাপস রশিদ ও মো. রাশিদুল কবীর স্যার। ক্লাস রুমেও নেই ছেলে-মেয়ের ভেদাভেদ। অবশ্য একারনেই নাকি বেশী ছাত্র এখানে পড়তে আসে বলেও অভিযোগ আছে।
আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, নতুন কমিটি গঠন করে প্রকৃত গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে যে জোরালো ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছেন, এক্ষেত্রেও সে রকম কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে সচেতন মহল মনে করেন।
এ বিষয়ে কোচিংয়ের পরিচালনাকারি দু’শিক্ষককের সাথে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ওই কোচিং সেন্টারের ছবি তোলার অনুমতি না পেয়ে দূর থেকে ছবি তুলতে গেলে কোচিং কর্তৃপক্ষ রাগান্বিত হয়ে ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন। তারা এসময় বলেন, আমরা কিভাবে কোচিং চালায় এলাকার সবাই জানে। আপনারাও জানবেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আলমডাঙ্গায় সাকসেসসহ কোচিং ব্যবসা রমরমা

আপলোড টাইম : ০৫:৫৭:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭

বিশেষ প্রতিবেদক: “শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ড এবং শিক্ষক সমাজ মানূষ গড়ার কারিগর’- একথা অনেক পুরানো। কিন্তু বর্তমান শিক্ষক সমাজের অনেকে মানুষ গড়ার কারিগর এর পরিবর্তে হয়েছেনে অর্থ উপার্জনের কারিগর। তা সেটা বৈধ বা অবৈধ যেকোন উপায়ে হোক না কেন? ফলে বির্তকিত হচ্ছে সকল শিক্ষক সমাজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক কর্তৃক অভিভাবক হয়রানি ও শিক্ষকদের অনৈতিক কাজের হাত থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। সেক্ষেত্রে সফলতাও পাচ্ছে সরকার। গত মে মাসে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক খসড়া আকারে প্রকাশিত শিক্ষা আইনের ১০টি ধারার ৬ নং ধারায় বলা হয়েছে “প্রাইভেট বা কোচিং বাণিজ্যের সাথে কোন শিক্ষক জড়িত থাকলে তাকে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের জেল বা উভয় দন্ড হতে পারে”।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্থানে শিক্ষক পরিচালিত কোচিংসমূহ বন্ধ হলেও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে আলমডাঙ্গা কলেজের কতিপয় শিক্ষক চালিয়ে যাচ্ছে কোচিং ব্যবসা, হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আলমডাঙ্গা শহরের প্রানকেন্দ্র চাতাল মোড়ে গেলেই চোখে পড়বে এক বিরাট সাইনবোর্ড। লেখা আছে ‘সাকসেস কোচিং’ এবং এর নিচে লেখা আছে “যোগাযোগ: তাপস রশিদ ও মো. রাশিদুল কবীর।” পাশে মোবাইল নম্বর। “ সাকসেসে পড়লেই উপবৃত্তি ও টেষ্ট পরীক্ষার আগেই পরীক্ষার প্রশ্ন নিশ্চিত”- এ শ্লোগানকে পুঁজি করে তারা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রমরমা কোচিং বানিজ্যের অভিযোগও নতুন নয়।
এ দুই শিক্ষকের কোচিং বানিজ্যের কৌশলও অভিনব। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতিটি ভর্তি কমিটিতে যুক্ত থাকেন এ দুজন শিক্ষক তাপহ রশিদ ও মোঃ রাশিদুল কবীর। নিজেদের সাবজেক্টে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি করান। এরপর ক্লাসে তারা প্রচার করেন উপবৃত্তি পেতে হলে কোচিং এ পড়তে হবে। উপবৃত্তির জন্য গঠিত তিনজন বিশিষ্ট কমিটির সদস্যরা হলেন তাপস রশিদ, মো. রাশিদুল কবীর ও মো. আব্দুস সেলিম। আল একরা ক্যাডেট একাডেমির নিয়মিত শিক্ষক হিসাবে পরিচিত এই সেলিম স্যার। মেধাবি, গরীব ও উপস্থিতি উপবৃত্তি বাছাইয়ের মূল ক্রাইটেরিয়া হলেও এখানে টাকা দাও এবং কোচিংএ পড় এ ক্রাইটেরিয়ার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়ে থাকে। উপবৃত্তি কমিটি পরিবর্তনের জন্য শিক্ষকদের তরফ থেকে বার বার বলা হলেও কর্তৃপক্ষ কানে তোলে সে বলে অভিযোগ আছে। তৃতীয় ধাপে এরা টেষ্ট পরীক্ষার প্রশ্ন আউটের প্রলোভনও দেখায় বলে অভিযোগ আছে। টেষ্ট পরীক্ষার আগে সমস্ত প্রশ্ন বিশেষ প্রক্রিয়ায় ফাঁস করে থাকেন এ দুজন শিক্ষক বলে অভিযোগে উঠে এসেছে তবে, এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আলমডাঙ্গা কলেজে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে তেমন কোন ছাত্রছাত্রী নেই, এমনকি কোন ক্লাসও ঠিকমত হচ্ছে না। অথচ দুপুর দুইটার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে গেলে দেখা যায় চাতাল মোড়ের সাকসেস কোচিং এর নামে ভাড়া করা দোতলা বাসায় ছাত্রছাত্রী ঠাসাঠাসি করে বসছে। শরীফ নামের একজনকে জিজ্ঞাসা করলে উনি রশিকতার ছলে বললেন, এটা কলেজের একটি শাখা ক্যাম্পাস যার দায়িত্বে আছেন তাপস রশিদ ও মো. রাশিদুল কবীর স্যার। ক্লাস রুমেও নেই ছেলে-মেয়ের ভেদাভেদ। অবশ্য একারনেই নাকি বেশী ছাত্র এখানে পড়তে আসে বলেও অভিযোগ আছে।
আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, নতুন কমিটি গঠন করে প্রকৃত গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে যে জোরালো ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছেন, এক্ষেত্রেও সে রকম কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে সচেতন মহল মনে করেন।
এ বিষয়ে কোচিংয়ের পরিচালনাকারি দু’শিক্ষককের সাথে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ওই কোচিং সেন্টারের ছবি তোলার অনুমতি না পেয়ে দূর থেকে ছবি তুলতে গেলে কোচিং কর্তৃপক্ষ রাগান্বিত হয়ে ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন। তারা এসময় বলেন, আমরা কিভাবে কোচিং চালায় এলাকার সবাই জানে। আপনারাও জানবেন।