ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীর নামফলক ভাঙল ছাত্রলীগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩৮:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুলাই ২০১৭
  • / ৪৮৫ বার পড়া হয়েছে

আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীর নামফলক ভাঙল ছাত্রলীগ
স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে- জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক জানিফ
chua_mujib-(4)

নিজস্ব প্রতিবেদক/আলমডাঙ্গা অফিস: আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী মেজর বজলুল হুদার কবরের নামফলকে ‘জাতীয় বীর’ লেখা। নামফলকে তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেও উপাধি দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতের আঁধারে কবরস্থানের ফটকে এসব লেখা সংবলিত ফলক দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্থানীয় এলাকাবাসীদের সহযোগিতায় ওই নাম ফলক ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী মেজর বজলুল হুদাকে ‘জাতীয় বীরের উপাধি দিয়ে নামফলক করার ঘটনাকে ঘৃণ্য ঘটনা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউর রহমান জোয়ার্দ্দার সুলতান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের সাবেক জিএস বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ শেখ নূর মোহাম্মদ জকু বলছেন বঙ্গবন্ধুর মত নেতার খুনির স্বজনদের এমন আস্ফালন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তাদের।
স্থানীয়রা জানান, ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্ম-স্বীকৃত খুনি মেজর (অব.) বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তাকে নিজ গ্রাম আলমডাঙ্গার নগর বোয়ালিয়ায় দাফন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রবজেল আলী জানান, লাশ দাফনের কয়েক বছরের মাথায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর বজলুল হুদার কবরস্থানের ফটকে তাকে জাতীয় বীর ও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আখ্যায়িত করে তার স্বজনরা নাম ফলক বসান। অনেকটা গোপনে এমন জঘন্য কাজ করলে কয়েকদিন পর বিষয়টি গ্রামের মানুষদের নজরে আসে। এ ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় শনিবার রাতের আধারে আবারো একই নামফলক বসানো হয় খুনি বজলুল হুদার কবরস্থানের ফটকে। গতকাল রোববার রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। খবরটি জানতে পেরে গতকাল সোমবার ভোরে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ এর নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর তারা স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যকারী বজলুল হুদার নামফলকটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ জানায়, একজন বিশ্ব নেতার খুনীর এমন আস্ফালন কোনভোবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর তাই ওই খুনির কবরস্থানের নাম ফলক গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।  জানিফ আরো জানায়, বাংলাদেশের যে প্রান্তেই স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা, সেখানেই ছাত্রলীগের প্রতিবাদ প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার শফিউর রহমান জোয়ার্দার সুলতান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ শেখ নূর মোহাম্মদ জকু, সাবেক কমান্ডার আব্দুল কুদ্দুস, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম, সবেদ আলী জানান, এমন ঘৃণ্য কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যে বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে এবং খুন করার পর প্রকাশ্যে তা স্বীকার করে বিচার করা নিয়ে আস্ফালন করেছে তাকে জাতীয় বীর, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ হিসাবে আখ্যায়িত করা গোটা মুক্তিযোদ্ধার চেতনার পরিপন্থী। এটার মধ্য দিয়ে খুনি বজলুল হুদার পরিবার ও স্বজনরা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান লিটু, আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলার উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সম্পাদক বজলুল হুদার স্বজনদের এমন জঘন্য কাজের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে খুঁজে আইনের আওতায় আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ধানম-ির বাসায় পরিবারসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। জঘন্যতম এই হত্যাকা-ের অন্যতম হোতা ছিলেন মেজর বজলুল হুদা। হত্যার পর ১৯৯১ সালে এক জনসভায় বজলুল হুদা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবকে আমি নিজের হাতে গুলি করে হত্যা করেছি। কার সাধ্য আছে আমার বিচার করার? এদেশে শেখ মুজিব হত্যার বিচার কোনো দিনই হবে না।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সকল বাধা বিপত্তি শেষে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীর নামফলক ভাঙল ছাত্রলীগ

আপলোড টাইম : ০৪:৩৮:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুলাই ২০১৭

আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীর নামফলক ভাঙল ছাত্রলীগ
স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে- জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক জানিফ
chua_mujib-(4)

নিজস্ব প্রতিবেদক/আলমডাঙ্গা অফিস: আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী মেজর বজলুল হুদার কবরের নামফলকে ‘জাতীয় বীর’ লেখা। নামফলকে তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেও উপাধি দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতের আঁধারে কবরস্থানের ফটকে এসব লেখা সংবলিত ফলক দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্থানীয় এলাকাবাসীদের সহযোগিতায় ওই নাম ফলক ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী মেজর বজলুল হুদাকে ‘জাতীয় বীরের উপাধি দিয়ে নামফলক করার ঘটনাকে ঘৃণ্য ঘটনা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউর রহমান জোয়ার্দ্দার সুলতান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের সাবেক জিএস বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ শেখ নূর মোহাম্মদ জকু বলছেন বঙ্গবন্ধুর মত নেতার খুনির স্বজনদের এমন আস্ফালন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তাদের।
স্থানীয়রা জানান, ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্ম-স্বীকৃত খুনি মেজর (অব.) বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তাকে নিজ গ্রাম আলমডাঙ্গার নগর বোয়ালিয়ায় দাফন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রবজেল আলী জানান, লাশ দাফনের কয়েক বছরের মাথায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর বজলুল হুদার কবরস্থানের ফটকে তাকে জাতীয় বীর ও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আখ্যায়িত করে তার স্বজনরা নাম ফলক বসান। অনেকটা গোপনে এমন জঘন্য কাজ করলে কয়েকদিন পর বিষয়টি গ্রামের মানুষদের নজরে আসে। এ ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় শনিবার রাতের আধারে আবারো একই নামফলক বসানো হয় খুনি বজলুল হুদার কবরস্থানের ফটকে। গতকাল রোববার রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। খবরটি জানতে পেরে গতকাল সোমবার ভোরে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ এর নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর তারা স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যকারী বজলুল হুদার নামফলকটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ জানায়, একজন বিশ্ব নেতার খুনীর এমন আস্ফালন কোনভোবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর তাই ওই খুনির কবরস্থানের নাম ফলক গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।  জানিফ আরো জানায়, বাংলাদেশের যে প্রান্তেই স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা, সেখানেই ছাত্রলীগের প্রতিবাদ প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার শফিউর রহমান জোয়ার্দার সুলতান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ শেখ নূর মোহাম্মদ জকু, সাবেক কমান্ডার আব্দুল কুদ্দুস, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম, সবেদ আলী জানান, এমন ঘৃণ্য কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যে বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে এবং খুন করার পর প্রকাশ্যে তা স্বীকার করে বিচার করা নিয়ে আস্ফালন করেছে তাকে জাতীয় বীর, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ হিসাবে আখ্যায়িত করা গোটা মুক্তিযোদ্ধার চেতনার পরিপন্থী। এটার মধ্য দিয়ে খুনি বজলুল হুদার পরিবার ও স্বজনরা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান লিটু, আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলার উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সম্পাদক বজলুল হুদার স্বজনদের এমন জঘন্য কাজের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে খুঁজে আইনের আওতায় আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ধানম-ির বাসায় পরিবারসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। জঘন্যতম এই হত্যাকা-ের অন্যতম হোতা ছিলেন মেজর বজলুল হুদা। হত্যার পর ১৯৯১ সালে এক জনসভায় বজলুল হুদা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবকে আমি নিজের হাতে গুলি করে হত্যা করেছি। কার সাধ্য আছে আমার বিচার করার? এদেশে শেখ মুজিব হত্যার বিচার কোনো দিনই হবে না।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সকল বাধা বিপত্তি শেষে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল।