ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গার বেলগাছীতে পুকুর খননের নামে ড্রেজার মেশিন দিয়ে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৫৭:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৮১৫ বার পড়া হয়েছে

বাণিজ্যিকভাবে বালি উত্তোলনের অভিযোগ!
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি (আলমডাঙ্গা): আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছী ইউনিয়নের ইসলামপাড়ায় সরকারি জিকে ক্যানেল, বসতবাড়ি ও মাঠের ফসলি জমির পাশে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ বালি। ৩০-৪০ ফুট গভীর করে বালি উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে পাশ্ববর্তী বসতবাড়ি ও আবাদি ফসলি জমি। এছাড়া প্রতিদিন বালি বোঝাই ট্রাক্টর ও স্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি যাতায়াতে ক্যানেলের পাড়ের কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের রবগুল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বিক্রয় করেন। তিনি বিভিন্নস্তরে দেন দরবারের মাধ্যমে আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছী ইউনিয়নের ইসলামপাড়ার বাণিজ্যিকভাবে বালি উত্তোলন শুরু করেছেন। এই রবগুল বেলগাছী ইউনিয়নের ইসলামপাড়ার মাঠে পুকুরখননের নাম করে বালি উত্তোলনের জন্য বিভিন্নজনের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়েছেন। লিজ নেওয়ার পরে রবগুল ড্রেজার মেশিন ভিড়িয়ে সেই জমি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বালি উত্তোলন করছেন এবং মোটা অংকের টাকায় সেই বালি বিক্রিও করছেন। অভিযোকারিরা জানান, জমিগুলো ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর করে খনন করে বালি তুলে পাশ্ববর্তী সমতল জমিতে রাখছেন। দূর থেকে দেখে যা মনে হচ্ছে বড় একটি টিলা। পুকুরগুলো থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করায় আশপাশ এলাকার আবাদি ফসলি জমিগুলোতে ধান, পাটসহ অন্যন্য ফসলি আবাদ পড়েছে হুমকির মুখে। কারণ ফসলের জমিতে পানি দিয়ে সেচ দিলে সেই পানি খুব দ্রুত আবার পুকুরে নেমে আসছে। লিজ দেওয়া একজন জমির মালিক বলেন, আমি না বুঝে রবগুলকে পুকুরখনন করতে জমি লিজ দিয়েছি। সে যে বাণিজ্যিকভাবে বালি তুলবে সেটা আমার জানা ছিলো না। আর বালি তোলা যে অপরাধ এটাও আমার জানা ছিলো না। জানা যায়, এক গাড়ি বালি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন রবগুল। তাছাড়া বালিবাহী ট্রাক রাস্তা দিয়ে ঘনঘন চলাচল করায় ওই ক্যানেলে কাঁচা রাস্তাটি গর্তে পরিণত হয়েছে। যখন তখন ভেঙ্গে পড়তে পারে এবং পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হতে পারে। পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হলে সমস্যায় পড়বে কৃষকরা। এছাড়া বালি ভর্তি ট্রাক্টর ও স্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি ও ট্রাকের বেপরোয়া চলাচলে যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। অভিযোগকারীরা আরো বলেন, বিষয়টি আলমডাঙ্গা ভূমি অফিসকে জানালেও অজ্ঞাত কারণে তারা নীরব। এর কারণে বালি উত্তোলনকারি ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মাঝে মাঝে প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসলে কিছু সময়ের জন্য বালি তোলা বন্ধ থাকলেও সুযোগ বুঝে ড্রেজার লাগিয়ে অবৈধভাবে বালি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়না। এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নিলে ফসলি জমি ও খাসকররা ভায়া আলমডাঙ্গার সড়কসহ যোগাযোগের এই অঞ্চলের একমাত্র সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ সালের ৬২নং আইনের ১৫(১) ও (২) ধারা ৪-এ বর্ণিত আছে, কতিপয় ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোনো বিধান, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করলে, এই আইন বা অন্য কোন বিধান লংঘন করলে, বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনূর্ধ্ব ২(দুই) বছরের কারাদ-ে দ-িত হবেন। এছাড়া সর্বনি¤œ ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ (দশ) লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ে দ-িত হবেন। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে অপরাধ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার হবে বলেও আইনে বলা আছে। তবে পুকুর খননের নামে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি আমাকে ফোনের মাধ্যমে অনেকে জানিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আলমডাঙ্গার বেলগাছীতে পুকুর খননের নামে ড্রেজার মেশিন দিয়ে

আপলোড টাইম : ১২:৫৭:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ অক্টোবর ২০১৮

বাণিজ্যিকভাবে বালি উত্তোলনের অভিযোগ!
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি (আলমডাঙ্গা): আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছী ইউনিয়নের ইসলামপাড়ায় সরকারি জিকে ক্যানেল, বসতবাড়ি ও মাঠের ফসলি জমির পাশে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ বালি। ৩০-৪০ ফুট গভীর করে বালি উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে পাশ্ববর্তী বসতবাড়ি ও আবাদি ফসলি জমি। এছাড়া প্রতিদিন বালি বোঝাই ট্রাক্টর ও স্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি যাতায়াতে ক্যানেলের পাড়ের কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের রবগুল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বিক্রয় করেন। তিনি বিভিন্নস্তরে দেন দরবারের মাধ্যমে আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছী ইউনিয়নের ইসলামপাড়ার বাণিজ্যিকভাবে বালি উত্তোলন শুরু করেছেন। এই রবগুল বেলগাছী ইউনিয়নের ইসলামপাড়ার মাঠে পুকুরখননের নাম করে বালি উত্তোলনের জন্য বিভিন্নজনের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়েছেন। লিজ নেওয়ার পরে রবগুল ড্রেজার মেশিন ভিড়িয়ে সেই জমি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বালি উত্তোলন করছেন এবং মোটা অংকের টাকায় সেই বালি বিক্রিও করছেন। অভিযোকারিরা জানান, জমিগুলো ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর করে খনন করে বালি তুলে পাশ্ববর্তী সমতল জমিতে রাখছেন। দূর থেকে দেখে যা মনে হচ্ছে বড় একটি টিলা। পুকুরগুলো থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করায় আশপাশ এলাকার আবাদি ফসলি জমিগুলোতে ধান, পাটসহ অন্যন্য ফসলি আবাদ পড়েছে হুমকির মুখে। কারণ ফসলের জমিতে পানি দিয়ে সেচ দিলে সেই পানি খুব দ্রুত আবার পুকুরে নেমে আসছে। লিজ দেওয়া একজন জমির মালিক বলেন, আমি না বুঝে রবগুলকে পুকুরখনন করতে জমি লিজ দিয়েছি। সে যে বাণিজ্যিকভাবে বালি তুলবে সেটা আমার জানা ছিলো না। আর বালি তোলা যে অপরাধ এটাও আমার জানা ছিলো না। জানা যায়, এক গাড়ি বালি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন রবগুল। তাছাড়া বালিবাহী ট্রাক রাস্তা দিয়ে ঘনঘন চলাচল করায় ওই ক্যানেলে কাঁচা রাস্তাটি গর্তে পরিণত হয়েছে। যখন তখন ভেঙ্গে পড়তে পারে এবং পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হতে পারে। পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হলে সমস্যায় পড়বে কৃষকরা। এছাড়া বালি ভর্তি ট্রাক্টর ও স্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি ও ট্রাকের বেপরোয়া চলাচলে যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। অভিযোগকারীরা আরো বলেন, বিষয়টি আলমডাঙ্গা ভূমি অফিসকে জানালেও অজ্ঞাত কারণে তারা নীরব। এর কারণে বালি উত্তোলনকারি ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মাঝে মাঝে প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসলে কিছু সময়ের জন্য বালি তোলা বন্ধ থাকলেও সুযোগ বুঝে ড্রেজার লাগিয়ে অবৈধভাবে বালি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়না। এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নিলে ফসলি জমি ও খাসকররা ভায়া আলমডাঙ্গার সড়কসহ যোগাযোগের এই অঞ্চলের একমাত্র সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ সালের ৬২নং আইনের ১৫(১) ও (২) ধারা ৪-এ বর্ণিত আছে, কতিপয় ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোনো বিধান, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করলে, এই আইন বা অন্য কোন বিধান লংঘন করলে, বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনূর্ধ্ব ২(দুই) বছরের কারাদ-ে দ-িত হবেন। এছাড়া সর্বনি¤œ ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ (দশ) লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ে দ-িত হবেন। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে অপরাধ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার হবে বলেও আইনে বলা আছে। তবে পুকুর খননের নামে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি আমাকে ফোনের মাধ্যমে অনেকে জানিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।