ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আমি ক্ষমতার কোন অপব্যবহার করিনি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮
  • / ৮৮৬ বার পড়া হয়েছে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও শিক্ষিত প্রার্থী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা ছিল মেহেরপুরের জনগণের। যে প্রার্থী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বকে প্রশ্রয় দেবেন না, এলাকার উন্নয়নে শিক্ষা, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে কাজ করবেন। তাদের প্রত্যাশার ফল স্বরুপ আবারও অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুলকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তাঁর উচ্ছ্বাস, ব্যক্তিগত জীবন ও সমসাময়িক রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন সময়ের সমীকরণ-নির্বাচনী সমীকরণ সাক্ষাৎকারে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরমাত্র ২৫দিন বাকী। প্রস্তুতি কেমন?
এমপি মহোদয়: একটি নির্বাচন শেষ হতেই আরেকটি নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। সে হিসেবে মেহেরপুর-২ আসনের তুলনায় মেহেরপুর-১ আসনের নেতাকর্মীরাও সুসংগঠিত। আমরা বেশ ভালো প্রস্তুতিতে আছি।
২য় বার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে অনুভূতি কেমন?
এমপি মহোদয়: এই অনুভূতিটা অবশ্যই খুব ভালো। আমার অগণিত ভক্ত ও সমর্থকরাও অত্যন্ত আবেগাপ্লুত। সবার যেটা প্রত্যাশা ছিলো, মনোনয়ন পাওয়ার পর সবাই জানিয়েছে তাদের চাওয়ার সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে।
সারাদিনের ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে?
এমপি মহোদয়: কাঁক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত জনগণ ও নেতাকর্মীদের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহচর, জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছহিউদ্দীন। তিনি ১৯৭০ সালে এমএনএ, ১৯৭৩ সালে এমপি, ১৯৭৫ সালে বাকশাল গভর্নর এবং সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে মেহেরপুর-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। বাবার পথ ধরেই অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এখন মেহেরপুরের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছেন, নাকি নিজের ইচ্ছেও ছিলো কিছুটা?
এমপি মহোদয়: আমি রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার সাত পুরুষ রাজনীতি করছে। আমাদের রক্তে রাজনীতি মিশে রয়েছে। খুলনা বিএল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এরপর সেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করেছি। মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের একজন সাধারণ সদস্য ছিলাম। পরিবার থেকে জন্মসূত্রে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই নিজেকে রাজনীতিতে জড়িয়েছি।


আপনার পিতা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা স্মৃতি প্রকাশ করুন?
এমপি মহোদয়: ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু আমাদের এলাকায় একটা মিটিংয়ে (মেহেরপুর) আসলেন। রাতে আমাদের বাসায় খাওয়া দাওয়া শেষে ছয়জন হিন্দু ছাত্রকে ডেকে আনলেন। তাদের বোঝালেন- ‘আমরা একদিন দেশ স্বাধীন করবো। তোমরা কেনো দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছো। এই দেশ আমাদের সকলের, সব ধর্মের। আমরা সবাই মিলে চমৎকার সম্প্রিতির একটা দেশ তৈরি করবো।’ উনি এটার বলার পর এখান থেকে যেতে চাইলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাইসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে নিয়ে গিয়েছিলেন আমার পিতা। রিক্সায় বঙ্গবন্ধু ও আব্দুর রহমান তর্কবাদিস। সাইকেলে আমার পিতার সঙ্গে ছিলেন আমার চাচা আজিজুল হক ও ফাঁকের আলীও। চুয়াডাঙ্গা থেকে ট্রেনে উঠে বঙ্গবন্ধু যশোরে মশিউর রহমান সাহেবের বাসায় গেলেন। ওখান থেকে তিনি গ্রেফতার হলেন। গ্রেফতার হওয়ার কারণ ছিলো- মেহেরপুরের জনসভায় সেদিন তিনি সরকার বিরোধী বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিছুদিন পর জামিন পেয়ে খুলনা গেলেন এবং আবারও গ্রেফতার হলেন।
এমন কোন ইচ্ছে বা স্বপ্ন আছে কী, যা এখনও পূরণ হয়নি?
এমপি মহোদয়: আমি যখন জন্মগ্রহণ করি তখন আমার পিতা একজন এমপি। বড় হয়ে ইচ্ছে হলো- যদি কখনও এমপি হতে পারি তাহলে আমি দেশটা পরিবর্তন করবো। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য, তাদের উন্নয়নে কাজ করা এবং কিছু পরিবর্তন করাটাই আমার স্বপ্ন। এখানে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করতে চাই। যেখানে খুব অল্প খরচে সেবা পাবে সকলে, তবেই আমার স্বপ্ন পূরণ হবে। তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান করতে চাই।
আপনি মনোনয়ন পাওয়ার পর আপনারই দলের নেতাকর্মীদের রাজপথে নামতে দেখা গেছে। তারা আপনার মনোনয়ন বাতিল চেয়েছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
এমপি মহোদয়: আমি রাজনীতি করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমি আমার বক্তব্যে কোন কটু কথা এ পর্যন্ত উচ্চারণ করিনি। আমি বক্তব্যের ধরণ বদলে দিয়েছি। আমি একটা সুযোগ দিয়েছি যে, সবাই মনোনয়ন চেতে পারে, দল বিবেচনা করে যাকে খুশি তাকে দেবে। সকলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস আর আস্থা রেখেই আমি রাজনীতি করছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহৎ একটি দল। এই দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। তারাও মনোনয়ন চেয়েছে। তা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে দেয়া হয়েছে। মনোনয়ন না পাওয়ার পর তাদের কিছুটা রাগ ছিলো। সেই রাগগুলো প্রশমন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে। আর কিছুদিনের মধ্যে দেখতে পারবেন ঐক্যবদ্ধ মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ। আমরা সকলে এক হয়ে কাজ করবো, এই আসনে জয়ের ধারাবাহিকতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেবো। মান অভিমান থাকে, এক জায়গায় বসলে ঠিক হয়ে যায়। এটা ভেবে লাভ নেই দ্বিধা বিভক্ত আ.লীগ হেরে যাবে আর বিএনপি ফাঁকে মাঠে গোল দেবে।
দেশের অন্যান্য জেলাগুলো তুলনায় মেহেরপুরে বেশি সক্রিয় দেখা যায় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের। এবারের নির্বাচনেও তারা বেশ ঐক্যবদ্ধ। কতটা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?
এমপি মহোদয়: মেহেরপুরে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। আমার এই আসনে ২০০৮ সালে ও ২০১৪ সালে আ.লীগ জয় পেয়েছে। ভোটের সমীকরণে এই আসনে আ.লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান রয়েছে। একক ভাবে বিএনপি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। আর জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ভোট করলে আ.লীগের প্রায় সমান পর্যায়ে আসে। কিছু ভাসমান ভোট আছে যা জয় বিজয় নিশ্চিত করে। তথ্যউপাথ্য অনুযায়ী এই আসনে আ.লীগের বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ, দেশের যে ৩৩টি আসনকে আ.লীগের আসন বলা হয় তারমধ্যে মেহেরপুর-১ অন্যতম। এটিই আ.লীগের দুর্গ।
মেহেরপুর জেলাকে বিএনপি অধ্যুষিত বললে আপনার বক্তব্য কী?
এমপি মহোদয়: ১৯৮৬ সাল থেকে মেহেরপুর-১ আসনটি সর্বাধিক বার আ.লীগেরই। বিএনপি অধ্যুষিত বললে তার ফলাফল দেখা যাবে আসন্ন ভোটের মাধ্যমে। গাংনীর আসনটিও আ.লীগের। কিন্তু অর্ন্তদ্বন্ধের কারণে সেটি বিএনপি’র দখলে চলে গেছে। ২০০৮ সাল থেকে আসন দু’টিতেই আ.লীগের জয়ের ধারাবাহিকতা রয়েছে।
এ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
এমপি মহোদয়: আমরা শতভাগ আশাবাদী। আমাদের কর্মই জয় এনে দেবে। আমি ক্ষমতার কোন অপব্যবহার করিনি। মেহেরপুরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে সব জায়গায় এত পরিমাণ কাজ করেছি যে আমাদের নামে কোন অভিযোগ নেই। জনগণই বিচার করবে আমি তাদের জন্য কী করেছি। আপনাদের বলে দিলাম আমি আগামী নির্বাচনে আ.লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। যারা ভাবছে দ্বিধাবিভক্ত আ.লীগের সিটটি অন্যদিকে যাবে। তাদের গ্যারান্টি দিচ্ছি এই সিট আমাদেরই থাকবে। অন্যদিকে যাবে না।
একজন সংসদ সদস্য নন, একজন অধ্যাপকের কাছে জানতে চাই-
নেতা ও কর্মীর মধ্যে পার্থক্য কী?
এমপি মহোদয়: নেতা পরিকল্পনাকারী, কর্মী বাস্তবায়নকারী। উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকবে। নেতার দায়িত্ব একটা পরিকল্পনা দেওয়া আর কর্মীর কাজ বাস্তবায়ন করা।
ছাত্রদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা কীভাবে দেখেন?
এমপি মহোদয়: রাজনীতির প্রতি এক সময় মানুষের বিরূপ ধারণা ছিলো। বিশেষ করে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালের পর থেকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে রাজনীতি থেকে বিরত রাখতো। বর্তমানে দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। মেধাবী তরুণ ছাত্ররা রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি শুধু ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হতে পারে না।
অধ্যাপনা করেন এখনও?
এমপি মহোদয়: অধ্যাপনা দীর্ঘদিনের, এটা ছাড়াটা অসম্ভব। অধ্যাপনাকে খুবই ভালোবাসি, আমি উপভোগ করি। আমার রক্তের কিছু অংশ এই পেশার সঙ্গেই রয়ে গেছে। মহান রাব্বুল আল আমিন আমাকে শিক্ষকতার মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা দিয়েছেন তা রাজনীতিতে কাজে লাগাচ্ছি।
সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি দেখুন দৈনিক সময়ের সমীকরণ ফেসবুক পেজে- িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ফধরষু ংড়সড়ুবৎ ংড়সরশড়ৎড়হ

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আমি ক্ষমতার কোন অপব্যবহার করিনি

আপলোড টাইম : ১০:৫৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও শিক্ষিত প্রার্থী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা ছিল মেহেরপুরের জনগণের। যে প্রার্থী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বকে প্রশ্রয় দেবেন না, এলাকার উন্নয়নে শিক্ষা, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে কাজ করবেন। তাদের প্রত্যাশার ফল স্বরুপ আবারও অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুলকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তাঁর উচ্ছ্বাস, ব্যক্তিগত জীবন ও সমসাময়িক রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন সময়ের সমীকরণ-নির্বাচনী সমীকরণ সাক্ষাৎকারে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরমাত্র ২৫দিন বাকী। প্রস্তুতি কেমন?
এমপি মহোদয়: একটি নির্বাচন শেষ হতেই আরেকটি নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। সে হিসেবে মেহেরপুর-২ আসনের তুলনায় মেহেরপুর-১ আসনের নেতাকর্মীরাও সুসংগঠিত। আমরা বেশ ভালো প্রস্তুতিতে আছি।
২য় বার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে অনুভূতি কেমন?
এমপি মহোদয়: এই অনুভূতিটা অবশ্যই খুব ভালো। আমার অগণিত ভক্ত ও সমর্থকরাও অত্যন্ত আবেগাপ্লুত। সবার যেটা প্রত্যাশা ছিলো, মনোনয়ন পাওয়ার পর সবাই জানিয়েছে তাদের চাওয়ার সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে।
সারাদিনের ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে?
এমপি মহোদয়: কাঁক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত জনগণ ও নেতাকর্মীদের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহচর, জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছহিউদ্দীন। তিনি ১৯৭০ সালে এমএনএ, ১৯৭৩ সালে এমপি, ১৯৭৫ সালে বাকশাল গভর্নর এবং সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে মেহেরপুর-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। বাবার পথ ধরেই অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এখন মেহেরপুরের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছেন, নাকি নিজের ইচ্ছেও ছিলো কিছুটা?
এমপি মহোদয়: আমি রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার সাত পুরুষ রাজনীতি করছে। আমাদের রক্তে রাজনীতি মিশে রয়েছে। খুলনা বিএল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এরপর সেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করেছি। মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের একজন সাধারণ সদস্য ছিলাম। পরিবার থেকে জন্মসূত্রে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই নিজেকে রাজনীতিতে জড়িয়েছি।


আপনার পিতা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা স্মৃতি প্রকাশ করুন?
এমপি মহোদয়: ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু আমাদের এলাকায় একটা মিটিংয়ে (মেহেরপুর) আসলেন। রাতে আমাদের বাসায় খাওয়া দাওয়া শেষে ছয়জন হিন্দু ছাত্রকে ডেকে আনলেন। তাদের বোঝালেন- ‘আমরা একদিন দেশ স্বাধীন করবো। তোমরা কেনো দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছো। এই দেশ আমাদের সকলের, সব ধর্মের। আমরা সবাই মিলে চমৎকার সম্প্রিতির একটা দেশ তৈরি করবো।’ উনি এটার বলার পর এখান থেকে যেতে চাইলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাইসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে নিয়ে গিয়েছিলেন আমার পিতা। রিক্সায় বঙ্গবন্ধু ও আব্দুর রহমান তর্কবাদিস। সাইকেলে আমার পিতার সঙ্গে ছিলেন আমার চাচা আজিজুল হক ও ফাঁকের আলীও। চুয়াডাঙ্গা থেকে ট্রেনে উঠে বঙ্গবন্ধু যশোরে মশিউর রহমান সাহেবের বাসায় গেলেন। ওখান থেকে তিনি গ্রেফতার হলেন। গ্রেফতার হওয়ার কারণ ছিলো- মেহেরপুরের জনসভায় সেদিন তিনি সরকার বিরোধী বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিছুদিন পর জামিন পেয়ে খুলনা গেলেন এবং আবারও গ্রেফতার হলেন।
এমন কোন ইচ্ছে বা স্বপ্ন আছে কী, যা এখনও পূরণ হয়নি?
এমপি মহোদয়: আমি যখন জন্মগ্রহণ করি তখন আমার পিতা একজন এমপি। বড় হয়ে ইচ্ছে হলো- যদি কখনও এমপি হতে পারি তাহলে আমি দেশটা পরিবর্তন করবো। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য, তাদের উন্নয়নে কাজ করা এবং কিছু পরিবর্তন করাটাই আমার স্বপ্ন। এখানে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করতে চাই। যেখানে খুব অল্প খরচে সেবা পাবে সকলে, তবেই আমার স্বপ্ন পূরণ হবে। তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান করতে চাই।
আপনি মনোনয়ন পাওয়ার পর আপনারই দলের নেতাকর্মীদের রাজপথে নামতে দেখা গেছে। তারা আপনার মনোনয়ন বাতিল চেয়েছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
এমপি মহোদয়: আমি রাজনীতি করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমি আমার বক্তব্যে কোন কটু কথা এ পর্যন্ত উচ্চারণ করিনি। আমি বক্তব্যের ধরণ বদলে দিয়েছি। আমি একটা সুযোগ দিয়েছি যে, সবাই মনোনয়ন চেতে পারে, দল বিবেচনা করে যাকে খুশি তাকে দেবে। সকলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস আর আস্থা রেখেই আমি রাজনীতি করছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহৎ একটি দল। এই দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। তারাও মনোনয়ন চেয়েছে। তা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে দেয়া হয়েছে। মনোনয়ন না পাওয়ার পর তাদের কিছুটা রাগ ছিলো। সেই রাগগুলো প্রশমন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে। আর কিছুদিনের মধ্যে দেখতে পারবেন ঐক্যবদ্ধ মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ। আমরা সকলে এক হয়ে কাজ করবো, এই আসনে জয়ের ধারাবাহিকতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেবো। মান অভিমান থাকে, এক জায়গায় বসলে ঠিক হয়ে যায়। এটা ভেবে লাভ নেই দ্বিধা বিভক্ত আ.লীগ হেরে যাবে আর বিএনপি ফাঁকে মাঠে গোল দেবে।
দেশের অন্যান্য জেলাগুলো তুলনায় মেহেরপুরে বেশি সক্রিয় দেখা যায় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের। এবারের নির্বাচনেও তারা বেশ ঐক্যবদ্ধ। কতটা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?
এমপি মহোদয়: মেহেরপুরে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। আমার এই আসনে ২০০৮ সালে ও ২০১৪ সালে আ.লীগ জয় পেয়েছে। ভোটের সমীকরণে এই আসনে আ.লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান রয়েছে। একক ভাবে বিএনপি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। আর জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ভোট করলে আ.লীগের প্রায় সমান পর্যায়ে আসে। কিছু ভাসমান ভোট আছে যা জয় বিজয় নিশ্চিত করে। তথ্যউপাথ্য অনুযায়ী এই আসনে আ.লীগের বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ, দেশের যে ৩৩টি আসনকে আ.লীগের আসন বলা হয় তারমধ্যে মেহেরপুর-১ অন্যতম। এটিই আ.লীগের দুর্গ।
মেহেরপুর জেলাকে বিএনপি অধ্যুষিত বললে আপনার বক্তব্য কী?
এমপি মহোদয়: ১৯৮৬ সাল থেকে মেহেরপুর-১ আসনটি সর্বাধিক বার আ.লীগেরই। বিএনপি অধ্যুষিত বললে তার ফলাফল দেখা যাবে আসন্ন ভোটের মাধ্যমে। গাংনীর আসনটিও আ.লীগের। কিন্তু অর্ন্তদ্বন্ধের কারণে সেটি বিএনপি’র দখলে চলে গেছে। ২০০৮ সাল থেকে আসন দু’টিতেই আ.লীগের জয়ের ধারাবাহিকতা রয়েছে।
এ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
এমপি মহোদয়: আমরা শতভাগ আশাবাদী। আমাদের কর্মই জয় এনে দেবে। আমি ক্ষমতার কোন অপব্যবহার করিনি। মেহেরপুরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে সব জায়গায় এত পরিমাণ কাজ করেছি যে আমাদের নামে কোন অভিযোগ নেই। জনগণই বিচার করবে আমি তাদের জন্য কী করেছি। আপনাদের বলে দিলাম আমি আগামী নির্বাচনে আ.লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। যারা ভাবছে দ্বিধাবিভক্ত আ.লীগের সিটটি অন্যদিকে যাবে। তাদের গ্যারান্টি দিচ্ছি এই সিট আমাদেরই থাকবে। অন্যদিকে যাবে না।
একজন সংসদ সদস্য নন, একজন অধ্যাপকের কাছে জানতে চাই-
নেতা ও কর্মীর মধ্যে পার্থক্য কী?
এমপি মহোদয়: নেতা পরিকল্পনাকারী, কর্মী বাস্তবায়নকারী। উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকবে। নেতার দায়িত্ব একটা পরিকল্পনা দেওয়া আর কর্মীর কাজ বাস্তবায়ন করা।
ছাত্রদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা কীভাবে দেখেন?
এমপি মহোদয়: রাজনীতির প্রতি এক সময় মানুষের বিরূপ ধারণা ছিলো। বিশেষ করে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালের পর থেকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে রাজনীতি থেকে বিরত রাখতো। বর্তমানে দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। মেধাবী তরুণ ছাত্ররা রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি শুধু ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হতে পারে না।
অধ্যাপনা করেন এখনও?
এমপি মহোদয়: অধ্যাপনা দীর্ঘদিনের, এটা ছাড়াটা অসম্ভব। অধ্যাপনাকে খুবই ভালোবাসি, আমি উপভোগ করি। আমার রক্তের কিছু অংশ এই পেশার সঙ্গেই রয়ে গেছে। মহান রাব্বুল আল আমিন আমাকে শিক্ষকতার মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা দিয়েছেন তা রাজনীতিতে কাজে লাগাচ্ছি।
সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি দেখুন দৈনিক সময়ের সমীকরণ ফেসবুক পেজে- িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ফধরষু ংড়সড়ুবৎ ংড়সরশড়ৎড়হ