ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আবার রেলভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০১৯
  • / ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
তিন বছরের মাথায় আবারও রেলওয়ের ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এবার গড়ে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাত দশমিক ২৩ শতাংশ যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। তবে ভাড়া না বাড়িয়ে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর সুপারিশ বিশেষজ্ঞদের। এ বিষয়ে রেলওয়ে সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধি বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয় জমা দেয়া হবে।
জানা গেছে, এবার প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ৩৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪৯ পয়সা করা হবে। রুটভেদে শোভন চেয়ারে ভাড়া বাড়বে ২২ থেকে ৪৭ শতাংশ। এছাড়া এসি চেয়ারে রুটভেদে ভাড়া বাড়বে ৩৯ থেকে ৬৪ শতাংশ। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের ভাড়া, কনটেইনার ও পার্সেল পরিবহন মাসুল বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। ইতোমধ্যে ভাড়া বৃদ্ধি-সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো হবে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানায়। কিন্তু এখনও ট্রেনে বিলম্ব যাতায়াত, টিকিট পেতে হয়রানি, কালোবাজারি বেশি দামে টিকিট বিক্রয়, বিশ্রামাগারের অভাব, বাথরুম নোংরা, হকার ও ভিক্ষুকদের উৎপাতসহ নানা সমস্যার শিকার হয় যাত্রীরা। তাই ভাড়া না বাড়িয়ে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর সুপারিশ বিশেষজ্ঞদের।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক মেটেরিয়াল, অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংস্কার প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি (প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারস) প্রণীত ট্যারিফ স্ট্রাকচারের মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালন ব্যয় যত বাড়বে আনুপাতিক হারে ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখার পরামর্শ দেয়। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলওয়ের জ্বালানি ব্যয় ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ, বেতন-ভাতা ৩৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ১৫৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)’র প্রতি বছর ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। গত জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের জন্য এডিবির রিভিউ বৈঠকে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এই প্রেক্ষিতে রেলপথ মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি রেলওয়ে আয়-ব্যয় পর্যালোচনা করে সাত দিনের মধ্যে একটি উপস্থাপনা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়। ওই কমিটি তিন বছর আগের ভাড়া বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম, অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের খরচসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিবেচনায় এনে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব তৈরি করেছে। এতে ভিত্তি ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩৯ পয়সা থেকে ৪৯ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়। ভিত্তি ভাড়া ও নীতিমালা অনুযায়ী, রেলওয়ের নতুন ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া যাত্রী পরিবহনে নূন্যতম ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের ভাড়া, কনটেইনার ও পার্সেল পরিবহন মাসুল বাড়ানোর প্রস্তাবও তৈরি করেছে রেলওয়ে।
বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪৫ টাকা। নতুন ভাড়া ৪৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। একই রুটে এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। এদিকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪০ থেকে বাড়িয়ে ৪৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই রুটে এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা-সিলেট রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩২০ থেকে বাড়িয়ে ৪৩৫ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৬১০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার এক টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-দিনাজপুর রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৪৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৩০ ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৯৯০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ঢাকা-পঞ্চগড় রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬৭৫ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৫৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫৫৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট ও ঢাকা-খুলনা রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫০৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৩০ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৯৬৬ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ২২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩৩০ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৪২৬ থেকে বাড়িয়ে ৬৩৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ট্রেনে সুলভ শ্রেণীর ন্যূনতম ভাড়া ৩৫ টাকা, যা বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া শোভন শ্রেণীর নূন্যতম ভাড়া ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫৫, শোভন চেয়ারে ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫, প্রথম শ্রেণী সিট (নন-এসি) ৯০ থেকে ১১০, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১২০, এসি সিট ও প্রথম শ্রেণী বার্থ (নন-এসি) ১১০ থেকে বাড়িয়ে ১৩০ এবং এসি বার্থ ১৩০ থেকে বাড়িয়ে ১৬৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও দ্বিতীয় শ্রেণীর নূন্যতম ভাড়া ৫ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর মেইলে ১৫ টাকা ও কমিউটার ট্রেনের নূন্যতম ভাড়া ২০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা করা হয়েছে।
এদিকে রেল ভবনে এক অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, রেলওয়ে মন্ত্রণালয় রেলের ভাড়া বাড়ানোর কোন চিন্তা করেনি। কারণ শুধু যাত্রী ভাড়া দিয়ে রেলওয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বহন করা যায় না। তারপরও আমি নিজস্ব আগ্রহের কারণে একটি কমিটি গঠন করেছি। তারা রেলের উন্নয়ন, অবকাঠামো, সেবা বিষয়ে একটি জরিপ চালাবে। এরপর তাদের প্রতিবেদন আমাকে দেবে। আমি সেই প্রতিবেদন নিয়ে রেলের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে সবার সঙ্গে কথা বলব। গঠিত কিমিটি রেলের সেবা, ভাড়া ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ভাড়ার তুলনামূলক চিত্রও তুলে ধরবে।
রেলওয়ে ভাড়া না বাড়িয়ে রেলকে ঢেলে সাজানোর সুপারিশ করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, রেলওয়ে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি, দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ হলে রেল একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এখনও বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ে সম্পদের অপচয় হচ্ছে, অপব্যয় হচ্ছে। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। শুধু ভাড়া বাড়িয়ে ১০০ কোটি আয় হলেও রেলওয়ের লোকসান কমানো যাবে না। এ জন্য সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী রেলওয়ে ঢেলে সাজাতে হবে বলে জানান তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আবার রেলভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ

আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
তিন বছরের মাথায় আবারও রেলওয়ের ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এবার গড়ে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাত দশমিক ২৩ শতাংশ যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। তবে ভাড়া না বাড়িয়ে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর সুপারিশ বিশেষজ্ঞদের। এ বিষয়ে রেলওয়ে সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধি বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয় জমা দেয়া হবে।
জানা গেছে, এবার প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ৩৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪৯ পয়সা করা হবে। রুটভেদে শোভন চেয়ারে ভাড়া বাড়বে ২২ থেকে ৪৭ শতাংশ। এছাড়া এসি চেয়ারে রুটভেদে ভাড়া বাড়বে ৩৯ থেকে ৬৪ শতাংশ। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের ভাড়া, কনটেইনার ও পার্সেল পরিবহন মাসুল বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। ইতোমধ্যে ভাড়া বৃদ্ধি-সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো হবে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানায়। কিন্তু এখনও ট্রেনে বিলম্ব যাতায়াত, টিকিট পেতে হয়রানি, কালোবাজারি বেশি দামে টিকিট বিক্রয়, বিশ্রামাগারের অভাব, বাথরুম নোংরা, হকার ও ভিক্ষুকদের উৎপাতসহ নানা সমস্যার শিকার হয় যাত্রীরা। তাই ভাড়া না বাড়িয়ে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর সুপারিশ বিশেষজ্ঞদের।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক মেটেরিয়াল, অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংস্কার প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি (প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারস) প্রণীত ট্যারিফ স্ট্রাকচারের মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালন ব্যয় যত বাড়বে আনুপাতিক হারে ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখার পরামর্শ দেয়। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলওয়ের জ্বালানি ব্যয় ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ, বেতন-ভাতা ৩৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ১৫৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)’র প্রতি বছর ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। গত জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের জন্য এডিবির রিভিউ বৈঠকে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এই প্রেক্ষিতে রেলপথ মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি রেলওয়ে আয়-ব্যয় পর্যালোচনা করে সাত দিনের মধ্যে একটি উপস্থাপনা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়। ওই কমিটি তিন বছর আগের ভাড়া বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম, অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের খরচসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিবেচনায় এনে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব তৈরি করেছে। এতে ভিত্তি ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩৯ পয়সা থেকে ৪৯ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়। ভিত্তি ভাড়া ও নীতিমালা অনুযায়ী, রেলওয়ের নতুন ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া যাত্রী পরিবহনে নূন্যতম ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের ভাড়া, কনটেইনার ও পার্সেল পরিবহন মাসুল বাড়ানোর প্রস্তাবও তৈরি করেছে রেলওয়ে।
বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪৫ টাকা। নতুন ভাড়া ৪৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। একই রুটে এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। এদিকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪০ থেকে বাড়িয়ে ৪৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই রুটে এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা-সিলেট রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩২০ থেকে বাড়িয়ে ৪৩৫ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৬১০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার এক টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-দিনাজপুর রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৪৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৩০ ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৯৯০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ঢাকা-পঞ্চগড় রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬৭৫ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৫৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫৫৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট ও ঢাকা-খুলনা রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫০৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৩০ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৯৬৬ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ২২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩৩০ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৪২৬ থেকে বাড়িয়ে ৬৩৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ট্রেনে সুলভ শ্রেণীর ন্যূনতম ভাড়া ৩৫ টাকা, যা বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া শোভন শ্রেণীর নূন্যতম ভাড়া ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫৫, শোভন চেয়ারে ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫, প্রথম শ্রেণী সিট (নন-এসি) ৯০ থেকে ১১০, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১২০, এসি সিট ও প্রথম শ্রেণী বার্থ (নন-এসি) ১১০ থেকে বাড়িয়ে ১৩০ এবং এসি বার্থ ১৩০ থেকে বাড়িয়ে ১৬৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও দ্বিতীয় শ্রেণীর নূন্যতম ভাড়া ৫ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর মেইলে ১৫ টাকা ও কমিউটার ট্রেনের নূন্যতম ভাড়া ২০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা করা হয়েছে।
এদিকে রেল ভবনে এক অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, রেলওয়ে মন্ত্রণালয় রেলের ভাড়া বাড়ানোর কোন চিন্তা করেনি। কারণ শুধু যাত্রী ভাড়া দিয়ে রেলওয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বহন করা যায় না। তারপরও আমি নিজস্ব আগ্রহের কারণে একটি কমিটি গঠন করেছি। তারা রেলের উন্নয়ন, অবকাঠামো, সেবা বিষয়ে একটি জরিপ চালাবে। এরপর তাদের প্রতিবেদন আমাকে দেবে। আমি সেই প্রতিবেদন নিয়ে রেলের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে সবার সঙ্গে কথা বলব। গঠিত কিমিটি রেলের সেবা, ভাড়া ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ভাড়ার তুলনামূলক চিত্রও তুলে ধরবে।
রেলওয়ে ভাড়া না বাড়িয়ে রেলকে ঢেলে সাজানোর সুপারিশ করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, রেলওয়ে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি, দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ হলে রেল একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এখনও বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ে সম্পদের অপচয় হচ্ছে, অপব্যয় হচ্ছে। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। শুধু ভাড়া বাড়িয়ে ১০০ কোটি আয় হলেও রেলওয়ের লোকসান কমানো যাবে না। এ জন্য সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী রেলওয়ে ঢেলে সাজাতে হবে বলে জানান তিনি।