ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আত্মহত্যা ঠেকাবে দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৬:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৯
  • / ২০৪ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক
চীনের ২১ বছর বয়সি এক শিক্ষার্থী লি ফ্যান দেশটির টুইটার-সদৃশ প্ল্যাটফরম উইবোতে বিশদ মেসেজ পোস্ট করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। সেটা ছিল ভ্যালেন্টাইন্স ডের পরদিন। সে লিখেছিল ‘আমি আর পারছি না, আমি সব ছেড়ে দিচ্ছি।’ এর কিছুক্ষণ পরেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সে ঋণগ্রস্ত ছিল। এছাড়া মায়ের সঙ্গে বিবাদ চলছিল এবং চরম বিষণ্নতায় ভুগছিল সে। তার বিশ্ববিদ্যালয় নানজিং থেকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আমস্টারডামের একটি কম্পিউটারে চলমান এক প্রোগ্রামে শনাক্ত করা হয় চীনের এই শিক্ষার্থীর পোস্টটি। ঐ কম্পিউটার প্রোগ্রামটি মেসেজটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে চীনের বিভিন্ন এলাকায় থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের নজরে আনে যাতে তারা দরকারি ব্যবস্থা নিতে পারে। যখন তারা এত দূর থেকে লিকে জাগিয়ে তুলেতে সক্ষম হলো না তখন স্থানীয় পুলিশের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানায় এবং এরপর তারা এসে তাকে বাঁচায়। শুনতে নিশ্চয়ই এটা খুব বিস্ময়কর বা অসাধারণ শোনাচ্ছে কিন্তু ট্রি হোল রেসকিউ টিমের সদস্যদের আরো অনেক সাফল্যের কাহিনীর মধ্যে এটা একটি মাত্র। এই উদ্যোগের প্রধান ব্যক্তিটি হচ্ছেন হুয়াং ঝিশেং, যিনি ফ্রি ইউনিভার্সিটি আমস্টারডামের একজন শীর্ষ আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) গবেষক। গত ১৮ মাসে চীন জুড়ে ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক তার এই প্রোগ্রাম ব্যবহার করেছে, যারা বলছে প্রায় ৭০০-র কাছাকাছি মানুষকে তারা বাঁচিয়েছে। বিবিসি নিউজকে মিস্টার হুয়াং বলছিলেন, ‘এক সেকেন্ড যদি আপনি ইতস্তত করেন, অনেক প্রাণ শেষ হয়ে যাবে। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০ জনকে আমরা প্রাণে বাঁচাতে সক্ষম।’ প্রথম রেসকিউ অপারেশন চালানো হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল। চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শ্যানডং প্রদেশের ২২ বছর বয়সি আরেক তরুণী তাও ইয়ো, উইবোতে লিখেছিল যে দুই দিন পরে নিজেকে শেষ করে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল সে। চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সের স্বেচ্ছাসেবক পেং লিং নামে এবং আরো কয়েক জন বিষয়টিতে বিচলিত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। মিজ পেং বিবিসিকে বলেন, ‘তারা আগের এক পোস্ট থেকে ঐ শিক্ষার্থীর একজন বন্ধুর ফোন নম্বর পান এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। আমি ঘুমানোর আগে তাকে মেসেজ করার চেষ্টা করি এবং বলি যে আমি তাকে তুলতে পারব। তার উইচ্যাট মেসেজ গ্রুপের একজন বন্ধু হিসেবে সে আমাকে যুক্ত করে এবং ধীরে ধীরে শান্ত হয়। তখন থেকে তার দিকে আমি নজর রাখতাম যেমন সে খাচ্ছে কি না। আমরা সপ্তাহে একবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাকে একগুচ্ছ করে ফুল কিনে দিতাম।’ এই সাফল্যের পরে এই উদ্ধার দলের সদস্যরা একজন পুরুষকে উদ্ধার করে যিনি একটি ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়তে চেয়েছিল এবং একজন নারীকে বাঁচায় যে কি না যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার পর নিজেকে হত্যা করতে চেয়েছিল। বেইজিং এর একজন মনোবিজ্ঞানী লি হং যিনি এই প্রোগ্রামের সঙ্গে এক বছর ধরে জড়িত আছেন। তিনি বলেন, ‘উদ্ধারের জন্য দরকার ভাগ্য এবং অভিজ্ঞতা দুটোই। সব হোটেলের অভ্যর্থনা-কর্মীরা সবাই বলতো তারা ঐ নারীর সম্পর্কে কিছু জানে না। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন এক মুহূর্তের জন্য ইতস্তত করছিলেন । তখন আমরা ধরে নিলাম যে এটা নিশ্চয়ই সেই হোটেলÍএবং তাই ছিল।’ তিনি স্মরণ করেন কীভাবে তিনি এবং তার সহকর্মীরা চেং-ডুর আটটি হোটেলে পরিদর্শন করেন, আত্মহননে চেষ্টাকারী একজন নারীকে খুঁজতে একটি রুমও বুকিং দেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আত্মহত্যা ঠেকাবে দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি

আপলোড টাইম : ০৯:২৬:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৯

প্রযুক্তি ডেস্ক
চীনের ২১ বছর বয়সি এক শিক্ষার্থী লি ফ্যান দেশটির টুইটার-সদৃশ প্ল্যাটফরম উইবোতে বিশদ মেসেজ পোস্ট করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। সেটা ছিল ভ্যালেন্টাইন্স ডের পরদিন। সে লিখেছিল ‘আমি আর পারছি না, আমি সব ছেড়ে দিচ্ছি।’ এর কিছুক্ষণ পরেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সে ঋণগ্রস্ত ছিল। এছাড়া মায়ের সঙ্গে বিবাদ চলছিল এবং চরম বিষণ্নতায় ভুগছিল সে। তার বিশ্ববিদ্যালয় নানজিং থেকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আমস্টারডামের একটি কম্পিউটারে চলমান এক প্রোগ্রামে শনাক্ত করা হয় চীনের এই শিক্ষার্থীর পোস্টটি। ঐ কম্পিউটার প্রোগ্রামটি মেসেজটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে চীনের বিভিন্ন এলাকায় থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের নজরে আনে যাতে তারা দরকারি ব্যবস্থা নিতে পারে। যখন তারা এত দূর থেকে লিকে জাগিয়ে তুলেতে সক্ষম হলো না তখন স্থানীয় পুলিশের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানায় এবং এরপর তারা এসে তাকে বাঁচায়। শুনতে নিশ্চয়ই এটা খুব বিস্ময়কর বা অসাধারণ শোনাচ্ছে কিন্তু ট্রি হোল রেসকিউ টিমের সদস্যদের আরো অনেক সাফল্যের কাহিনীর মধ্যে এটা একটি মাত্র। এই উদ্যোগের প্রধান ব্যক্তিটি হচ্ছেন হুয়াং ঝিশেং, যিনি ফ্রি ইউনিভার্সিটি আমস্টারডামের একজন শীর্ষ আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) গবেষক। গত ১৮ মাসে চীন জুড়ে ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক তার এই প্রোগ্রাম ব্যবহার করেছে, যারা বলছে প্রায় ৭০০-র কাছাকাছি মানুষকে তারা বাঁচিয়েছে। বিবিসি নিউজকে মিস্টার হুয়াং বলছিলেন, ‘এক সেকেন্ড যদি আপনি ইতস্তত করেন, অনেক প্রাণ শেষ হয়ে যাবে। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০ জনকে আমরা প্রাণে বাঁচাতে সক্ষম।’ প্রথম রেসকিউ অপারেশন চালানো হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল। চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শ্যানডং প্রদেশের ২২ বছর বয়সি আরেক তরুণী তাও ইয়ো, উইবোতে লিখেছিল যে দুই দিন পরে নিজেকে শেষ করে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল সে। চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সের স্বেচ্ছাসেবক পেং লিং নামে এবং আরো কয়েক জন বিষয়টিতে বিচলিত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। মিজ পেং বিবিসিকে বলেন, ‘তারা আগের এক পোস্ট থেকে ঐ শিক্ষার্থীর একজন বন্ধুর ফোন নম্বর পান এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। আমি ঘুমানোর আগে তাকে মেসেজ করার চেষ্টা করি এবং বলি যে আমি তাকে তুলতে পারব। তার উইচ্যাট মেসেজ গ্রুপের একজন বন্ধু হিসেবে সে আমাকে যুক্ত করে এবং ধীরে ধীরে শান্ত হয়। তখন থেকে তার দিকে আমি নজর রাখতাম যেমন সে খাচ্ছে কি না। আমরা সপ্তাহে একবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাকে একগুচ্ছ করে ফুল কিনে দিতাম।’ এই সাফল্যের পরে এই উদ্ধার দলের সদস্যরা একজন পুরুষকে উদ্ধার করে যিনি একটি ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়তে চেয়েছিল এবং একজন নারীকে বাঁচায় যে কি না যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার পর নিজেকে হত্যা করতে চেয়েছিল। বেইজিং এর একজন মনোবিজ্ঞানী লি হং যিনি এই প্রোগ্রামের সঙ্গে এক বছর ধরে জড়িত আছেন। তিনি বলেন, ‘উদ্ধারের জন্য দরকার ভাগ্য এবং অভিজ্ঞতা দুটোই। সব হোটেলের অভ্যর্থনা-কর্মীরা সবাই বলতো তারা ঐ নারীর সম্পর্কে কিছু জানে না। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন এক মুহূর্তের জন্য ইতস্তত করছিলেন । তখন আমরা ধরে নিলাম যে এটা নিশ্চয়ই সেই হোটেলÍএবং তাই ছিল।’ তিনি স্মরণ করেন কীভাবে তিনি এবং তার সহকর্মীরা চেং-ডুর আটটি হোটেলে পরিদর্শন করেন, আত্মহননে চেষ্টাকারী একজন নারীকে খুঁজতে একটি রুমও বুকিং দেন।