ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আজ ভোট

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৫৫:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮
  • / ৪৪৮ বার পড়া হয়েছে

আজ বহুল প্রত্যাশিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহন হচ্ছে। এবারের নির্বাচনটি বিগত সময়ের নির্বাচনের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। নব্বই সালে স্বৈরশাসনের অবসানের পর দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরার পর প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সব দলের অংশগ্রহনে নির্বাচন হচ্ছে। এ দিক থেকে বিবেচনা করলে দেশের মানুষ এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি দলীয় সরকারের অধীনে হলেও সে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক না হওয়া এবং ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার কারণে দেশে-বিদেশে বিতর্কিত হয়। এই চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এবারও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। তবে নির্বাচনটি কতটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়, দেশে-বিদেশে শংকা রয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী দলের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অধিক মাত্রায় হামলা এবং পুলিশ কর্তৃক মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে। বলা যায়, পুরো নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময়ে ক্ষমতাসীন দলের একতরফা ও একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। রাজধানীসহ সারাদেশের অনেক এলাকায় বিরোধী দলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় নামতেই পারেনি। এমনকি আজ অনেক ভোটকেন্দ্রে বিরোধী দল পোলিং এজেন্ট দিতে পারবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা, গ্রেফতারের বিষয়গুলো নিয়ে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে অনেকবার অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৫৭৩। এর মধ্যে নারী পুরুষ প্রায় সমান সমান এবং তরুণ ভোটার ১ কোটি ২৩ লাখ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব ভোটারের প্রায় প্রত্যেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আগ্রহী। গণতান্ত্রিক ধারাকে আরও সুসংহত ও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকে তার ভোটকে একেকটি ভিত্তি মনে করছে। ফলে তাদের আগ্রহ এবং উৎসাহ অনেক বেশি। তবে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা ছাড়াও এমন একটি ধারণা বদ্ধমূল, যেহেতু এবারের ভোট ক্ষমতাসীন দলের অধীনে হচ্ছে, তাই ভোট অনেকটা একতরফা হবে। অনেকের ধারণা, ক্ষমতাসীন দল প্রভাব বিস্তার করে তাদের বিজয় নিশ্চিত করবে। তাদের এ ধারণা উড়িয়ে দেয়া যায় না। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময় বিরোধী দলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর হামলা এবং পুলিশের অনিরপেক্ষ আচরণ সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধারণার জন্ম দিয়েছে। যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনটি হচ্ছে, তাই এর গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার অন্যতম দায়িত্ব ক্ষমতাসীন দলের ওপরই বর্তায়। প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলকেও বদনামের ভাগিদার হতে হবে। নির্বাচনটি যাতে বিতর্কিত এবং অগ্রহণযোগ্য না হয়, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দলকে আন্তরিক হওয়া বাঞ্চনীয়। তাদের প্রমাণ করতে হবে, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ নির্বাচন হয়। যদি তা করা যায়, তবে দেশের গণতন্ত্র যেমন দৃঢ় ভিত্তি লাভ করবে তেমনি দেশ বিশ্বব্যাপী উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে। ভোটের বাক্স যাতে ব্যালটে পূর্ণ হয়, এ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই যাতে তা আগেভাগে পূর্ণ বা দখল হয়ে না যায়, এদিকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা প্রদানকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব যথাযথ ও নিরপেক্ষভাবে পালন করে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে বলে দেশবাসী প্রত্যাশা করে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজ ভোট

আপলোড টাইম : ০৩:৫৫:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

আজ বহুল প্রত্যাশিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহন হচ্ছে। এবারের নির্বাচনটি বিগত সময়ের নির্বাচনের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। নব্বই সালে স্বৈরশাসনের অবসানের পর দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরার পর প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সব দলের অংশগ্রহনে নির্বাচন হচ্ছে। এ দিক থেকে বিবেচনা করলে দেশের মানুষ এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি দলীয় সরকারের অধীনে হলেও সে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক না হওয়া এবং ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার কারণে দেশে-বিদেশে বিতর্কিত হয়। এই চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এবারও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। তবে নির্বাচনটি কতটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়, দেশে-বিদেশে শংকা রয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী দলের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অধিক মাত্রায় হামলা এবং পুলিশ কর্তৃক মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে। বলা যায়, পুরো নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময়ে ক্ষমতাসীন দলের একতরফা ও একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। রাজধানীসহ সারাদেশের অনেক এলাকায় বিরোধী দলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় নামতেই পারেনি। এমনকি আজ অনেক ভোটকেন্দ্রে বিরোধী দল পোলিং এজেন্ট দিতে পারবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা, গ্রেফতারের বিষয়গুলো নিয়ে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে অনেকবার অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৫৭৩। এর মধ্যে নারী পুরুষ প্রায় সমান সমান এবং তরুণ ভোটার ১ কোটি ২৩ লাখ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব ভোটারের প্রায় প্রত্যেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আগ্রহী। গণতান্ত্রিক ধারাকে আরও সুসংহত ও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকে তার ভোটকে একেকটি ভিত্তি মনে করছে। ফলে তাদের আগ্রহ এবং উৎসাহ অনেক বেশি। তবে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা ছাড়াও এমন একটি ধারণা বদ্ধমূল, যেহেতু এবারের ভোট ক্ষমতাসীন দলের অধীনে হচ্ছে, তাই ভোট অনেকটা একতরফা হবে। অনেকের ধারণা, ক্ষমতাসীন দল প্রভাব বিস্তার করে তাদের বিজয় নিশ্চিত করবে। তাদের এ ধারণা উড়িয়ে দেয়া যায় না। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময় বিরোধী দলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর হামলা এবং পুলিশের অনিরপেক্ষ আচরণ সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধারণার জন্ম দিয়েছে। যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনটি হচ্ছে, তাই এর গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার অন্যতম দায়িত্ব ক্ষমতাসীন দলের ওপরই বর্তায়। প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলকেও বদনামের ভাগিদার হতে হবে। নির্বাচনটি যাতে বিতর্কিত এবং অগ্রহণযোগ্য না হয়, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দলকে আন্তরিক হওয়া বাঞ্চনীয়। তাদের প্রমাণ করতে হবে, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ নির্বাচন হয়। যদি তা করা যায়, তবে দেশের গণতন্ত্র যেমন দৃঢ় ভিত্তি লাভ করবে তেমনি দেশ বিশ্বব্যাপী উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে। ভোটের বাক্স যাতে ব্যালটে পূর্ণ হয়, এ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই যাতে তা আগেভাগে পূর্ণ বা দখল হয়ে না যায়, এদিকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা প্রদানকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব যথাযথ ও নিরপেক্ষভাবে পালন করে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে বলে দেশবাসী প্রত্যাশা করে।