ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আজ ভোটের মাঠে অগ্নিপরীক্ষা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৩:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ১৭৮ বার পড়া হয়েছে

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
হামলা-সংঘর্ষসহ বিচ্ছিন্ন কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। এদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে অনুশীলনমূলক ভোটের মহড়া। গতকাল শুক্রবার দিনভর ভোট কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ ও বুথ তৈরিসহ ভোটের আগের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে টানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন ভোটাররা। আজ মধ্যরাতেই ফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হবেন দুই সিটির নগরপিতা এবং কাউন্সিলররা।
এদিকে ভোট নিয়ে নানা উদ্বেগ-আতঙ্ক থাকলেও এ নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা। সিটি নির্বাচন হলেও এ ভোটযুদ্ধকে অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে নিয়েছেন তারা। কেননা এ নির্বাচনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইমেজ নানাভাবে জড়িয়ে রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটির প্রতিটি কেন্দ্রে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে ইভিএম বিতর্কের অবসান ঘটাতে চায় নির্বাচন কমিশন। তাই ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জে শনিবার দিনভর থাকবে টানটান উত্তেজনা। ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকবেন বড় দুই দলের মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সহযোগীরা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়া ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্ভব হলে সন্ধ্যার কিছু আগে বা পরেই কেন্দ্রভিত্তিক ফল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এতে ব্যালটে ভোটগ্রহণ-পরবর্তী তা গণনার কোনো ঝামেলা নেই। তাই প্রাপ্ত ভোটসহ বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণায় খুব বেশি বিলম্ব হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রচার-প্রচারণা চালানোর শেষ সময় পর্যন্ত ভোটের মাঠে বড় ধরনের কোনো সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও এ পরিস্থিতি এতটা স্বাভাবিক থাকবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। তাদের আশঙ্কা, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা তাদের আসল চেহারা এতদিন ঢেকে রাখলেও ভোটের দিন তারা তাদের আসল স্বরূপ উন্মোচিত হবে। সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা, তুচ্ছ অজুহাতে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও এবং ভোটকেন্দ্র দখল করে ইভিএমে ভোট জালিয়াতিসহ নানা ধরনের দুর্বৃত্তায়নে মেতে উঠবে তারা। এসময় বাধা দিতে গেলে উল্টো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ এনে হামলা-মামলা, এমনকি গ্রেপ্তারও করতে পারে এবং এ সময় আতঙ্কিত হয়ে বিএনপি দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরা ভোট কেন্দ্র ছেড়ে পালাবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এদিকে বিএনপির বিরুদ্ধে কেন্দ্র পাহারার নামে ভোটের মাঠে সশস্ত্র গুন্ডা বাহিনী মোতায়েনসহ নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললেও মূলত এ ইস্যুতে অনেকটাই নির্ভার আওয়ামী দলীয় দুই মেয়রপ্রার্থী ও দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এমনকি ক্ষমতাসীন এ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদেরও ভোট ডাকাতি কিংবা প্রতিপক্ষের হামলা-মামলা নিয়ে তেমন কোনো উদ্বেগ নেই। তাদের ধারণা, বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও দল থেকে যেমন তাদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য কোনো চাপ দেওয়া হয়নি, তেমনি ভোটের মাঠে তাদের কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না। বরং তাদের দলীয় ‘ব্যাকআপ’ হিসেবে গ্রহণ করা হবে বলে মনে করেন তারা।
অন্যদিকে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার মাঠে সমান সুযোগ ছিল না- এমন অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোট কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। তিনি বলেন, মেয়র কাউন্সিলর প্রার্থীরা দৃশ্যত প্রচার-প্রচারণার মাঠ চষে বেড়ালেও দলের নেতাকর্মীরা মূলত অবরুদ্ধ। প্রচারের শুরু থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের নানাভাবে হয়রানি করেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে। শেষ সময়ে এসে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ধানের শীষের এজেন্টদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বাড়িছাড়া করার চেষ্টা চালিয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রার্থীদের মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। অথচ এসব নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। সরকার যেভাবে চাইছে নির্বাচন কমিশন সেভাবে চলছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি না করে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন বিএনপি দলীয় এই প্রবীণ নেতা।
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শুধু বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীই নন, সাধারণ ভোটাদের মধ্যেও উদ্বেগ-আতঙ্ক বিরাজ করার আভাস পাওয়া গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়েই নয়, ভোটাররা নিরাপদে ভোট কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে পারবে কি না তা নিয়েও শঙ্কায় আছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্কুল শিক্ষক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একপক্ষ আগের রাতে সবার অগোচরে নিঃশব্দে ভোট ডাকাতি করেছে। তাদের সে দুর্বৃত্তায়ন কেউ দেখেনি, তাই বাধা দিতেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এ কারণে ভোটের মাঠে তখন বড় ধরনের কোনো হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। তবে ইভিএমে সে ধরনের সুযোগ না থাকায় এবার কী ঘটবে তা স্বয়ং উপরঅলাই জানেন।’ এ পরিস্থিতিতে তিনি কিংবা তার পরিবারের কেউ ভোট দিতে যেতে আগ্রহী নন বলে সাফ জানিয়ে দেন।
তবে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির একাধিক নেতা বলেন, নানা কারণে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক থাকলেও এবারের ভোট সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হবে। এ ব্যাপারে যুক্তি দেখিয়ে তারা বলেন, নির্বাচনী বিতর্ক এড়াতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বস্তিদায়ক সমাধান খুঁজছে। তাই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে হার-জিতের ‘রেস’ থেকে বেরিয়ে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ভোট ঢাকাবাসী উপহার পাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।
তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলেন, ইভিএম নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া প্রচারণা শুরুর পর ক্ষমতাসীনরা বিএনপি নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেককে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এসব কিছুই প্রমাণ করে, বিগত সময়ের মতো এবারের ভোটও সুষ্ঠু হবে না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন লোক দেখানো। এ নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। ভোটের দিন ভোটাররা নিরাপদে কেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে নগরবাসী যদি ভোট দিতে পারেন, এ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশাবাদী তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজ ভোটের মাঠে অগ্নিপরীক্ষা

আপলোড টাইম : ১১:১৩:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২০

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
হামলা-সংঘর্ষসহ বিচ্ছিন্ন কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। এদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে অনুশীলনমূলক ভোটের মহড়া। গতকাল শুক্রবার দিনভর ভোট কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ ও বুথ তৈরিসহ ভোটের আগের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে টানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন ভোটাররা। আজ মধ্যরাতেই ফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হবেন দুই সিটির নগরপিতা এবং কাউন্সিলররা।
এদিকে ভোট নিয়ে নানা উদ্বেগ-আতঙ্ক থাকলেও এ নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা। সিটি নির্বাচন হলেও এ ভোটযুদ্ধকে অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে নিয়েছেন তারা। কেননা এ নির্বাচনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইমেজ নানাভাবে জড়িয়ে রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটির প্রতিটি কেন্দ্রে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে ইভিএম বিতর্কের অবসান ঘটাতে চায় নির্বাচন কমিশন। তাই ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জে শনিবার দিনভর থাকবে টানটান উত্তেজনা। ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকবেন বড় দুই দলের মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সহযোগীরা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়া ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্ভব হলে সন্ধ্যার কিছু আগে বা পরেই কেন্দ্রভিত্তিক ফল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এতে ব্যালটে ভোটগ্রহণ-পরবর্তী তা গণনার কোনো ঝামেলা নেই। তাই প্রাপ্ত ভোটসহ বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণায় খুব বেশি বিলম্ব হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রচার-প্রচারণা চালানোর শেষ সময় পর্যন্ত ভোটের মাঠে বড় ধরনের কোনো সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও এ পরিস্থিতি এতটা স্বাভাবিক থাকবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। তাদের আশঙ্কা, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা তাদের আসল চেহারা এতদিন ঢেকে রাখলেও ভোটের দিন তারা তাদের আসল স্বরূপ উন্মোচিত হবে। সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা, তুচ্ছ অজুহাতে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও এবং ভোটকেন্দ্র দখল করে ইভিএমে ভোট জালিয়াতিসহ নানা ধরনের দুর্বৃত্তায়নে মেতে উঠবে তারা। এসময় বাধা দিতে গেলে উল্টো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ এনে হামলা-মামলা, এমনকি গ্রেপ্তারও করতে পারে এবং এ সময় আতঙ্কিত হয়ে বিএনপি দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরা ভোট কেন্দ্র ছেড়ে পালাবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এদিকে বিএনপির বিরুদ্ধে কেন্দ্র পাহারার নামে ভোটের মাঠে সশস্ত্র গুন্ডা বাহিনী মোতায়েনসহ নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললেও মূলত এ ইস্যুতে অনেকটাই নির্ভার আওয়ামী দলীয় দুই মেয়রপ্রার্থী ও দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এমনকি ক্ষমতাসীন এ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদেরও ভোট ডাকাতি কিংবা প্রতিপক্ষের হামলা-মামলা নিয়ে তেমন কোনো উদ্বেগ নেই। তাদের ধারণা, বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও দল থেকে যেমন তাদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য কোনো চাপ দেওয়া হয়নি, তেমনি ভোটের মাঠে তাদের কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না। বরং তাদের দলীয় ‘ব্যাকআপ’ হিসেবে গ্রহণ করা হবে বলে মনে করেন তারা।
অন্যদিকে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার মাঠে সমান সুযোগ ছিল না- এমন অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোট কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। তিনি বলেন, মেয়র কাউন্সিলর প্রার্থীরা দৃশ্যত প্রচার-প্রচারণার মাঠ চষে বেড়ালেও দলের নেতাকর্মীরা মূলত অবরুদ্ধ। প্রচারের শুরু থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের নানাভাবে হয়রানি করেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে। শেষ সময়ে এসে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ধানের শীষের এজেন্টদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বাড়িছাড়া করার চেষ্টা চালিয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রার্থীদের মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। অথচ এসব নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। সরকার যেভাবে চাইছে নির্বাচন কমিশন সেভাবে চলছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি না করে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন বিএনপি দলীয় এই প্রবীণ নেতা।
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শুধু বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীই নন, সাধারণ ভোটাদের মধ্যেও উদ্বেগ-আতঙ্ক বিরাজ করার আভাস পাওয়া গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়েই নয়, ভোটাররা নিরাপদে ভোট কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে পারবে কি না তা নিয়েও শঙ্কায় আছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্কুল শিক্ষক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একপক্ষ আগের রাতে সবার অগোচরে নিঃশব্দে ভোট ডাকাতি করেছে। তাদের সে দুর্বৃত্তায়ন কেউ দেখেনি, তাই বাধা দিতেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এ কারণে ভোটের মাঠে তখন বড় ধরনের কোনো হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। তবে ইভিএমে সে ধরনের সুযোগ না থাকায় এবার কী ঘটবে তা স্বয়ং উপরঅলাই জানেন।’ এ পরিস্থিতিতে তিনি কিংবা তার পরিবারের কেউ ভোট দিতে যেতে আগ্রহী নন বলে সাফ জানিয়ে দেন।
তবে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির একাধিক নেতা বলেন, নানা কারণে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক থাকলেও এবারের ভোট সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হবে। এ ব্যাপারে যুক্তি দেখিয়ে তারা বলেন, নির্বাচনী বিতর্ক এড়াতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বস্তিদায়ক সমাধান খুঁজছে। তাই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে হার-জিতের ‘রেস’ থেকে বেরিয়ে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ভোট ঢাকাবাসী উপহার পাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।
তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলেন, ইভিএম নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া প্রচারণা শুরুর পর ক্ষমতাসীনরা বিএনপি নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেককে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এসব কিছুই প্রমাণ করে, বিগত সময়ের মতো এবারের ভোটও সুষ্ঠু হবে না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন লোক দেখানো। এ নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। ভোটের দিন ভোটাররা নিরাপদে কেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে নগরবাসী যদি ভোট দিতে পারেন, এ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশাবাদী তিনি।