ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আখেরি মোনাজাতে শেষ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব লাখো কন্ঠে আমিন, আমিন ধ্বনি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫২:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৪১১ বার পড়া হয়েছে

t81

সমীকরণ ডেস্ক: আবেগ-আপ্লুত লাখো মুসল্লির ‘আমিন’ ‘আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণে ব্যাকুল হয়ে ইজতেমা ময়দানে ছুটে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজ নিজ গুনাহ মাফ ও আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি, সংহতি, অগ্রগতি এবং দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ কামনা করেন। ‘হে আল্লাহ, আমাদের দোয়া কবুল করে নাও। হে পরওয়ারদিগার, আমাদের ঈমান রক্ষা করো, আমাদের ভালো কাজগুলো মঞ্জুর করে নাও। হে রাহমানির রাহিম, সব বিপদ দূর করে দাও, সারা দুনিয়ার মানুষের ওপর রহমত বর্ষণ করো।’ বিনম্র সুরে ইহকাল ও পরকালের মালিক মহান আল্লাহ পাকের কাছে দুই হাত তুলে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মারকাজের শূরা সদস্য ভারতের মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ এই মোনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় ‘আল্লাহুম্মা আমিন’, ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা ইজতেমা ময়দান। আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো মাইকে সেই ধ্বনি তুরাগ নদের চারপাশের আরও বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ১১টায় শুরু হওয়া আখেরি মোনাজাত সাড়ে ১১টার কিছু পরে শেষ হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসভবন থেকে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। এদিকে আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে সোমবার ভোর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে এর পরও ভোরের কুয়াশা ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে মোনাজাতে শরিক হতে দলে দলে হাজারো মানুষ পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দান পৌঁছান। ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বহু নারীও এসেছিলেন মোনাজাতে অংশ নিতে। তবে ময়দানে ঢোকার অনুমতি না থাকায় তারা আশপাশের বিভিন্ন কারখানা ও আবাসিক ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়ে এতে শরিক হন। এদিকে ইজতেমার মাঠে পৌঁছাতে না পেরে হাজার হাজার মানুষকে কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা যায়। অনেকে বিমানবন্দর গোল চত্বর কিংবা উত্তরা থেকেও আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ আশপাশের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা, বিপনিবিতান ও অফিস ছিল বন্ধ এবং মোনাজাত শেষে ইজতেমাস্থল থেকে বাড়ি ফেরার সুবিধবার জন্য বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা থাকলেও সবার একসঙ্গে বাড়ি ফেরার তাড়াহুড়ায় টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী- কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে ব?্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
মোনাজাতে যা বলা হয়: মাওলানা সা’দ মোনাজাতে বলেন, ‘হে আল্লাহ আমাদের অন্তর থেকে কুফরি, মোনাফেকি দূর করে দাও। হে আল্লাহ, তোমার নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দাও। হে আল্লাহ, আমাদের সব নেক চাহিদা পূরণ করে দাও। হে রাহমানুর রাহিম আমাদের ওপর রহম করো। আমাদের রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি দাও। আমাদের ওপর দয়া করো, যেভাবে তুমি তোমার নেক বান্দাদের ওপর রহম করেছ। হে আল্লাহ, আমাদের পরিপূর্ণ ইমান দাও। তোমার আজাব থেকে পরিত্রাণ দিয়ে জান্নাত নসিব করো। জাহান্নামের আগুন আমাদের জন্য হারাম করে দাও।’ কায়মনে আকুতি জানিয়ে মোনাজাতে আরও বলা হয়, ‘হে আল্লাহ তুমি তো ক্ষমাশীল, তোমার কাছেই তো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বিনের ওপর আমাদের চলা সহজ করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টিমাফিক চলতে পারি সে তওফিক দাও। দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। নবীওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব করো। ইজতেমাকে কবুল করো। ইজতেমার আয়োজনে যারা শ্রম দিয়েছেন তাদের কবুল করো। যারা তোমার কাছে হাত তুলেছেন সবাইকে তুমি কবুল করো। ইজতেমার বক্তা ও শ্রোতা সবাইকে তুমি কবুল করো। দাওয়াতে তাবলিগকে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করো।’
বিদেশি মেহমান ৮ হাজার : এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ কমপক্ষে ৯৫টি দেশের তাবলিগ জামাতের প্রায় আট হাজার বিদেশি মেহমান এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক বিদেশি মেহমান আগমন করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আখেরি মোনাজাতে শেষ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব লাখো কন্ঠে আমিন, আমিন ধ্বনি

আপলোড টাইম : ১১:৫২:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৭

t81

সমীকরণ ডেস্ক: আবেগ-আপ্লুত লাখো মুসল্লির ‘আমিন’ ‘আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণে ব্যাকুল হয়ে ইজতেমা ময়দানে ছুটে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজ নিজ গুনাহ মাফ ও আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি, সংহতি, অগ্রগতি এবং দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ কামনা করেন। ‘হে আল্লাহ, আমাদের দোয়া কবুল করে নাও। হে পরওয়ারদিগার, আমাদের ঈমান রক্ষা করো, আমাদের ভালো কাজগুলো মঞ্জুর করে নাও। হে রাহমানির রাহিম, সব বিপদ দূর করে দাও, সারা দুনিয়ার মানুষের ওপর রহমত বর্ষণ করো।’ বিনম্র সুরে ইহকাল ও পরকালের মালিক মহান আল্লাহ পাকের কাছে দুই হাত তুলে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মারকাজের শূরা সদস্য ভারতের মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ এই মোনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় ‘আল্লাহুম্মা আমিন’, ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা ইজতেমা ময়দান। আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো মাইকে সেই ধ্বনি তুরাগ নদের চারপাশের আরও বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ১১টায় শুরু হওয়া আখেরি মোনাজাত সাড়ে ১১টার কিছু পরে শেষ হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসভবন থেকে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। এদিকে আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে সোমবার ভোর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে এর পরও ভোরের কুয়াশা ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে মোনাজাতে শরিক হতে দলে দলে হাজারো মানুষ পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দান পৌঁছান। ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বহু নারীও এসেছিলেন মোনাজাতে অংশ নিতে। তবে ময়দানে ঢোকার অনুমতি না থাকায় তারা আশপাশের বিভিন্ন কারখানা ও আবাসিক ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়ে এতে শরিক হন। এদিকে ইজতেমার মাঠে পৌঁছাতে না পেরে হাজার হাজার মানুষকে কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা যায়। অনেকে বিমানবন্দর গোল চত্বর কিংবা উত্তরা থেকেও আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ আশপাশের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা, বিপনিবিতান ও অফিস ছিল বন্ধ এবং মোনাজাত শেষে ইজতেমাস্থল থেকে বাড়ি ফেরার সুবিধবার জন্য বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা থাকলেও সবার একসঙ্গে বাড়ি ফেরার তাড়াহুড়ায় টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী- কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে ব?্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
মোনাজাতে যা বলা হয়: মাওলানা সা’দ মোনাজাতে বলেন, ‘হে আল্লাহ আমাদের অন্তর থেকে কুফরি, মোনাফেকি দূর করে দাও। হে আল্লাহ, তোমার নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দাও। হে আল্লাহ, আমাদের সব নেক চাহিদা পূরণ করে দাও। হে রাহমানুর রাহিম আমাদের ওপর রহম করো। আমাদের রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি দাও। আমাদের ওপর দয়া করো, যেভাবে তুমি তোমার নেক বান্দাদের ওপর রহম করেছ। হে আল্লাহ, আমাদের পরিপূর্ণ ইমান দাও। তোমার আজাব থেকে পরিত্রাণ দিয়ে জান্নাত নসিব করো। জাহান্নামের আগুন আমাদের জন্য হারাম করে দাও।’ কায়মনে আকুতি জানিয়ে মোনাজাতে আরও বলা হয়, ‘হে আল্লাহ তুমি তো ক্ষমাশীল, তোমার কাছেই তো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বিনের ওপর আমাদের চলা সহজ করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টিমাফিক চলতে পারি সে তওফিক দাও। দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। নবীওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব করো। ইজতেমাকে কবুল করো। ইজতেমার আয়োজনে যারা শ্রম দিয়েছেন তাদের কবুল করো। যারা তোমার কাছে হাত তুলেছেন সবাইকে তুমি কবুল করো। ইজতেমার বক্তা ও শ্রোতা সবাইকে তুমি কবুল করো। দাওয়াতে তাবলিগকে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করো।’
বিদেশি মেহমান ৮ হাজার : এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ কমপক্ষে ৯৫টি দেশের তাবলিগ জামাতের প্রায় আট হাজার বিদেশি মেহমান এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক বিদেশি মেহমান আগমন করেন।