ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অস্থির শেয়ারবাজার : ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ বাজারে দরপতন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯
  • / ২৯৯ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
‘নিয়ন্ত্রণহীন’ শেয়ারবাজারে সূচকের পতন অব্যাহত রয়েছে। তিন মাস ধরে চলা দরপতনের ফলে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ফিরে গেছে সাড়ে ২৭ মাস আগের অবস্থানে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এত দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে টানা পতনের ঘটনা আর ঘটেনি। জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত রোববার বলেছেন, দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর গতকাল সোমবার দেশের দুই শেয়ারবাজারেই বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। তাতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৬৩ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ১ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৫ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ১৫৯ পয়েন্টের সর্বনি¤œ অবস্থানে ছিল। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি গতকাল এক দিনেই ১৮৩ পয়েন্ট কমে নেমে গেছে ১৬ হাজার পয়েন্টের নিচে। গত বছরের ৬ নভেম্বরের পর সর্বশেষ গতকালই এ সূচক ১৬ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।
এই প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারে আর প্লেসমেন্ট ব্যবস্থা থাকবে না বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সোমবার রাতে বাজার–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিএসইসির সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে কোনো কোম্পানিকে আর মূলধন বাড়াতে শেয়ার বিক্রির জন্য বিএসইসির অনুমোদন নিতে হবে না। এ ছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আসা কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারধারীদের শেয়ার বিক্রির ওপর তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা থাকবে। বাজারে লেনদেন শুরুর দিন থেকে এ নিষেধাজ্ঞা সময় গণনা শুরু হবে। সভা শেষে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান এসব সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান সাইফুর রহমান।
এদিকে, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে গত রোববার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খাইরুল হোসেন, গভর্নর ফজলে কবির। এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বিএসইসির পক্ষ থেকে এ বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করা হয়।
বিএসইসির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, এখন থেকে স্থির মূল্য পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে চাইলে ওই কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৫০ কোটি টাকা। আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ১০০ কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধনের কোনো কোম্পানি বাজারে আসতে পারবে না। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে ওই কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই, সেসব কোম্পানিকে আলাদা শ্রেণিভুক্ত করা হবে। আর যেসব পরিচালকের হাতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ২ শতাংশের শেয়ার রয়েছে, তাঁদের পরিচালক পদ থেকে অপসারণে নতুন করে আবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি এখন থেকে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করলে তার যুক্তিসংগত কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।
চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি:
বাজারের পতন ঠেকাতে বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খাইরুল হোসেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন আন্দোলনরত বিনিয়োগকারীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিনিয়োগকারীদের অনেকে একই দাবি তুলেছেন। তাঁদের মতে, বিএসইসির চেয়ারম্যান বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। টানা দরপতনের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে প্রতীকী গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত বিনিয়োগকারীরা। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল অনশন পালন করা হয়। দুপুরে লেনদেন শেষে স্থানীয় সাংসদ রাশেদ খান মেনন আন্দোলনকারীদের অনশন ভাঙান। এ সময় রাশেদ খান মেনন শেয়ারবাজার নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের রক্ষার আহ্বান জানান।
আস্থার সংকট:
এদিকে পতন ঠেকাতে বিএসইসির পক্ষ থেকে বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করা হলেও সুফল মিলছে না। বাজার সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএসইসির ওপর বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের আস্থায় বড় ধরনের চিড় ধরেছে। এ কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিনিয়োগের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টদের অনাস্থার সম্পর্ক প্রকট হওয়ায় বিনিয়োগের সামর্থ্য থাকার পরও অনেকে বিএসইসির আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আস্থার জায়গাটা খুব খারাপ অবস্থায় না গেলে এত দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে এভাবে দরপতন চলতে পারে না। তাঁর মতে, বাজারের প্রতি আস্থা ফেরাতে হলে শুধু মুখের কথা বা আশ্বাসে কাজ হবে না, কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বাজারের পতনের পেছনে বড় ধরনের কোনো কারসাজি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখাও জরুরি বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক এ চেয়ারম্যান। মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়েছে, গতকালের বাজারে সূচকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক ও গ্রামীণফোনের শেয়ার। ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী মৌলভিত্তিসম্পন্ন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ারের দাম গতকাল এক দিনেই ৫৮ টাকা কমেছে। গ্রামীণফোনের দাম কমেছে ৫ টাকা। এ দুই কোম্পানিসহ ঢাকার বাজারের বাছাই করা ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানিরই দরপতন ঘটেছে। ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া ৬৩ শতাংশ শেয়ারেরই দরপতন হয়েছে। দিন শেষে লেনদেন কমে আবারও ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অস্থির শেয়ারবাজার : ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ বাজারে দরপতন

আপলোড টাইম : ১০:৪৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
‘নিয়ন্ত্রণহীন’ শেয়ারবাজারে সূচকের পতন অব্যাহত রয়েছে। তিন মাস ধরে চলা দরপতনের ফলে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ফিরে গেছে সাড়ে ২৭ মাস আগের অবস্থানে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এত দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে টানা পতনের ঘটনা আর ঘটেনি। জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত রোববার বলেছেন, দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর গতকাল সোমবার দেশের দুই শেয়ারবাজারেই বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। তাতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৬৩ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ১ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৫ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ১৫৯ পয়েন্টের সর্বনি¤œ অবস্থানে ছিল। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি গতকাল এক দিনেই ১৮৩ পয়েন্ট কমে নেমে গেছে ১৬ হাজার পয়েন্টের নিচে। গত বছরের ৬ নভেম্বরের পর সর্বশেষ গতকালই এ সূচক ১৬ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।
এই প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারে আর প্লেসমেন্ট ব্যবস্থা থাকবে না বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সোমবার রাতে বাজার–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিএসইসির সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে কোনো কোম্পানিকে আর মূলধন বাড়াতে শেয়ার বিক্রির জন্য বিএসইসির অনুমোদন নিতে হবে না। এ ছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আসা কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারধারীদের শেয়ার বিক্রির ওপর তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা থাকবে। বাজারে লেনদেন শুরুর দিন থেকে এ নিষেধাজ্ঞা সময় গণনা শুরু হবে। সভা শেষে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান এসব সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান সাইফুর রহমান।
এদিকে, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে গত রোববার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খাইরুল হোসেন, গভর্নর ফজলে কবির। এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বিএসইসির পক্ষ থেকে এ বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করা হয়।
বিএসইসির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, এখন থেকে স্থির মূল্য পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে চাইলে ওই কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৫০ কোটি টাকা। আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ১০০ কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধনের কোনো কোম্পানি বাজারে আসতে পারবে না। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে ওই কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই, সেসব কোম্পানিকে আলাদা শ্রেণিভুক্ত করা হবে। আর যেসব পরিচালকের হাতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ২ শতাংশের শেয়ার রয়েছে, তাঁদের পরিচালক পদ থেকে অপসারণে নতুন করে আবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি এখন থেকে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করলে তার যুক্তিসংগত কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।
চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি:
বাজারের পতন ঠেকাতে বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খাইরুল হোসেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন আন্দোলনরত বিনিয়োগকারীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিনিয়োগকারীদের অনেকে একই দাবি তুলেছেন। তাঁদের মতে, বিএসইসির চেয়ারম্যান বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। টানা দরপতনের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে প্রতীকী গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত বিনিয়োগকারীরা। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল অনশন পালন করা হয়। দুপুরে লেনদেন শেষে স্থানীয় সাংসদ রাশেদ খান মেনন আন্দোলনকারীদের অনশন ভাঙান। এ সময় রাশেদ খান মেনন শেয়ারবাজার নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের রক্ষার আহ্বান জানান।
আস্থার সংকট:
এদিকে পতন ঠেকাতে বিএসইসির পক্ষ থেকে বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করা হলেও সুফল মিলছে না। বাজার সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএসইসির ওপর বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের আস্থায় বড় ধরনের চিড় ধরেছে। এ কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিনিয়োগের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টদের অনাস্থার সম্পর্ক প্রকট হওয়ায় বিনিয়োগের সামর্থ্য থাকার পরও অনেকে বিএসইসির আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আস্থার জায়গাটা খুব খারাপ অবস্থায় না গেলে এত দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে এভাবে দরপতন চলতে পারে না। তাঁর মতে, বাজারের প্রতি আস্থা ফেরাতে হলে শুধু মুখের কথা বা আশ্বাসে কাজ হবে না, কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বাজারের পতনের পেছনে বড় ধরনের কোনো কারসাজি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখাও জরুরি বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক এ চেয়ারম্যান। মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়েছে, গতকালের বাজারে সূচকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক ও গ্রামীণফোনের শেয়ার। ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী মৌলভিত্তিসম্পন্ন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ারের দাম গতকাল এক দিনেই ৫৮ টাকা কমেছে। গ্রামীণফোনের দাম কমেছে ৫ টাকা। এ দুই কোম্পানিসহ ঢাকার বাজারের বাছাই করা ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানিরই দরপতন ঘটেছে। ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া ৬৩ শতাংশ শেয়ারেরই দরপতন হয়েছে। দিন শেষে লেনদেন কমে আবারও ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে।