ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় রঙের উৎসবে বর্ষবরণ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৯
  • / ৬১০ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
পুরানোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ‘বাংলা নববর্ষ-১৪২৬’ কে বরণ করে নিতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। বাঙালি চেতনার ধারক মঙ্গল শোভাযাত্রা, গান, নাচ, বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। এদিকে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে বাণী দেন। বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। নববর্ষ বরণ উপলক্ষে সারা দেশজুড়ে ছিল সাজ সাজ রব। সারা বাংলা ভেসেছে বিপুল উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনায়। সাধারণ মানুষের পোশাকে ছিল লাল-সাদার সমাহার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেজেছে ঢোল, ডুগডুগি। পথে পথে বসেছিল বাতাসা, মুড়ি-মুড়কি, মাটির জিনিস, পাটের জিনিস, বাঁশি ও খেলনার দোকান। দিনভর প্রখর রোদ থাকা স্বত্বেও ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানের তালে তালে মানুষ বিভিন্ন উৎসবে যোগ দেয়।
চুয়াডাঙ্গা:


পহেলা বৈশাখে প্রভাতের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠলো পুরো জাতি। জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে শুভ সম্ভাবনার নতুন দিন আনবার প্রত্যয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলো সংশয়বিনাশী চিত্ত। পহেলা বৈশাখে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো প্রভাতি অনুষ্ঠান। শুরু হলো বাঙালির বর্ষবরণ। যেমন ছায়ানট আর বাঙালির বর্ষবরণ এখন সমার্থক। তেমনি চুয়াডাঙ্গাবাসীর জন্যও থাকে কিছু আয়োজন। এবার প্রথমবারের মতো প্রভাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বরে ডিসি সাহিত্য মঞ্চে নাচে গানে নতুন সূর্য আবগাহন করা হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও মুকুল ফৌজ’র আয়োজন ছিল ভিন্ন, ঊষালগ্নে ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কন্ঠে ভেসে এলো ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’। তাদের গানের মধ্য দিয়েই যেন উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। শুভ দিনের প্রত্যাশায় মানুষের মনে গুনগুনিয়ে উঠলো ‘নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে’। স্বাগতম ১৪২৬, সুস্বাগত। প্রকৃতির নিয়মে আসে বৈশাখ। কিন্তু পহেলা বৈশাখ জাতির জীবনে আসে দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয়ে পালিত হলো এবারের নববর্ষ। পৃথিবীজুড়ে প্রতিটি বাঙালি গানে গানে আহ্বান জানায় সম্ভাবনাময় নতুন দিনকে। গানের পংক্তি উচ্চারণে তারা বর্জন করতে চাইছে জীবনে জড়িয়ে থাকা সকল পঙ্কিলতাকে। বরণ করে নিতে চাইছে নতুন বছরকে। এরপর চুয়াডাঙ্গা ভি. জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (চাঁদমারী) মাঠ থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। বিকেলে চাঁদমারী মাঠে সপ্তাহব্যাপি পৌর বৈশাখি মেলার উদ্বোধন করা হয়। এ ছাড়া দিনব্যাপি জেলাব্যাপী নানা আয়োজন ছিল বাঙালির বর্ষবরণের অনুসঙ্গ।
ডিসি সাহিত্য মঞ্চে জেলা প্রশাসনের আয়োজন:
বরাবরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। রোববার ভোর সাতটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বরে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আয়োজনে অংশ নেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম-বার, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুসহ নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ। তাদের পরনে ছিল রঙিন পোশাক। সাহিত্য মঞ্চে নাচে গানে আবগাহন করা হয় নতুন সূর্যকে।
মুকুল ফৌজ’র আয়োজন:


‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ সুরে সুরে দীর্ঘ ২৩ বছরের ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নববর্ষকে স্বাগত জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী মুকুল ফৌজ ও ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। সকাল পোনে ছয়টা থেকে শিক্ষার্থীদের বৈশাখের আগমনী গান আর বাংলা নাচে মেতে ওঠে সকলে। পুরো আয়োজনজুড়ে মোহিত হয়ে ছিল আগত দর্শকশ্রোতা। নুঝাত পারভীনের সঞ্চালনায় আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মুকুল ফৌজ’র প্রধান দরদী বোন ও মুখপাত্র রাশেদা হাসনুয়ারা বানু। অনুষ্ঠান তদারকিতে ছিলেন ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানা।
বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা:
সকাল ৮টার কিছু সময় আগে চুয়াডাঙ্গা ভি. জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (চাঁদমারী) মাঠ থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। অংশ নেন বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষ। চিরায়িত ‘মুছে যাক সব গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নি¯œানে সূচি হোক ধরা। রসের আবেশ রাশি শুষ্ক করি দাও আসি। আনো, আনো, আনো তব প্রলয়ে শাঁখ, মায়ার কুজ্ঝটি জাল যাক দূরে যাক।অশুরবাষ্প সুদূরে মিলাক…এসো, এসো, এসো, হে বৈশাখ…এসো এসো স্লোগানে মুখরিত ছিল শোভাযাত্রা। তেমন কোন শিল্পকাঠামো ছিল না বললেই চলে। যেকটি ছিল, তার সবই চেনাজানা। লোকজ ঐতিহ্যের চিত্র মেলে ধরে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পালকী, বর-বধূ সমেত বরযাত্রী, অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের জমিদারী প্রথায় বিশাল হালখাতাসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নানান সাঁজ। এ ছাড়া অনুষঙ্গের মধ্যে ছিল রঙ-বেরঙের মুখোশ। শোভাযাত্রাটি চাঁদমারী মাঠ থেকে শুরু হয়ে কোর্ট মোড় ঘুরে শহীদ হাসান চত্ত্বর ভায়া হয়ে পৌরসভার সামনে, কবরী রোড হয়ে সরকারি কলেজ চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়। শোভযাত্রায় পুলিশের কড়া নিরাপত্তা বলয় চোখে পড়ার মতো ছিল।
সরকারি কলেজের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
বাংলা নববর্ষবরণ-১৪২৬ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা পরবর্তী এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রেরণার উৎসব। বর্ষবরণে কোনো ধর্মীয় আবরণের সম্পর্ক নেই। সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে এই প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠেন। এই উৎসবকে আরও জোরালো ও সুন্দরভাবে উদযাপন করার মধ্য দিয়ে আমরা শক্তিশালীরূপে একটি বার্তা দিতে চাই যে, বাঙালি জাতি একটি অসাম্প্রদায়িক জাতি। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের সম্পদ। এই সংস্কৃতি নিয়ে সারা পৃথিবীতে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি। কোন অপশক্তি আমাদের এই অর্জনকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। সবার সম্মিলত প্রচেষ্টায় বাংলা সংস্কৃতি আরও দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।’ মুন্সী আবু সাইফের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আজিজুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা শেষে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ৩৭টি দলের মধ্য থেকে মূল্যায়নের মাধ্যমে ৩টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত ৯টি দল/প্রতিষ্ঠানকে পুরষ্কৃত করা হয়। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীদের নাচ ও গানের মধ্যদিয়ে শেষ হয় আয়োজন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে দই-চিড়া ও চিড়া-মুড়ি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়।
চুয়াডাঙ্গার এগারো সংগঠনের আয়োজন:
জেলার ১১টি শিল্প ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সম্মিলিত আয়োজনে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আলোচনা, আবৃত্তি, নৃত্য, সঙ্গীত ও বাঙালি খাবার পরিবেশনের আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে তারা চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ চত্ত্বরে মিলিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সকল সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সাংস্কৃতিককর্মীরা। নারী সংগঠক নুঝাত পারভীনের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিল চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ, চুয়াডাঙ্গা আবৃত্তি পরিষদ, সুরকানন একাডেমি, শহর বাউল একাডেমি, জেলা শিল্পকল্যাণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, সরগম-চুয়াডাঙ্গা, সংলাপ-চুয়াডাঙ্গা, উদীচী-চুয়াডাঙ্গা ও অরিন্দম। অনুষ্ঠান চলাকালে সকলকে মিষ্টিমুখ এবং পরে বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা জজকোর্টে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা জজশীপ ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাঃ রবিউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিচারক জিয়া হায়দার, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ নুরুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম জেলা জজ-১ কামাল হোসেন শিকদার, যুগ্ম জেলা জজ-২ শ্রীমতি নীলা কর্মকার, সিনিয়র সহকারী জজ ছানাউল্লাহ, লিগ্যাল এইড অফিসার শামসুজ্জোহা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজেদুর রহমান, মানিক দাস, ফারিহা নোশীন বর্ণী, পাপিয়া নাগ, সহকারী জজ মাহবুবা শারমিন, আরমান হোসেন, নীলা খাতুন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মতিউল হক, নাজমুল হক, নাজির ওসমান গনি, সুলতান মাহমুদ প্রমুখ। আলোচনা পর্ব শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদে বৈশাখী আপ্যায়ন, আড্ডা ও লোকসঙ্গীত উৎসব:
বাংলা বর্ষবরণে ভিন্ন আয়োজন ছিল চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদে। শুভ নববর্ষ-১৪২৬ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে এবার আপ্যায়নের পাশাপাশি ছিল বৈশাখি আড্ডা ও লোকসঙ্গীতের আয়োজন। রোববার বিকেলে জেলা পরিষদ চত্বরে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন খোকন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামরুল আরিফ আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে জেলা ও দায়রা জজ রবিউল ইসলাম, জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান-পিপিএম, ৬-বিজিবি’র পরিচালক লে: কর্ণেল ইমাম হাসান, সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এসএম নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়া ইয়াহ খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াশীমুল বারী, অধ্যক্ষ (অব.) সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ মো. ফকরুল আলম খান,
রেডক্রিসেন্ট ইউনিট সেক্রেটারী ফজলুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান লিটু, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আফজালুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি সদস্য বেলাল হোসেন, আলোকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দিন, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও চিৎলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কবির, জেলা যুবলীগের আহাবয়ক কমিটির সদস্য শরীফ উদ্দিন দুদু, আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপন ও শাহিন রেজা, ছাক্রলীগ নেতা সজল আহমেদ,সদর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুম ও শাজাদী মিলিসহ আলুকদিয়া ইউপি এবং চিৎলা ইউপির সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সী মো. আবু সাইফের সঞ্চালনায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আরিফ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর সহধর্মিণী শাহনাজ ফেরদৌস স্বর্ণা, প্রখ্যাত বাউল শিল্পী আব্দুল লতিফ শাহ ও আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের শিল্পীবৃন্দ গান পরিবেশন করেন। শুভ নববর্ষ উদযাপনে জেলা পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম শাহান, মাফলুকাতুর রহমান সাজু, মাহবুবুর রহমান মোল্লা, আবু মুছা, তপন কুমার বিশ্বাস, খলিলুর রহমান, আসাবুল হক, সিরাজুল ইসলাম, শফিউল কবির, জাফর আলী, মোসাবুল ইসলাম লিটন, শফিকুল আলম নান্নু, নুরুন্নাহার কাকলি, কাজল রেখা, তানিয়া বেগম ও মিতা খাতুনসহ জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন।
চাঁদমারী মাঠে পৌর বৈশাখী মেলা উদ্বোধন:
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার উদ্যোগে চাঁদমারী মাঠে সপ্তাহব্যাপি বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। রোববার বিকাল ৪টায় লাল ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক পতœী লিপি দাস, পুলিশ সুপার পতœী ফারহানা চৌধুরী শিল্পী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, পৌর মেয়র পতœী সুইটি চৌধুরীসহ অতিথিরা। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া খান। এরআগে মেলায় আগত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুসহ পরিষদের সদস্যরা। পরে মেলা মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকরা জানান, পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হওয়া এ বৈশাখী মেলা চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি অনেক রকম বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে এবারের মেলায়। এরমধ্যে নাগর দোলা, ট্রেন রাইড, স্যুটিং, হাউড্রোলিক নৌকা প্রভৃতি অন্যতম। মেলায় রয়েছে অর্ধশতাধিক মনোহরী, খাবার ও বিপনী স্টল। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে বলে জানানো হয়েছে।
বদরগঞ্জ:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলিয়ারপুর আজিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্ষবরণ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আলিয়ারপুর আজিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল মোতালেব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকিরুল ইসলামসহ সকল শিক্ষক/শিক্ষিকা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় ছিলেন সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম স্বপন। অন্যদিকে, বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে বর্ষবরণ উপলক্ষে কলেজের হলরুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অত্র কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা অনুরাগী সদস্য শংকরপ্রসাদ অধিকারী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দসহ অত্র কলেজের শিক্ষক/শিক্ষিকাবৃন্দ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রভাষক রুহুল আমিন।
আলমডাঙ্গা:


আলমডাঙ্গায় নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা বর্ষবরণ পহেলা বৈশাখ পালিত হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত রোববার সকাল ৮টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাহাত মান্নান। র‌্যালি শেষে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরের বনবীথিতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান মুন্সি, আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র হাসান কাদীর গনু, সাবেক পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলী, সমাজ সেবা কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাষ্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ নুর মোহাম্মদ জকু, নাগরিক নাট্যাঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক ডা. অমল কুমার বিশ্বাস, প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মন্টু, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার হামিদুল ইসলাম আজম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান, আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম সরোয়ার, মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন আহম্মদ, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান, নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড. খন্দকার সালমুন আহম্মদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু, সমবায় কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি মল্লিক, সাংবাদিক রহমান মুকুল, প্রশান্ত বিশ্বাস, ইউনুস আলী মন্ডল, তানভীর আহম্মদ সোহেল, সদু মিয়া, শাহাবুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) লুৎফুল কবির, সরকারি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন, আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনিসুজ্জামান, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রেফাউল ইসলাম, প্রমুখ।
এদিকে, গত রোববার সকালে বর্ষবরণ উপলক্ষে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যানারে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়াও আলমডাঙ্গা পৌরসভার আয়োজনে সকাল ৭টার দিকে পৌরসভা চত্ত্বরে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাদীর গনু। পরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ কবিতা আবৃতি, নাটক, নৃত্য, সংগীত ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে এবং দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
দামুড়হুদা:


দামুড়হুদায় লাঠিখেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, কুইজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রীতি ফুটবলসহ নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গত রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। দামুড়হুদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানন বিদ্যাপীঠ, দশমী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দশমী বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দামুড়হুদা প্রতিবন্ধূ অটিস্টিক স্কুল, দামুড়হুদা সরকারি পাইলট হাইস্কুল, দামুড়হুদা পাইলট গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজ, দামুড়হুদা ডিএস দাখিল মাদরাসা, ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অগ্রদূত ভলিবল সংঘ, দশমী সোনারতরী বন্ধু সংঘ, জয়নগর লাঠিয়াল বাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে। এর আগে দিবসের শুরুতেই শহীদ মিনার পাদদেশে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির ওস্তাদ আসমত আলী বিশ্বাসের নেতৃত্বে শিল্পকলার শিল্পীরা বাংলা নববর্ষকে গানে গানে বরণ করেন।
সকাল ১০টায় শহীদ মিনার চত্ত্বরে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসানের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দা নাফিস সুলতানা, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কামাল উদ্দীন, উপাধ্যক্ষ জিন্নাত আলী, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস, ওসি (তদন্ত) গাজী শামীমুর রহমান, উপজেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ইসমাইল হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, নবনির্বাচিত উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদা খাতুন, উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মোহাম্মদ শামিউর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান, উপজেলা মৎস্য অফিসার সেলিম রেজা, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হোসেন জাহান ববি, উপজেলা সমবায় অফিসার অমোক কুমার বিশ্বাস, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মতিন।
এছাড়াও উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, দামুড়হুদা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম, দামুড়হুদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টন, নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি শহিদুল ইসলাম, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এম. নুরুন্নবী, যুগ্মসম্পাদক বখতিয়ার হোসেন বকুল, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজু আহম্মেদ রিংকু, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মডেল কেয়ার টেকার আসাদুজ্জামান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শেষে জয়নগর লাঠিয়াল বাহিনী লাঠিখেলা প্রদর্শন করে। পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। ‘ক’ বিভাগে দামুড়হুদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায় প্রথম, কানন বিদ্যাপীঠ দ্বিতীয় এবং দশমী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৃতীয়, ‘খ’ বিভাগে দামুড়হুদা সরকারি পাইলট হাইস্কুল প্রথম, আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজ দ্বিতীয় এবং দামুড়হুদা পাইলট গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ তৃতীয়, ‘গ’ বিভাগে (সকলের জন্য উম্মুক্ত) দামুড়হুদা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল প্রথম, সোনার তরী বন্ধু সংঘ দ্বিতীয় এবং অগ্রদূত ভলিবল সংঘ তৃতীয়স্থান লাভ করে। এ ছাড়া দামুড়হুদা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের দশম শ্রেণির দুই ছাত্র শাহাবুল ও মিলনের হিজড়ার বেশে নৃত্য বাংলা নববর্ষ উদযাপনে আলাদা মাত্রা যোগ হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাকী সালাম।
দর্শনা:


দর্শনায় জাকজমকপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে। ‘সাজাও সবে নতুন রঙে’ এই শ্লোগানে দর্শনা অনির্বান থিয়েটারের আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় দর্শনা কলেজ শহীদ মিনারে বিভিন্ন সংগঠনের উপস্থিতিতে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দর্শনা কেরুজ বাজার মাঠ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক জেলা প্রশাসক ও দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মনজু, নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু, অনির্বানের সভাপতি ফজলুর রহমান, গোলাম ফারুক আরিফ, হাসমত কবীর, কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন তপু। আলোচনা শেষে বিকাল ৪টায় শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারী বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়। এরপর দর্শনা নীল সেতারের পরিবেশনায় লোক সংগীত পরিবেশিত হয়। এর আগে শোভাযাত্রায় অনির্বান থিয়েটার, রামনগর মাথাভাঙ্গা যুবসংঘ (রামাযুস), পরানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দর্শনা বালিকা বিদ্যালয়, বন্ধু জুয়েলার্স, নো পার্কিং গ্রুপ, প্রয়োজন এন্টারপ্রাইজ, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, গণ উন্নয়ন গ্রহন্থাগার, ওমেন্স ক্লাব, লিটিল এন্জেল স্কুল, শান্তিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেরু উচ্চ বিদ্যালয়, বন্ধু বন্ধন, জুনিয়ার ক্লাব, আল্লাহর দান হোটেল, দর্শনা সরকারি কলেজ, কলেজপাড়া থানা পাড়া যুব সংঘ অংশ নেয়।
জীবননগর:


নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংল নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে জীবননগরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। গত রোববার ভোর থেকেই দিনভর নানা আয়োজন ছিলো দিবসটি উপলক্ষে। জীবননগর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল ৮টায় উপজেলা পরিষদের চত্ত্বর থেকে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেয় জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাজী হাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েসা সুলতানা লাকী, জীবননগর থানার ওসি শেখ গনি মিয়া, জীবননগর থানার (ওসি) তদন্ত ফেরদৌস ওয়াহিদ, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, দীনেশ চন্দ্র পাল, সমাজ সেবা অফিসার মাসুদুর রহমান, সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রাজিব হোসেন, ইউডিএফ আহসান হাবিবসহ উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান। এরপরে উপজেলা পরিষদের বটতলায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
হাসাদাহ:
বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে হাসাদাহ ইউনিয়ন যুব সমাজের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। বাংলা ১৪২৬ সনকে বরণ করে নিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে হাসাদাহ ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম, হাসাদাহ ক্যাম্প ইনচার্জ আকিব আহাম্মেদ, হাসাদাহ ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগ নেতা হাসিবুল হাসান বিষু, হাসাদাহ ইউনিয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদিকুর রহমান মিল্টন, রুমন আহাম্মেদ, শাহাজেল, সুজন, আমির হোসেন, মমিনুর রহমান, শাহিন আলম, বাবলুর রহমান, ফারুক হোসেন, জুন্টে, রানা, সাগর, শিলন, শ্রী সাধন বিশ্বাস, তছলিম, আয়াতুল্লা খোমিনী, রকি, সাজু, রাজু, আক্কাচ আলী, জসিম, স্বাধীন, সহজ, সাধ, বাবু, রুবেলসহ এলাকার যুব সমাজ। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে ইলিশ পান্তার আয়োজন করা হয়।
উথলী:
বাংলা নববর্ষ-১৪২৬ উপলক্ষে জীবননগরের উথলী ডিগ্রি কলেজে উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। রোববার সকাল ১০টায় এ উপলক্ষে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে এক মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। পরে কলেজের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কলেজের অধ্যাপক আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুল মান্নান পিল্টু, হাজি রবিউল হোসেন, সাংবাদিক আহম্মাদ সগীর, হাসান নিলয়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অত্র কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীরা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম। পরে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
মেহেরপুর:
মেহেরপুরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরণ করা হয়েছে বাংলা নববর্ষ-১৪২৬। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ উপলক্ষে গত রোববার সকাল ৭টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ড. শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে গিয়ে শেষ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় ম মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গনি, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাাফিজুর রহমানম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম রসুল, পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, পিপি পল্লব ভট্টাচার্য, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলীসহ মঙ্গল শোভাযাত্রায় জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেয়। এছাড়াও মেহেরপুরে পৃথকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসব ও লোকজ সাংস্কৃতিক উৎসবসহ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এদিকে, বাংলা নববর্ষকে বরণ উপলক্ষে মেহেরপুর পৌরসভার আয়োজনে রোববার পৌরসভা প্রাঙ্গণে পান্তা উৎসবের আয়োজন করা হয়। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, জেলা প্রশাসক আতাউল গনি, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুলসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ পান্তা উৎসবে অংশগ্রহন করে। পৌর মেয়র মাহাফুজুর রহমান রিটন অতিথিদের স্বাগত জানান।
অপরদিকে, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মেহেরপুর সরকারি কলেজের আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত রোববার সকালে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসার সফিউল ইসলাম সরদারের নেতৃত্বে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় পালকি বর, বধু, বাউল, কবিসহ গ্রাম বাংলার বিভিন্ন সাজে সাজানো হয়। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে। পরে কলেজ ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রার আগে ক্যাম্পাসে পান্তা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
অন্যদিকে, মেহেরপুর জেলা পুলিশ ব্যতিক্রম ও মনমুগ্ধকর আয়োজনে পালন করেছে বাংলা নববর্ষ। ডিবি পুলিশের ৫ সদস্য বাহারী রং এর পাঞ্জাবি ও সাদা রং এর লুঙ্গি, হাতে একতারা আর ডুগি। এক দারোগা ঘোড়ায় চড়ে অপেক্ষা এবং পুলিশ সুপার তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে গরুর গাড়ি চড়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। এটি ছিল ১লা বৈশাখের সকালে পুলিশ লাইনের গেটের সামনের দৃশ্য। ভিতরে আদি পল্লী গ্রামের চিত্র তুলে ধরে সেখানে চাটায়ের বেড়ার ঘর গোয়ালে গরু। বাড়ির আঙ্গিণায় সাপুড়ের সাপ খেলা প্রদর্শন। মাঠে ঘুড়ি ওঠানো আর বাংলার লাঠি খেলা। সব মিলিয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বাংলা নববর্ষ বরণের চমৎকার আয়োজন। ১লা বৈশাখ উপলক্ষে পুলিশ সদস্যরা এভাবেই পালন করলো বাংলা নববর্ষ। এছাড়াও বাংলা গান আর পান্তা উৎসবতো ছিলোই। পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে পরিদর্শক পর্যন্ত এক রং এর পাঞ্জাবি, নারী পুলিশরাও এক রং এর বাহারী শাড়ি অনুষ্ঠানকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে। বড় বড় বিষধর সাপ আর গ্রাম বাংলার অপরুপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন অতিথিগণ। অতিথিদের মধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন, জেলা প্রশাসক আতাউল গনি, পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটনসহ বিপুল পরিমাণ দর্শক অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর পত্মী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম ও তার পত্মী অতিথিদের স্বাগত জানান।
এদিকে, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মেহেরপুর ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে শহীদ সামসুজ্জোহা নগর উদ্যানে সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের লাঠিদল এ লাঠি খেলা প্রদর্শন করে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য আনোয়ারুল হক শাহী লাঠি খেলার উদ্বোধন করেন।
অপরদিকে, মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রীতি ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হয়। জেলা দায়রা জজ আদালত একাদশ ও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মধ্যেকার খেলায় জেলা দায়রা জজ আদালত একাদশ জয়লাভ করে। রোববার মেহেরপুর স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত খেলায় জেলা দায়রা জজ আদালত একাদশ ২৭ রানে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতকে পরাজিত করে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জেলা দায়রা জজ আদালত একাদশ ১২ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রান করে। দলের পক্ষে সাইদুর ৩৩ বলে ১০২ রান করে। জবাবে খেলতে নেমে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ১৫৪ রান সংগ্রহ করে। দলের পক্ষে জব্বার ৫১ রান করে। সাইদুর ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন।
মুজিবনগর:
মুজিবনগরে মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৬ বঙ্গাব্দ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত রোববার সকাল ৮টার দিকে মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তারের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি মুজিবনগর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাশেম, বাগোয়ান ইউপি চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন, মোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, দারিয়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুল বারী বকুল, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুস্তাফিজুর রহমানসহ উপজেলা সকল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উক্ত শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। পরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে পান্তা উৎসব ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গাংনী:
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গাংনীতে বাংলা বর্ষবরণ পহেলা বৈশাখ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত রোববার সকাল ৭টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর থেকে এক মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজামান খোকন। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান শহর প্রদক্ষিণ শেষে গাংনী উপজেলা শহীদ মিনার পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে শহীদ পাদদেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এম এ খালেক, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন, সাবেক মেয়র আহম্মেদ আলী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশারেফ হোসেন, গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার পিপিএম ও পৌর আওয়ামলী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবুসহ উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এছাড়াও পান্তা ইলিশ ও লোকজ সাংস্কৃতিক উৎসবসহ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাইপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা বর্ষবরণ, নবীন বরণ ও নতুন চতুর্থতলা একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজামান খোকন। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সমাজসেবক হাজি আলফাজ উদ্দীনের সভাপতিত্বে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন নারী নেত্রী এমপি পত্মী লাইলা আরজুমান বানু শিলা, রাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু, ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সমাজসেবক এনামুল হক ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুনতাসির জামান মৃদুলসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ:
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছে ঝিনাইদহবাসী। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত রোববার সকালে শহরের ওয়াজির আলী স্কুল এন্ড কলেজ মাঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র‌্যালিতে ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য খালেদা খানম, জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র আলহাজ সাইদুল করিম মিন্টুসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেয়। র‌্যালিতে প্রদর্শণ করা হয় পেঁচা, বাঘের মুখোশ, গরুর গাড়ি, পালকিসহ গ্রাম বাংলার ঐহিত্য। এছাড়াও দিনভর পান্তা পরিবেশন, লাঠি খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে বাংলা বর্ষবরণ পালিত হচ্ছে।
এদিকে, বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঝিনাইদহে হয়ে গেলো গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠি খেলা। শহরের পায়রা চত্বরে সকালে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী। বর্ণিল সাজে লাঠি হাতে লাঠিয়ালরা অংশ নেন এ খেলায়। ঢাকঢোল আর বাঁশির তালে আনন্দে-উল্লাসে মেতে ওঠেন সবাই। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ রঙ-বেরঙের পোশাক পরে মাঠে আসেন লাঠি খেলতে। বাদ্যের তালে চলে লাঠি খেলা। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেরে রক্ষা করা আর অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টায় মেতে থাকেন লাঠিয়ালরা। প্রদর্শণ করা হয় লাঠি নিয়ে নানা কলা-কৌশল। লাঠিখেলার আয়োজক বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী ঝিনাইদহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান খোকা বলেন, ‘পুরানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতেই আমাদের এ আয়োজন।’ লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে শৈলকুপা উপজেলার হাটফাজিলপুর গ্রামের রইচ উদ্দিন বলেন, আমরা নিজেদের আনন্দ ও অন্যদের আনন্দ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে লাঠিখেলা করে থাকি। কিন্তু আমরা অবহেলিত। গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অন্যদিকে, গৃহস্থ বাড়ির বিরাট একটি উঠোন বানানো হয়েছে গ্রামের হাই স্কুলের মাঠকে। সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাম থেকে হারিয়ে যাওয়া ঐহিত্য। আছে সাফদার ডাক্তারের চেম্বার। সেখানে রোগী দেখছেন পল্লী চিকিৎসক গোলাম রহমান ওরফে চেনা ডাক্তার। আছে আসমানীদের জরাজীর্ন বাড়ি। জসিম উদ্দীনের কবর কবিতার চিত্র ফুটিয়ে সেখানে ক্রন্দনরত রয়েছে নাতি পশ্চিমপাড়ার দাউদ হোসেন। আদর্শ কৃষকের সংসার। সেই সংসারে কুলায় ধান ও চাল ঝাড়ছে বধুরা। গ্রাম্য সংসারের সব কিছুই সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পালকি চড়ে নতুন বউ যাচ্ছে স্বামীর ঘরে। ঢেঁকিতে ধান ভানছে গ্রামের বধুরা। গ্রাম বাংলার চিরচরিত নিয়মে যাতা ঘুরিয়ে ডাল বানানো হচ্ছে। জ্যোতিন্দ্র মোহন বাগচির কাজলা দিদির কবিতার মতোই স্মৃতি ফুটয়ে তোলা হয়েছে পুকুর, বাতাবি লেবু ও বাঁশ বাগান বানিয়ে। আছে পান্তা ইলিশ ও বিষধর সাপের খেলা। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। রোববার সকাল থেকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা সরকারী প্রাইমারি ও হাই স্কুলের স্কুলের শিশু মেয়েদের বৈশাখী পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য বৈশাখী বরণের এই অনুষ্ঠানকে আরো প্রানবন্ত করে তোলে। বেলা ১০টার দিকে বংকিরা, ধোপাবিলা, হাজরা, আসাননগর, গোবিন্দুপর, জীবনা ও মোহাম্মদপুর গ্রামের মানুষদের নিয়ে বর্নাঢ্য র‌্যালি বের হয়। এলাকার কৃতি সন্তান ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আসিফ ইকবাল কাজল, সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন, বংকিরা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক খোশনুর রহমান, গোবিন্দপুর সরকারী প্রাইমারির প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ, হাজরা সরকারী প্রাইমারির প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান, মিঠু জোয়ারদার ও ডালিম হোসেনসহ শত শত মানুষ র‌্যালিতে যোগদান করেন। আর ব্যতিক্রমধর্মী বর্ষ বরণের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করেন বংকিরা পুলিশ ক্যাম্পের আইসি কাজী বায়োজিদ আহম্মেদ। মুলত তার পরিকল্পনায় গ্রাম বাংলার এই চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ডাকবাংলা:
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা ত্রিমহনী বাজার গোপালপুর সড়ক ইফাদ অটো রাইচ মিলে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পুরাতন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হাড়িভাঙ্গা খেলার আয়োজন করা হয়। এ খেলায় মিলের প্রায় ৪৫০ জন শ্রমিক অংশগ্রহন করে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইফাদ অটো রাইচ মিলের মালিক আলাউদ্দীন আল-মামুন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় রঙের উৎসবে বর্ষবরণ

আপলোড টাইম : ১১:০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
পুরানোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ‘বাংলা নববর্ষ-১৪২৬’ কে বরণ করে নিতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। বাঙালি চেতনার ধারক মঙ্গল শোভাযাত্রা, গান, নাচ, বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। এদিকে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে বাণী দেন। বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। নববর্ষ বরণ উপলক্ষে সারা দেশজুড়ে ছিল সাজ সাজ রব। সারা বাংলা ভেসেছে বিপুল উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনায়। সাধারণ মানুষের পোশাকে ছিল লাল-সাদার সমাহার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেজেছে ঢোল, ডুগডুগি। পথে পথে বসেছিল বাতাসা, মুড়ি-মুড়কি, মাটির জিনিস, পাটের জিনিস, বাঁশি ও খেলনার দোকান। দিনভর প্রখর রোদ থাকা স্বত্বেও ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানের তালে তালে মানুষ বিভিন্ন উৎসবে যোগ দেয়।
চুয়াডাঙ্গা:


পহেলা বৈশাখে প্রভাতের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠলো পুরো জাতি। জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে শুভ সম্ভাবনার নতুন দিন আনবার প্রত্যয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলো সংশয়বিনাশী চিত্ত। পহেলা বৈশাখে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো প্রভাতি অনুষ্ঠান। শুরু হলো বাঙালির বর্ষবরণ। যেমন ছায়ানট আর বাঙালির বর্ষবরণ এখন সমার্থক। তেমনি চুয়াডাঙ্গাবাসীর জন্যও থাকে কিছু আয়োজন। এবার প্রথমবারের মতো প্রভাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বরে ডিসি সাহিত্য মঞ্চে নাচে গানে নতুন সূর্য আবগাহন করা হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও মুকুল ফৌজ’র আয়োজন ছিল ভিন্ন, ঊষালগ্নে ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কন্ঠে ভেসে এলো ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’। তাদের গানের মধ্য দিয়েই যেন উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। শুভ দিনের প্রত্যাশায় মানুষের মনে গুনগুনিয়ে উঠলো ‘নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে’। স্বাগতম ১৪২৬, সুস্বাগত। প্রকৃতির নিয়মে আসে বৈশাখ। কিন্তু পহেলা বৈশাখ জাতির জীবনে আসে দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয়ে পালিত হলো এবারের নববর্ষ। পৃথিবীজুড়ে প্রতিটি বাঙালি গানে গানে আহ্বান জানায় সম্ভাবনাময় নতুন দিনকে। গানের পংক্তি উচ্চারণে তারা বর্জন করতে চাইছে জীবনে জড়িয়ে থাকা সকল পঙ্কিলতাকে। বরণ করে নিতে চাইছে নতুন বছরকে। এরপর চুয়াডাঙ্গা ভি. জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (চাঁদমারী) মাঠ থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। বিকেলে চাঁদমারী মাঠে সপ্তাহব্যাপি পৌর বৈশাখি মেলার উদ্বোধন করা হয়। এ ছাড়া দিনব্যাপি জেলাব্যাপী নানা আয়োজন ছিল বাঙালির বর্ষবরণের অনুসঙ্গ।
ডিসি সাহিত্য মঞ্চে জেলা প্রশাসনের আয়োজন:
বরাবরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। রোববার ভোর সাতটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বরে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আয়োজনে অংশ নেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম-বার, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুসহ নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ। তাদের পরনে ছিল রঙিন পোশাক। সাহিত্য মঞ্চে নাচে গানে আবগাহন করা হয় নতুন সূর্যকে।
মুকুল ফৌজ’র আয়োজন:


‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ সুরে সুরে দীর্ঘ ২৩ বছরের ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নববর্ষকে স্বাগত জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী মুকুল ফৌজ ও ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। সকাল পোনে ছয়টা থেকে শিক্ষার্থীদের বৈশাখের আগমনী গান আর বাংলা নাচে মেতে ওঠে সকলে। পুরো আয়োজনজুড়ে মোহিত হয়ে ছিল আগত দর্শকশ্রোতা। নুঝাত পারভীনের সঞ্চালনায় আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মুকুল ফৌজ’র প্রধান দরদী বোন ও মুখপাত্র রাশেদা হাসনুয়ারা বানু। অনুষ্ঠান তদারকিতে ছিলেন ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানা।
বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা:
সকাল ৮টার কিছু সময় আগে চুয়াডাঙ্গা ভি. জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (চাঁদমারী) মাঠ থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। অংশ নেন বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষ। চিরায়িত ‘মুছে যাক সব গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নি¯œানে সূচি হোক ধরা। রসের আবেশ রাশি শুষ্ক করি দাও আসি। আনো, আনো, আনো তব প্রলয়ে শাঁখ, মায়ার কুজ্ঝটি জাল যাক দূরে যাক।অশুরবাষ্প সুদূরে মিলাক…এসো, এসো, এসো, হে বৈশাখ…এসো এসো স্লোগানে মুখরিত ছিল শোভাযাত্রা। তেমন কোন শিল্পকাঠামো ছিল না বললেই চলে। যেকটি ছিল, তার সবই চেনাজানা। লোকজ ঐতিহ্যের চিত্র মেলে ধরে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পালকী, বর-বধূ সমেত বরযাত্রী, অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের জমিদারী প্রথায় বিশাল হালখাতাসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নানান সাঁজ। এ ছাড়া অনুষঙ্গের মধ্যে ছিল রঙ-বেরঙের মুখোশ। শোভাযাত্রাটি চাঁদমারী মাঠ থেকে শুরু হয়ে কোর্ট মোড় ঘুরে শহীদ হাসান চত্ত্বর ভায়া হয়ে পৌরসভার সামনে, কবরী রোড হয়ে সরকারি কলেজ চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়। শোভযাত্রায় পুলিশের কড়া নিরাপত্তা বলয় চোখে পড়ার মতো ছিল।
সরকারি কলেজের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
বাংলা নববর্ষবরণ-১৪২৬ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা পরবর্তী এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রেরণার উৎসব। বর্ষবরণে কোনো ধর্মীয় আবরণের সম্পর্ক নেই। সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে এই প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠেন। এই উৎসবকে আরও জোরালো ও সুন্দরভাবে উদযাপন করার মধ্য দিয়ে আমরা শক্তিশালীরূপে একটি বার্তা দিতে চাই যে, বাঙালি জাতি একটি অসাম্প্রদায়িক জাতি। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের সম্পদ। এই সংস্কৃতি নিয়ে সারা পৃথিবীতে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি। কোন অপশক্তি আমাদের এই অর্জনকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। সবার সম্মিলত প্রচেষ্টায় বাংলা সংস্কৃতি আরও দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।’ মুন্সী আবু সাইফের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আজিজুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা শেষে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ৩৭টি দলের মধ্য থেকে মূল্যায়নের মাধ্যমে ৩টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত ৯টি দল/প্রতিষ্ঠানকে পুরষ্কৃত করা হয়। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীদের নাচ ও গানের মধ্যদিয়ে শেষ হয় আয়োজন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে দই-চিড়া ও চিড়া-মুড়ি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়।
চুয়াডাঙ্গার এগারো সংগঠনের আয়োজন:
জেলার ১১টি শিল্প ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সম্মিলিত আয়োজনে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আলোচনা, আবৃত্তি, নৃত্য, সঙ্গীত ও বাঙালি খাবার পরিবেশনের আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে তারা চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ চত্ত্বরে মিলিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সকল সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সাংস্কৃতিককর্মীরা। নারী সংগঠক নুঝাত পারভীনের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিল চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ, চুয়াডাঙ্গা আবৃত্তি পরিষদ, সুরকানন একাডেমি, শহর বাউল একাডেমি, জেলা শিল্পকল্যাণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, সরগম-চুয়াডাঙ্গা, সংলাপ-চুয়াডাঙ্গা, উদীচী-চুয়াডাঙ্গা ও অরিন্দম। অনুষ্ঠান চলাকালে সকলকে মিষ্টিমুখ এবং পরে বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা জজকোর্টে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা জজশীপ ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাঃ রবিউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিচারক জিয়া হায়দার, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ নুরুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম জেলা জজ-১ কামাল হোসেন শিকদার, যুগ্ম জেলা জজ-২ শ্রীমতি নীলা কর্মকার, সিনিয়র সহকারী জজ ছানাউল্লাহ, লিগ্যাল এইড অফিসার শামসুজ্জোহা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজেদুর রহমান, মানিক দাস, ফারিহা নোশীন বর্ণী, পাপিয়া নাগ, সহকারী জজ মাহবুবা শারমিন, আরমান হোসেন, নীলা খাতুন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মতিউল হক, নাজমুল হক, নাজির ওসমান গনি, সুলতান মাহমুদ প্রমুখ। আলোচনা পর্ব শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদে বৈশাখী আপ্যায়ন, আড্ডা ও লোকসঙ্গীত উৎসব:
বাংলা বর্ষবরণে ভিন্ন আয়োজন ছিল চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদে। শুভ নববর্ষ-১৪২৬ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে এবার আপ্যায়নের পাশাপাশি ছিল বৈশাখি আড্ডা ও লোকসঙ্গীতের আয়োজন। রোববার বিকেলে জেলা পরিষদ চত্বরে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন খোকন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামরুল আরিফ আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে জেলা ও দায়রা জজ রবিউল ইসলাম, জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান-পিপিএম, ৬-বিজিবি’র পরিচালক লে: কর্ণেল ইমাম হাসান, সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এসএম নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়া ইয়াহ খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াশীমুল বারী, অধ্যক্ষ (অব.) সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ মো. ফকরুল আলম খান,
রেডক্রিসেন্ট ইউনিট সেক্রেটারী ফজলুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান লিটু, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আফজালুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি সদস্য বেলাল হোসেন, আলোকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দিন, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও চিৎলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কবির, জেলা যুবলীগের আহাবয়ক কমিটির সদস্য শরীফ উদ্দিন দুদু, আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপন ও শাহিন রেজা, ছাক্রলীগ নেতা সজল আহমেদ,সদর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুম ও শাজাদী মিলিসহ আলুকদিয়া ইউপি এবং চিৎলা ইউপির সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সী মো. আবু সাইফের সঞ্চালনায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আরিফ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর সহধর্মিণী শাহনাজ ফেরদৌস স্বর্ণা, প্রখ্যাত বাউল শিল্পী আব্দুল লতিফ শাহ ও আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের শিল্পীবৃন্দ গান পরিবেশন করেন। শুভ নববর্ষ উদযাপনে জেলা পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম শাহান, মাফলুকাতুর রহমান সাজু, মাহবুবুর রহমান মোল্লা, আবু মুছা, তপন কুমার বিশ্বাস, খলিলুর রহমান, আসাবুল হক, সিরাজুল ইসলাম, শফিউল কবির, জাফর আলী, মোসাবুল ইসলাম লিটন, শফিকুল আলম নান্নু, নুরুন্নাহার কাকলি, কাজল রেখা, তানিয়া বেগম ও মিতা খাতুনসহ জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন।
চাঁদমারী মাঠে পৌর বৈশাখী মেলা উদ্বোধন:
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার উদ্যোগে চাঁদমারী মাঠে সপ্তাহব্যাপি বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। রোববার বিকাল ৪টায় লাল ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক পতœী লিপি দাস, পুলিশ সুপার পতœী ফারহানা চৌধুরী শিল্পী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, পৌর মেয়র পতœী সুইটি চৌধুরীসহ অতিথিরা। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া খান। এরআগে মেলায় আগত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুসহ পরিষদের সদস্যরা। পরে মেলা মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকরা জানান, পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হওয়া এ বৈশাখী মেলা চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি অনেক রকম বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে এবারের মেলায়। এরমধ্যে নাগর দোলা, ট্রেন রাইড, স্যুটিং, হাউড্রোলিক নৌকা প্রভৃতি অন্যতম। মেলায় রয়েছে অর্ধশতাধিক মনোহরী, খাবার ও বিপনী স্টল। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে বলে জানানো হয়েছে।
বদরগঞ্জ:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলিয়ারপুর আজিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্ষবরণ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আলিয়ারপুর আজিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল মোতালেব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকিরুল ইসলামসহ সকল শিক্ষক/শিক্ষিকা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় ছিলেন সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম স্বপন। অন্যদিকে, বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে বর্ষবরণ উপলক্ষে কলেজের হলরুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অত্র কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা অনুরাগী সদস্য শংকরপ্রসাদ অধিকারী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দসহ অত্র কলেজের শিক্ষক/শিক্ষিকাবৃন্দ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রভাষক রুহুল আমিন।
আলমডাঙ্গা:


আলমডাঙ্গায় নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা বর্ষবরণ পহেলা বৈশাখ পালিত হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত রোববার সকাল ৮টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাহাত মান্নান। র‌্যালি শেষে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরের বনবীথিতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান মুন্সি, আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র হাসান কাদীর গনু, সাবেক পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলী, সমাজ সেবা কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাষ্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ নুর মোহাম্মদ জকু, নাগরিক নাট্যাঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক ডা. অমল কুমার বিশ্বাস, প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মন্টু, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার হামিদুল ইসলাম আজম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান, আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম সরোয়ার, মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন আহম্মদ, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান, নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড. খন্দকার সালমুন আহম্মদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু, সমবায় কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি মল্লিক, সাংবাদিক রহমান মুকুল, প্রশান্ত বিশ্বাস, ইউনুস আলী মন্ডল, তানভীর আহম্মদ সোহেল, সদু মিয়া, শাহাবুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) লুৎফুল কবির, সরকারি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন, আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনিসুজ্জামান, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রেফাউল ইসলাম, প্রমুখ।
এদিকে, গত রোববার সকালে বর্ষবরণ উপলক্ষে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যানারে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়াও আলমডাঙ্গা পৌরসভার আয়োজনে সকাল ৭টার দিকে পৌরসভা চত্ত্বরে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাদীর গনু। পরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ কবিতা আবৃতি, নাটক, নৃত্য, সংগীত ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে এবং দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
দামুড়হুদা:


দামুড়হুদায় লাঠিখেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, কুইজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রীতি ফুটবলসহ নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গত রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। দামুড়হুদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানন বিদ্যাপীঠ, দশমী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দশমী বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দামুড়হুদা প্রতিবন্ধূ অটিস্টিক স্কুল, দামুড়হুদা সরকারি পাইলট হাইস্কুল, দামুড়হুদা পাইলট গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজ, দামুড়হুদা ডিএস দাখিল মাদরাসা, ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অগ্রদূত ভলিবল সংঘ, দশমী সোনারতরী বন্ধু সংঘ, জয়নগর লাঠিয়াল বাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে। এর আগে দিবসের শুরুতেই শহীদ মিনার পাদদেশে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির ওস্তাদ আসমত আলী বিশ্বাসের নেতৃত্বে শিল্পকলার শিল্পীরা বাংলা নববর্ষকে গানে গানে বরণ করেন।
সকাল ১০টায় শহীদ মিনার চত্ত্বরে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসানের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দা নাফিস সুলতানা, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কামাল উদ্দীন, উপাধ্যক্ষ জিন্নাত আলী, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস, ওসি (তদন্ত) গাজী শামীমুর রহমান, উপজেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ইসমাইল হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, নবনির্বাচিত উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদা খাতুন, উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মোহাম্মদ শামিউর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান, উপজেলা মৎস্য অফিসার সেলিম রেজা, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হোসেন জাহান ববি, উপজেলা সমবায় অফিসার অমোক কুমার বিশ্বাস, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মতিন।
এছাড়াও উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, দামুড়হুদা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম, দামুড়হুদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টন, নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি শহিদুল ইসলাম, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এম. নুরুন্নবী, যুগ্মসম্পাদক বখতিয়ার হোসেন বকুল, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজু আহম্মেদ রিংকু, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মডেল কেয়ার টেকার আসাদুজ্জামান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শেষে জয়নগর লাঠিয়াল বাহিনী লাঠিখেলা প্রদর্শন করে। পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। ‘ক’ বিভাগে দামুড়হুদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায় প্রথম, কানন বিদ্যাপীঠ দ্বিতীয় এবং দশমী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৃতীয়, ‘খ’ বিভাগে দামুড়হুদা সরকারি পাইলট হাইস্কুল প্রথম, আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজ দ্বিতীয় এবং দামুড়হুদা পাইলট গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ তৃতীয়, ‘গ’ বিভাগে (সকলের জন্য উম্মুক্ত) দামুড়হুদা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল প্রথম, সোনার তরী বন্ধু সংঘ দ্বিতীয় এবং অগ্রদূত ভলিবল সংঘ তৃতীয়স্থান লাভ করে। এ ছাড়া দামুড়হুদা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের দশম শ্রেণির দুই ছাত্র শাহাবুল ও মিলনের হিজড়ার বেশে নৃত্য বাংলা নববর্ষ উদযাপনে আলাদা মাত্রা যোগ হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাকী সালাম।
দর্শনা:


দর্শনায় জাকজমকপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে। ‘সাজাও সবে নতুন রঙে’ এই শ্লোগানে দর্শনা অনির্বান থিয়েটারের আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় দর্শনা কলেজ শহীদ মিনারে বিভিন্ন সংগঠনের উপস্থিতিতে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দর্শনা কেরুজ বাজার মাঠ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক জেলা প্রশাসক ও দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মনজু, নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু, অনির্বানের সভাপতি ফজলুর রহমান, গোলাম ফারুক আরিফ, হাসমত কবীর, কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন তপু। আলোচনা শেষে বিকাল ৪টায় শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারী বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়। এরপর দর্শনা নীল সেতারের পরিবেশনায় লোক সংগীত পরিবেশিত হয়। এর আগে শোভাযাত্রায় অনির্বান থিয়েটার, রামনগর মাথাভাঙ্গা যুবসংঘ (রামাযুস), পরানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দর্শনা বালিকা বিদ্যালয়, বন্ধু জুয়েলার্স, নো পার্কিং গ্রুপ, প্রয়োজন এন্টারপ্রাইজ, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, গণ উন্নয়ন গ্রহন্থাগার, ওমেন্স ক্লাব, লিটিল এন্জেল স্কুল, শান্তিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেরু উচ্চ বিদ্যালয়, বন্ধু বন্ধন, জুনিয়ার ক্লাব, আল্লাহর দান হোটেল, দর্শনা সরকারি কলেজ, কলেজপাড়া থানা পাড়া যুব সংঘ অংশ নেয়।
জীবননগর:


নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংল নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে জীবননগরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। গত রোববার ভোর থেকেই দিনভর নানা আয়োজন ছিলো দিবসটি উপলক্ষে। জীবননগর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল ৮টায় উপজেলা পরিষদের চত্ত্বর থেকে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেয় জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাজী হাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েসা সুলতানা লাকী, জীবননগর থানার ওসি শেখ গনি মিয়া, জীবননগর থানার (ওসি) তদন্ত ফেরদৌস ওয়াহিদ, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, দীনেশ চন্দ্র পাল, সমাজ সেবা অফিসার মাসুদুর রহমান, সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রাজিব হোসেন, ইউডিএফ আহসান হাবিবসহ উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান। এরপরে উপজেলা পরিষদের বটতলায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
হাসাদাহ:
বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে হাসাদাহ ইউনিয়ন যুব সমাজের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। বাংলা ১৪২৬ সনকে বরণ করে নিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে হাসাদাহ ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম, হাসাদাহ ক্যাম্প ইনচার্জ আকিব আহাম্মেদ, হাসাদাহ ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগ নেতা হাসিবুল হাসান বিষু, হাসাদাহ ইউনিয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদিকুর রহমান মিল্টন, রুমন আহাম্মেদ, শাহাজেল, সুজন, আমির হোসেন, মমিনুর রহমান, শাহিন আলম, বাবলুর রহমান, ফারুক হোসেন, জুন্টে, রানা, সাগর, শিলন, শ্রী সাধন বিশ্বাস, তছলিম, আয়াতুল্লা খোমিনী, রকি, সাজু, রাজু, আক্কাচ আলী, জসিম, স্বাধীন, সহজ, সাধ, বাবু, রুবেলসহ এলাকার যুব সমাজ। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে ইলিশ পান্তার আয়োজন করা হয়।
উথলী:
বাংলা নববর্ষ-১৪২৬ উপলক্ষে জীবননগরের উথলী ডিগ্রি কলেজে উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। রোববার সকাল ১০টায় এ উপলক্ষে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে এক মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। পরে কলেজের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কলেজের অধ্যাপক আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুল মান্নান পিল্টু, হাজি রবিউল হোসেন, সাংবাদিক আহম্মাদ সগীর, হাসান নিলয়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অত্র কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীরা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম। পরে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
মেহেরপুর:
মেহেরপুরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরণ করা হয়েছে বাংলা নববর্ষ-১৪২৬। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ উপলক্ষে গত রোববার সকাল ৭টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ড. শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে গিয়ে শেষ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় ম মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গনি, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাাফিজুর রহমানম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম রসুল, পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, পিপি পল্লব ভট্টাচার্য, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলীসহ মঙ্গল শোভাযাত্রায় জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেয়। এছাড়াও মেহেরপুরে পৃথকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসব ও লোকজ সাংস্কৃতিক উৎসবসহ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এদিকে, বাংলা নববর্ষকে বরণ উপলক্ষে মেহেরপুর পৌরসভার আয়োজনে রোববার পৌরসভা প্রাঙ্গণে পান্তা উৎসবের আয়োজন করা হয়। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, জেলা প্রশাসক আতাউল গনি, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুলসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ পান্তা উৎসবে অংশগ্রহন করে। পৌর মেয়র মাহাফুজুর রহমান রিটন অতিথিদের স্বাগত জানান।
অপরদিকে, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মেহেরপুর সরকারি কলেজের আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত রোববার সকালে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসার সফিউল ইসলাম সরদারের নেতৃত্বে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় পালকি বর, বধু, বাউল, কবিসহ গ্রাম বাংলার বিভিন্ন সাজে সাজানো হয়। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে। পরে কলেজ ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রার আগে ক্যাম্পাসে পান্তা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
অন্যদিকে, মেহেরপুর জেলা পুলিশ ব্যতিক্রম ও মনমুগ্ধকর আয়োজনে পালন করেছে বাংলা নববর্ষ। ডিবি পুলিশের ৫ সদস্য বাহারী রং এর পাঞ্জাবি ও সাদা রং এর লুঙ্গি, হাতে একতারা আর ডুগি। এক দারোগা ঘোড়ায় চড়ে অপেক্ষা এবং পুলিশ সুপার তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে গরুর গাড়ি চড়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। এটি ছিল ১লা বৈশাখের সকালে পুলিশ লাইনের গেটের সামনের দৃশ্য। ভিতরে আদি পল্লী গ্রামের চিত্র তুলে ধরে সেখানে চাটায়ের বেড়ার ঘর গোয়ালে গরু। বাড়ির আঙ্গিণায় সাপুড়ের সাপ খেলা প্রদর্শন। মাঠে ঘুড়ি ওঠানো আর বাংলার লাঠি খেলা। সব মিলিয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বাংলা নববর্ষ বরণের চমৎকার আয়োজন। ১লা বৈশাখ উপলক্ষে পুলিশ সদস্যরা এভাবেই পালন করলো বাংলা নববর্ষ। এছাড়াও বাংলা গান আর পান্তা উৎসবতো ছিলোই। পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে পরিদর্শক পর্যন্ত এক রং এর পাঞ্জাবি, নারী পুলিশরাও এক রং এর বাহারী শাড়ি অনুষ্ঠানকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে। বড় বড় বিষধর সাপ আর গ্রাম বাংলার অপরুপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন অতিথিগণ। অতিথিদের মধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন, জেলা প্রশাসক আতাউল গনি, পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটনসহ বিপুল পরিমাণ দর্শক অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর পত্মী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম ও তার পত্মী অতিথিদের স্বাগত জানান।
এদিকে, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মেহেরপুর ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে শহীদ সামসুজ্জোহা নগর উদ্যানে সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের লাঠিদল এ লাঠি খেলা প্রদর্শন করে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য আনোয়ারুল হক শাহী লাঠি খেলার উদ্বোধন করেন।
অপরদিকে, মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রীতি ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হয়। জেলা দায়রা জজ আদালত একাদশ ও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মধ্যেকার খেলায় জেলা দায়রা জজ আদালত একাদশ জয়লাভ করে। রোববার মেহেরপুর স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত খেলায় জেলা দায়রা জজ আদালত একাদশ ২৭ রানে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতকে পরাজিত করে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জেলা দায়রা জজ আদালত একাদশ ১২ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রান করে। দলের পক্ষে সাইদুর ৩৩ বলে ১০২ রান করে। জবাবে খেলতে নেমে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ১৫৪ রান সংগ্রহ করে। দলের পক্ষে জব্বার ৫১ রান করে। সাইদুর ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন।
মুজিবনগর:
মুজিবনগরে মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৬ বঙ্গাব্দ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত রোববার সকাল ৮টার দিকে মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তারের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি মুজিবনগর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাশেম, বাগোয়ান ইউপি চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন, মোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, দারিয়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুল বারী বকুল, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুস্তাফিজুর রহমানসহ উপজেলা সকল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উক্ত শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। পরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে পান্তা উৎসব ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গাংনী:
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গাংনীতে বাংলা বর্ষবরণ পহেলা বৈশাখ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত রোববার সকাল ৭টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর থেকে এক মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজামান খোকন। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান শহর প্রদক্ষিণ শেষে গাংনী উপজেলা শহীদ মিনার পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে শহীদ পাদদেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এম এ খালেক, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন, সাবেক মেয়র আহম্মেদ আলী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশারেফ হোসেন, গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার পিপিএম ও পৌর আওয়ামলী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবুসহ উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এছাড়াও পান্তা ইলিশ ও লোকজ সাংস্কৃতিক উৎসবসহ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাইপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা বর্ষবরণ, নবীন বরণ ও নতুন চতুর্থতলা একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজামান খোকন। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সমাজসেবক হাজি আলফাজ উদ্দীনের সভাপতিত্বে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন নারী নেত্রী এমপি পত্মী লাইলা আরজুমান বানু শিলা, রাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু, ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সমাজসেবক এনামুল হক ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুনতাসির জামান মৃদুলসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ:
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছে ঝিনাইদহবাসী। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত রোববার সকালে শহরের ওয়াজির আলী স্কুল এন্ড কলেজ মাঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র‌্যালিতে ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য খালেদা খানম, জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র আলহাজ সাইদুল করিম মিন্টুসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেয়। র‌্যালিতে প্রদর্শণ করা হয় পেঁচা, বাঘের মুখোশ, গরুর গাড়ি, পালকিসহ গ্রাম বাংলার ঐহিত্য। এছাড়াও দিনভর পান্তা পরিবেশন, লাঠি খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে বাংলা বর্ষবরণ পালিত হচ্ছে।
এদিকে, বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঝিনাইদহে হয়ে গেলো গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠি খেলা। শহরের পায়রা চত্বরে সকালে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী। বর্ণিল সাজে লাঠি হাতে লাঠিয়ালরা অংশ নেন এ খেলায়। ঢাকঢোল আর বাঁশির তালে আনন্দে-উল্লাসে মেতে ওঠেন সবাই। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ রঙ-বেরঙের পোশাক পরে মাঠে আসেন লাঠি খেলতে। বাদ্যের তালে চলে লাঠি খেলা। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেরে রক্ষা করা আর অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টায় মেতে থাকেন লাঠিয়ালরা। প্রদর্শণ করা হয় লাঠি নিয়ে নানা কলা-কৌশল। লাঠিখেলার আয়োজক বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী ঝিনাইদহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান খোকা বলেন, ‘পুরানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতেই আমাদের এ আয়োজন।’ লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে শৈলকুপা উপজেলার হাটফাজিলপুর গ্রামের রইচ উদ্দিন বলেন, আমরা নিজেদের আনন্দ ও অন্যদের আনন্দ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে লাঠিখেলা করে থাকি। কিন্তু আমরা অবহেলিত। গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অন্যদিকে, গৃহস্থ বাড়ির বিরাট একটি উঠোন বানানো হয়েছে গ্রামের হাই স্কুলের মাঠকে। সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাম থেকে হারিয়ে যাওয়া ঐহিত্য। আছে সাফদার ডাক্তারের চেম্বার। সেখানে রোগী দেখছেন পল্লী চিকিৎসক গোলাম রহমান ওরফে চেনা ডাক্তার। আছে আসমানীদের জরাজীর্ন বাড়ি। জসিম উদ্দীনের কবর কবিতার চিত্র ফুটিয়ে সেখানে ক্রন্দনরত রয়েছে নাতি পশ্চিমপাড়ার দাউদ হোসেন। আদর্শ কৃষকের সংসার। সেই সংসারে কুলায় ধান ও চাল ঝাড়ছে বধুরা। গ্রাম্য সংসারের সব কিছুই সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পালকি চড়ে নতুন বউ যাচ্ছে স্বামীর ঘরে। ঢেঁকিতে ধান ভানছে গ্রামের বধুরা। গ্রাম বাংলার চিরচরিত নিয়মে যাতা ঘুরিয়ে ডাল বানানো হচ্ছে। জ্যোতিন্দ্র মোহন বাগচির কাজলা দিদির কবিতার মতোই স্মৃতি ফুটয়ে তোলা হয়েছে পুকুর, বাতাবি লেবু ও বাঁশ বাগান বানিয়ে। আছে পান্তা ইলিশ ও বিষধর সাপের খেলা। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। রোববার সকাল থেকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা সরকারী প্রাইমারি ও হাই স্কুলের স্কুলের শিশু মেয়েদের বৈশাখী পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য বৈশাখী বরণের এই অনুষ্ঠানকে আরো প্রানবন্ত করে তোলে। বেলা ১০টার দিকে বংকিরা, ধোপাবিলা, হাজরা, আসাননগর, গোবিন্দুপর, জীবনা ও মোহাম্মদপুর গ্রামের মানুষদের নিয়ে বর্নাঢ্য র‌্যালি বের হয়। এলাকার কৃতি সন্তান ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আসিফ ইকবাল কাজল, সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন, বংকিরা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক খোশনুর রহমান, গোবিন্দপুর সরকারী প্রাইমারির প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ, হাজরা সরকারী প্রাইমারির প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান, মিঠু জোয়ারদার ও ডালিম হোসেনসহ শত শত মানুষ র‌্যালিতে যোগদান করেন। আর ব্যতিক্রমধর্মী বর্ষ বরণের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করেন বংকিরা পুলিশ ক্যাম্পের আইসি কাজী বায়োজিদ আহম্মেদ। মুলত তার পরিকল্পনায় গ্রাম বাংলার এই চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ডাকবাংলা:
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা ত্রিমহনী বাজার গোপালপুর সড়ক ইফাদ অটো রাইচ মিলে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পুরাতন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হাড়িভাঙ্গা খেলার আয়োজন করা হয়। এ খেলায় মিলের প্রায় ৪৫০ জন শ্রমিক অংশগ্রহন করে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইফাদ অটো রাইচ মিলের মালিক আলাউদ্দীন আল-মামুন।