ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অমর একুশে: বাংলা বানান নীতিমালা মানা হবে কখন?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১২:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ৩৬৯ বার পড়া হয়েছে

মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন ও তাতে জীবনদান এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এ দিনটি বাঙালি জাতির জন্য শুধু শোকের দিনই নয়, ভাষাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবোধের জাগরণেরও দিন। মূলত একুশে ফেব্রুয়ারিই বাঙালি জাতির আপন সত্তা মুছে দেয়ার সব আধিপত্যবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহই তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষের মনে জাতীয়তাবোধ, সংস্কৃতি, স্বাধিকার ও শৃঙ্খলমুক্তির চেতনার প্রদীপ জ্বেলে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারি থেকেই সূচনা ঘটে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও গণতন্ত্রের আন্দোলনের এবং শেষ পর্যন্ত ১৯ বছর পর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের। তাই স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে একুশে ফেব্রুয়ারি ও ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব, মহত্ত্ব ও তাৎপর্য অসাধারণ। এ দিনটির সঙ্গে যদিও রক্ত, অশ্রু, শোকের অনুষঙ্গ হিসেবে কালোব্যাজ, নগ্ন পদযাত্রা, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে, কিন্তু কালের প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে এটি ভাষা ও জাতীয়তার উন্মেষের স্মারক উৎসবেও পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে এ দিনটি স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এ স্বীকৃতি দিনটির মর্মবাণীর এক বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতাও ঘোষণা করছে। আজ যখন সভ্যতা, প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের চাপে পৃথিবীর অসংখ্য ক্ষুদ্র ভাষাই বিলুপ্তির মুখে, তখন সব জাতি-গোষ্ঠীর ভাষাকে টিকিয়ে রাখা ও বিকশিত হওয়ার সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করার বার্তাটিও এই একুশের মধ্যেই আমরা পেয়ে যাই। উদ্বেগের বিষয় হলো, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যেতে বসলেও তা রক্ষায় উদ্যোগ যথেষ্ট দৃশ্যমান নয়। ১৯৫২ সালের পর অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। একুশের পথ ধরে ১৯৭১-এ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধজয়ী হয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতি বছর ফিরে এসে এ প্রশ্নটিও আমাদের মনে জাগিয়ে তোলে যে, মাতৃভাষার যথাযোগ্য অবস্থান, মর্যাদা ও বিকাশ নিশ্চিত করার কাজে আমরা আসলেই কতদূর এগোতে পেরেছি। দুঃখের বিষয়, কিছু সাফল্য সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রেই ব্যর্থতা রয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয়, শিক্ষাগত ও সামাজিক জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন আজো হয়নি। এখনো উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহার সীমিত। আদালতের কর্মকা-ে এখনো বাংলা ভাষা উপেক্ষিত। সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনে আদালতের রায় বাস্তবায়িত হয়নি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পর্যন্ত এই আইন ঢালাওভাবে অমান্য করে যাচ্ছেন। পুরোপুরি বিদেশি শব্দ বা বাংলা-বিদেশি শব্দের মিশেলে রাখা হচ্ছে দোকানপাট ও বিপণিবিতানের নাম। বাংলা বানানে দিব্যি চালিয়ে দেয়া হচ্ছে ইংরেজি শব্দমালা। মহান ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে আবেগ-উচ্ছ্বাসের ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও মানা হচ্ছে না বাংলা বানান নীতিমালা। একুশে ফেব্রুয়ারি এই সময়ে আমাদের বাংলা ভাষা ও বাঙালিত্বের জন্য গৌরববোধ জাগিয়ে তুলুক, বাংলাকে সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা দেয়া এবং বিশ্বভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নতুন করে অনুপ্রাণিত করুক, সব জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা রক্ষা ও বিকাশে উদ্যোগী করুক- এই আমাদের প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অমর একুশে: বাংলা বানান নীতিমালা মানা হবে কখন?

আপলোড টাইম : ০৯:১২:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন ও তাতে জীবনদান এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এ দিনটি বাঙালি জাতির জন্য শুধু শোকের দিনই নয়, ভাষাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবোধের জাগরণেরও দিন। মূলত একুশে ফেব্রুয়ারিই বাঙালি জাতির আপন সত্তা মুছে দেয়ার সব আধিপত্যবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহই তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষের মনে জাতীয়তাবোধ, সংস্কৃতি, স্বাধিকার ও শৃঙ্খলমুক্তির চেতনার প্রদীপ জ্বেলে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারি থেকেই সূচনা ঘটে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও গণতন্ত্রের আন্দোলনের এবং শেষ পর্যন্ত ১৯ বছর পর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের। তাই স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে একুশে ফেব্রুয়ারি ও ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব, মহত্ত্ব ও তাৎপর্য অসাধারণ। এ দিনটির সঙ্গে যদিও রক্ত, অশ্রু, শোকের অনুষঙ্গ হিসেবে কালোব্যাজ, নগ্ন পদযাত্রা, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে, কিন্তু কালের প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে এটি ভাষা ও জাতীয়তার উন্মেষের স্মারক উৎসবেও পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে এ দিনটি স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এ স্বীকৃতি দিনটির মর্মবাণীর এক বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতাও ঘোষণা করছে। আজ যখন সভ্যতা, প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের চাপে পৃথিবীর অসংখ্য ক্ষুদ্র ভাষাই বিলুপ্তির মুখে, তখন সব জাতি-গোষ্ঠীর ভাষাকে টিকিয়ে রাখা ও বিকশিত হওয়ার সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করার বার্তাটিও এই একুশের মধ্যেই আমরা পেয়ে যাই। উদ্বেগের বিষয় হলো, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যেতে বসলেও তা রক্ষায় উদ্যোগ যথেষ্ট দৃশ্যমান নয়। ১৯৫২ সালের পর অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। একুশের পথ ধরে ১৯৭১-এ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধজয়ী হয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতি বছর ফিরে এসে এ প্রশ্নটিও আমাদের মনে জাগিয়ে তোলে যে, মাতৃভাষার যথাযোগ্য অবস্থান, মর্যাদা ও বিকাশ নিশ্চিত করার কাজে আমরা আসলেই কতদূর এগোতে পেরেছি। দুঃখের বিষয়, কিছু সাফল্য সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রেই ব্যর্থতা রয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয়, শিক্ষাগত ও সামাজিক জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন আজো হয়নি। এখনো উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহার সীমিত। আদালতের কর্মকা-ে এখনো বাংলা ভাষা উপেক্ষিত। সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনে আদালতের রায় বাস্তবায়িত হয়নি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পর্যন্ত এই আইন ঢালাওভাবে অমান্য করে যাচ্ছেন। পুরোপুরি বিদেশি শব্দ বা বাংলা-বিদেশি শব্দের মিশেলে রাখা হচ্ছে দোকানপাট ও বিপণিবিতানের নাম। বাংলা বানানে দিব্যি চালিয়ে দেয়া হচ্ছে ইংরেজি শব্দমালা। মহান ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে আবেগ-উচ্ছ্বাসের ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও মানা হচ্ছে না বাংলা বানান নীতিমালা। একুশে ফেব্রুয়ারি এই সময়ে আমাদের বাংলা ভাষা ও বাঙালিত্বের জন্য গৌরববোধ জাগিয়ে তুলুক, বাংলাকে সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা দেয়া এবং বিশ্বভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নতুন করে অনুপ্রাণিত করুক, সব জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা রক্ষা ও বিকাশে উদ্যোগী করুক- এই আমাদের প্রত্যাশা।