ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই বাড়তি সেনা : মিয়ানমার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৩:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ মার্চ ২০১৮
  • / ৩৮৬ বার পড়া হয়েছে

সীমান্তে মিয়ানমারের উত্তেজনা তৈরি : বিজিবি-বিজিপি পতাকা বৈঠক
সমীকরণ ডেস্ক: অভ্যন্তরীণ কাজে নিরাপত্তার প্রয়োজনে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে রাখাইনে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে দাবি করে মিয়ানমার বলেছে, বাংলাদেশ তাদের লক্ষ্য নয়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির পক্ষ থেকে ওই দাবি করা হয়। এদিকে মিয়ানমার সীমান্তে সেনা মোতায়েন নিয়ে পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তুমব্রু সীমান্তের ওপারে বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমারের হঠাৎ শক্তি বৃদ্ধি এবং গুলির ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এবং শূন্যরেখায় অবস্থান নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই পতাকা বৈঠকে অংশ নেয় দুই পক্ষ। এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুই উইকে তলব করে সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটানোর প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টার পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান। আর মিয়ানমারের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিজিপির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার সুচায়ে হু। বৈঠক শেষে ফিরে এসে মঞ্জুরুল হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে মিয়ানমার দাবি করেছে, নিজেদের নিরাপত্তায় সীমান্ত অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে সেনা বা বিজিপি মোতায়েন করে তারা। তার অংশ হিসেবে ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহলও দেয়া হয়। এটি সম্পূর্ণ মিয়ানমারের নিজস্ব নিরাপত্তার প্রয়োজনে। এই বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তে মিয়ানমারের দিক থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার বিষয়ে বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষেত্রে বিজিবিকে অবহিত করতে বলা হয়। অবহিত করার বিষয়ে বিজিপি সম্মতি প্রকাশ করলেও ফাঁকা গুলি ছোড়ার কথা তারা অস্বীকার করে এবং শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আবারও আশ্বস্ত করে বলে বিজিবি কমান্ডার জানান।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত ভাল কিছু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শূন্যরেখা ক্রস করার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। আর যদি ঘটে তাহলে আমরা তা প্রতিহত করব। তাদের সীমানার ভেতরে কী করবে সেটা তাদের বিষয়। তুমব্রু সীমান্তে নিজেদের অংশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছিল বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। একই কারণে তারা সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলি চালিয়েছিল বলেও দাবি করেছে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলির আগে বাংলাদেশকে অবহিত করা হবে বলে কথা দিয়েছে মিয়ানমার। আর মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ বিজিবির কাছে প্রশ্ন করে, সীমান্তে বাংলাদেশ কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছে। জবাবে আমরা জানাই, এটা মিয়ানমারকে টার্গেট করে করা হয়নি, আমাদের নিরাপত্তার জন্যই আমরা এটা করেছি।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র হিদার নেওয়ার্ট বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, আমরা এ বিষয়েও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রশ্নোত্তরকালে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, রাখাইন সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন নিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুই উই কে বৃহস্পতিবার তলব করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক পত্রও (নোট ভারবাল) তাকে দেয়া হয়। রাখাইন সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন নিয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়, এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেরর জন্য ভাল নয়। এ সময় তাকে একটি নোট ভারবাল বা আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক পত্র দেয়া হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখা হচ্ছে না বলে জানানো হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই বাড়তি সেনা : মিয়ানমার

আপলোড টাইম : ১০:১৩:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ মার্চ ২০১৮

সীমান্তে মিয়ানমারের উত্তেজনা তৈরি : বিজিবি-বিজিপি পতাকা বৈঠক
সমীকরণ ডেস্ক: অভ্যন্তরীণ কাজে নিরাপত্তার প্রয়োজনে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে রাখাইনে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে দাবি করে মিয়ানমার বলেছে, বাংলাদেশ তাদের লক্ষ্য নয়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির পক্ষ থেকে ওই দাবি করা হয়। এদিকে মিয়ানমার সীমান্তে সেনা মোতায়েন নিয়ে পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তুমব্রু সীমান্তের ওপারে বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমারের হঠাৎ শক্তি বৃদ্ধি এবং গুলির ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এবং শূন্যরেখায় অবস্থান নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই পতাকা বৈঠকে অংশ নেয় দুই পক্ষ। এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুই উইকে তলব করে সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটানোর প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টার পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান। আর মিয়ানমারের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিজিপির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার সুচায়ে হু। বৈঠক শেষে ফিরে এসে মঞ্জুরুল হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে মিয়ানমার দাবি করেছে, নিজেদের নিরাপত্তায় সীমান্ত অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে সেনা বা বিজিপি মোতায়েন করে তারা। তার অংশ হিসেবে ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহলও দেয়া হয়। এটি সম্পূর্ণ মিয়ানমারের নিজস্ব নিরাপত্তার প্রয়োজনে। এই বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তে মিয়ানমারের দিক থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার বিষয়ে বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষেত্রে বিজিবিকে অবহিত করতে বলা হয়। অবহিত করার বিষয়ে বিজিপি সম্মতি প্রকাশ করলেও ফাঁকা গুলি ছোড়ার কথা তারা অস্বীকার করে এবং শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আবারও আশ্বস্ত করে বলে বিজিবি কমান্ডার জানান।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত ভাল কিছু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শূন্যরেখা ক্রস করার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। আর যদি ঘটে তাহলে আমরা তা প্রতিহত করব। তাদের সীমানার ভেতরে কী করবে সেটা তাদের বিষয়। তুমব্রু সীমান্তে নিজেদের অংশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছিল বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। একই কারণে তারা সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলি চালিয়েছিল বলেও দাবি করেছে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলির আগে বাংলাদেশকে অবহিত করা হবে বলে কথা দিয়েছে মিয়ানমার। আর মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ বিজিবির কাছে প্রশ্ন করে, সীমান্তে বাংলাদেশ কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছে। জবাবে আমরা জানাই, এটা মিয়ানমারকে টার্গেট করে করা হয়নি, আমাদের নিরাপত্তার জন্যই আমরা এটা করেছি।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র হিদার নেওয়ার্ট বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, আমরা এ বিষয়েও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রশ্নোত্তরকালে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, রাখাইন সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন নিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুই উই কে বৃহস্পতিবার তলব করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক পত্রও (নোট ভারবাল) তাকে দেয়া হয়। রাখাইন সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন নিয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়, এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেরর জন্য ভাল নয়। এ সময় তাকে একটি নোট ভারবাল বা আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক পত্র দেয়া হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখা হচ্ছে না বলে জানানো হয়।