ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অনিশ্চয়তায় ৫ হাজার অতিরিক্ত শিক্ষক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ মার্চ ২০২০
  • / ১৯৫ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া এলাকায় মাধ্যমিক স্তরে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালে সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ) প্রকল্পে সরকার পাঁচ হাজার ২০০ অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক নিয়োগ দেয়। যাদের মডেল শিক্ষক বলা হয়। তিন বছর মেয়াদে ওইসব শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। দুই বছর আগে মেয়াদ শেষ হওয়া এসব শিক্ষকের জীবনে এখন নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। মেয়াদ শেষের পর অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। তারা চাকরি স্থায়ী করার দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিতে গত পাঁচদিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবি একটাই— চাকরি স্থায়ী করতে হবে। সেকায়েপ প্রজেক্টে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সংগঠন অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক (এসিটি) ঐক্য পরিষদ এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে।জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পঞ্চম দিনের মতো গতকাল শুক্রবার সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান করেছেন তারা। শিক্ষকরা বলছেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত ২৬ মাস হলো বিনা বেতনে পড়াচ্ছেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুপারিশ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পরও বেতনবঞ্চিত রয়েছেন শিক্ষকরা।
আবার চাকরি স্থায়ীর বিষয়েও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সংগঠনের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, অভিজ্ঞতা ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিশেষ অবদান এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে চাকরি স্থায়ী করা, বিনাশর্তে দ্রুত এসইডিপি প্রোগ্রামে আমাদের নেয়া হোক। আমাদের দাবি না মানলে এ অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আকর্ষণীয় বেতনে তিন বছর মেয়াদে নিজ জেলার সর্বোচ্চ মেধাবীদের সেকায়েপ প্রকল্পের অধীনে পাঁচ হাজার ২০০ জন অতিরিক্ত বিষয়-ভিত্তিক শ্রেণিশিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মডেল শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি প্রকল্প শেষে চাকরি স্থায়ী করার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষকরা বলেন, এসিটি ম্যানুয়েল ৩৬ ধারায় ও এসিটি সফল কমপোনেন্ট হিসেবে বিনাশর্তে পরবর্তী প্রোগ্রামে স্থানান্তরের কথাও বলা হয়। কিন্তু পরে তার কোনোটাই রক্ষা করা হয়নি। বাংলাদেশ অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক ঐক্য পরিষদ আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোজাহারুল ইসলাম ও অন্য অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা। মানববন্ধনের পর থেকে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। চাকরি স্থায়ীকরণ ছাড়াও আরও কয়েকটি দাবিও রয়েছে শিক্ষকদের। জানতে চাইলে শিক্ষকরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুপারিশ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পরও গত ২৬ মাসেও বিনা বেতনে পাঠদান করেও আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি।
গত বছর আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন, তার ভিত্তিতে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু আজও সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। তাই গত সোমবার থেকে আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। শিক্ষকরা বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মডেল শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি প্রকল্প শেষে চাকরি স্থায়ীকরণ এবং এসিটি ম্যানুয়েল ৩৬ ধারায় ও এসিটি সফল কমপোনেন্ট হিসেবে বিনাশর্তে পরবর্তী প্রোগ্রামে স্থানান্তরের কথা থাকলেও তার কোনোটাই রক্ষা করা হয়নি। তারা বলেন, অভিজ্ঞতা ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষায় বিশেষ অবদান এবং মানবিক বিষয়টি বিবেচনা করে চাকরি স্থায়ীকরণ ও বিনাশর্তে দ্রুত এসইডিপি প্রোগ্রামে নিয়োগদান করা হোক। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মহান স্বাধীনতার মাসে এ ব্যাপারে সরাসরি আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আহাদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, গত ২৬ মাস ধরে বিনা বেতনে পড়িয়ে আসছি। সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পরও সমাজে আজ আমরা অবহেলিত। চাকরি না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে আমাদের। আসমা নামে এক শিক্ষক বলেন, অনিশ্চয়তার মধ্যে না থেকে অনেকেই অন্য চাকরিতে চলে গেছেন। কিন্তু আমাদের যাদের সরকারি চাকরির বয়স শেষ তারা আর কোথাও যেতে পারছি না।তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি করছি। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি আদায়ের জন্য বদ্ধপরিকর তারা। চাকরি স্থায়ী করা না হলে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অনিশ্চয়তায় ৫ হাজার অতিরিক্ত শিক্ষক

আপলোড টাইম : ১০:৪৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ মার্চ ২০২০

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া এলাকায় মাধ্যমিক স্তরে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালে সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ) প্রকল্পে সরকার পাঁচ হাজার ২০০ অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক নিয়োগ দেয়। যাদের মডেল শিক্ষক বলা হয়। তিন বছর মেয়াদে ওইসব শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। দুই বছর আগে মেয়াদ শেষ হওয়া এসব শিক্ষকের জীবনে এখন নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। মেয়াদ শেষের পর অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। তারা চাকরি স্থায়ী করার দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিতে গত পাঁচদিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবি একটাই— চাকরি স্থায়ী করতে হবে। সেকায়েপ প্রজেক্টে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সংগঠন অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক (এসিটি) ঐক্য পরিষদ এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে।জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পঞ্চম দিনের মতো গতকাল শুক্রবার সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান করেছেন তারা। শিক্ষকরা বলছেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত ২৬ মাস হলো বিনা বেতনে পড়াচ্ছেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুপারিশ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পরও বেতনবঞ্চিত রয়েছেন শিক্ষকরা।
আবার চাকরি স্থায়ীর বিষয়েও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সংগঠনের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, অভিজ্ঞতা ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিশেষ অবদান এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে চাকরি স্থায়ী করা, বিনাশর্তে দ্রুত এসইডিপি প্রোগ্রামে আমাদের নেয়া হোক। আমাদের দাবি না মানলে এ অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আকর্ষণীয় বেতনে তিন বছর মেয়াদে নিজ জেলার সর্বোচ্চ মেধাবীদের সেকায়েপ প্রকল্পের অধীনে পাঁচ হাজার ২০০ জন অতিরিক্ত বিষয়-ভিত্তিক শ্রেণিশিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মডেল শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি প্রকল্প শেষে চাকরি স্থায়ী করার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষকরা বলেন, এসিটি ম্যানুয়েল ৩৬ ধারায় ও এসিটি সফল কমপোনেন্ট হিসেবে বিনাশর্তে পরবর্তী প্রোগ্রামে স্থানান্তরের কথাও বলা হয়। কিন্তু পরে তার কোনোটাই রক্ষা করা হয়নি। বাংলাদেশ অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক ঐক্য পরিষদ আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোজাহারুল ইসলাম ও অন্য অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা। মানববন্ধনের পর থেকে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। চাকরি স্থায়ীকরণ ছাড়াও আরও কয়েকটি দাবিও রয়েছে শিক্ষকদের। জানতে চাইলে শিক্ষকরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুপারিশ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পরও গত ২৬ মাসেও বিনা বেতনে পাঠদান করেও আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি।
গত বছর আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন, তার ভিত্তিতে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু আজও সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। তাই গত সোমবার থেকে আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। শিক্ষকরা বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মডেল শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি প্রকল্প শেষে চাকরি স্থায়ীকরণ এবং এসিটি ম্যানুয়েল ৩৬ ধারায় ও এসিটি সফল কমপোনেন্ট হিসেবে বিনাশর্তে পরবর্তী প্রোগ্রামে স্থানান্তরের কথা থাকলেও তার কোনোটাই রক্ষা করা হয়নি। তারা বলেন, অভিজ্ঞতা ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষায় বিশেষ অবদান এবং মানবিক বিষয়টি বিবেচনা করে চাকরি স্থায়ীকরণ ও বিনাশর্তে দ্রুত এসইডিপি প্রোগ্রামে নিয়োগদান করা হোক। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মহান স্বাধীনতার মাসে এ ব্যাপারে সরাসরি আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আহাদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, গত ২৬ মাস ধরে বিনা বেতনে পড়িয়ে আসছি। সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পরও সমাজে আজ আমরা অবহেলিত। চাকরি না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে আমাদের। আসমা নামে এক শিক্ষক বলেন, অনিশ্চয়তার মধ্যে না থেকে অনেকেই অন্য চাকরিতে চলে গেছেন। কিন্তু আমাদের যাদের সরকারি চাকরির বয়স শেষ তারা আর কোথাও যেতে পারছি না।তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি করছি। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি আদায়ের জন্য বদ্ধপরিকর তারা। চাকরি স্থায়ী করা না হলে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে।