ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অটোপাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০২০
  • / ১৩২ বার পড়া হয়েছে

মেধাবীদের সুযোগ নিশ্চিত করুন
করোনা মহামারীর কারণে পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করে গণপাস দেওয়া হয়েছে। এই গণপাস দেশের শিক্ষার মানের অবনতির কারণ হতে পারে। এমনিতেই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের কী শেখানো হচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পাঠদান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে হতাশাজনক মন্তব্য শুনেছি আমরা। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাস পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে। এবার গণপাস হওয়া শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় কিভাবে বাছাই করা হবে; তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বাছাইয়ের উপযুক্ত পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মেধাবী ছাত্ররা যাতে বাছাই হন; সে বিষয়টি সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে।
খবরে জানা যায়, এ বছর তিন ক্যাটাগরিতে মেধা যাচাই পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে শিক্ষার্থীদের। গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অভিন্ন প্রশ্নে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়ায় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত না হলেও ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে গুচ্ছপদ্ধতিতে এবারের অনার্সে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে। অনলাইনে বা অফলাইনে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ জন্য একটি সফটওয়্যারও তৈরি করা হচ্ছে। সফটওয়্যারটি তৈরির কাজ শেষ হলে সেটি সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে অনুমোদন নিয়ে কার্যকর করা হবে। এ বছর সমন্বিত পদ্ধতিতে কৃষি, প্রকৌশল এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভাবে পাঁচটি ধাপে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। তার মধ্যে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং মানবিক বিভাগের জন্য তিনটি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এ জন্য উদ্ভাবিত সফটওয়্যারের নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রক্টর রিমোট এক্সাম সিস্টেম (প্রোকয়াস)’। এটি ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা ও অভ্যন্তরীণ একাডেমিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলো আগের নিয়মেই শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতেই ভর্তি নেবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারা দেশের কলেজগুলোতে বিপুল ছাত্র ভর্তি হয়ে থাকে। নিয়ম-কানুন যদি সঠিকভাবে প্রণয়ন করা না যায়, আর সেগুলো যদি সঠিকভাবে পালন করা না হয় তাহলে যোগ্যরা এখানে বঞ্চিত হতে পারেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অগ্রসর হতে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গতবারও স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। এগুলো দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখে উচ্চশিক্ষার মান বজায় রাখতে যদি সমর্থ হয় তাহলে সবাই তা সমর্থন করবেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও সামর্থ্য দেখাতে হবে। যাতে করে দেশের সেরা ছাত্ররা প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন তা প্রমাণ হয়। একইভাবে মেডিক্যালে ভর্তির ব্যাপারটিও আলোচনার দাবি রাখে। মেডিক্যালে দেশের সেরা মেধাবীরা সুযোগ পান। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে সেখানে ছাত্র ভর্তি হতে পেরেছেন। এবার অটোপাসের কারণে দুর্নীতির মাত্রা আরো বাড়তে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ যদি কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয় এবং মেধাবী ছাত্র ভর্তি করানোর ব্যাপারে আপসহীন অবস্থায় থাকে; তাহলে বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সফল হওয়া অসম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে এমনভাবে ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে। অন্যথায় শিক্ষার উচ্চতর পর্যায়ে
অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের ভিড়ে মেধাবীরাও হারিয়ে যেতে পারেন। এ আশঙ্কা শিক্ষাবিদদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ব্যক্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে ছাত্রের মেধা যাচাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ছাত্রদের বিপুল অংশের ডিজিটাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় কিভাবে সেটি সম্ভব করা যায়, এর একটা কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। তবে সবার আগে মনে রাখতে হবে, যোগ্যদের বাছাইয়ে যেন কোনো ধরণের ত্রুটি না থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা বা দুর্নীতি যেন দেশের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থাকে ধসিয়ে দিতে না পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের অত্যন্ত সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অটোপাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি

আপলোড টাইম : ০৯:৩৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০২০

মেধাবীদের সুযোগ নিশ্চিত করুন
করোনা মহামারীর কারণে পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করে গণপাস দেওয়া হয়েছে। এই গণপাস দেশের শিক্ষার মানের অবনতির কারণ হতে পারে। এমনিতেই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের কী শেখানো হচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পাঠদান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে হতাশাজনক মন্তব্য শুনেছি আমরা। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাস পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে। এবার গণপাস হওয়া শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় কিভাবে বাছাই করা হবে; তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বাছাইয়ের উপযুক্ত পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মেধাবী ছাত্ররা যাতে বাছাই হন; সে বিষয়টি সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে।
খবরে জানা যায়, এ বছর তিন ক্যাটাগরিতে মেধা যাচাই পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে শিক্ষার্থীদের। গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অভিন্ন প্রশ্নে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়ায় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত না হলেও ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে গুচ্ছপদ্ধতিতে এবারের অনার্সে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে। অনলাইনে বা অফলাইনে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ জন্য একটি সফটওয়্যারও তৈরি করা হচ্ছে। সফটওয়্যারটি তৈরির কাজ শেষ হলে সেটি সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে অনুমোদন নিয়ে কার্যকর করা হবে। এ বছর সমন্বিত পদ্ধতিতে কৃষি, প্রকৌশল এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভাবে পাঁচটি ধাপে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। তার মধ্যে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং মানবিক বিভাগের জন্য তিনটি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এ জন্য উদ্ভাবিত সফটওয়্যারের নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রক্টর রিমোট এক্সাম সিস্টেম (প্রোকয়াস)’। এটি ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা ও অভ্যন্তরীণ একাডেমিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলো আগের নিয়মেই শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতেই ভর্তি নেবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারা দেশের কলেজগুলোতে বিপুল ছাত্র ভর্তি হয়ে থাকে। নিয়ম-কানুন যদি সঠিকভাবে প্রণয়ন করা না যায়, আর সেগুলো যদি সঠিকভাবে পালন করা না হয় তাহলে যোগ্যরা এখানে বঞ্চিত হতে পারেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অগ্রসর হতে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গতবারও স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। এগুলো দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখে উচ্চশিক্ষার মান বজায় রাখতে যদি সমর্থ হয় তাহলে সবাই তা সমর্থন করবেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও সামর্থ্য দেখাতে হবে। যাতে করে দেশের সেরা ছাত্ররা প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন তা প্রমাণ হয়। একইভাবে মেডিক্যালে ভর্তির ব্যাপারটিও আলোচনার দাবি রাখে। মেডিক্যালে দেশের সেরা মেধাবীরা সুযোগ পান। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে সেখানে ছাত্র ভর্তি হতে পেরেছেন। এবার অটোপাসের কারণে দুর্নীতির মাত্রা আরো বাড়তে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ যদি কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয় এবং মেধাবী ছাত্র ভর্তি করানোর ব্যাপারে আপসহীন অবস্থায় থাকে; তাহলে বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সফল হওয়া অসম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে এমনভাবে ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে। অন্যথায় শিক্ষার উচ্চতর পর্যায়ে
অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের ভিড়ে মেধাবীরাও হারিয়ে যেতে পারেন। এ আশঙ্কা শিক্ষাবিদদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ব্যক্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে ছাত্রের মেধা যাচাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ছাত্রদের বিপুল অংশের ডিজিটাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় কিভাবে সেটি সম্ভব করা যায়, এর একটা কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। তবে সবার আগে মনে রাখতে হবে, যোগ্যদের বাছাইয়ে যেন কোনো ধরণের ত্রুটি না থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা বা দুর্নীতি যেন দেশের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থাকে ধসিয়ে দিতে না পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের অত্যন্ত সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।